Sunday, 15 January 2017

অভিভাবক

*****উন্মাদীয় রবিবাসর*****

অভিভাবক
======

হাসপাতালের বিছানায় গর্ভ যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে কোন মহিলা। খানিক পর একজন সেবিকা গজ ন্যাকরায় জড়িয়ে একটা জীবিত মাংসের পিণ্ডকে সেই মহিলার কোলে অর্পন করে দিয়ে বলেন- এই নিন আপনার সন্তান, আর সন্তানের উদ্দেশ্যে বলে দেয় – বাবু এবার মায়ের কাছে যাও।

এই শুরু অভিভাকত্বের।

জীবনে চলার পথে কাওকে না কাওকে বিশ্বাস করতেই হয়। অভিভাবক আসলে একটা পবিত্র বিশ্বাস। যে বিশ্বাসের উপরেই টিকে থাকে এই সমগ্র পৃথিবী। যাবতীয় লেনদেন। প্রেম ভালবাসা ঘৃণা হোক বা বস্তুবাদ, নিদেনপক্ষে ভক্তি বাদও এই অভিভাবকত্বের চাদরেই মোড়া।

শিশুর মা শিশুকে পৃথিবী চিনতে শেখায়। আর শিশুটি বিশ্বাস করে তার প্রথম অভিভাবক, মায়ের কথাগুলো। হয়ত দ্বিতীয় আর কোন উপায়ও থাকেনা। সে তার পিতৃপরিচয় পায় সেই মায়ের সুত্রেই, সহোদর চেনে, তুতো চেনে, পরিবার চেনে, সমাজ চেনে। যাদেরকে সে আগামিদিনের অভিবাবক হিসাবে নির্দ্বিধায় মেনে নেবে। সবটাই সেই পবিত্র বিশ্বাস। এবং ততক্ষন পর্যন্ত মেনে নেয় যতক্ষননা সে নিজ বিচার বুদ্ধি বা তৃতীয় কোন ব্যাক্তি বা বস্তুর দ্বারা গ্রহনযোগ্য বিরুদ্ধ মত বুঝতে বা মানতে শিখছে। বিবর্তনতত্বের মৌলনীতি বা শক্তির সংরক্ষণশীলতা সুত্র কোনকিছুই যেমন অভিভাবকত্বের তত্বকে স্বাধীন রূপ দিতে পারেনি, তেমন সৃষ্টির আদি থেকে আবহমান কাল বেয়ে আজকের ডিজিটাল সভ্যতার যুগেও অভিভাকত্ব কখনই অভিভাবকহীন হয়নি। কারন সেই পবিত্র বিশ্বাস

অভিভাবক কাদের জন্য প্রযোজ্য? সেটা জানার আগে জানা প্রয়োজন অভিভাবক কারা! পালক, প্রতিপালক, তত্বাবধায়ক, রক্ষাকর্তা, শিক্ষক, রক্ষক, অছি, অনুগ্রাহক, সহায়ক, পৃষ্ঠপোষক, উৎসাহদাতা, নিয়োগকর্তা, প্রতিপোষক,  জিম্মাদার, নাথ এমনকি সমর্থকদেরও অভিভাবক বলা যেতে পেরে পরিস্থিতির ভেদে। সুতরাং এমন মহান শক্তিধর কে আছেন যিনি উপরের সকল পৃথক পৃথক শব্দগুলকে একত্রে অস্বিকার করবেন?

আবিধানিক অর্থ বলছেঃ সেই ব্যাক্তি বা বর্গকে অভিভাবক বলা যায়, যিনি কোন একজনের যাবতীয় বিষয়ে তদারকি করার জন্য আইনগতভাবে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত। সেটা অন্যকেও হতেও পারে আবার নিজের জন্যও প্রযোজ্য। মোদ্দাকথা যিনি সুরক্ষা প্রদান করতে পারেন তিনিই অভিভাবক।

অপরিপক্ক বুদ্ধি, অভিজ্ঞতার অভাব, এবং সীমিত বিচার বুদ্ধি হওয়ার কারনেই আসলে অভিভাবকের প্রয়োজন হয়। যাতে দূর্বলতার সুযোগ কেও নিতে না পারে, এবং প্রাপ্য অধিকারকে সংরক্ষণ করতে পারেন। অনেক সময় নিজের সঠিক সিদ্ধান্তগুলোকে বাজিয়ে নেওয়ার জন্য তথা আত্মসন্তুষ্টির প্রমিতকরনের জন্য একজন পরামর্শদাতা বা প্রাথমিক পর্যালোচোনার জন্য যে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আনুকুল্য গ্রহন করা হয়, সেটাও আসলে অভিভাবকত্বেরই একটা বিলক্ষন রূপমাত্র।

