Tuesday, 3 January 2017

।। মায়া ।।



জানকিদেবী সেই সাত সকাল থেকে পথ চেয়ে বসে আছেন। তার ছেলেরা গতকাল ফোন করেছিল তাদের বোনকে নিয়ে সন্ধে বেলা বাসে ওঠার খবর জানিয়ে। শহর থেকে পাক্কা বারো ঘন্টার পথ তাদের এই গ্রাম। মোবাইলের সংযোগ পথের মাঝেই শেষ হয়ে যায় আর বাসরাস্তাটা গ্রামের আট মাইল আগে।

রুক্ষ এই প্রান্তরের মানুষগুলোও এখানকার প্রকৃতির মতোই, তবু জানকি দেবীর আপাত কঠোর মুখ দেখে কে বলবে অন্ত:সলিলা ফল্গুর মত তার ভিতর সবসময় বয়ে চলে মেয়ের জন্য এক টান !

অনেক আশা করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের গ্রামের চৌধুরীর অনেক জানাশোনা, তাই সম্বন্ধটা সেই এনেছিল। তিনি ভেবেছিলেন, জামাইয়ের শহরে বড় মুদির দোকান, লাগোয়া নিজের বাড়ি - তার মেয়ে একটু খেয়ে পড়ে নিজেকে ভাল করে রাখতে পারবে।
কিন্তু সে জানোয়ার তাকে ঘরে সবসময় তালা বন্ধ করে রাখত, সংসারের হাড়ভাঙ্গা খাটনির সাথে বিছানায় চলত চরম অমানুষিক অত্যাচার।

চৌধুরী খবর নিয়ে জানিয়েছিল -জানকি তুই কিছু একটা কর, নাহলে এবার তোর মেয়ে মরেই যাবে!

জানকিদেবী তার দুই সাজোয়ান ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন। দুদিনের কড়া নজরদারির পর যখন সেই কিরানাওয়ালা বড় বাজারে মাল কিনতে গেল তখন দাদারা কর্মচারীর মাথায় ডান্ডা মেরে, ঘরের তালা ভেঙে বোনকে উদ্ধার করল।

অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হলো -  ক্লান্তি আর অত্যাচারে ভাঙা হলেও, মেয়ের মুখ দেখে মনটা ভরে গেল তার। ছেলেরা গোঁফ চুমরে হাসল। বাঘিনীর বাচ্চাদুটো.... । জানকিদেবী একমাসের মধ্যেই মেয়েকে সুস্হ, স্বাভাবিক করে তুলবেন।
বড় সুন্দর তার মৃত সতীনের এই মেয়েটা, ভারী লক্ষীমন্ত।হেজে মরে যাওয়ার আগে এদের বাপটা এই এক ভাল কাজ করেছিল।

মুদি দোকানী চোদ্দ বছরে কিনেছিল সাড়ে ছলাখে, আর তারও আগে দশ বছর আর বারো বছর বয়সের সময় দুবারের বিয়েতে দুজন দিয়েছিল পঞ্চাশ হাজার ও আড়াই লাখ। মুদিটা বেশী সেয়ানা, মনে হয় কিছু সন্দেহ করেছিল। কিন্তু তাদের সাথে আগের দুটো বরও পেরে ওঠেনি।  

এখন ষোল-র 'কমসিন কলি' পুরো পনেরো লাখেই যাবে। চৌধুরীর দালালিটা হয়তো একটু বেশি; টাকায় পঁচিশ! জানকিদেবী দেন, সবটাই তো ওই দেখে।

এ দুনিয়াই মালটাই আসল.....বাকি সবই মায়া।

সমাপ্ত...
_____________
© নীলাঞ্জন মুখার্জ্জী

No comments:

Post a Comment