Saturday, 14 January 2017

।। নলেনগুড়ের পায়েস ।।

গিলবার্ট কোম্পানির তৈরি অমন একপিস জাঁদরেল গ্র্যান্ডফাদার ক্লক কোনো সদাগরী আপিসের কেরানির হাতে আসবার কথাই নয়! পার্ক স্ট্রিটের রাসেল এক্সচেঞ্জ থেকে সিধা নিউ আলিপুরের কোনো খানদানী ড্রয়িংরুমে শোভা পাওয়াটাই ও'ঘড়ির পক্ষে দস্তুর। তবুও যে ঠাকুর্দা সনাতন আঢ্যি চমৎকার দাঁওখানা মারতে পেরেছিলেন, সে নেহাৎ ইন দ্যা ইয়ার নাইন্টিন ফিফটি তাঁর গুড লাকটা ভালো চলছিল বলে!
   ভাড়াবাড়িটার ঘুপচি ঘরে দিনমানেও আলো ঢোকে না। হারুর মা চলতে-ফিরতে হরদম ঘড়িতে হোঁচট খায়। নেপালবাবু নিজেও খান, কিন্তু প্রাণ থাকতে গ্র্যান্ডফাদারের শেষ স্মৃতিচিহ্নটি তিনি একচুলও সরাবেন না। ঠাকুর্দা ঘড়ির দশা এখন ঠাকুর্দারই শেষ বয়সের মত। এখানে-সেখানে উইপোকাদের মৌরসিপাট্টা, পুরনো পালিশের চটা উঠে উঠে কেসটার গায়ে বিচিত্র সব মহাদেশের মানচিত্র- তা হলেই বা! ওই গুমগুমে ঘন্টাধ্বনি তো এতটুকুও টসকায়নি! শুনলে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়।
   এবাড়িতে শীতের সকালগুলো আড়মোড়া ভাঙে বেশ বাঁধাধরা গতে। চানঘরের দরজাটা বেজায়  অবাধ্য, কিছুতেই খিল আঁটতে চায় না। ঠিক সাতটায় ঘড়িটার প্রথম ঢং আর বেয়াড়া খিলটাকে বশে আনতে আনতে নেপালবাবুর প্রথম 'শালা' উচ্চারণ- এই দুইয়ের সমাপতন এবাড়ির রুটিন। তারপর শোবার ঘরের দিকে যেতে যেতে নেপালবাবু ঠিক আরও ছ'বার সম্বন্ধীকে স্মরণ করেন, প্রতিবার ঘড়ির ঢং-এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে। ভিজে শরীরে শীতের কামড়টা যত জাঁকিয়ে বসে, গলার পর্দায় কাঁপনও তত পাল্লা দিয়ে বাড়ে।
   শেষ 'শালা'টা মুখ থেকে বেরোনোর আগেই কিন্তু  নেপালবাবুকে উত্তরের বক্স জানালাটা খুলে ফেলতে হবে, কারণ টবের তুলসীনারায়ণের এখন   জলগ্রহণের সময়। আদুর গায়ে মাঘের কনকনে হাওয়ার মুখে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো কষ্টকর, তাই 'তুলসী, তুলসী তুমি নারায়ণ'-এর পর বাকিটা তাঁকে 'হুঁ হুঁ' করে সংক্ষেপে সারতে হবে।  বাড়ির লাগোয়া বাজারের একমাত্র নালাটি তাঁর এই জানলার ঠিক পাশে, ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকেই হালকা হবার তাগিদে এখানে আসতে হয়। তাই কষ্টসহিষ্ণু নেপালবাবু যদিও বা কদাচিৎ 'তোমার শিরে ঢালি জল' অবধি অগ্রসর হন, নাকে দুর্গন্ধ ঢোকামাত্র "এই শালা, এটা বারোয়ারি পেচ্ছাপখানা পেয়েছিস? হারামজাদা, তোর বাড়ির দেয়ালে মুতে আসব, দেখবি?" ইত্যাদি বলে চেঁচাতে একরকম বাধ্য হবেন।
   কিন্তু এত কিছুর পরেও কি শান্তি আছে? বাসি ক্যালেন্ডারে মা লক্ষ্মী কখন থেকে একখানি ধুপের অপেক্ষায় বসে আছেন। তা ধুপ ধরাতে গিয়ে হাতের দেশলাই যদি হাওয়ায় নিভেই যায়, নেপালবাবুকেও তো 'ধ্যাশ্শালা' বলতেই হবে! শেষটায় চারবারের চেষ্টায় ধুপ জ্বললে, নেপাল আঢ্যি সেই ধুপ বনবন করে বারকতক মা লক্ষ্মীর সামনে ঘুরিয়ে, ক্যালেন্ডারে মায়ের পায়ের কাছটা খাবলে একবার প্রণাম ঠুকে নেবেন। খাবলানোর চোটে হয়তো বৈশাখের কয়েকটা দিন ছিঁড়ে হাতেই চলে আসবে!
