আমি আলিপুরদুয়ারের মেয়ে। সরকারী চাকরির প্রয়োজনে কলকাতার উপকণ্ঠে একটা এক কামরার ফ্লাটে থাকি। জায়গাটা একটু ফাঁকা ফাঁকা। ভাড়াও বেশী। তবে চারদিকের পরিবেশ বেশ ভালো। আমার মত একা একটা সুন্দরী অল্পবয়সী মেয়ের বাস করার পক্ষে নিরাপদ। বাসে মেট্রোতে এক ঘণ্টায় অফিসও পৌঁছে যাই।
এখনও বিয়ে থাওয়া করি নি। ফ্লাটটা ছোট হলেও কমপ্যাক্ট । এখন তো দিব্যি চলে যাচ্ছে। পরিবর্তন করার কথা বিয়ের পরে ভাববো।
আমার একটু পূজো আর্চার নেশা আছে বাতিক বললেও বলতে পারেন। বিশেষ করে শিব মন্দিরে পূজো দেওয়া। প্রতি শনিবার অফিস ছুটি থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে কোন না কোন শিব মন্দিরে গিয়ে পূজো দি। ফিরে এসে জল খাই।
আজ শনিবার। নিয়মের ব্যতিক্রম হয় নি। বেলা দশটা নাগাদ নিমতলা শ্মশান-ঘাট সংলগ্ন বাবা ভূতনাথ মন্দিরে পূজো দিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে বেরোচ্ছি । দুপাশে ভিখারি ।হাতে প্রসাদ এদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে বেরোনোই মুশকিল। পায়ের পাতায় সুড়সুড়ি মত লাগতেই তাকিয়ে দেখি একটা ভিখিরি মনযোগ আকর্ষণ করার পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। ওঃ কি ভয়ঙ্কর চেহারা। মুখ ভর্তি দাড়িগোঁফের জঙ্গল মাথা ভর্তি জট পাকানো চুল। লোকটার একটা চোখের জায়গায় একটা খুবলানো গর্ত যেন চোখটা কেউ ছুরি দিয়ে উপড়ে নিয়েছে। কপালে পোড়া দাগ । দুটো পা ই হাঁটুর অনেকটা উপর থেকে কাটা আর নাকেরও একটা দিক বোধহয় গলে কুষ্ঠেই গলে গেছে। লোকটাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় কে বা কারা যেন রাস্তার উপর বসিয়ে দিয়ে গেছে। এত মহিলা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। ঐরকম বিকট বীভৎস চেহারার একটা সম্পূর্ণ উলঙ্গ লোক। ও কি কোন প্রেতাত্মা যাকে শুধু আমিই দেখতে পাচ্ছি? ভয়ের থেকেও বেশী এক ধরণের বিজাতীয় ঘৃণা যার থেকে বিবমিষার উদ্রেক হলো। নিজেকে সামলাতে পারলাম না। মুখ থেকে একদলা থুতু ঘৃণায় বেরিযে এসে লোকটার গায়ের উপরই কি গিয়ে পড়ল? লোকটা এক চোখ দিয়ে আমাকে দেখছে। ঊঃ কি ভয়ংকর দৃষ্টি । এ যেন এক চোখের আড়ালে কোন অশরীরী।
আমি কোনমতে শরীরের সব শক্তি জড়ো করে কোনদিকে না তাকিয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে বাস ধরে সোজা বাড়ি চলে এলাম।
রান্না খাওয়া বিশ্রাম ছূটির দিনের নানা কাজের মধ্যে কখন সকালের বিকট চেহারার ভয়ংকর ভিখারিটার কথা আর আমারও ওর সঙ্গে অসংলগ্ন কুশ্রী আচরণের কথা বেমালুম ভূলে গেছি।
সময়মতই রাতে খেয়েদেয়ে শুয়েছি। আর অভ্যাসমতো শুতে না শুতেই ঘুম। একটানা কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানি ন। কি একটা অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙে গেল। গোটা শরীর ভার। ঘেমেও গেছি। তলপেট ভারী। হালকা হয়ে অস্বস্তি কাটাতে তাড়াতাড়ি আলো জ্বালিয়ে টয়লেটের ভিতরে ঢুকে অভ্যাসবশতঃ ছিটকানি দিতেই একদলা গরম থুতু এসে আমার মুখে পড়লো।
তাকিয়ে দেখি বীভৎস চেহারার উলঙ্গ ভিখারিটা কোমোডের উপরে গাঁট হয়ে বসে একচোখে আমায় দেখছে মানে গিলে খাচ্ছে। কাটা পাদুটো কোমোড থেকে সামান্য বার করা।
লোকটা কি বোবাও তা না হলে আমায় হাত দিয়ে ইশারা করলো কেন ওর নগ্ন কোলে গিয়ে বসার জন্য ?
নিঝুম নিস্তব্ধতা ভেঙে দূর থেকে একটা কুকুরের একটানা আর্তনাদ ভেসে এলো।
___________
© পৃথ্বী ব্যানার্জী
No comments:
Post a Comment