Saturday, 10 December 2016

।। বগাদার কীর্তি ।।

বিশাল কান্ড, বিষম লাগার জোগাড়। মাথাটা এখনো বোঁ বোঁ করছে।
কি কান্ড কি কান্ড?
আহা, সবুর করো একটু। বলছি তো রয়ে সয়ে।

সকাল সকাল বগা দার ফোনে ফোন।(বগা দার সকাল বেলা এগারোটায়।😉) আড়মোড়া ভেঙে কুতিয়ে কাতিয়ে আধখোলা চোখে ফোন ধরে বলে 'হালও'।

ফোনের ওপার থেকে " বগাই চন্দ্র মাইতি, আপনার আমার সবার প্রিয় বিদ্যালয় সাবাড়া রামকৃষ্ণ বিদ্যাভবন এর পঞ্চাশ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে এক মহাঅনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়েছে। সমস্ত প্রাক্তনী দের জানানো হচ্ছে আমন্ত্রণ। আপনি 2 রা জানুয়ারী আমাদের স্কুলে এলে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হবো"  বগা দা প্রথম দিকে কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু শম্ভু দা এমন গড়গড়িয়ে রিডিং পড়ে গেল যে, বগা দা বিছানার উপর সোজা হয়ে বসে, হচ্ছে টা কি বোঝার চেষ্টা করলো। মাথার চাঁদি তে হাত দিয়ে একটু খুঁটিয়ে ভয়মিশ্রিত গলায় বললো, -

আচ্ছা, আপনি কে বলছেন যদি একটু বলেন?
শম্ভু দা এবার ফুল ফর্মে। সেই পেটেণ্ট করা স্টাইলেই বলে উঠলো, " ওই বগা, মেরে না আমি তোর চামড়া তুলে নেব। ইয়ার্কি হচ্ছে?" যাহ তেরি। বগা দা হোস্টেল এ থাকার সময় শুকদেব স্যারের ঝাড় খাওয়ার পর যেমন গুটিয়ে যেত, আবার ঠিক তেমন ভাবে অনেকদিন পর গুটিয়ে গেল। পিঠে অভ্যাসবশত হাত ও চলে গেল। আছে তো চামড়া?
"আমি তোদের শম্ভু দা বলছি রে। তাড়াতাড়ি চলে আসবি। তখন কথা হবে।" বগার ধড়ে প্রাণ এলো, উত্তেজিত হয়ে অনেক কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই টুং টুং করে ফোন টা গেল কেটে।

বগাদা তো আনন্দে অস্থির। লাফিয়ে একছুটে বাইরে। সামনেই ঝাঁট দিছিলো তার বউ পুঁটি। আনন্দের চোটে তাকে কোলেই তুলে ফেললে।"  শোনো গো শোনো।আমাদের ইস্কুলে রিইউনিয়ন হবে। আমি তো যাবোই"। পুঁটি পুরুনদা স্কুলের মেয়ে। আমাদের থেকে ওরা অনেক যুগ পিছিয়ে। বোঝেই না এসব। মুখ বাঁকিয়ে যেই না বলে,' না যাবে না তুমি।' বগাদার তালু গেল গরম হয়ে। দিলেই ওখান থেকে পুঁটিকে নিচে ফেলে। বিয়ে ভেঙে গেলে ভাঙুক। কিন্তু বগাদা আসবেই দু তারিখে।ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত এখন সে।

বগাদাকে এতক্ষন এ অনেকেই চিনতে পেরেছেন নিশ্চই। হা হা। সেই বগা, যে স্কুলের পেছনে বাঁশবাগানে বিড়ি ফুঁকত। ও আপনি ও ওর ফেলে দেওয়া বিড়ি তে টান দিতেন? হেঁ হেঁ। আপনি তাহলে তো কর্তা এর থেকে ও বেড়ে।
 ধুর মশাই, আপনি এখনো চিনতে পারছেন না? আরে, আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় পলুদার পরীক্ষার খাতায় ওর নাম কেটে যে নিজের নাম লিখে দিয়েছিল। যার জন্য টানা তিন দিন নীল ডাউন থাকতো। এবার বুঝছেন।
 তাহলে, আর দেরি কেন চলে আসুন। আসছেন সব্যসাচী দার মতো প্রখ্যাত প্রাক্তনী। আর বগাদা ও তার চেলা আমরা তো আছিই।

     দু মলাটে বাঁধার আগে বসবে আসর। শুনবো "বগাদার কীর্তি"। আমার মাথায় চাঁটি দিয়ে ইতিমধ্যে বলা হয়ে গেছে, সব মন দিয়ে লিখবি। বানান ভুল হলে, আবার প্যান্টের ভেতর ঘুরঘুরে ছেড়ে দেব। হোস্টেল এর সেই রাতের কথা মনে পড়ায়, আমি দ্বিতীয় ভাগ এনে  জোরকদমে পড়ছি।

___________
© সাফিন আলি

No comments:

Post a Comment