   তা সেসব নিতান্তই আর পাঁচটা দিনের ব্যাপার। আজ দিনটা অন্যরকম।
   আজ বাজারে যাবার মুখে বাড়িওয়ালীর ছেলে সত্যর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সত্য দাঁত মাজার ব্রাশ মুখের ভেতর চিবোতে চিবোতে বলল, "কাকাআউ, ঙাঁ অলছিল... এ আঁসের আড়াটা, অডি এট্টু আড়াটাড়ি..." অন্যদিন হলে নির্ঘাত নেপালবাবু চোখ পাকিয়ে, মুখে ফেনা তুলে তর্ক জুড়ে দিতেন, "ভাড়া! কীসের ভাড়া হে! বলি, দু'বেলা পাম্প চলে না কেন? সিঁড়ির আলো জ্বলে না কেন? কল থেকে জল না পড়ে ছাদ ফুটো হয়ে পড়ছে, আবার ভাড়া! হুঃ!" আজ কিন্তু সেসব কিছুই বললেন না। বরং কন্ঠে মধু ঢেলে বললেন, "বাবা সত্য! আজ তো সবে দোসরা। পেনশনটা তুলতে দাও, তারপর নাহয়...  আহা! তোমাকে কি তাগাদা দিতে হয়েছে কখনও? তোমার বাবা বেঁচে থাকতে কিন্তু..."
   সত্যর পরলোকগত পিতার স্মৃতিচারণ অসমাপ্তই থেকে গেল, দোতলার জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে সত্যর মা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, "মিঠে কথায় ভুলিসনি, সতে! তোর বাপকেও অমনধারা কথার ফাঁদে ফেলেই অক্ত চুষে খেয়েছে!" সর্বৈব মিথ্যা! এলেবেলে একটা দিনে এমন ভয়ানক অনৃতভাষণ শুনলে নেপালবাবুর শিখার কাছটা কি দপ করে জ্বলে উঠত না? কিন্তু, আজকের দিনটা তো আর... আজ নেপালবাবু একটা পীড়িত হাসি হেসে শুধু বললেন, "বৌদি, গরীব ভাইটার কথাও একটু ভেবে দেখুন! আসছে হপ্তায়... কথা দিচ্ছি..."
   হারুর মা ঠিক এইসময়টায় কাজে আসে। সদর দরজার সামনে মনিবের সঙ্গে তার নিত্য ঠোকাঠুকি হয়। আজও নেপালবাবুকে তার নিয়মমাফিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হল। "এবেলা কী রান্না হবে?" গতকাল অবধি নেপালবাবু এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ ঝামটা দিয়ে বলেছেন, "আমার পিন্ডি!" আজ টাকটা বারকতক চুলকে, কী যেন একটু ভেবে নিয়ে বললেন, "দুপ্পুরটা একটু হালকা দেওয়াই ভালো, নইলে আবার... ভাতে-ভাত যা হোক করে দে না!"
   ওই যে বললাম, আজ দিনটা একটু ব্যতিক্রমী। ভাগ্যিস সতে বেটা টের পায়নি! নেপালবাবুর পকেটে আজ কড়কড়ে টাকা। আজ দুধ আসবে, একটু বেশি করেই আসবে, আর আসবে গোবিন্দভোগ চাল। আর...আর, ফেরার পথে মুদির দোকানে একটিবার ঢুঁ মারতে হবে। উমদা কাজু-কিশমিস চাই, সঙ্গে চাই পাটালি, ভালো খেজুর গুড়ের পাটালি।
    আজ নেপালবাবু পায়েস রাঁধবেন। নলেনগুড়ের পায়েস। ছেলেবেলায় শোনা একটা গান গুনগুন করে ভাঁজতে গিয়ে নেপালবাবু টের পেলেন, মুখের ভেতরটা লালায় ভরে যাচ্ছে:

