আমি এক বহুজাতিক সংস্থার বড় সাহেব। ব্যাচেলার। কোন বদ নেশা নেই। কাজ মানে অফিসের কাজই জীবন বানিয়েছি।বাড়িতে শুধু কফি ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা আছে। সকাল নটায় অফিসে এসে বসি রাত দশটায় ডিনার সেরে বাড়ি ফিরি। বাড়িতে এসে আর কোন কাজ না। গরম জলে স্নান সেরে শুয়ে ম্যাগাজিন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি।
কাল দুপুর দুটোয় বোর্ড মিটিং। রাত দশটা প্রায় বাজে। দুজন পিএকে ছেড়ে দিয়ে খাবার আনিয়ে খাস পিওনকেও ছেড়ে দিলাম। রিপোর্ট আরও একবার স্ক্রুটিনি করলাম। বাকিটা কাল সকালে এসে মিটিংয়ের আগেই সেরে ফেলা যাবে।
এতক্ষনে অনুভব হলো দারুণ খিদে পেয়েছে। অ্যান্টিচেম্বারে খাবার খুলে গোগ্রাসে রাক্ষসের মত মাছ দিয়ে ভাত মেখে খাচ্ছি। কে আর দেখতে যাচ্ছে বড় সাহেবকে। অফিস তো ফাঁকা।
এইসময় কোথা থেকে যে একটা কালো বিড়াল এসে একদম পাতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। কোনোদিনই তো আমার এই ঝকঝকে অফিসের আনাচেকানাচেও কোন কালো বিড়াল আছে টের পাই নি। আমার মাছের টুকরোটাকে মুখে নিয়ে বলতে গেলে পাতের উপর বসেই আরামে দু চোখ বুজে চিবিয়ে খাচ্ছে। আর রাগ সামলাতে না পেরে হাতের সামনে একটা ছোট কিন্তু মোটা লাঠি দিয়ে ওর মাথায় সজোরে মারলাম। আঘাতটা বোধহয় একটু জোরেই হয়ে গিয়েছিল। খাবার প্লেটের উপরই বিড়ালটা নেতিয়ে পড়লো। মরে গেছে। থ্যাতলানো মাথার নীচে ওর ঘেটিটা ধরে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।
বাড়িতে এসে স্নান করে প্রায় অভূক্ত অবস্থায় শুয়ে একটু পরই ঘুমে গলে গেলাম।
কিসের অস্বস্তি যন্ত্রণাও! ঘুম ভেঙে গিয়ে গলায় হাত দিতেই মনে হলো রক্ত বেরোচ্ছে।
আলো জ্বেলে তাড়াতাড়ি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতে আমার মুখের বদলে থ্যাতলানো মাথা, কালো বিড়ালটার মুখ দেখতে পেলাম। আতঙ্কে আলো নিভিয়ে বিছানায় ফিরে আসতে গিয়ে দেখি অন্ধকারে বিছানার উপর দুটো চোখ জ্বলছে। বুঝলাম কালো বিড়ালটা অন্ধকারে বিছানায় ওত পেতে আছে আমার রক্ত চাটার জন্য।
___________© পৃথ্বী ব্যানার্জী
No comments:
Post a Comment