Tuesday, 20 December 2016

।। অভ্যাস ।।


কফি খাওয়ার আমার অভ্যাস নেই। আমি ব্যাচেলর মানুষ। সাধারণত ব্যাচেলরদের সকালটা শুরু হয় চা এর সাথে সিগারেটের পাছায় হালকা চুমুতে। বিছানায় শুয়ে বাসি মুখে সিগারেটের পাছায় চুমুর যে অনুভুতি তা প্রেয়সীর নরম অধর কেও হার মানায়।

গত কিছুদিন ধরে কফি খাচ্ছি। কফি কেনার মত বিলাসিতা, সামর্থ্য বা সাহস কোনটাই আমার নেই। কফি দিয়েছে টুনি। ভালোবেসেই দিয়েছে। সে কফির প্যাকেট গুলোও সুন্দর। দারুন ঘ্রাণ। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে না খেয়ে গায়ে মেখে ঘুরে বেড়াই। গোলাপ জলের মত এর ওর গায়ে ছিটিয়ে দেই। কফির ঘ্রানে সুবাসিত হোক জনতা। রাতে গায়ে কফি মাখতে গিয়ে দেখি কফি শেষ। এখন শরীরটা চিড়বিড় করছে। অভ্যাস বড় খারাপ জিনিস। টুনির সাথে দেখা হচ্ছে না অনেক দিন। তার দেখা পাওয়ার জন্য আমি সারাদিন গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পর বিড়বিড় করে বলি, "আজ কি তবে সেই বিশেষ দিন? আজ কি তবে সে আসছে?"। অপেক্ষার শেষ হয় না। তীব্র অভিমান বুকে পুষে আমি জানালার গ্রীল এর ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখার চেষ্টা করি। চার কোণা সে আকাশে মাঝে মাঝে ডানায় হলুদ রোদ মেখে চমৎকার এক ঝাঁক কবুতর উড়াউড়ি করে। মোঘলদের আমলে জন্ম হলে খারাপ হতো না। কবুতরের পায়ে চিরকুট বেঁধে তার কাছে পাঠানো যেত। সারাদিনের তীব্র অপেক্ষা আর দীর্ঘ না কাটা রাতের বুক ভরা শুণ্যতা নিয়ে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

আমার ঘুম ভাঙল মুঠোফোনের বিকট আর্তনাদে। ভোর বেলার শক্ত ঘুম এ মুঠোফোনের আওয়াজ আর ট্রাকের হর্ন এর মধ্য আমি কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনা। দুটোই সমান।
আমি খেয়াল করে দেখেছি, ভোর বেলা সাধারণত যে সব ফোন আসে তার বেশীর ভাগই রঙ নাম্বার। ফোন রিসিভ করলে দেখা যায়, অপর প্রান্তে সিরাজগঞ্জের ভাষায় কেউ জানতে চাইবে... "অ বাই, আনোয়ার আছে নি?"
আমি মনে মনে "অ বাই, আনোয়ার আছে নি?" শোনার প্রস্তুতি নিয়ে ফোন রিসিভ করেই বললাম,
- আনোয়ার নাই, আর এটা ফায়ার সার্ভিস কিংবা পুলিশ স্টেশনও না।
- ভাইয়া আমি নাতাশা...এসব কি বলছেন?
-ও আচ্ছা আচ্ছা...
-ভাইয়া শুভ সকাল...
সাত সকালে ঘুম ভাঙিয়ে কোন অষ্টাদশী রুপবতী যদি ভাইয়া ভাইয়া ডাকা শুরু করে তাহলে মেজাজ ঠিক রাখা কঠিন। আমি কঠিন মেজাজ নিয়ে বললাম,
-আমার জন্য অশুভ...
-তা হবে কেন? দেখুন বাইরে কি সুন্দর সকাল...
- সেটা তোমার সুন্দর লাগতে পারে... সবার লাগতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। আমার তো আজকের সকাল খুবই অশুভ মনে হচ্ছে। বাইরে শফিকুল এর মুখ ধোঁয়ার শব্দ পাচ্ছি। যে দিন তার মুখ ধোঁয়ার আওয়াজ পাই সে দিন আমার দিন খারাপ যায়। কোন না কোন পাওনাদার এর মুখোমুখি পরে যাই।
-ভাইয়া আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন?
-হুম...
-ভাইয়া খুব জানতে ইচ্ছে করছে...আপনি আমার সাথে কেন খারাপ ব্যবহার করছেন?
নাতাশাকে আমি কিভাবে বোঝাই...যার মন জুড়ে জারুল ফুলের রঙ, শরীরের প্রতিটি লোহিত কণিকায়, প্রতিটি নিউক্লিয়াস জুড়ে জারুলের ঘ্রাণ জড়িয়ে থাকে...অন্য যে কোন মেয়েকেই তার কাছে ধুতুরা ফুল মনে হয়। ধুতুরা ফুলের স্বভাব খারাপ। এ ফুলে মানুষের মাথা ঘুরায়, পেট উঁচু ছাড়াই বমি বমি ভাব আনে।

___________
© মহম্মদ সামি

No comments:

Post a Comment