Sunday, 4 December 2016

।। অথঃ কৃষ্ণধন কথা ।।

অথঃ কৃষ্ণধন কথা
------------------
(আপডেট)

চতুর্দিকে একটাই রব এখন কালোটাকা।

তাহলে কালো টাকাটা ঠিক কি বস্তু?

পাতি বাংলাতে ট্যাক্স না দেওয়া রোজগারই হল কালো। তাহলে কালো টাকা কারা কামাই করে? আপনি আমি সকলেই কালো টাকা জমা রাখতে পারি, রাখিও। কিভাবে? আমাদের সামান্য জমির ট্যাক্সটুকু দিইনা, কোথাও থেকে অতিরিক্ত ইনকাম করলে সেটা প্রতিবেশী –আত্মীয় এমনকি বউকেও লুকিয়ে যাই, সরকার তো কোন ছাড়। আমরা হলাম জনগন, রাজনীতিই হোক বা ধর্মনীতি আমাদের মতটার বাইরে যে কোন প্রকার মতকে আমাদের অমিত প্রতিভাবলে অস্বীকার করি।

আসলে আমরা অধীনস্ত থাকতে ভালবাসি। তা সে আগে রাজার রাজত্বেই হোক বা গনগন্ত্রে নেতার অধীনে। ধর্মীয় ভক্তিবিশ্বাসেও আমরা সেই অদৃশ্য ক্ষমতার দাস মনে করি। সুতরাং সকল প্রকার প্রভুদের দক্ষিনা দিতে হয়। ধর্মে যেটা দান, রাজ বা গণতন্ত্রে সেটাই খাজনা। আমার আয়ের একটা অংশ ক্ষমতাধরদের উদ্দেশ্যে ভেট চড়ানো, যাতে আমার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকে। ধর্মে নিয়ম থাকলে তাতে প্রতক্ষ্য পেয়াদা পাঠিয়ে শাস্তির বিধান বা নমুনা কোনটাই নেই। কিন্তু আগে রাজতন্ত্রে এখন গনতন্ত্রে তার জো টুকু নেই। রায় মহাশয় বলেই গেছেন, বাকি রাখা খাজনা- মোটে ভাল কাজ না। সুতরাং খাজনা বা কর বা ট্যাক্স আপনাকে দিতেই হবে। সমস্যা এখানে হয়না কখনই, আয় করব তাতে রাষ্ট্রকে তার আইন মোতাবেক কিয়দাংশ দিতেই হবে। কিন্তু সমস্যা তখন হয় যখন আমরা সেই রাষ্ট্রের নিয়মকে কাঁচ কলা দেখাই। বা রাষ্ট্র যখন রায়মহাশয়ের কায়দায় বলে উঠেন- কম খেলে নাহি খেদ- বেশি খেলে বাড়ে মেদ।

কর ফাঁকি রাষ্ট্রের চোখে অপরাধ, কারন রাষ্ট্র যদি ইঞ্জিন হয় তাহলে কর তার জ্বালানি। এখন করফাঁকি দেওয়া অপরাধ, কিন্তু রাষ্ট্র সর্ব শক্তিমান হয়ে কখনও কখনও গুলিয়ে দেয় তার প্রশাসন যন্ত্রের দ্বারা, যে এরা আসলে চোরের সমতূল্য বা ততোধিক। ট্রেনকে জনগনের সম্পত্তি বলে জ্ঞান করি। আর আমিও জনগন, তাই ফ্যান লাইট গুলো না খুলে নিয়ে এলেও দায়িত্ব নিয়ে বিনা টিকিটে যাতায়াত করি। নিজের তো তাহলে টিকিট কাটব কেন? মিনিবাস না হলে যারা, এক গেট দিয়ে উঠে অন্য গেট দিয়ে নেমে যায় টিকিট না কেটে, তাদের সাথে করফাঁকির দায়ে অভিযুক্তকে একপাত্রে গুলিয়ে দেওয়া হয় চতুরতার সাথে।