"আযা পিয়া, তোহে পেয়ার দুঁ/ গোরি বাঁইয়া..."

-বেশি লাগবে না? কী বলিস! আরে, পরমান্ন বলে কথা!
-"তা'বলে অ্যাত্ত!" বিস্ময়ে হারুর মায়ের হাঁ বন্ধ হতে চায় না।
-নয়তো কী? দু'কেজি দুধে একমুঠো চাল। সরেস গোবিন্দভোগ। এই হচ্ছে হিসেব, বুঝলি?
-কই, বিশ্বেসদের বুড়িটা সেবার পায়েস দিয়ে গেল... সেই যে গো, মনে নেই? আরে, নাতিটার বাট্টে না কী যেন ছিল... তা, তিনি তো...
-থাম দিকিনি, থাম! ওটা পায়েস হয়েছিল? দুধ একদিকে, চাল একদিকে, আর চিনি আর একদিকে। যেন কারো সঙ্গে কারোর মুখ দেখাদেখি নেই! ওই সাদা ফ্যাটফ্যাটে দুধ-ভাতের নাম পায়েস? ছোঃ!
   ডানহাতে হাতাটা নাড়তে নাড়তেই বাঁ-হাতখানা নেড়ে নেপালবাবু বিশদে বোঝাতে শুরু করেন, "চালটা যখন সেদ্ধ হয়ে আসবে... টিপে দেখে নিতে হয়, বুঝলি? তখন পাটালিগুলো ছেড়ে দিয়ে দুধটাকে ফুটতে দে। যত ফুটবে, তত ঘন হবে। শেষটায় যখন লালচে হয়ে আসবে, দেখবি বুজকুরি কাটছে... তখন আঁচ বন্ধ করে ঢাকনা দিয়ে দাও, ব্যস! খালি নামানোর সময় এট্টু কাজু-কিশমিস ছড়িয়ে দিলেই..." নেপালবাবু জিভের জল সামলান।
   অশ্বথ্ব গাছটার মগডালে একটা পেটকাটি ঘুড়ি আটকা পড়েছে। উত্তুরে বাতাসে বল পেয়ে, ঘুড়িটা আপ্রাণ চেষ্টা করছে বাঁধন কাটিয়ে পালানোর। আওয়াজ হচ্ছে লাগাতার... ফরফর...ফরফর... জানলা দিয়ে একমনে সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন বলেই হারুর মায়ের কথাটা তাঁর ঠিক কানে গেল না।
-কে আসবে বললি?
-ঝুমুদিদি গো! বাচ্চাদুটোরে ইস্কুল থেকে নেবার পথে হয়ে যাবে বলল।
   অশথ্ব গাছের মাথা থেকে মনটা মাটিতে ফিরে আসতে খানিকক্ষণ সময় নেয়। আচমকা হোঁচট খেয়ে কোঁৎ পাড়ার মত থেমে থেমে প্রশ্নটা করলেন নেপালবাবু, "ঝুমু...আসবে! এখানে! মানে, আজ? আজই? মানে, তুই...তুই জানলি কীকরে?" ।
-ওই দেকো! আপনেরে ফোন করে পায়নি বলেই তো, আমায় খপরটা দেতে বলল... বাবু, আমার হারুটার জন্যি এট্টু পায়েস নে যাবো? ও বাবু?"