প্রানীকুলে অভিভাবকত্ব অতিপ্রয়োজনীয় হলেও, আমাদের আলোচ্য মনুবংশীয়দের নিয়ে। যাহারা জীবনীকালের অর্ধেকটা বা তার বেশি সময়কালধরে নিজেরা নিজেদের দেখাশোনা করতে পারেনা, যারা তাদের বিষয় সম্পদ, সামাজিক সমস্যা ও তার নিরাপত্তা, শিক্ষা, তথা প্রয়োজনবোধকে সুরক্ষা প্রদানে অক্ষম, তাদের জন্য অভিভাবক নিতান্তই প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় সত্য হল মানুষ জীনিগতভাবেই পরনির্ভরশীল, এমনকি ভাবনাতেও। তাই অভিভাবকত্বের প্রয়োজন কখনই ফুরিয়েও ফুরায়না। আর এই সরনিতে প্রথমেই আসে যে নাম গুলো সেগুলো হচ্ছে – নাবালক, নির্বোধ ও উন্মাদ। আজীবন এদের অভিভাবক প্রয়োজন, নচেৎ অস্তিত্বের সঙ্কট তৈরি হয়।

অভিভাবকত্ব মূলত চার প্রকারেই হয়ে থাকে। দেখা যাক একনজরেঃ-

জন্মগত সুত্রে প্রাপ্ত।
----------------
এই ধরনের উপরে অভিভাবকত্বে ব্যাক্তির কোন নিয়ন্ত্রন থাকেনা। ব্যাক্তির পছন্দ বা অপছন্দের উপরে নির্ভরশীলও হয়না। আইনত প্রাপ্তঃবয়স্ক হলেই ব্যাক্তি নিজের সিদ্ধান্ত নিতে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে ঠিকিই, কিন্তু তবুও এই ধরনের অভিভাবকেরা জীবনের অনেকটা অধ্যয় জুড়ে বা প্রায় সারাটা জীবনই ছায়া প্রদান করে। অনেকের ক্ষেত্রে এই ছায়া রৌদ্র বৃষ্টি ঝঞ্ঝা ইত্যাদি থেকে অপত্যকে লালন করে, ব্যাক্তির দায়িত্ব পালন করেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এই ছায়া এমন আওতার বাঁধা সৃষ্টি করে যে, বাকি সারাটা জীবন রুগ্ন ফ্যাকাসে হয়ে দূর্বল জীবনযাপন করতে হয়, অথবা দ্রুতই জীবনসায়াহ্ন এসে উপস্থিত হতে পারে ব্যাক্তিজীবনে। একজন জন্মগত অভিভাবকের সদিচ্ছা আর সচেতনতার উপরে অধীনস্ত বা নির্ভরশীল মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ অনেকটা যে নির্ভরশীল সেটা বলাই বাহুল্য। মৃত্যু বা সম্পর্কের টানাপড়েনের ফলে নিকট অবিভাবকের সাথে ছেদ ঘটলে পরবর্তী নিকট আত্মীদের উপরে সেই অভিভাবকত্ব প্রতিসারিত হয়।

শিক্ষক
-------
শিক্ষক হল প্রানীর অন্যতম বড় অভিভাবক। সেই শিক্ষক পরিবারের কেও হতে পারে, বাইরের কেও হতেই পারে। শিক্ষা ছাড়া একজন নাবালক কখনও সাবালক হতে পারেনা, নির্বোধের বোধ জাগেনা, উন্মাদের চেতনা জাগ্রত হয়না, বিবেকের চৈতন্য হয়না। এজন্যই জন্মগতসুত্রে প্রাপ্ত অভিভাবকের থেকে শিক্ষকের গুরুত্ব কোন অংশেই কম কিছু নয়। ভালো আর মন্দের ফারাকটা জানার নামই জ্ঞান। বাক্যের সংযত ব্যাবহারের মধ্যেই সাবালকত্বের মুখ্যস্তর, জীবনের এই পর্বে উত্তীর্ণ হবার পর থেকেই ধীরে ধীরে অভিভাবক নির্ভরশীলতা হ্রস্বত্বর হতে থাকে পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপরে অভিভাবকত্বের অধিকার অর্জন করে। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত কখনই শিক্ষক নামক অবিভাবকের রাহিত্য মেটেনা।

