গত
সপ্তাহের ঘটনা। বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি, বাস
আসছে না অফিস যাব..। স্ট্যান্ডে অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে। একজন তরুণী আমার সামনে এসে
খুব কাছে দাঁড়ালো-খুব কাছে। ওর সঘন নিঃশ্বাস আমার জামায় পড়ছে। একটু সরে দাঁড়ালাম, গায়েপড়া মেয়েরা আমার চূড়ান্ত অপছন্দ।
বললাম-কিছু
বলবেন?
হ্যাঁ, একটু এদিকে আসবেন? মেয়েটি
মুখ তুলে তাকালো ।
অসাধারণ সুন্দরী, কিন্তু
একদম প্রসাধনহীন।
যা বলার এখানেই বলুন, আমার
তাড়া আছে-বেশ ঝাঁজিয়ে বললাম।
মেয়েটি আর একটু কাছে সরে এল, নিচু
গলায় কথা শুরু করলো- একটু সমস্যায় পরেছি।
কি সমস্যা? আমি উত্তর করি।
মেয়েটি আস্তে আস্তে বলে-টাকাটা কিছুতেই আর.........।
খুচরো করতে পারছেন না, দু’হাজার
টাকার নোট?
আমার কাছেও নেই। এবার যান, আমার
তাড়া আছে।
মেয়েটি মাথা নিচু করে আছে।
পুরানো পাঁচশ বা হাজার টাকা আছে আপনার কাছে? তরুণী
কিঞ্চিত অপ্রতিভ।
আমি এবার প্রশ্ন করি-কেন কি হবে?
মেয়েটি-খুব কষ্টে আছি, দাদা।
ভাইয়ের স্কুলের মাইনে অনেক মাস বাকি, বলেছে পুরানো পাঁচশ বা
হাজার টাকা দিলেও হবে। ওসব টাকা তো পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বাবার কাজ টাও চলে গেছে।
মোদীর একটা সিদ্ধান্ত দেশটাকে ছারখার করে দিল। কতো লোকের
কাজ গেল-পাশ থেকে একটি লোক বলল।
মেয়েটি মুখ খুললো-না না। বাবা অনেক দিন কর্মহীন, টিবি
হয়েছিলো,
কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিল।
আমি বলি- না, না নেই। যে ক’টা
ছিল পাল্টে নিয়েছি।
ঠিক আছে, মেয়েটি এগিয়ে গেল।
সব ঢপ দাদা, চিটার কথাকার...পাশের একটি
মহিলা বলে উঠল। মনে হয় শুনেছে সব।
কেমন যেন লাগছে আমার, বুকের
মাঝখানে মুচড়ে উঠছে। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির
খুব ভাল ছাত্র ছিলাম, কিন্তু অনেক আর্থিক
অস্বাচ্ছন্দ্য সহ্য করে পড়াশুনা করেছি।
হনহন করে এগিয়ে গেলাম, আমার
দু’চোখ
গোলাপি সালয়ারের মেয়েটি কে খুঁজছে। কিছু দূরেই পেয়ে গেলাম।
শুনুন, এই নিন। আমার মানি ব্যাগে
চারশো আশি টাকা ছিল। কুড়ি টাকা রেখে সবটা দিয়ে দিলাম।
আপনার অসুবিধা হবে নাতো? মেয়েটি
সংকোচ করে।
না-আমি বললাম।
দাদা আমাকে বলেছিল- কোনো অসুবিধায় পড়লে, কারো
কাছে না পেলে, ডোডোর কাছে যাস...।
ছোটবেলায় ফুটবল মাঠে কয়েকবার দেখেছি আপনাকে।
আমার অবাক হবার পালা। “ডোডো” আমার
ডাক নাম।
কে তোমার দাদা?
বাণ্টী মানে নজরুল- মেয়েটি চুপ করে আছে।
মনে পরে গেলো, এক সাথে ফুটবল খেলেছি আমরা
কিছুদিন,
এখন যোগাযোগ নেই। ছেলেটা পড়াশুনা ছেড়ে দিলো, ফুটবল
ও ছেড়ে দিলো। শুনেছিলাম বাড়িতে অনেকগুলো ভাইবোন আছে। তবে ওর এই বোন টাকে আমি আগে
কোন দিন দেখেছি কিনা-মনে করতে পারছি না।
কী করে তোর দাদা? আমার
বাড়ী যাসনি কেন? বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে ভিক্ষা করতে
লজ্জা করে না??? রাগে আমার শরীর কাঁপছে।
নজরুলের বোন আস্তে আস্তে উত্তর করল– আপনারে
তো কতো খুঁজেছি ভাইজান, আপনার নতুন বাসার সন্ধান
কেউ দিতে পারল না। একদিন সকালে যেতে যেতে এই বাস স্ট্যান্ডে আপনারে দেখলাম। আজ
সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। দাদা নেই...।
কেন? কোথায় গেলো? আমি
বলি।
দাদা সুইসাইড করেছে অনেক বছর হল। আপনার বাড়ী একদিন যাবো, ঠিকানাটা
দিন না...!!
আমার শরীরটা হঠাৎ করে খুব খারাপ লাগছে।
তাড়াতাড়ি ঠিকানা বলে বাড়ি ফিরে এলাম।
আজ আর অফিস যেতে ইচ্ছা করছে না, অনেক
দেরি হয়ে গেছে...।
_________
@রমেন দে
No comments:
Post a Comment