5:43 AM
ঘুমটা হটাৎ করেই ভেঙ্গে গেল। বুকে প্রচণ্ড চাপ। ভয় পেয়ে গেলাম। হার্ট অ্যাটাক নয়তো? এখনিতো যাবার সময় হয়নি, তবু এই অসময়ে কেন ডাক দিলে প্রভু?
ঘুমের ঘোরটা একটু কাটতে বুঝলাম, হার্ট অ্যাটাক নয়, হাত অ্যাটাক। আমার অর্ধাঙ্গিনীর একখানি হাত আমার বুকের ওপর। যারা আমাকে বেরসিক ভাবছেন, তাদের বলি, উনি মোটেও মৃণাল ভুজ নন। প্রাত্যহিক দিবানিদ্রা এবং গুরু ভোজনের যুগলবন্দীতে উনি বর্তমানে একটি শ্বেতহস্তী বিশেষ। আর উপমাটি শুধু আকার নয় প্রকার মানে, ব্যয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বউ পোষার চেয়ে হাতি পোষার খরচ হয়ত একটু কমই হবে।
যাইহোক, আস্তে আস্তে হাতখানি সরিয়ে দিলাম। জেগে গেলে উনি আমাকে আর আস্ত রাখবেন না। সারা রাত বাতের ব্যাথায় ওনার ঘুম আসেনা। এই ভোরের দিকেই একটু ঘুমান। বিছানা থেকে নামলাম, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে। বাথরুমে ঢুকলে, আমি সহজে বেরোই না। এই একটি জায়গাতেই আমার মনের শান্তি, প্রাণের আরাম। সঙ্গে একটু কোষ্ঠকাঠিন্যও আছে।
ফিরে এসে দেখলাম, ম্যাডাম তখনও ঘুমাচ্ছেন। ওঠার সময়ও হয়নি অবশ্য। কাপড়চোপড় একটু অগোছালো হয়ে আছে। একসময় এইরূপ দৃশ্য দেখে খুবই পুলকিত এবং রোমাঞ্চিত হতাম। এখনও যে একেবারেই হইনা, তাও নয়। না ! আর দেরী করলে হবেনা। হাতমুখ ধুয়ে বাজারে যেতে হবে।
8:13 AM
“চরতে বেরুলে আর ঘরে ঢুকতে ইচ্ছে করেনা, তাই না?”
বাজার নিয়ে ঢুকতে না ঢুকতেই, এই সুমধুর সম্ভাষণে সম্ভাষিত হলাম। মিনমিন করে বললাম,
“বাজারে খুব ভিড় ছিল। তারপর, কাল তুমি বাঁধাকপির কথা বলেছিলে। অনেক খুঁজে, তবে পেলাম।” চায়ের দোকানে চা-কচুরি সহযোগে আড্ডার কথাটা চেপে গেলাম। গতরাতে অ্যাসিডিটি হয়েছিল। আজ কচুরি খেয়েছি জানলে, পতি-বধ পালা এখুনি অনুষ্ঠিত হবে। বাঁধাকপির ওষুধে মনে হল কাজ হয়েছে। আর কিছু বোললনা। পেপারে সবে চোখ রেখেছি, উনি চা নিয়ে ঢুকলেন। সঙ্গে মুড়ি আর বাতাসা। আমি জানতাম, এমনটাই হবে। তাইতো বাইরে কচুরি সাঁটিয়ে এসেছি। বললাম,
“খিদে নেই।”
“খিদে নেই কেন? এখনো অম্বল?”