সমাজ তথা পরিবেশ
------------------      
প্রানী জগতের অধিকাংশ প্রজাতিই সামাজিক। আর মানুষ অন্যতম বড় সামাজিক প্রানী। সমাজকে ঘিরেই আমাদের বড় হওয়া। আলোর ঔজ্জ্বল্য , বাতাসের প্রবাহ, আকাশের অসীম অনন্ত, নদীর প্রবাহধারা, ঝর্নার পতন, সূর্যর তেজ, রাত্রির গহিনতা, অরণ্যের নিস্তব্দতা, ঝঞ্ঝার মত্ততা, পাহাড়ের দৃঢ়তা ইত্যাদি। প্রকৃতির থেকে বড় শিক্ষক আর দ্বিতীয়টি নেই, আর শিক্ষক যে অভিভাবক সেটা আগেই উল্লেখ করেছি। সুশীল সমাজের অভিভাবকত্বে আদর্শ মানব আর অপসমাজের অভিভাবকত্বে সমাজবিরোধীর জন্ম হয়।

দল তথা রাষ্ট্র
-----------
মানব জীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সম্পুর্ন সামাজিক। কিন্তু এই সমাজ কোন একটিমাত্র দেহযষ্টি নয়, শত সহস্র আলাদা আলাদা অঙ্গসমাজের সমন্বয়ে গঠিত এই বৃহত্তর মানব সমাজ।  আর প্রতিটি সমাজের নির্দিষ্ট অভিভাবক রয়েছে। সেই অঙ্গ সমাজ গুলির নাম পাড়া- মহল্লা - রাজ্য- রাষ্ট্র- ধর্ম – রাজনৈতিক দল – পেশাদার পরিবার ইত্যাদি নানা নামের হতে পারে । প্রত্যেকের নিজস্ব অভিভাবক রয়েছে, যেগুলো আমাদের অধিকাংশ সংখ্যাগরিষ্ট মতাদর্শী বা শিক্ষায় শিক্ষিত সভ্যরা মিলে নির্বাচিত করেছি। পুরাকালে সামাজিক অভিভাবকত্বের বংশপরম্পরা চলত। যাদের মর্জিতে আমাদের তথা সেই এলাকার পশুপাখিদেরও নিয়তি নির্ধারিত হয়ে থাকে। গণতন্ত্রের অভিভাবক রাষ্ট্রনায়কদের পাশাপাশি, বিচারব্যাবস্থা ও গনমাধ্যমও রাষ্ট্রের অভিভাবক রূপে চিহ্নিত হয়। এই পরিসরে বিরোধীদেরও অভিভাবকত্ব করেন সেই পৃথক সমাজের ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী অভিভাবকগন। একজন সফল অভিভাবক তিনিই, যিনি বিরোধী বিশ্বাসকেও সযত্নে সংরক্ষণ করেন, তাকে প্রতিপালক করেন এবং প্রতিবাদ দেখানোর পরিসর প্রদান করেন। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের অন্তরালে যোগ্যোতার নিরিখে পরিবর্তন হওয়াটাই দস্তুর। অনেক ক্ষেত্রেই জবরদস্তি অভিভাবকত্বের কর্তৃত্ব  দেখা যায়, ক্ষমতা আর সম্পত্তির অবৈধ লালসার এর মূল।

বিভিন্ন মনিষীদের জীবনীকে, সারাজীবনে কৃত কর্মকান্ডগুলির ভাল দিকগুলি ঠিকঠাক উপায়ে অনুধাবন করে নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে পারলে সেই মনিষীগনও জীবনে বড় অবিভাবকের ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীনতা নামক একটা বিশাল শব্দের জন্মই হয়েছে এই অভিভাবক শব্দটির কারনে। কারন অনৈতিক অভিভাবকত্ব না থাকলে স্বাধিনতার প্রশ্নই নেই। স্বেচ্ছাচার, লোভ, ঈর্ষা, ভোগ, লালসা, উন্নাসিকতা, প্রতিনিয়ত কারনে অকারণে দৈহিক ও মানসিক অত্যাচার, আর প্রভুত্বের নেশার মত বিকৃত চরিত্রের লুম্পেন মানসিকতা পুষ্ট বৈশিষ্টগুলো যখন অভিভাবকত্বের সাথে মেশে তখন সেই অভিভাবকত্বকে পরাধীনতা বলা হয়। এই ধরনের অভিভাবকত্ব থেকে মুক্তি পেতেই বিপ্লবের জন্ম হয়।  

