স্টেশনের দিকে
দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটতে লাগল কেকা । না, কোনো ভাবেই সকাল ছটার ট্রেনটা মিস করা চলবে না তার । না হলে সঠিক সময়ে সে পৌছাতেই পারবে
না পানিত্রাসে । দীর্ঘ একমাসের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে
চলেছে আজ । অকপট গ্রুপের পিকনিক
পানীত্রাসে । মনে আর তর সইছে না কেকার । আবির দা, সৌমেন দা, মায়াদি, সুলেখাদি
আর অনেকে, ভাবতে ভাবতে দ্রুত পা চালায় কেকা । এই গ্রুপটিই যেন তার পরিবার, প্রতিটি সদস্য যেন তার একান্তই আপন । জীবনের
মায়াযুদ্ধে পিছোতে পিছোতে যখন সে জীবন-মৃত্যুর কিনারায় দাঁড়িয়ে , 'অকপট' যেন
তাকে অকপটে বাঁচার পথ দেখিয়ে ছিল সেদিন ।
পানীত্রাসে পৌঁছাতেই রূপনারায়ণের শোভা কেকাকে যতনা মুগ্ধ
করল, তার থেকে অনেক বেশি দাদা দিদি ও অকপট বন্ধুদের উষ্ণ অভ্যর্থনা । সে যেন আবার তার পুরনো দিনগুলি
ফিরে পেল । সে এক অনন্য অনুভূতি, এক কথায়
অবর্ণনীয়। একেই বোধহয় বলে অচেনাকে চেনা, অজানাকে
জানা, সম্পর্কের অদৃশ্য বন্ধকে ছুঁয়ে দেখা ।
কিন্তু এত হইহুল্লোড়, মজা মশকরা, অনাবিল
আনন্দের মাঝেও কেকার দুই চোখ কাকে খুঁজে বেড়ায় । মনের অজান্তে
অন্যদের থেকে সরে এসে সে বসে রূপনারায়ণের পাড়ে । সকালের কুয়াশা তখনো ভালভাবে কাটেনি । ওই দুরে উদাসী মাঝি কুয়াশার চাদর গায়ে মেখে
আপন মনে নৌকার দাঁড় বেয়ে চলেছে ।
কেকা চ্যাট বক্স খোলে । না, সবুজ
বাতিটি জ্বলছে না । আগের দিন চ্যাটগুলির দিকে নজর চলে যায়
কেকার.....
' তুমি কাল আসছো তো ? '
' হ্যাঁ, অবশ্যই '
'ঠিক বলছো তো, নাহলে আমি
কিন্তু যাব না । '
' সত্যি, সত্যি, সত্যি....তিন
সত্যি । এখনো তুমি অবিশ্বাস করবে । '
' না গো, তোমাকে মনের চোখে দেখেছি বহুবার, চোখের
দেখায় দেখবো একটিবার। এই আমার শেষ ইচ্ছে । '
' কেন, আমি যদি দেখতে ততটা ভালো না হই, যদি দেখো আমার
মুখে ফুটে উঠেছে বার্ধক্যের বলিরেখা, যদি তোমার
কল্পনার অবয়বের সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র মিল না থাকে'
' যে আমাকে হতাশার অতল গভীর থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে, জীবনে
স্বাদে নয়, ঘ্রাণে বাঁচতে শিখিয়েছে, যার হৃদয়ের
মাধুর্যে মুগ্ধ আমি, তার দর্শনেই কাঙ্খিত, রূপ নয় । '
অজান্তেই কেকার চোখের কোনা ভিজে এল । আর পড়তে পারল
না । আজ শরত বাবুর জন্মভিটেয় এসে কেকা উপলব্ধি
করল, শরতবাবুর শ্রীকান্তরা চিরকালেরই বোহেমিয়ান থেকে যায়
। শুধু পথ চিনিয়ে যায়, পথসঙ্গী
হওয়া তাঁদের স্বভাববিরুদ্ধ ।
পড়ন্ত বিকেলে সকলকে বিদায় জানিয়ে,
ভারাক্রান্ত হৃদয়ে একরাশ আনন্দের ডালি সাজিয়ে স্টেশনের
পথে পা বাড়াল কেকা । ট্রেনের সিটে বসতে না বসতেই বেজে
উঠল কেকার হাতের মোবাইল.....
'কেমন কাটল দিনটা..... '
কেকার মনের ভিতরটা তোলপাড় করে উঠল ।
'তুমি যে এভাবে কারো মন ভাঙ্গতে পারো আমার জানা ছিল না । '
'কেন, আমি তো সবসময় তোমার পাশেই ছিলাম । চিনতে পারো নি
বোধহয় ? ভেবেছিলাম চিনে যাবে । '
'কিন্তু তোমার নাম !!! '
' নামে কি এসে যায় । মনের আনন্দে কেউ যদি নিজেই নিজেকে 'পাগল' নামে
ডাকে, তা কি কারো পক্ষে জানা সম্ভব কেকা ?'
'কিন্তু একটি বারের জন্যেও ?'
'একটিবার নয়, আমি সারাক্ষণ তোমারই পাশে । '
'তাহলে আরেকটি বছরের অপেক্ষা ?'
'হয়তো ?
( সমাপ্ত )
#বি দ্র : 'অকপট' গ্রুপের
পিকনিকের ছবি ও ভিডিও দেখে অপটু হাতে লেখা । সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক । যদি কোন মিল লক্ষ্য করা যায়, তবে তা
কাকতালীয় দোষে দুষ্ট ।
© দুর্জয় সাউ
No comments:
Post a Comment