ডালহাউসি বেড়াতে গেছি। দোতালায় একটা বারান্দা লাগানো সুন্দর ঘর পেয়েছি। রিসোর্টটা বেশ ঘরোয়া টাইপের। একটা টিলার উপরে , সুন্দর গাছপালা দিয়ে সাজানো বড় একটা লন। একটাই অসুবিধা।, আমার রুমটা যে কোনায় , সেখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক আসেনা। তাই রিসোর্টের ওয়াইফাই একমাত্র ভরসা। সেদিন ভোরে উঠে দেখি ওয়াইফাই কাজ করছেনা। রিসেপশনে ফোন করে জানলাম ওদের ওয়াইফাইর রাউটার খারাপ। দুপুরের আগে ঠিক হবেনা। গৃহিনী ঘুমোচ্ছেন। সকাল প্রায় সাতটা। বাইরে একটু ঠান্ডা আছে। আমি একটা পুলওভার গায়ে দিয়ে নিচে লনে পাতা গোল টেবিল ঘিরে রাখা গোটা পাঁচেক চেয়ারের একটায় বসে পড়লাম আমার আইপ্যাড নিয়ে। দেখি ওখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছে। সকাল নয়টায় বেড়াতে যাবার প্রোগ্রাম। হাতে দু ঘন্টা সময় , তাই আমি গল্প লিখতে বসলাম।
তখন শুনি সুরেলা নারী কণ্ঠ " আমি কি আপনার টেবিলে বসতে পারি"। দেখি বছর পঁচিশের সুন্দরী স্মার্ট একটা মেয়ে ,কটকটে লাল একটা পুলওভার গায়ে , হাতে চায়ের মগ। মাথা নাড়তেই ঐ টেবিলে আমার উল্টোদিকের চেয়ারে বসেই পরিচয় দিলেন " আমার নাম বিদিশা। দিল্লিতে সফটওয়ারে চাকরি করি"। নিজের নাম জানিয়ে প্রশ্ন করলে " বৌদিকে দেখছিনা"। গৃহিণীর খবর দেওয়ার পর , ফের প্রশ্ন " আপনি এই সকালে আইপ্যাডে কি করছেন"। বুঝলাম বিদিশা অতি সহজে লোককে প্রশ্ন করতে পারে। আমি খালি বলেছি " মাঝে মাঝে গল্প লিখি। তাই একটা কিছু লেখার চেষ্টা করছি"। তার পরেই বিদিশার জিজ্ঞাসা " আপনার লেখা গল্পটা পড়তে পারি"।
নীলুকে নিয়ে গল্প কাল রাতে শুতে যাবার আগেই লিখেছিলাম। সকালে বসে একটু ঠিকঠাক করে নিচ্ছিলাম। বিদিশা পড়তে চায় , জেনে আইপ্যাড ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম। আইপ্যাড হাতে নিয়ে বিদিশা বলে " নিশ্চিন্ত থাকবেন , আমি খালি গল্পটাই পড়বো। আপনার ব্যক্তিগত কিছু দেখার ইচ্ছে নেই"। বেশ বুঝতে পারছি , বিদিশা চাঁছাছোলা কথা বলে। আমি একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলি " তুমি পড়ো , আমি ঐ কোনায় গিয়ে সিগারেট খেয়ে আসি"। বিদিশা বলে "এখানেই খেতে পারেন , আমার কোনো আপত্তি নেই”।
আমি বসে বসে সিগারেট শেষ করার মধ্যে বিদিশার গল্প পড়া শেষ হলো। আইপ্যাড আমাকে ফেরত দিয়ে বলে " আপনার গল্পের নীলু মনে হয় বেশ জেদি। মেয়েদের বেশি জিদ থাকা ভালোনা"। আমি হেসে জিজ্ঞেস করি " এমন উপসংহারে পৌঁছনোর কারণ কি" ? বিদিশা একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলে "নিজেকে দিয়ে বুঝেছি। রবীন্দ্রনাথ আমার ভীষণ প্রিয়। তাঁর