Tuesday, 3 January 2017

।। শীত ।।


আমার শহরে শীত পড়েনা। এ’কে বড়জোর ‘না গরম কাল’ বলা যায়। গ্রাম্য শীতের কোন রোমান্টিকতা এখানে নেই। গ্রামের মত এখানে কেউ বাঁক কাঁধে খেঁজুর রসও বেচতে বেরোয় না। সারিবাঁধা খেঁজুর গাছও নেই এখানে। অন্য যেসব গাছ আছে সেগুলো আপাত মাঝারি, মোটা গুঁড়ির গাছতো এখন বইয়ের পাতায়।

   ছেলেবেলায় নারকেল গাছের মাথার ফাঁক দিয়ে ঝুপ করে যখন সন্ধে নামত গা’টা কেমন শিরশির  করে উঠত। বাড়ি ফিরতেই দিদি নিজের হাতে আমার ধুলো হাত-পা ধুয়ে দিতো। পরিস্কার জামা-প্যান্ট সোয়েটার পরিয়ে মৃদু কপটের সুরে চোখ বড় বড় করে বলত “খবরদার যদি আর বাইরে বেরুস ত শীত বুড়ি ধরে নিয়ে পালাবে! আর বাড়ি আসতে পারবিনা!” হা...হাঃ শীত বুড়ি কে, কি কিছুই জানতাম না কিন্তু ভীইই...ষণ ভয় পেতাম।

   রাতের খাওয়া শেষ করে মাঝে মাঝে মামার সাথে হাঁটতে বেরোতাম।হাঁটতে হাঁটতে দেখতাম রাস্তার ধারে কুলি-কামানিগুলো ধুনি জ্বালিয়ে বসে আছে, পড়নে খেঁটো ধুতি বা লুঙ্গি, আবক্ষ এবং আমস্তক কম্বলে মোড়া। “মামা... ওরা কি করছে?” “ওরা হাত সেঁকছে খুব ঠাণ্ডা ত”। খুব ইচ্ছে করত ওদের সঙ্গে আমিও বসে যাই হাত সেঁকতে! সরল মনের কাছে ওটা বড়ই আনন্দের বিষয় ছিল!(আজ বুঝি কি পরিমাণ কষ্ট সহ্য করত ওরা, এবং আজও করে) সকালে স্কুল যাবার সময়ও দেখতাম তখনও  ধুনির ছাই থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

   আর এখন ত ঘুমই ভাঙে সকাল আটটার পর। একটু শীতের আমেজ পেতে অপেক্ষা করতে হয়  উকেন্ড টুরের তাও বিস্তর কাঠ খড় পুড়িয়ে! কোথায় যাব, কে কে যাব, কখন বেরোনো হবে... ইত্যাদী প্রভিতী।
   তবে হ্যাঁ, একটা জিনিস এখনও অবশ্যই পাল্টায়নি ‘নলেন গুড়’। আহা! প্রতি রবিবার বাজার গিয়ে আগে ঐ’টে কিনি! আর শীতকাল  মানেই ত নলেন গুড়ের সন্দেশ, রসগোল্লা। পিঠের  কথা আজ থাক, খিদে পেয়ে যাবে!
   সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পাল্টে যায়, সখও। এখন, যখন মাঝে মাঝে ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠি, হাল্কা ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গরম চা’য়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে বেশ লাগে।

   একটু কি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে লেখাটা? হোকগে! শীতের উত্তুরে হাওয়ায় না’হয় একটু এলোমেলো হলই।
   আর সবচেয়ে প্রিয়... আমার সাধের ‘চিলেকোঠা’! গরমে এখানে আসা মানে “হাফ বয়েল”! পরিযায়ী পাখির মতো প্রতি শীতে বাসা বাঁধি আমার এই সাত বাই চার ফুটের মহলে ‘স্বস্থির নিস্কর্মা’ জীবন যাপন করতে।
   ও হ্যাঁ! এই শীতকালের আগমনের খবর আমায় কে দেয় জানো? “হেমন্তের ছাতিম ফুল”!

___________
© দীপাঞ্জন দাস

No comments:

Post a Comment