আমরা ভাবি, একটা সময়ের পর নিজেই নিজের অভিভাবক হয়ে উঠি আমরা। আসলেও কি সেটা ঘটে আমাদের জীবনে? তা হয়না মোটেই। আমাদের সামনে দুটো পৃথিবী পাশাপাশি থাকে। একটা বস্তুজগৎ অপরটি চেতনার জগত। একটা বিচার করি, সেই মুহুর্তে চোখে যা দেখছি তার পরিপ্রেক্ষিতে, অপরটি অবচেতন মনের ভাবনায়। বস্তুবাদের জগতে নিঃস্ব নিঃসঙ্গ হওয়া আক্ষরিক অর্থে সম্ভব হলেও ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে মানা মুশকিল। কারন জীবিত থাকলে প্রকৃতি সঙ্গ দেবেই, সেটা পক্ষে হোক বা বিপক্ষে। কিন্তু মানসজগতে ব্যাক্তি চুরান্ত একা, যদিনা তিনি কোন সৃজনশীল কর্মের সাথে নিজেকে অনুষঙ্গী করে রাখেন।

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া মানেই পরিনতি বোধ এসেছে এমনটা ধরে নেওয়ার কারন থাকেনা, সেটা প্রাপ্তমনস্কতা ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াশীলতার চাতুর্যতার উপরে নির্ভর করে। প্রাপ্ত মনষ্ক হবার প্রাথমিক শর্তই হল সমাজশিক্ষায় পারদর্শীতার প্রকাশ, আর সেটার ব্যাবহারিক প্রয়োগের নিমিত্ত ভালো আর মন্দের পার্থক্য নিরুপন। ঠিক এই সময়ই চরিত্রে, স্বকিয়তা বোধ বা স্বাধীনচেতা মানসিকতা গুলি প্রকট হয়। উত্তারিধার সুত্রে কর্তৃত্বকারি অধিকাংশ অভিভাবক গন শারিরীক বা মানসিক কারনেই কর্তৃত্ব খুইয়ে ফেলেন, উলটে নিজেকেই তাদের অভিভাবক প্রতিভাত হতে হয়। আরভমাণ বিচারে ইহা একটি সঙ্কটের কাল নিঃসন্দেহে।

একজন শিশু, সে নিতান্তই দূর্বল শরীরের ও বোধহীন। একজন দায়িত্বশীল অভিভাবকের প্রথম কাজই থাকে তার শৈশবকালকে অতিক্রম করিয়ে দেওয়া এবং অন্যান্য অভিভাবকদের সাথে পরিচিতি ঘটিয়ে দেওয়া। একজন ভাল কৃষক ভিন্ন ভিন্ন চাষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পরিচর্যা গ্রহন করেন উত্তম ফসলের জন্য। আলুর জন্য দাঁড়া কাটা জমি, পেঁয়াজের জন্য ফাঁপালো জমি। ধান গাছ যেমন আগে বড় হয়ে নেয় পরে ফুল ফল ধরে, ফল পাকার সাথে সাথেই জীবন প্রক্রিয়া শেষ হয়  তামনই লঙ্কা গাছের চারা শিশুকাল থেকেই ফুলে ফলে বড় হতে থাকে, কিন্তু ভালো ফসল পাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। শুরুর দিকের লঙ্কা ছিড়লেই গোটা চাষ প্রক্রিয়াই ধাক্কা খায় ফলনে। মানব জীবন ফসলের মত এতো স্বল্প সময়ের নয়, তাই এক্ষেত্রে ভালো বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন দূরদৃষ্টিশালী অভিভাবকের প্রয়োজন, যিনি শিশুকে তার গুনের উপর, তার সহজাত চারিত্রিক প্রবৃত্তিগুলোকে অনুধাবন করে, সেই অনুযায়ী তার পরিচর্যা করবেন।

এই সব আবিধানিক আর প্রতিশব্দের বাইরেও একটা অভিভাকত্ব তৈরি হয়, যেটা ভরসা থেকে অভিভাবকত্বে পর্যবাসিত হয়। এটা কোন চিরাচরিত বিশ্বাস থেকে নয়, এটা আসে অন্তর থেকে। যখন দুটো মনের দেওয়া নেওয়া চলে। আমার সকলকিছুতে তোমার অধিকার, তুমি বিনে আমি কিচ্ছু নই- কথাটি বলার সাথে সাথেই নিজের স্বত্তাকে যখন সমর্পন করি, তার সাথে সাথে অভিভাবকত্বের অদৃশ্য লাগামটাও তুলে দিই। আমার আমিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রিয় মানুষটির ভাবনাই আমার ভাবনা হয়ে যায়।