একজন ভিখারীও কালো টাকা রোজগার করতে পারে, যদি না সে তার আয়ের উৎস রাষ্ট্রকে জানায়। কর ব্যাবস্থা রাষ্ট্রের একমাত্র চালিকাশক্তি। সেটা প্রত্যক্ষ কর হোক বা পরোক্ষ কর। প্রত্যক্ষ কর হল ইনকাম ট্যাক্স, সেল ট্যাক্স, ভ্যাট, সার্ভিস ট্যাক্স ইত্যাদি। পরোক্ষ ট্যাক্স রাষ্ট্র তার নিজ ব্যাবসা থেকে আমদানি করে বা ব্যাক্তি পুঁজির উপরে লাগু করে। যেমন শুধু আমদানির হিসাবে যে পেট্রোল ভারতের বাজারে লিটার প্রতি ২৬ টাকায় পাওয়া উচিৎ ছিল, সেটা কিনতে হয় কমবেশি ৭০ টাকাতে। সুতরাং ৪৪ টাকা হল পরোক্ষ কর। আমাদের দেশের আয়ের মোটামুটি ১৮% প্রত্যক্ষ কর থেকে প্রাপ্ত। বাকি সবটাই পরোক্ষ কর।

আমাদের ১৩০ কোটির মাত্র দেড় কোটি মানুষ ইনকাম ট্যাক্স দেয়। শতাংশের বিচারে ১% মাত্র। যার মধ্যে ৮০% চাকুরিজীবি আর অবশিষ্ট ২০ % ব্যাবসাদার। এটাই আমার মতে কালোধন জমা হওয়ার সবচেয়ে বড় কারন। আমাদের দেশে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার নিয়মে IT File ম্যান্ডেটারি করলেই অনেকটা লাভ হত বলে আমার ধারনা। ট্যাক্স দিক বা না দিক, সকলের রোজগার খাতার সারাংশটা তো রাষ্ট্রের কাছে রইল। এখন প্রশ্ন কালো রোজগার বন্ধ না হলে কালো টাকা জমা বন্ধ হবে কিভাবে?

আমার ৫০ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে। তার থেকে একটা রোজগার হয়। আমি যদি কালো টাকা রোজগার করি, সেটাও আমি বেশি বেশি করে দেখাবো, যে আমার এই বিপুল রোজগার কৃষি থেকে এসেছে যেটা সম্পূর্ন কর মুক্ত। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমার জমি আমার আসলে খাতায় কলমে, হয় সেটা ভেস্টেড, বা ভাগচাষী বর্গাদারেররা চাষ করে আমায় যৎসামান্য দেয়। কিন্তু এই কাগজগুলোর আড়ালে কালো টাকা ফুলে ফেঁপে উঠছে। এই কালো টাকা কিভাবে বন্ধ করবে সরকার, এই ১৩০ কোটির দেশে? আমাদের পাড়ার বিভিন্ন শ্রেণীর ৫০ জনকে শুধিয়ে দেখিছি, ৪৪ জনই তেমন কিচ্ছুটি জানেনা আয়কর সম্বন্ধে। সুতরাং শিশুমনের ভিতরেই এটা গেঁথে দেওয়া দরকার। অ এ অফিসারেরা আসবে তেড়ে... আ এ আয়করটি দেবো বেড়ে... এই ধরনের কিছু চালু করলে সকলের কাছে একটা সম্যক প্রাথমিক ধারনাটুকু জন্মাবে।

কালো টাকা আমার কাছে কালো। কিন্তু আমি যখন বাজারে গিয়ে দু কিলো খাসির মাংস ১২০০ টাকায় কিনলাম, বা এক কিলো গলদা চিংড়ি ১০০০ টাকায় কিনে নিয়ে বিজয়ীর হাসি হেসে বাড়ি ফিরলাম, টাকাটা কিন্তু সাদা হয়ে গেল। কারন ওই মাংস বা চিংড়ি বিক্রেতারা প্রান্তিক মানুষ। তারা করের আওতাতেও আসেননা।
এভাবেই কালো টাকাগুলো বাজারে খাটে, যেটা বাজার অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। যতটা না একলপ্তে বার ঢের বেশি ছোট ছোট প্রকারে এই ভাবে।

তৃতীয় শ্রেনির একটা কর্মচারীর ঘুষের ৫০০০ টাকা বা সরকারি স্কুলের একজন শিক্ষকের গৃহশিক্ষকতা করে রোজগারের কালো টাকা ভোগ্যপণ্যের পিছনেই ব্যায় হয়ে যায়। ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন বাড়ে, কর্মদিবসের সৃষ্টি হয়। রোজগার ছড়িয়ে পড়ে। ফ্রিজ,  টিভি,  মোবাইল,  মোটরসাইকেল, বাথরুমের টাইলস থেকে সৌখিন বালিশ, লেপ, কম্বল সবটাই এক্সট্রা ইনকামের টাকায় কিনি। আর কে কবে চেক দিয়ে কিনেছি? সবটাই নগদেই কিনেছি। মুষ্টিমেয় কিছু শহুরে বা উৎসাহী মানুষ ছাড়া বাড়ির খাবারের চালটা আলুটা কবে চেক বা কার্ড সোয়াইপ করে কিনেছি।  সবটাই নগদে লেনদেন, সেটা সাদা তে হোক বা কালোতে। তাই দুম করে নগদের যোগান বন্ধ করা মানে সুস্থ শরীরে ইচ্ছাকৃত বিষ প্রয়োগ। তাতে মৃত্যু না ঘটলেও যে ঘাগুলো ক্রমে ফুটবে সেটা সারতে বহুবছর লেগে যাবে।  তাই কালোটাকা রুখতে কালো রোজগারের পথটা কঠোর পথে বন্ধ করতে হবে।