“না, না। ভাবছি পেটটাকে একটু রেস্ট দিই।”
“বাব্বা ! হ্যাংলা আবার কবে থেকে নোলা সামলাতে শিখল ! ”
এই বলে বঙ্কিম হাসি সহযোগে উনি প্রস্থান করলেন। এখন ওনার কাজের মেয়েটির কাছ থেকে পাড়ার পাঁচকথা শোনার সময়।
কিছুক্ষন পরেই আবার ওনার প্রবেশ। এবারে মা রক্ষেকালী রূপে। কণ্ঠে বাছাই করা কিছু বিশেষণ ও সম্ভাসন পদ। শ্রীহস্তে খাঁড়ার বদলে কচুরির টুকরো। জামার হাতায় পেয়েছে। হতভাগা, বিশ্বাস হন্তারক কচুরি, এইভাবে ডোবালি আমায় ! বললাম, “ওহো... সেনবাবু খাচ্ছিলেন, তারই কিছু গুঁড়ো জামায় লেগেছে।” কিন্তু, উনি তো আর কচি খুকি নন যে আমার কথা বিশ্বাস করবেন। সুতরাং যারপরনাই লাঞ্ছিত এবং নিগ্রিহিত হলাম। অফিসের সময় হয়ে এসেছিল বলে, মাত্র আঠাশ মিনিটেই উনি আমাকে রেহাই দিলেন। আজকাল অফিসে যাবার জন্য আমার একটু বেশিই তাড়া থাকে। কারণটা, সদ্য জয়েন করা এক বাইশ বর্ষীয়া যুবতি।
6:38 PM
অফিস থেকে এই ফিরলাম। ভিড় বাসে ডিও মিশ্রিত ঘামের গন্ধ শুঁকতে হয়েছে। তারপর ওই বাইশ বর্ষীয়াও আজকে আসেনি। অতএব মেজাজটা খিঁচড়ে ছিল। তবুও আসার পথে বেল ফুলের মালা এবং পঁয়ত্রিশটা (একত্রিশটা ওর, চারটে আমার) ফুচকা নিয়ে এসেছি। সকালের ঘটনাটার রেশ যদি এখনো থাকে, সেই ভয়ে আত্মরক্ষার অস্ত্র। আমার হাতের জিনিসগুলো দেখে, মনে হল উনি প্রীত হয়েছেন। বললেন, “বুড়ো ভামের রস উথলে উঠছে।” এই “বুড়ো ভাম”-টা হল ওনার প্রেম সম্ভাষণ। মনে মনে একটু নেচে নিলাম। এই বয়সে এছাড়া আর উপায়ও নেই।
7:02 PM
হাতমুখ ধুয়ে চেয়ারে বসেছি, উনি এলেন। হাতে ফুচকার থালা।
“তুমি চারটের বেশি খেওনা। হজম করতে পারবেনা।” আমি বাধ্য ছেলের মত ঘাড় নাড়লাম। আর মনে মনে বললাম, “নিজের পেট যেন কত ভাল ! বোতল বোতল জেলুসিল রোজ গলায় ঢালছে।”
আমার ভাগেরগুলো শেষ করে, আদুরে বেড়ালের মত মিউমিউ স্বরে নিবেদন করলাম, “আরেকটা দাও না।” কপাল ভাল, দিয়েও দিল। তবে জল ছাড়া। একটু পুরনো দিনের কথাও হল। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে, দুজনে কত ফুচকা খেয়েছি। বাড়ীর লোকজনকে টুপি পরিয়ে, পার্কে কত্ত অ্যাপো মেরেছি। ইত্যাদি, ইত্যাদি।
9:00 PM
উনি গোগ্রাসে সিরিয়াল গিলছিলেন, এমন সময় কন্যার ফোন এল। উনি গদগদ মুখে উঠে গেলেন। জামাই, নাতিনাতনিদের খোঁজখবর নেয়া হল। আমার বিভিন্ন অপরাধের তালিকা শোনানো হল। ফলত, আমার ডাক পড়ল। মেয়ের কাছে একটু মিষ্টি বকুনি খেলাম। জিগ্যেস করলাম, “কবে আসবি?”
10:53 PM
খাওয়াদাওয়া সেরে শুতে আজ একটু রাতই হয়ে গেল। উনি গা ধুয়ে, একটা সুন্দর শাড়ী পরেছেন। চুলে বেল ফুলের মালাটাও আছে। বেশ বসন্ত বসন্ত পরিবেশ। খ্যাংরা কাঠির মত হাত দিয়ে, বাহু বেষ্টনের চেষ্টা করলাম। দুঃখের বিষয়, বহরে কুলাল না। উনি বললেন, “মরণ। বুড়ো ভামের আদিখ্যেতা দেখ !”
তবে, আরেকটু কাছ ঘেঁসে, আমার দিকে পাশ ফিরেও শুলেন। আরও কিছু গল্প হল। আরও কিছু অতীত ভ্রমন। তারপর, দুজনেই চুপ করে ভাবতে লাগলাম- ও যখন থাকবেনা, তখন আমার কি হবে...
1:07 AM
পেটে প্রচণ্ড চাপ লাগছে। ফুচকার সাইড এফেক্ট? ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম, পেটের ওপর ওনার বিশ মনি চরণকমল।
“উফফফ, সরে শোও। একটু শান্তিতে ঘুমোতেও দেবেনা। যত্তসব !”
___________
© শোভন বাগ
No comments:
Post a Comment