Saturday, 14 January 2017

।। কথোপকথন ও কুয়াশা ।।

- ও , তুমি ছাদে?
- হ্যাঁ, কিছু বলছো?
- বলছিলাম, খাবে না? বাবার খাওয়া হয়ে গেলো। তোমাকে খুঁজছিল?
- এত তাড়াতাড়ি? সবে তো নটা
- ভুলে গেছ নাকি গ্রামের বাড়িতে আছো। এখানে সাড়ে আটটায় খেয়ে শুয়ে পড়ে সবাই।
- না মনে আছে। কালীপূজোর ব্যাস্ততায় রোজ দেরি করে হচ্ছিল বলে খেয়াল ছিল না।
- খেয়াল তো খেয়ায় ভেসে অবন্তিকার কাছে।
- অফ।ঘুরিয়ে কথা বলা কি রিসেন্টলি শিখেছ ?
- না বছর ২ হল।
- সৌম্যের কাছে?
- তোমার কাছে।
- সৌম্যের ফোন আসেনি কয়েক দিন?
- তুমি কিকরে জানলে আসেনি?
- না। আড়ালে গিয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলতে শুনিনি
- আমি তোমার সামনেই কথা বলি। তোমার মতো আমাকে ব্যলকনিতে যেতে হয় না।
- হ্যাঁ। একই অফিসের লোক। অফিস আওয়ারটা যথেষ্ট তোমার কাছে।
- রাত দেড়টার সময় অফিস পার্টি থেকে ফিরি না আমি আর কাউকে বাড়ি পৌছাতেও যাই না।
- আমিও কাউকে রান্নার রেসিপি ফোনে বলি না। কারুর জন্যে টিফিন বক্সে করে পটলের দোলমা নিয়ে যাই না।
- বানাতে জানবে তবে তো নিয়ে যাবে। চায়ে ক চামচ চিনি দেয় সেটা এখনো বলে দিতে হয়।
- ও হ্যাঁ, ভালো মনে করিয়েছো। বাড়ির যা যা জিনিস লাগত মাসে ওটার একটা লিস্ট করে দিয়েছো তো?
- হ্যাঁ। তোমার ড্রয়ারে রাখা আছে।এতক্ষণ হয়ে গেল অবন্তিকা একবার খোঁজ নিল না যে?
- ফোনটা অফ করা আছে।
- কেন? রাতে তো দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বা ফ্রয়েডের থিওরি আলোচনা করতে হবে না?
- রেসিপির খোঁজ নাও গিয়ে। নাহলে আবার ডিমের ঝোল খেয়ে শুয়ে পড়লে তুমি তো খাবে না।
- শেষ বারের মতো এই বাড়িতে। ঝগড়াটা না করলেই নয়?
- আচ্ছা ।
- বাড়িতে বলেছো?
- না। তুমি?
- না।
- কবে বলবে?
- তোমার আগে বলার কথা ছিল।
- মোটেও এরম কথা ছিল না। কথা ছিল তুমি আমার বাড়িতে বলবে আমি তোমার বাড়ি তে
- তো তুমি বাবাকে বললে? সারাদিন ত দেখছি বাবা বউমা বউমা করেই যাচ্ছে। বলে দাও সময় বুঝে
- পারছি না।
- কেন? আমাকে তো হঠাৎই জানালে। বাবাকেও নিশ্চয় পারবে।
- জানি না।
- হুম ।
- মনে আছে ছয় বছর আগে যখন তুমি আমাকে প্রথম দেখাতে আনো, এই কালীপূজোর সময়ই
- হ্যাঁ, বাজি ধরাতে গয়ে ওড়নায় আগুন লেগে গ্যেছিল।
- তোমার বাবা এক ধমকানি দিয়েছিল। রাতে খেতে বসার সময় আমার পাশেএসে বসেছিল। শুধু একটা কথা বলেছিলও। মা লেগেছে নাকি? সেই মুহূর্তে কিভাবে জানি না এই বাড়ির সব চেয়ে আপন জন হয়ে গ্যেছিল।
