Wednesday, 4 January 2017

।। অপেক্ষা ।।


স্টেশনের দিকে দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটতে  লাগল কেকা । না, কোনো ভাবেই সকাল ছটার ট্রেনটা মিস করা চলবে না তার  না হলে সঠিক সময়ে সে পৌছাতেই পারবে না পানিত্রাসে  দীর্ঘ একমাসের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে আজ   অকপট গ্রুপের পিকনিক পানীত্রাসে  মনে আর তর সইছে না কেকার  আবির দা, সৌমেন দা, মায়াদি, সুলেখাদি আর অনেকে, ভাবতে ভাবতে দ্রুত পা চালায় কেকা  এই গ্রুপটিই যেন তার পরিবার, প্রতিটি সদস্য যেন তার একান্তই আপন  জীবনের মায়াযুদ্ধে পিছোতে পিছোতে যখন সে জীবন-মৃত্যুর কিনারায় দাঁড়িয়ে , 'অকপট' যেন তাকে অকপটে বাঁচার পথ দেখিয়ে ছিল সেদিন

পানীত্রাসে পৌঁছাতেই রূপনারায়ণের শোভা কেকাকে যতনা  মুগ্ধ করল, তার থেকে অনেক বেশি দাদা দিদি ও অকপট বন্ধুদের উষ্ণ অভ্যর্থনা  সে যেন আবার তার পুরনো দিনগুলি ফিরে পেল   সে এক অনন্য অনুভূতি, এক কথায় অবর্ণনীয় একেই বোধহয় বলে অচেনাকে চেনা, অজানাকে জানা, সম্পর্কের অদৃশ্য বন্ধকে ছুঁয়ে দেখা

কিন্তু এত হইহুল্লোড়, মজা মশকরা, অনাবিল আনন্দের মাঝেও কেকার দুই চোখ কাকে খুঁজে বেড়ায়  মনের অজান্তে অন্যদের থেকে সরে এসে সে বসে রূপনারায়ণের পাড়ে  সকালের কুয়াশা তখনো ভালভাবে কাটেনি  ওই দুরে উদাসী মাঝি কুয়াশার চাদর গায়ে মেখে আপন মনে নৌকার দাঁড় বেয়ে চলেছে
 কেকা চ্যাট বক্স খোলে  না, সবুজ বাতিটি জ্বলছে না  আগের দিন চ্যাটগুলির দিকে নজর চলে যায় কেকার.....
' তুমি কাল আসছো তো ? '
' হ্যাঁ, অবশ্যই '
 'ঠিক বলছো তো, নাহলে আমি কিন্তু যাব না  '
' সত্যি, সত্যি, সত্যি....তিন সত্যি  এখনো তুমি অবিশ্বাস করবে '
' না গো, তোমাকে মনের চোখে দেখেছি বহুবার, চোখের দেখায় দেখবো একটিবার এই আমার শেষ ইচ্ছে  '
' কেন, আমি যদি দেখতে ততটা ভালো না হই, যদি দেখো আমার মুখে ফুটে উঠেছে বার্ধক্যের বলিরেখা, যদি তোমার কল্পনার অবয়বের সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র মিল না থাকে'
' যে আমাকে হতাশার অতল গভীর থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে, জীবনে স্বাদে নয়, ঘ্রাণে বাঁচতে শিখিয়েছে, যার হৃদয়ের মাধুর্যে মুগ্ধ আমি,  তার দর্শনেই কাঙ্খিত, রূপ নয় '

অজান্তেই কেকার চোখের কোনা ভিজে এল  আর পড়তে পারল না  আজ শরত বাবুর জন্মভিটেয় এসে কেকা উপলব্ধি করল,  শরতবাবুর শ্রীকান্তরা চিরকালেরই বোহেমিয়ান থেকে যায়  শুধু পথ চিনিয়ে যায়, পথসঙ্গী হওয়া তাঁদের স্বভাববিরুদ্ধ
                         পড়ন্ত বিকেলে সকলকে বিদায় জানিয়ে,  ভারাক্রান্ত হৃদয়ে  একরাশ আনন্দের ডালি সাজিয়ে স্টেশনের পথে পা বাড়াল কেকা  ট্রেনের সিটে বসতে না বসতেই বেজে উঠল কেকার হাতের মোবাইল.....
   'কেমন কাটল দিনটা..... '
কেকার মনের ভিতরটা তোলপাড় করে উঠল         
'তুমি যে এভাবে কারো মন ভাঙ্গতে পারো আমার জানা ছিল না  '
'কেন, আমি তো সবসময় তোমার পাশেই ছিলাম  চিনতে পারো নি বোধহয় ? ভেবেছিলাম চিনে যাবে '
'কিন্তু তোমার নাম !!! '
' নামে কি এসে যায়  মনের আনন্দে কেউ যদি নিজেই নিজেকে 'পাগল' নামে ডাকে, তা কি কারো পক্ষে জানা সম্ভব কেকা ?'
'কিন্তু একটি বারের জন্যেও ?'
'একটিবার নয়, আমি সারাক্ষণ তোমারই পাশে  '
'তাহলে আরেকটি বছরের অপেক্ষা ?'
'হয়তো ?
( সমাপ্ত )

#বি দ্র : 'অকপট' গ্রুপের পিকনিকের ছবি ও ভিডিও দেখে অপটু হাতে লেখা  সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক  যদি কোন মিল লক্ষ্য করা যায়, তবে তা কাকতালীয় দোষে দুষ্ট


_________
© দুর্জয় সাউ

No comments:

Post a Comment