অনেকেই তার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মধ্যে নিজের অভিভাবক খুঁজে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকেন। এ আসলে এক মানসিক তৃপ্তি। যেমনটা ধার্মিক মানুষের দল ঈশ্বরের অভিভাবকত্বে সব ভালমন্দটা ছেরে দিয়ে খোশ মেজাজে জীবন উপভোগ করেন। এটা যতটা না পরাধীনতা তার থেকেও বেশি প্রেম, ভরসা, প্রত্যয় বা আস্থার আতুরাশ্রম।

কিছু মানুষ থাকেন, যারা অতি অল্পবয়সেই অভিভাবক হারিয়ে ফেলেন। নিজের জিম্মা নিজেকেই বইতে হয়, উপরন্তু পরিবার বা বৃহত্তর পরিবার তথা সমাজিক দায়ও ঘাড়ে এসে চেপে বসে। এই পরিস্থিতিগুলো অপরিণত ব্যাক্তিকে চকিতে অনেকটা বড় করে তোলে। পরে যখন সত্যিকারের সময় আসে অভিভাবকত্ব করার, শ্রান্ত মননে তখন সেই কর্মে আর আনন্দ বা শ্বাস নেওয়ার বাসনা অবশিষ্ট থাকেনা ব্যাক্তির কাছে। এমতাবস্থায় সামাজিক প্রথা মেনে বা না মেনে যদি তার সঙ্গী বা সঙ্গিনী জুটে যায় তাকে আক্ষরিক অর্থে অভিভাবক মেনে নিলেও, নিজে কর্তৃত্ব করার মানসিকতা ছেরে বেড়িয়ে আসতে পারা যায়না।

এই পরিস্থিতিগুলো বড় ভয়াবহ সমাজের ক্ষেত্রে। এই ধরনের মানুষগুলো না পারেন অভিভাবক ছাড়া থাকতে, তারা ভাবেন কেন কেও আমায় শাষন করেনা, কেন আমায় কেও যেচে ভালমন্দের জ্ঞান দেয়না। পরক্ষনে একটা অন্য সমাজ থেকে আসা অপর ব্যাক্তি সেই অভাবকে প্রেম ভালবাসা মিশ্রিত অভিভাবকত্ব দিয়ে পূর্ন করার চেষ্টা করলে, স্বাধীনতায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ বলে ধরে নেয়। এভাবেই তার পাশ থেকে প্রিয়জনেরা দূরে সরে যায়, এবং পুনরায় একা হয়ে যায় সেই অবচেতন মনের জগতে। শুরু হয় অবচেতন মনে দ্বন্দ। যেটা মুখে বলছি সেটার আর ব্যাবহারিক প্রয়োগ হয়ে ওঠেনা। যার জন্য অনেকসময়েই অধিক স্বাধীন ব্যাক্তিবর্গ অকৃতদার বা একাকি জীবন যাপন করেন। যেখানে তাকে সাথ দেওয়ার জন্য কেও অবশিষ্ট থাকেনা। অথচ চারিপাশে কত শত লোক প্রকৃতি সমাজ।

অভিভাবক কথাটি শুধুমাত্র পাচটি অক্ষরের মিলিত একটি শব্দরূপ নয়। অভিভাবক আসলে একটি সভ্যতা। যার পৃষ্ঠপোষকতাতে জীবন যৌবন, শিল্প সাহিত্য কৃষ্টি সংস্কৃতি, সম্পর্ক , বিপ্লব এবং ভবিষ্যৎ জড়িয়ে। অভিভাবকত্ব কে মর্যাদা দেওয়া উচিৎ সম্মানজনক পরিসর রেখে, যেখানে থামতে জানাটা জরুরী, আর ফিরত আসার পথটা অটুট থাকে। তার উপরেই নির্ভর করে সম্পর্কের অমরত্ব।

©উন্মাদ হার্মাদ

একটি সম্পূর্ন উন্মাদীয় ভাবনার ফসল
****************************************
(নিজ দায়িত্বে পাঠ করিয়া মর্ম্নদ্ধার করিবেন, কারন ইহার বানানবিধি উন্মাদীয়)
—————————————————————————————

No comments:

Post a Comment