ষাট বছরের বতীন সরকার আজ বিছানায়;ভীষনই অসুস্থ। অসুস্থ সে তার প্রিয়তমার জন্য;৪৪বছর যাকে মনেপ্রানে শুধুই ভালোবেসে গেছে,আপন করে গেছে.....সমাজকে তোয়াক্কা না করে;বাবা মার অনুশাসনকে পরোয়া না করে।এমনকি স্ত্রীকেও উপেক্ষা করে শুধুই অনন্ত প্রেমের নেশায় বিভোর হয়েছিল যাকে ঘিরে-সে আজ তার জীবন থেকে চলে যাচ্ছে;বলা ভাল তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।বিছানায় শুয়ে বিরহী বতীনের স্মৃতিতে উঁকি দেয় তাদের প্রথম সাক্ষাৎ-
পনেরটি বসন্ত পার করে সেদিন সে ষোড়শর্ষীয় যুবক।শরীর মনে এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করছিল।হৃদয়ের চারপাশে বহু আকাঙ্ক্ষা ঘুরে বেড়াচ্ছিল অবলীলায়।সেরকম এক সন্ধ্যায় তার সাথে বতীনের প্রথম আলাপ।
অনিকেতের জন্মদিনের পার্টি ছিল সেদিন।বন্ধুদের সাথেয় এসেছিল সে।বুকেতে ভয় কাটিয়ে সা্হসের সাথে আপন করেছিল তাকে।এর আগে বহুবার বতীন দেখেছে তাকে-বহু পুরনো বহু পরিচিত সে।পাড়ার মোড়ে যখন বতীন আড্ডায় ব্যস্ত বা স্কুল গেটের পাশে বা কফিহাউসের সামনে বা বাসস্ট্যাণ্ডে সর্বত্রছিল তার আনাগোনা।তার মোহময় উজ্জ্বলতা উদ্বেলিত করেছিল বতীনকে।তাই পার্টিতে তাকে আপন করতে পেরে বতীন আজ রোমাঞ্চিত-হর্ষিত।
দিন যায়; মাস যায় ;বছর অতিবাহিত হয় তাদের সম্পর্কও মধুর থেকে মধুরময় হয়ে ওঠে।জীবনের প্রতিটি ধাপে সে বতীনের পাশে থেকে বৈতরণী পার করেছে।সেদিন বি.এ পরীক্ষায় ভূগোলে মার্কস কম হওয়ায় কতটা ভেঙে পড়েছিল বতীন।কিন্তু সে এসে তার বিহরতা কাটিয়েছিল।পাড়ার ম্যাচে যেদিন সর্বোচ্চ রান করেছিল কতইনা আনন্দে মেতেছিল তারা বা সেদিন যখন বন্ধু সায়ন হঠাৎ মারা যায়;কিভাবে মেন্টাল সাপোর্ট দিয়েছিল বতীনকে। আর সেই দিনটা, যেদিন মা প্রথম জানতে পেরেছিল তাদের সম্পর্কটা-কতই না বকেছিল কিন্তু পরে বুঝিয়েছিল।কিন্তু পারেনি বতীন তাকে ছাড়তে;বরং ভালবাসা আরো গভীর হয়ে উঠেছিল।বতীন যেদিন বিয়ে করতে রাজী হয়নি কি অদ্ভুত ভাবে সে তাকে বিয়ের পিড়ির দিকে এগিয়ে দিয়েছিল।আর সেই দিনটা যেদিন বতীন প্রথম বাবা হল-এক অদ্ভুত আনন্দে আলিঙ্গন করেছিল তাকে।জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে তাদের প্রেম হয়ে উঠেছিল অনাবিল।
এভাবে সমাজকে তোয়াক্কা না করে;স্ত্রীকে অবজ্ঞা করে বতীন শুধু তাকেই আপন করেছে।লুকিয়ে লুকিয়ে তার সাথে আলাপচারিতার আনন্দ;গোপন প্রেম রোমাঞ্চিত করত বতীনকে।আজও ভুলতে পারেনা হৃদয় মন তোলপাড় করা তাদের প্রথম চুম্বন।
কিন্তু আজ কোনভাবেই এই সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় নইলে মৃত্যু অবধারিত।তাকে ছাড়া এ জীবনের দাম কী?তার বিরহে বাঁচা.....সে তো মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণাদায়ক।সব জেনেও বতীন মৃত্যুকে বরণ করতে রাজী তবু তাকে নয়। এমনই এক সন্ধ্যায় যখন বতীন তার সাথে গভীর আলাপে মগ্ন;তার ছেলে অতনু দেখে ফেলে তাদের।ভয়ে লজ্জায় মুছরে যায় বতীন।কিন্তু আর না;আজ অতনু তাদের বিচ্ছেদ ঘটাবেয়।কারন সে বাবাকে হারাতে চায়না।তাই তাকে জোর করে টেনেএনে ঘারধাক্কা দেয় রাস্তায়।ঘরের ভিতর থেকে বতীন দেখে সে রাস্তায় মুখ থুবরে পরে আছে।এক অব্যক্ত কান্না অশ্রু হয়ে ঝড়তে থাকে বতীনের চোখ থেকে।যেন কেও তার হৃদয় উপরে নিয়েছে। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয়েছে বতীনের দিকে
তার গায়ে জ্বলজ্বল করছে.......স্মোকিং ইজ ইনজিরিয়র টু হেলথ।
_______© ব্রততী
No comments:
Post a Comment