একসঙ্গে হাজার হাজার ছুঁচ শরীরে বিঁধলে কেমন যেন অবশ-অবশ লাগে। তখন ঠান্ডা হাওয়ার ঠকঠকানিও আর টের পাওয়া যায় না, খোলা জানলার সামনে বসে থাকতে থাকতেই একটু ঢুল এসে যায়। আট নম্বর বিড়িটা দু'আঙুলের ফাঁকে ফুরিয়ে যেতে যেতে ছ্যাঁকা দিয়ে গেল। ঘুম জড়ানো গলায় একটিবার "উরিশ্শালা!" বলে ধড়মড়িয়ে উঠে বসলেন নেপালবাবু।
   বাতিটা জ্বালানো হয়নি। ঘর অন্ধকার পেয়ে পায়ের কাছটা ছেঁকে ধরেছে মশায়। "ধুশ্শালা!" নেপালবাবু পায়ের গোছটা চুলকে নিলেন। রাত কত হল? বাইরেটাও কেমন থমথমে, কেবল অশ্বথ্ব গাছটা থেকে এখনও শব্দ আসছে: ফরফর... ফরফর... ধুশ্শালা!
   ঘরময় তুলোর ওড়াউড়ি। নাতিদুটো দাদুর বালিশ নিয়ে কৌরব-পান্ডব খেলেছে। তারপর যুদ্ধবাজের বুভুক্ষা নিয়েই পায়েস সাবড়েছে, পাক্কা দু'বাটি। তাদের মাও বাদ যায়নি। আরও এক। চক্ষুলজ্জার খাতিরে জামাইয়ের জন্যও টিফিন কৌটো ভরে দিতে হয়েছে। বাকিটা নিয়ে গেছে হারুর মা। পায়েস খেয়ে হারূ কাল সকালে দাদুকে পেন্নাম করতে আসবে।
 