কালো টাকা বাজারেই থাকে, সেটাও রোজকার অর্থনীতিরই অংশ। আর এই সত্যটা ঠিকঠাক না অনুধাবণ করে ডিমানিটাইজেসনের ফলে আজকের এই অচলাবস্থা। একটা ফোঁড়া হলে পাশ করা বড় ডাক্তার  নানা পরিক্ষা করে দেখবেন, যে সেটা কাটতে গেলে কোন স্নায়ু বা শিরা আঘাতপ্রাপ্ত হবে কিনা, কিন্তু হাতুড়ে? ধর রোগী চালা চাকু। আরো ভয়ঙ্কর হচ্ছে সমাজ বিরোধীর চাকু আর ডাক্তারের চাকুর পার্থক্যটাই বুঝতে হবে।
শুরু থেকেই ফলাও করে বলা হচ্ছিল জঙ্গীগোষ্ঠী গুলো ভয়ঙ্কর ভাবে জব্দ হবে। কিন্তু বাস্তব কি তাই বলছে? পড়শি দেশের জঙ্গি হামলা মোটেও কমেনি নোট বাতিলের প্রভাবে, রাষ্ট্রের সেই দাবি ফোলা বেলুনের মতই চুপসে গেছে। সংবাদে প্রকাশ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর আমাদের ২৫ জন বীরসেনা শহীদ হয়েছেন। আর দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী একজন ব্যক্তিপূজাতেই ব্যস্ত।

বর্তমান রাষ্ট্র জনগনকে অবশ করে রাখতেই উৎসাহী। তাহলে যন্ত্রনা ভুলে থাকবে। তা সে রাজ্যই হোক বা কেন্দ্র। রাজ্য মিছরির ছুরি। নাচ গান উৎসব অনুদান ছুটি ইত্যাদি দিয়ে ব্যাথা ভুলিয়ে রেখেছে। কেন্দ্র আরেককাঠি সরেস। সেই প্রাচীন প্রবাদ "একটা লাঠিকে না ভেঙ্গে কিভাবে ছোট করবেন, সিম্পল - পাসে একটা বড় রেখে দাও। আপনা থেকে আগেরটা ছোট দেখাবে।" তাই কেন্দ্র কখনও গোমাংস, কখনও সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতি, শিক্ষাক্ষেত্রে জবরদখল, মেকি জাতীয়তাবাদের হুজুক আর এখন অর্থনীতিকে কোমায় পাঠিয়ে মানুষের রোজকার মৌলিক সমস্যাগুলোর মোকাবিলাতে বালির বাঁধ দিয়েছেন। জনহিতে করছি বলে বিজ্ঞাপনের অন্ত নেই দেশজুড়ে। কিন্তু কোন দিশাতে? শুধালে শুধু প্রাক্তনদের ব্যর্থতার তুলনা আর দেশদ্রোহীতার ছাপ্পা পাওয়া যাচ্ছে। আরে বাবা আগের সরকার ব্যর্থ বলেইনা আপনারা দায়িত্বে এসেছেন।

অনেকে ঘোলাজলে মাছ ধরতে ব্যাস্ত। ক্ষুদ্র আর মাঝারি ব্যাবসায়িদের জন্য। রাষ্ট্রই কেন শুধু খুচরো ব্যাবসায়িদের কথা ভাববে, তারা যদি রাষ্ট্রকে না দেখে? দেশের ৮০% ব্যাবসা খুচরো হলে সেখানেও তো আয় হয়, সেই আয় এই ব্যাবসায়িরা সরকারের কাছে গোপন করে কেন?  নুন্যতম প্রভিশ্যনাল ট্যাক্সটুকু সকলে নিজের নিজের মত করে রাষ্ট্রের খাতায় জমা করলে রাষ্ট্রকে এতো ফন্দি বের করতে হতনা। বিন্দু বিন্দুতেই তো সিন্ধু হয়। সদিচ্ছাটা আসলে আমাদেরও নেই। আমরা একটাই পারি দোষারোপ করতে। সকলে ভুল শুধু আমিই ঠিক এই ভাবনার সংক্রমন মারাত্বক। যেটা রাষ্ট্র থেকেই খানিকটা ছড়াচ্ছে।