জীবনী পড়তে গিয়ে জানলাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে উনি ডালহাউসি এসেছিলেন। তাই আমি তন্ময়কে বললাম চলো দুজনে মিলে ডালহাউসি ঘুরে আসি। ভাবতে পারেন , ও পুরো নাকচ করেদিলো। কারণ ওর ঠান্ডা লাগার ধাত আছে , তাই কোনো পাহাড়ে যেতে চায়না। তাও আমি জোরাজুরি করতে বলে তোমার ইচ্ছে হলে তুমি একলা যাও। তাই আমিও আমার জেদ নিয়ে একা একাই চলে এলাম"। বুঝলাম বিদিশা জিদের বসে একলা চলে এসেছে বটে , কিন্তু এখানে এসে আর একলা ভালো লাগছেনা। কিন্তু আমার কৌতূহল তন্ময়টা কে ? তাই জিজ্ঞেস করি " হাসব্যান্ড যখন মানা করেছিলো , সেটা তুমি মেনে নিতে পারতে"।
বিদিশা টেবিলে রাখা সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট নিয়ে ধারালো। ও আমার সিগারেট নেবার আগে কোনো রকম রিকুয়েস্ট করেনি। বেশ বুঝতে পারছি , এখানে একলা এসে বিদিশা খুব ডিস্টার্বড। এক মুখ ধোয়াঁ ছেড়ে বিদিশা বলে " তাও হাসব্যান্ড হলে পুরুষ মানুষ কিছুটা অধিকার বোধ দেখাতে পারে। কিন্তু ও তো আমার বয়ফ্রেন্ড। সে হিসাবে তার কোনো অধিকার থাকবে কেনো ? সত্যি কথা বলতে গেলে তন্ময় কোনোদিন আমার উপর কোনো অধিকার দেখায়নি"। আমি জিজ্ঞেস করি " তোমরা এর আগে কোথায় কোথায় একসঙ্গে বেড়াতে গেছো "? বিদিশা হেসে বলে " কোনোদিন যাইনি। আসলে ওকে আমি রিকুয়েস্ট করি ওর মোরালিটি টেস্ট করার জন্য। ও যদি বলতো যে বিয়ের আগে একসঙ্গে যাওয়াটা ইমমোরাল , তবে আমি থেকে যেতাম ওর মরালিটিকে সম্মান জানাতে। কিন্তু ও যেই ঠান্ডা লাগার ভয়ে , আমার ডালহাউসি যাবার প্রপোজাল ক্যানসেল করলো , তখন আমার জিদ চেপে গেলো”।
আমি এবার বলি " তোমার মনে হয় তন্ময়কে ফেলে এসে গিল্টি ফিলিং হচ্ছে"। কেমন একটু উদাস হয়ে বিদিশা বলে " আমি না হয় জেদি , ওতো আমায় একটা ফোন করতে পারতো। নিদেন পক্ষে একটা SMS পাঠাতে পারতো। আসলে ছেলেরা মনে হয় মেয়েদের কোনো ইচ্ছের দাম দেয়না"।
এই সব পরিস্থিতিতে কি আর বলা যায়। দেখি বিদিশা নিজের ঠোঁট কামড়ে , মোবাইলে কি যেন খুঁজে চলেছে। হটাৎ বলে উঠলো "ইউরেকা"। আমি অবাক হয়ে বলি "কি হলো "? বিদিশা ওর মোবাইলটা আমাকে বাড়িয়ে দেয় , তাতে দেখি ম্যাসেঞ্জারে মেসেজ পাঠিয়েছে " তুমি যা যা দেখবে সব ফোটো তুলে পাঠাও। আমি দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে নেবো"। বিদিশা এবার বলে " আপনারাতো দুদিন ধরে সব ঘুরে দেখলেন। আমাকে বলুনতো কোথায় কোথায় গেলে সুন্দর সব ছবি তোলা যাবে"। আমি খালি মন্তব্য করি "স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম্ দেবা ন জানন্তি"।
_________© সনৎ মিশ্র
No comments:
Post a Comment