সকাল বেলায় স্নান করে অমিতাভ তৈরি হয়ে নিল। দশ মিনিটের মধ্যে না বেরালে ঠিক সময়ে পৌঁছানো যাবে না। কথার খেলাপি হবে। যেটা তার একদম পছন্দ নয়। তাই স্ত্রীকে তাড়া দিতে লাগল,---" কই গো হল তোমার? আমাদেরকে কিন্তু এবার বেরাতে হবে। তাড়াতাড়ি এস।" কয়েক মিনিটের মধ্যে তার স্ত্রী লাল পাড় গরদের শাড়ী আর একপাশে লাল শাল নিয়ে খুব অভিজাত সজ্জায় বেরিয়ে এলেন। চার জায়গায় প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে চীফ গেস্ট হিসাবে সস্ত্রীক আমন্ত্রিত অমিতাভ মুখার্জী; ইস্টার্ন কোলফিল্ডের কোলিয়ারির জেনারেল ম্যানেজার। পতাকা উত্তোলন তাকেই করতে হয়।
--------- চার জায়গায় অনুষ্ঠান সেরে ফিরতে ফিরতে বেলা এগারটা বাজল। ঘরে ফিরেই তাড়াতাড়ি চাট্টি খেয়ে ছুটল অফিস। অফিসে ঢুকেই শুনল একটা ওপেন কাস্টে ধ্বস নেমেছে। ছুটতে হল সঙ্গে সঙ্গে। গিয়ে যা দেখা গেল তাতে কারুর প্রাণহানি না হলেও অনেকখানি জায়গা ধ্বসে ঢুকে গেছে মাটিতে। কুলি বস্তির তিন-চারটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। একটা বাচ্চা সহ ছয়জন মানুষ আটকে রয়েছে ধ্বসের ওপারে। লোকাল অধিবাসীরা বেশ খানিকক্ষন ঘেরাও করে রাখল সব অফিসারদেরকে। পুলিশের হস্তক্ষেপে ঘেরাওমুক্ত হলেও অমিতাভ কিন্তু ঐ স্থান ত্যাগ করল না। তার উপস্থিতিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছিল উদ্ধারকাজ।
মোটামুটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা সাতটা বাজল। ছয়জন ভিকটিমকেই উদ্ধার করা হয়েছে। এই এতক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে থেকে পঞ্চান্ন বছরের ভারী শরীর যথেষ্ট ক্লান্ত। ঠান্ডাও লাগছে এবার খুব। পুলিশের সাথে কথা বলে জুনিয়রদেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে এবার পা বাড়াল সে। অফিসের অ্যাম্বাসাডরটা অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ক্লান্ত শরীরে ধীর পায়ে গাড়ির দিকে এগোতে গিয়ে হঠাৎ চোখ পড়ল একটু দূরে কুলিবস্তির দিকে। আধো আলোর সামনে একটা ছায়ামূর্তি! পিঠে একটা আধভর্তি বস্তা নিয়ে এগিয়ে চলেছে বস্তির দিকে।এতটা দুর থেকে তাকে ঠিকমত দেখা না গেলেও শোনা যাচ্ছে তার গলার গান ------
হর করম আপনা করেংগে
অ্যা বতন তেরে লিয়ে ;
দিল দিয়া হ্যা, জান ভি দেংগে
অ্যা বতন তেরে লিয়ে -----------
ক্ষণিকের জন্য পা দুটো থেমে গেল অমিতাভর! অপলক দৃষ্টিতে ছায়ামূর্তির চলে যাওয়ার পথে চেয়ে থাকতে থাকতে তার গান শুনতে লাগল। সম্বিত ফিরল ড্রাইভারের ডাকে,------------ "সাব, চলিয়ে ।"------
রাস্তায় অ্যাম্বাসাডরের জানলার বাইরে তাকিয়ে অমিতাভর মনে হল ; প্রজাতন্ত্র দিবসটা সে আজই প্রথম পালন করল এই পঞ্চান্ন বছর বয়েসে ॥॥
____________________________________
© মমতা সিনহা
No comments:
Post a Comment