Friday, 13 January 2017

।। সব কিছু কবিতা নয় ।।

সেদিন ভোরে দরজা খুলে বেরোবার পর নীলিমা প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল রানী মাসিমার সঙ্গে। তাকে দেখে চমকে উঠে ছিলেন তিনি। ঠোটের পাশটা কেটে গিয়ে একটু ফুলে রয়েছে। থুতনিতেও বেশ কালশিটে। হাঁটার গতি একটু খুঁড়িয়ে ব্যথাতুর।

" আহা রে মেয়ে।  শ্বশুর ভাসুরের সামনে যাবার আগে মুখখানা একটু আড়াল রাখিস...কি হাল করেছে বাছার.....এভাবে কেউ.... একটু ও মায়া নেই গা...সারাটা রাত একটু ও ঘুমোতে দেয়নি বুঝি?"

চোখ দুটি পাথর মেয়েটির। গতকাল তার ফুলশয্যার রাত ছিল। তার সেই অনেকদিনের স্বপ্ন সাজানো রাত। কত কিছুই তো ভেবে রেখেছিল সে বন্ধুদের কাছে নানা গল্পকথা শুনে।

তার বান্ধবী মিতা বলেছিল, সে আর তার বর নাকি সারারাত গান, কবিতা আর অনেক গল্প করেছিল। সাথে কিছু উষ্ণতাও ছিল বৈকি তবে তা  নাকি ভারি মধুর। এছাড়া অনুপমা, শ্রীপর্ণা,সুমেধা, আত্রেয়ী সবার সবার কাছে শুনে শুনে মনে হয়েছিল এই রাত টা বুঝি ভারি সুন্দর আর স্বপ্নমুখর। তবে তার বেলাতেই কেন?  কেন এসব উল্টোপাল্টা?

কালকের ওই  রাতের কথা ভাবলে এখনো গা কেঁপে উঠছে তার। ভাবছে  কি ভাবে সে আজ রাতে আবার  মুখোমুখি হবে ওই ছেলেটির। কিভাবে খেলবে শরীরের খেলা? কিভাবে করবে সংসার তার সাথে? কিভাবে ভালবাসবে তাকে সারাজীবন?  কিভাবে?  সে কি বলে দেবে সব কথা বাইরের সবাইকে? সেটা প্রকাশ করে দেওয়া কি সাহসিকতা? নাকি ঢেকে রাখাই গৌরবের? এই বৈবাহিক ধর্ষন কি  আদৌ শাস্তিযোগ্য?

কই আজ সারাদিন তার মুখে, গলায় এত কালশিটে দেখেও কেউ তো প্রতিবাদ করলো না তার হয়ে?

যা হয় হোক অষ্টমঙ্গলায় বাড়ি গিয়ে মা কে সব বলে দেবে সে। আর ফিরবে না এখানে। এই কটাদিন না হয় দাঁতে দাঁত চেপে কাটিয়ে দেবে।.........................

.......আজ আবার শ্বশুরবাড়ি  ফিরছে নীলিমা। মা কে বলেছিল সব কথা। দেখিয়েছিল গা খুলে তার ভালোবাসার যত ক্ষত।

  মা ব ল্ল, ওসব একটু আধটু হয়।  সব সয়ে যাবে আস্তে আস্তে। একবার বিয়ে হলে অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হয় মা।

ট্রেণ দাঁড়ালো কি যেন একটা জংশন ষ্টেশানে।

 "তুমি  কিছু খাবে?"তার সামনে সেই অনিন্দ্যসুন্দর কান্তি পুরুষ।  এখন কতো সাবলীল, স্বচ্ছন্দ, সুন্দর আর মায়াময়। কে বলবে যে এই ছেলেটিই রাতের বেলা কি ভীষণ হিংস্র হয়ে ওঠে।

"একটু জল খাব শুধু"। বলে নীলিমা।

সত্যি সয়ে যাবে বোধ হয় একদিন সবকিছু। তাতে কি আছে আস্তে আস্তে না হয় সইয়ে নেবে সবকিছু। কতো কিছু ই তো মেনে নিতে শিখতে হয় মেয়েদের। কি ছেলেমানুষিই না সে করতে যাচ্ছিল সবার সামনে এসব বলে দেবার প্ল্যান ক রে?  ছি: ছি: কি ভাবতো সবাই তার স্বামী কে। তার সব কিছু ঢেকে রাখাই তো তার কর্তব্য।  এমনি করেই একদিন ঠিক মমত্ববোধ তৈরি  হয়ে যাবে দুজনার মধ্যে একসাথে কাটাতে কাটাতে।

ধুর!!! প্রেম বলে আবার কিছু আছে নাকি?  সেও ভারি অবুঝ আর ছেলেমানুষ।  হয়তো ওসব একেবারেই অলীক কল্পনা। সবাই রঙ চড়িয়ে বাড়িয়ে বলেছে তাকে। কিংবা ভারি দুর্লভ আর দুষ্প্রাপ্য কিছু। ওসব সবার ভাগ্যে  কি আর জোটে ?

কিভাবে যেন সময় টা পেরিয়ে তারা গন্তব্যে পৌঁছে যায়। বাঙ্ক থেকে সুটকেশটা নামিয়ে ছেলেটি বলে, "এসে গেছি।।"

নীলিমা নীরবে ছেলেটির পিছুপিছু এগিয়ে চলে।।।।।
____________
© তনিমা হাজরা

No comments:

Post a Comment