Wednesday, 4 January 2017

।। চোর ।।



        চোর-- চোর,ধর -ধর,--বলে দোকান থেকে তেড়েফুঁড়ে বেড়িয়ে আসতে গিয়ে কুড়ি- বাইশ  বছরের জিন্স -টপ পরিহিতা মেয়ে মানসীকে সপাটে ধাক্কা মারে লালজি।মানসীর হাত থেকে মোবাইল ছিটকে পরে। কোনরকমে উঁচু হয়ে বসে  মানসী ছড়িয়ে যাওয়া মোবাইলের যন্রাংশ তুলতে তুলতেই বিরক্তির সঙ্গে বলে--আপনি  দেখতে পাননা?ধাক্কা মারলেন  কেন?
        ষ্টেশনারী দোকানের মালিক  শ্যামাপ্রসাদ লালজি, ।প্রায় খুলতে বসা সাদা কাপড়টা আরো কিছুটা লুঙ্গির মতো শক্ত করে বেঁধে নিয়ে লালজি বলে অ্যা ! ধাক্কা লেগেছে  তো কি হয়েছে?তোমার সোনার  অঙ্গে কালি লেগে গেছে নাকি?চোখের সামনে দিয়ে  পঁচিশ টাকার গ্লাস কেকটা চুরি করে নিয়ে গেল,কই কিছু বললে না তো?
         ও -ও- ও,ওই হাফ প্যান্ট পরা ছেলাটা কেক চুরি করে পালাল বুঝি ?তাতো জানি না।বলে আরো কিছু বলার আগেই লালজি মানসীকে থামিয়ে দিয়ে ভেংচি কেটে বলে --তা জানবে কি করে ?তুমি কচি খুকি তো !
  ----   দেখুন আমাকে অকারণ দোষারোপ করছেন।আমি তো সবে এলাম।তবে আমি জানব কেমন করে, ছেলেটি আপনার কেক চুরি করে নিয়ে যাচ্ছ?
  ----   খুব হয়েছ, নাও।এখন কোন কেকটা লাগবে বলো?
       বলতে বলতেই কয়েকটা ছেলে ওই হাফ প্যান্ট পরা ছেলেটাকে টানতে টানতে লালজির দোকানের সামনে হাজির করে।
                  লালজি আবার সিংহাসন (পড়ুন কাঠের জল চৌকি) ত্যাগ করে ধরফড়িয়ে নেমে এসে কেকটা  হাত থেকে  চিলের মতো ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে দুটো চড় কষিয়ে দিয়ে বলে -কেক খাবে ,কেক?ভাত জোটে না,আবার কেক খাবে।যা এখান থেকে,পালা।
      মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকা রুক্ষ চুলের ছেলেটার কাছে এগিয়ে গিয়ে  মানসী বলে কিরে,তুই কেক চুরি করেছিস?
      ছেলেটা কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।আর বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে দোকানের সামনে জমে থাকা ধূলায় আঁকি বুকি কাটে।
       মানসী আবার বলে কিরে শুনতে পাচ্ছিস না? কেক  চুরি করেছিস? হতভাগা -বলে মানসী ,ছেলেটার দিকে  চড় উঁচিয়ে যায়।
     এতক্ষণ কাঠের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দুচোখ বেয়ে  হঠাৎ -ই যেন অকাল বর্ষণ নেমে আসে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে -- হ্যাঁ, চুরি করেছি।
     লালজি খাতায় হিসাব করতে করতে মুখ না তুলেই মানসীকে উদ্দেশ্য   করে বলে --হয়েছেতো মামনি?এবার বিশ্বাস হয়েছেতো?
    মানসী ছেলেটার মুখটাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে স্নেহময়ী জননীর মতো বলে---কিন্তু কেন চুরি করেছিস,?
      আমি আমার জন্যে চুরি করিনিগো। আমার বনের জন্যে চুরি করেছি।
---তোর বোনের জন্যে!
    কান্না না থামিয়েই ছেলেটি বলে হ্যাঁ,আমার  বোনের জন্যে।একমাস থেকে আমার বোনের জ্বর সারছে না।গত রবিবার  আমার বোন বলল --হ্যাঁরে দাদা,এবার বড় দিনে আমাকে কেক খাওয়াবিতো?ছেলেটা মানসীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে--বিশ্বাস করো --টিন ভাঙা, লোহাভাঙা কুড়িয়ে কাল বিক্রি করে আঠারো টাকা পেয়েছি।লালজিকে বললাম ওই কেকটা দাও, বাকি পয়সা পরে দিয়ে যাব।লালজি বলল- আগে পয়সা নিয়ে আয় তার পর কেক নিয়ে যাবি। ধারে  কেক বিক্রি নেই।কিন্তু আমি এখন পয়সা পয় কোথায়?তাই বোনটার কথা ভেবেই••••
        আর কিছু না বললেও ছেলেটার দু কপোল বেয়ে দরদর গতিতে অশ্রুবারিধারা বিগলিত হয়  ।  মানসীও  ছেলেটাক জড়িয়ে ধরে হাপুস নয়নে কাঁদে।দুজনের চোখের জলে ভাসে যায় দুজনের বড় দিন।এর পর সেই গ্লাসকেকটা ও আর একটা দামি কেক কিনে মানসী ,ছেলেটার হাতে তুলে দেয়।দুদুটো কেক পেয়ে ছেলেটার মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখে মানসী।এক পশলা বৃষ্টির পর রোদ উঠলে পরিবেশটা যেমন  সুন্দর হয়ে ওঠে তেমন মানসী, ছেলেটার মুখে সৌন্দর্য খুঁজে পায়। শুধু খুঁজে পায় না  কে চোর?
    যে    মুনাফাখোর মানুষ  স্বার্থান্ধ অতিলোভ - লালসা,প্রতিহিংসা'র ক্রুশে  নিষ্পাপ ইচ্ছাকে বিদ্ধ করল  সে চোর? না  নিজের জন্য নয়,মনে প্রাণে বোনের ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছিল সে চোর ?
___________
 © তাপস ঘোষ
                                   

No comments:

Post a Comment