যুগেযুগে পন্ডিতরা বলে এসেছেন পেটে টান পরলে মানুষ ধর্মগ্রন্থ ছিঁড়ে খায়। এ পরিস্থিতিতে সেই পেটেই লাথ পড়েছে। তাই রাজনীতির রং, দল, জাত, সাদা কালো ভুলে এই নরনারায়ণের দল কিন্তু রাষ্ট্রের এই ভাঁওতাবাজিতে খুব বেশীদিন আচ্ছন্ন থাকবেনা। আমারা জনগন আসলে দারুন স্বার্থপর। যতক্ষন নিজের প্রয়োজন ততক্ষনই আমরা আগুনখেকো বিপ্লবী, নিজের টুকু মিটে যাক, পরক্ষনেই মৌনি মনমোহন। রাষ্ট্রের কর্তারা ক্ষমতার দম্ভে ভুলেগেছে তোষামোদি বংশদের দল সবার আগে পালটি খাবে। রাজনীতির যন্তরমন্তর ঘর থেকে মগজধোলাই করে যে নমুনাগুলোকে আপনাদের হয়ে চেঁচিয়ে বাজার গরম করে রেখেছে, আপনার থেকে উন্নত যন্তরমন্তর নিয়ে হাজির হলেই তারা ওদের হয়েই চেল্লাবে। ভুলে যাবেননা তাদের মগজটাই ধোলাইয়ের জন্য উপযুক্ত বলেই আপনি টুপি পরাতে পেরেছিলেন। তখন  আপনারা না ঘরের থাকবেন না ঘাটের।

জানুয়ারি ২০১৭ সাল থেকে নাকি বেনামি সম্পত্তির উপরে নজর দেবে রাষ্ট্র। নামের আমি নামের তুমি নাম দিয়ে যায় চেনা। বেনামী সম্পত্তি গুলোও তো রাজনেতা আমলা আর তাদের প্রভু বৃহৎ পুঁজিপতিদেরই নামে!! ঠগ বাঁচতে গাঁ উজার হবে। বৃহৎ হনু আর রাজনীতির কারবারিদের সম্পর্কটা মিথোজীবিও। ভোটের সময় পুঁজি প্রয়োজনীয় নোটের যোগান দেয় যেটা সম্পূর্নটাই কালো, আর ক্ষমতায় এসে নেতা আমলারা সেই ঋণ কড়ায়গণ্ডায় চুকিয়ে দেয়। কারণ সামনের ভোটে একে আবার দরকার। গরীবের পেটে রোজ লক্ষ কোটি গরীব জন্মাচ্ছে, কিন্তু দেশে আম্বানী আদানী টাটারা মুষ্টিমেয় এবং সঙ্ঘবদ্ধ। তাই তাদের চটিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা দায়। সালমান খানের কিক সিনেমার কিছু দৃশ্যের কথা খেয়াল করলেই অনেকটা বুঝে যাওয়া যায়। সম্পত্তি যারা বানায় বা যারা কারবারি তারা রাষ্ট্রেরই তৈরি শিক্ষিত এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের মদতেই তাদের থেকে বেশি চালাক।

ডিসেম্বর, ২০১৬ মাসটা আগে কেন্দ্র সসম্মানে উৎরাক তারপর জানুয়ারি। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, কেন্দ্র সরকার বেশ খানিকটা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যাবে ২০০৯ সালের রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের মত। কারণ নিজেরা যে সারমেয়গুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল প্রশ্নকারীর পায়ে কামড়ানোর জন্য, রেস্ততে টান পড়লে সেই মালগুলোই প্রভুদের ছিঁড়ে খেতে দ্বিতীয়বার ভাববেনা। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এভাবেই হয়।