   ফরফর... ফরফর...
"ধুশ্শালা!" ঘুড়িটার মরিয়া প্রচেষ্টায় এবার তিতিবিরক্ত হয়ে ওঠেন নেপালবাবু। উঠে জানলাটা বন্ধ করতে যাবেন, পিছনে একটা 'ঠুং' শুনে তাঁর কান খাড়া হয়ে ওঠে।
   একজোড়া দুর্বল পা একটা ক্ষয়াটে শরীরকে বয়ে এনেছে ঘরের ভেতর। পায়ের আওয়াজে ক্লান্তির ছাপ ঢেকে দিচ্ছে হাপরের মত শ্বাস টানার শব্দ। রোগা মানুষটার লম্বা ছায়া পড়েছে মেঝেতে। আর তার হাত থেকে যে জিনিসটা টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখা হয়েছে এইমাত্র, অন্ধকারেও সেটার দুলতে দুলতে স্থির হওয়াটা দেখতে পেলেন নেপালবাবু। সেটা আর কিছুই নয়, তাঁর পায়েসের হাঁড়ি!
-কী গো? তুমি... এত রাত্তিরে! শরীরটা আবার খারাপ হল নাকি? রোসো, ডাক্তারকে একটা... ধুশ্শালা! ফোনটা আবার কোথায়...
-আহ! থামবে তুমি? অত ব্যস্ত হবার কিছু হয়নি।
-তবে?
   কনকলতার চোখজোড়া কোনদিনই ঠিক পটলচেরা নয়। তবে, শরীরটা রোগা বলেই বোধহয় চোখদুটো এখন বড়বড় দেখায়। সেই বড়বড় চোখদুটো কিছুক্ষণ নেপালবাবুর মুখের ওপর স্থির হয়ে রইল। "খেয়ে নাও।"
-খেয়ে নেব? কী খেয়ে নেব?
-কেন? সারাটাবেলা হাত পুড়িয়ে যা রাঁধলে! শুয়ে থাকি বলে কি খবর পাইনা ভেবেছ? মেয়েরা যখন খাচ্ছিল, বিষনজরে দেখছিলে তো! নাও, যেটুকু আছে, খেয়ে উদ্ধার করো দেখি!
-যাহ্! কী যে বল... ও পায়েস... ও আমি কীকরে খাবো?
-কেন?
-গেল মাসে সুগারের রিপোর্ট দেখে ডাক্তার কী ধমকটাই না দিলে! আবার পায়েস খেয়েছি শুনলে... ওরে বাবা! না না, রক্ষে করো!
   দীর্ঘ চল্লিশ বছরের বিবাহিত জীবনে মানুষটার কীর্তিকলাপ দেখে দেখে, কনকলতা এখন বিস্মিত হতেও ভুলে গেছেন। তবুও কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে ফেলেন, "তবে, অত খেটেখুটে রাঁধলে কেন?"
নেপালবাবু একটা বোকাটে হাসি হাসেন। তারপর আমতা আমতা করে বলেন, "তোমার মনে আছে? ঝুমু তখন খুব ছোটো... রাঙাপিসিমাদের কুলতলির বাড়িতে খাঁটি গুড় আসত। পিসিমা পায়েসটা করতেনও চমৎকার! তুমি সেবার খুব তৃপ্তি করে খেয়েছিলে।"
-হুঁ...
-বাপরে বাপ! এক জামবাটি পায়েস একাই মেরে দিলে।
-যাহ্! মোটেই না।
-"হে হে।" হাঁড়িটার গায়ে পায়েসের চাঁচিটুকু লেগে রয়েছে। নেপালবাবু সেটুকু যত্ন করে তুলে বৌয়ের মুখের সামনে ধরলেন। "নাও, খেয়ে নাও। লক্ষীটি।"
   বুড়োবুড়ি পাশাপাশি বসে পড়েন। খানিকক্ষণ চুপচাপ, শুধু বাইরে থেকে আওয়াজ আসে, ফরফর... ফরফর...
-ডাক্তারের সাথে কাল কী কথা হল গো?
স্বামীকে নতমুখে চুপ করে থাকতে দেখে কনকলতা বলে ওঠেন, "দেখো, ডাক্তার যদি হাল ছেড়ে দিয়েই থাকে, আর ওসব ওষুধপত্তর-হাসপাতালের হ্যাঙ্গাম কেন? এই তো বেশ আছি! না বাপু, আর ওই রে নিতে যেতে পারবো না।"
   নেপালবাবুর মুখে ব্যথাতুর নীরবতা। কনকলতা আবার বলেন, "সমু এমাসে টাকা পাঠায়নি, না?"
উত্তর নেই। নিস্তব্ধ ঘরে কেবল কনকলতার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা যায়।
-শোনো, যেকটা দিন আছি, আমার সামনে অমন গোমড়া মুখ করে থেকো না বাপু! একটু হাসো তো! কী হল?
   সেই বোকাটে হাসিটা হাসতে গিয়ে নেপালবাবুর দু'চোখে জল টলটল করে ওঠে।
-উফ! আচ্ছা, শোনো! এই, শোনোনা... কাল একটু দই-পটল করবে?
   কনকলতার ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি। এবার নেপালবাবুও সত্যিকারের হাসি হেসে ফেলেন। "তোমার মনে আছে? সেবার ভাগলপুরের জেঠুমণিদের বাড়িতে..."
   দুই বুড়োবুড়ির মাঝে একটা ঝুঁঝকো আঁধার এতক্ষণ গুমরে মরছিল। এবার কোথা থেকে একফালি মরা চাঁদের জ্যোৎস্না এসে জোটে। ঠিক নলেনগুড়ের পায়েসের মত তার রঙ।
   আর ঠিক সেই মুহূর্তে, একটা দমকা বাতাস পেয়ে, অশ্বথ্ব গাছের ডাল ছাড়িয়ে পেটকাটি ঘুড়িটা কোথায় যেন উড়ে চলে যায়।

________
© সাম্য দত্ত

No comments:

Post a Comment