Tuesday, 20 December 2016

।। নিষিদ্ধ শহর-2 ।।



শেষ পর্ব
********


   ‘কোলকাতা’! এক অদ্ভুত বৈচিত্র (বৈপরিত্বও বটে)। আমার সেই বিখ্যাত “কুখ্যাত নগরী” কে ঘিরেও রয়েছে সেই বৈচিত্র। সোনাগাছিকে যদি কেন্দ্রবিন্দু ধরে চলি তো তার উত্তরে রয়েছে বাঘবাজার যেখানে মা আর সিস্টার নিবেদিতা আমৃত্যু কাটিয়েছেন। নাট্যকার গিরীশ ঘোষ’ও এখানেই থাকতেন। সোনাগাছির পূর্ব দিকে বিডন স্ট্রিট সাহেবদের আবাস স্থল, যার পাশেই অধুনা বিবেকানন্দ রোড আমাদের স্বামীজির বাড়ি। পশ্চিমে স্রোতাশিনী গঙ্গা এবং আধুনিক বাংলার সংস্কৃতির পীঠস্থান ঠাকুর বাড়ি।   দক্ষিণে চৌরঙ্গী, বউবাজার।

   আর এ’সবের মধ্যেও বিদ্যমান ছিল সোনাগাছি! পণ্ডিতেরা বলেন পতিতালয় নাকি সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য তৈরী হয়েছে!
   ‘সে যুগ’ আর ‘এ যুগ’ সমাজ এগিয়েছে পিছিয়েছে, সোনাগাছি রয়েগেছে সোনাগাছিতেই। এদের জীবনে কোনও পরিবর্তন হয়নি। এরা আজও অবহেলিত অবদমিত। কখনও কথা বলার সৌভাগ্য না হলেও এদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ অবশ্যই হয়েছে। আর সেই সুযোগ থেকেই একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করেছি। যেখানে আমাদের সমাজ আজও পুরুষ শাষিত সেখানে এদের সমাজ নারি পরিচালিত। মহাভারতে প্রমিলার দেশের কথা শুনেছিলাম এটা সত্যি সত্যি প্রমিলার দেশ। সম্পূর্ণ রূপে পুরুষ বর্জিত (পুরুষ এখানে উপার্জনের মাধ্যম মাত্র)। আমাদের মধ্যে আজ আর কোনও মিলমিশ নেই কিন্তু এরা আজও এক। এদের মা বাবা ভাই বোন স্বামি স্ত্রী সন্তান সব এরা নিজেরাই! এখানে বংশ রক্ষা স্ত্রী সন্তান দ্বারা হয় পুরুষ সন্তান নয়।

   অনেক বছর আগে আমার এক কলিগ খিদিরপুরে কাজ করতেন। তিনি একদিন গল্প করতে গিয়ে বলেছিলেন এক গরমের দুপুরে খুব তেষ্টা পাওয়ায় এক বাড়িতে জল চেয়েছিলেন। তিনি জানতেন না সেটা এক পতিতার বাড়ি। সেই ভদ্রমহিলা তাঁকে ঘরে বসিয়ে শুধু জল’ই নয় সাথে মিষ্টিও দিয়েছেলেন। আমরা ভাবতেও পারি?
   সারাজীবন ছাই ঘেঁটে গেছি রত্ন খুঁজতে, পুঁথিগত বিদ্যে আমার নেই। চারিদিকে যা দেখেছি কুড়িয়ে বাড়িয়ে শেখার চেষ্টা করেছি মাত্র। শুধু আমি নয় এদের থেকে পুরো সমাজের শেখার আছে।

   বোধহয় একটু আবেগ প্রবন হয়ে গেলাম... হোকগে! জীবনের শেষ মুহূর্ত অব্দি যেন এদের মনে রাখতে পারি, ভালবাসতে পারি।
   বেঁচে থাক তোরা...মা, বেঁচে থাক আমার সাধের “অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট”।
___________
© দীপাঞ্জন দাস

No comments:

Post a Comment