গ্রামেগঞ্জে বেকারের সংখ্যা রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গতমাসেও একটা ভালো ড্রাইভারের জন্য মাথাকুটে মরেছি। আজকাল রোজ সকাল হলেই ২-৪ জন কর্মপ্রার্থী অফিসে আসছেন, যার ভিতরে একজন ড্রাইভার তো আছেনই। মুম্বই সুরাটে যারা কাজ করতেন গহনা শিল্পে, তারা ফিরে আসছেন। পর্যটন শিল্পেও মন্দার দরুন বেকারত্ব। এনারা না জানেন মাঠের কাজ, না সম্মানের খাতিরে ভ্যান রিক্সা চালাতে পারবেন। তাই চার দেওয়ালের ভিতরে স্থানীয় কোন প্রতিষ্ঠানে মোট বওয়ার কাজ হলেও সেটাই চাইছেন। গতকাল দেখি মুটিয়া দলের কয়েকটা লেবার দামি মোটরবাইক নিয়ে কাজে এলেন। সর্দারকে শুধাতে জানলাম, গাড়িটা আগের কেনা যখন বাইরে ছিল। এখন ওই গাড়ি আর তার স্ট্যাটাস রক্ষা করার জন্য এই ঘেড়াটোপের আড়ালে ভদ্রশিক্ষিত সন্তানের মুটেগিরি করা। এরা তবুও আপাতত ভাবে বেঁচে গেল, কিন্তু যারা এটাও করে উঠতে পারলনা?

আমাদের ব্যাবসা সূত্রেই সমাজের নানান শ্রেণীর সাথে রোজ উঠাবসা। তেমনই একজনের কাছে কৌতূহল বসতই জানলাম, পতিতা পল্লীগুলোর অবস্থা শিউরে উঠার মত, কাষ্টমার নেই। কারন এখানে সাধারনত সমাজবিরোধী, "কালো টাকার" কারবারি আর স্কুল কলেজের ছেলেছোকরাদেরই মূল আনাগোনা, যেখানে নিষিদ্ধ ফুর্তির আসরে নগদ টাকার ফোয়ারা ঝরে। অথচ এই পরিস্থিতিতেও রোজ এই আদিম পেশাতে অনেকেই পেটের জ্বালায় ভিড় জমাচ্ছে। এখন বলুন কে কার্ডে পেমেন্ট করে বেশ্যাবাড়ি যায় বা যাবে? রাষ্ট্র বোধহয় সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা এই ব্যাবসাতেই দিয়েছেন।

শীতে ফুল ও ফুলগাছের ব্যাবসা এককথায় ধ্বংস,পেটে খাবে না বাড়ির রূপচর্চা করবে! আমাদের জেলাগুলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা, শান্তিপুর-ফুলিয়া- ধনেখালি-সমুদ্রগড় ইত্যাদিতে তাঁতের ব্যাবসায় সেলাইন ঝুলছে। কারিগরেরা অধিকাংশেই ঘরে ফিরে গেছে। কারণ উৎপাদিত কাপড়ের খরিদ্দার নাই, তাই নতুন উৎপাদনও নেই। অকপট গ্রুপে এক বন্ধুর লেখাতে জানতে পারলাম চালের এক্সপোর্ট বন্ধ। সুতরাং তার সাথে জুড়ে থাকা ঠিকাশ্রমিকগুলোও কর্মহীন। কন্টেনার ট্রেলার তাদের ড্রাইভার মালিকেরা কড়িকাঠ গুনছেন। কৃষির কথা আর নাই বা বললাম, সমগ্র সংবাদ মাধ্যমে এখন শুধু এটাই খবর।

মুম্বয়ের গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া বা দিল্লির ইন্ডিয়া গেট ভারতের বিজ্ঞাপন হতে পারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রাম আর সেখানকার জনজীবনই কিন্তু আসল ভারতবর্ষ, আর প্রকৃত ভারতবর্ষের চিত্রটা হল- শুধু একটা কথা বলি শস্যগোলা বর্ধমানের গতমাসেও যেখানে ধানের দাম ছিল চাষির বাড়িতে ৯০০ টাকা প্রতি ৬০ কেজি, সেটা আজ সন্ধ্যার পাকা খবর ৬০০ টাকা। চাষের খরচা উঠবেনা। মানছি নতুন ধান কিন্তু অন্যান্য বছরে সেই ফারাকটা থাকে ৫০-৭০ টাকার মত। রাষ্ট্র গর্ব ভরে ঘোষনা করবে কোল্যাটারাল ড্যামেজ।

প্লাস্টিক কার্ড হলেই দেশ ডিজিটাল হয়না। কারন আমরা কার্ড দিয়ে সেই নগদ টাকাই তুলি, ব্যাঙ্কের বদলে ATM থেকে। আমাদের দেশে অনলাইন সপিং করি, কিন্তু পে অন ডেলিভারি সিস্টেমে। এই তো আমরা ডিজিটাল দেশের নাগরিক।

দেশ ডিজিটাল হবে কিনা, সেটা সময় বললেও রিংটাল যে হয়ে বসে আছে সেটা বলাই বাহুল্য।

© উন্মাদ হার্মাদ

No comments:

Post a Comment