- হঠাৎ?
- না , আমি আজ বলতে গিয়েছিলাম, আমাকে জিজ্ঞ্যসা করলেন, তর চোখ গুলো শুকনো লাগছে কেন? থেকে যা কয়েক দিন। আমি পারলাম না বলতে।
- দিয়ে ছাদে এসে কাঁদতে শুরু করলে?
- তুমি...তুমি কি করে জানলে?
- আমি আজ বিকেল থেকেই আছি। তুমি খেয়াল কর নি।
- বলতে ত হয়?
- কেন? লজ্জা লাগে নাকি আমার সামনে কাঁদতে?
- হুম
- এক সময় তো একটু জোরে হাওয়া দিলেই কেঁদে দিতে।
- সে সময় তো একজন হাওয়াটা বন্ধ করার জন্যে একজন উঠে পড়ে লেগে যেত।
- সৌম্য লেগে পড়ে না বুঝি?
- চুপ কর
- কিন্তু , দেখ বলতে তো হবেই। ডিভোর্সের কাগজ গুলো তো ভাইফোঁটার পরই চলে আসবে।
- হুম। তুমি শুরু কর। মাকে বল
- পুচকির তো নভেম্বরে বিয়ে। আমি তো আর বিয়ে টা দেখতে পারব না
- এত যখন চিন্তা তড়িঘড়ি ডিভোর্সের ফাইল করার কি দরকার ছিল?
- আমি আগে বলেছিলাম না তুমি?
- বলার কারণ ছিল। সেটা তুমিও জানো। আর বেশি বকো না। তুমি কথা টা শুনে রাতে অবন্তিকাকে কি বলেছিলে রাতে ভুলে গেছো?
- তুমি আমার কথা শুনছিলে?
- বেশ করেছি। ডিভোর্স হওয়ার আগে তুমি বর আমার।
- এই অভ্যাস গুলোর জন্যে.........
- আজ পূর্ণিমা?
- তাই ত মনে হচ্ছে আকাশ দেখে। মা ভালো বলতে পারবে
- বাবুঘাটের ধারে বসে তুমি প্রথম............সেদিনও পূর্ণিমা ছিল। শীতকাল।
- হুম। পূর্ণিমার আলো আর কুয়াশা বিভ্রম তৈরি করে।
- আজ আর কেন করে না?
- চোখ বন্ধ করে আছি বলে।
- খুলতে কি পারি না কিছুক্ষণের জন্যে অন্তত?
- পারি। কিন্তু একজন খুলবে একজন বন্ধ রাখবে সেটা ত হয় না?
- এক সাথেই খুলি। অন্তত চেষ্টা একবার করে দেখি।
- অনেক দেরি হয়ে যায় নি।
- চুল পাকেনি তোমার ।অবন্তিকা বিয়ে করবে নিশ্চয়ই।
- সৌম্যর নিশ্চয় কোন তাড়াহুড়ো নেই।
- না। তাহলে এইবার গিয়ে আর ডিভোর্সের ফাইল গুলো দেখব না। যদি চোখ খুলেও বিভ্রম না তৈরি হয় পরের বছর সিওর।
- আচ্ছা।
- আরে তোমার সাথে গল্প করতে করতে ভুলেই গেছি বাবার ঔসূধের সময় হয়ে গেলো।
- হ্যাঁ যাও।
- যাও না, তুমিও খাবে এসো। আরএই ছেলে মেয়ে গুলোর জ্বালায় দুদণ্ড দাঁড়াব তার উপায় নেই।
- তো ওদের মা দের বল সামলাতে তুমি কেন আগ বাড়িয়ে করতে যাচ্ছও।
- আজব তো। বাচ্চা গুলো আমার কাছ ছাড়া খাবে না আর তুমি বলছ আমি ওদের ছেড়ে দেবো। মেলা বাজে না বকে এসো।
- হ্যাঁ যাচ্ছি
- অমনি ফস করে সিগারেটটা ধরালে। নেভাও। সাড়ে ৯ টা বাজে
__________
© পাপাই রায়

No comments:

Post a Comment