Monday, 12 December 2016

।। মানবী ।।


কদিন ধরেই স্বামীকে ফোনে পাচ্ছে না মানবী ।আজও পায়নি ।তাই কিছুটা বিরক্তি ও অভিমান নিয়েই সবে শুয়েছে ,এমন সময় সে দরজায় টোকা পরার শব্দ শুনতে পেল -- শুনছেন ,দরজা খুলুন ।কে আছেন ? দরজা খুলুন, প্লীস। বালিশের পাশে রাখা, মোবাইলে মানবী দেখে-- রাত বারোটা দশ। আমাকে বাঁচান -- দয়া করে দরজা খুলুন ।বলে আবার দরজায় টোকা পড়ে । এত বার টোকা শুনে কিছুটা ইতস্তত করেও দরজা খুলে দেয় মানবী ।কিছুটা আরষ্ট ভাবে সে নাইট ল্যাম্পের মৃদু আলোয় দেখে একটা আঠাশ তিরিশ বছরের ছেলে ,গাল ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি ।মানবী কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটি তাকে ঠেলে ঘরে ঢুকিয়ে দরজায় খিল দিয়ে দেয় ।মানবী আলনা থেকে ওড়না টেনে নিয়ে কিছুটা বিরক্তির সুরেই বলে ---কে আপনি? কি চায়?


----বলছি ,বলছি ।এক গ্লাস জল হবে?
ছেলেটির সাহসের তারিফ না করে পারা যায় না।মানবী গ্লাস ভর্তি জল এগিয়ে দেবার আগেই ছেলেটি হাত থেকে কেড়ে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে যে ভাবে খেল তা দেখে মানবীর মনে হল --নিশাচর চাতক নাকির বাবা !
------কে তুমি ?এত রাতে কি চায় ?
------আমি খুনি । পুলিশ আমাকে খুঁজছে।



মানবী হঠাৎ চিৎকার করে --খুনি --খুনি।তৃতীয়বার খুনি বলে চেঁচানোর আগেই ছেলেটি হাতের তালু দিয়ে মানবীর মুখ সজোড়ে চেপে ধরে বলে ----খবরদার !আর একবার চিৎকার করলেই খুন করে ফেলব।মানবী এই শীতের রাতেও ঘামতে থাকে ।
কিন্তু এর মধ্যেই মানবী ছেলেটির ডান ভ্রূর উপর কাটা দাগ দেখতে পেলে কিছুটা ধাতস্ত হয়।



-----কাকে খুন করেছ ?কেন করেছ ?
-----বলছি।কিছু খাবার পাওয়া যাবে ? দুদিন কিছু খাওয়া হয়নি ।
----মানবী জল ,মুড়ি , বতাসা -এগিয়ে দিলে মুড়ি খেতে খেতে ছেলেটি বলে ---আমি একটা মেয়েকে ভালো বাসতাম ।বিশ্বাস করুন মন থেকে ভালোবাসতাম ।এক বছর আগে আমারই এক বন্ধু তাকে বিয়ে করে মুম্বাই পাড়ি দেয় ।সাত দিন আগে মুম্বাই এ সেই বন্ধুকে খুন করে পালিয়ে এসেছি ।
আপনি যাকে ভালোবাসতেন তার নাম কী ?



ছেলেটি এক কামড় বাতাসা চিবিয়ে এক ঢোক জল খেয়ে বলে ---তার নাম মানবী ।
নামটা শোনামাত্র মানবীর বুকের ভিতরটা ধরাস করে ওঠে ।কাঁপা কাঁপা গলায় মানবী জিজ্ঞাসা করে আচ্ছা তোমার নাম কী রাজেন্দ্র ?কথা শেষ করার আগেই দরজায় টোকা পড়ে --শুনছেন ?দরজা খুলুন।থানা থেকে আসছি।
মানবী দরজা খুলতেই পুশিশের পোষাক পড়া দুজন প্রায় ঘরের মাঝ খানে এসে জিজ্ঞাসা করে --রোগা মতো ,গালে খোঁচ খোঁচা দাড়ি,ডান ভ্রূর উপর কাটা দাগ আছে,এমন কাউকে এদিকে আসতে দেখেছেন ।
মানবী মাথা নীচু করে শুধু বলে -না ।



----খাটের উপর কে শুয়ে আছে 
----আমার স্বামী ।
--আপনার স্বামী তো মুম্বাই এ থাকেন,না?
এক বছর পর উনি আজ বিকালেই মুম্বাই থেকে বাড়ি ফিরেছেন ।খুবই ক্লান্ত ।তাই ঘুমাচ্ছেন।
ঠিক আছে ।এত রাতে ডিসটার্ব করার জন্য দুঃখিত ।আর হ্যাঁ --এই মোবাইল নম্বরটা রাখুন । কোন সন্দেহ ভাজন ব্যক্তিকে দেখলেই খবর দেবেন ।গুড নাইট। 



পুলিশ চলে যেতেই ছেলেটি লেপের নীচ থেকে বেড়িয়ে বলে-- আপনিতো আমার মানবীর মতোই বুদ্ধিমতী । একজন আসামীকে, স্বামী বলে বাঁচিয়ে দিলেন । ছেলেটির ভ্রূর উপর কাটা দাগটির দিকে পুনরায় চোখ যায় মানবীর ।সঙ্গে সঙ্গে মানবী খাটের উপর নিজের মোবাইল খুঁজতে হাত বড়ায়। ছেলেটি দরজা খুলে ভোরের হিমেল কুয়াশার মধ্যে মিশে যায়।মানবী খোলা দরজার দিকে চেয়ে মোবাইলের কলিং বাটন প্রেস করে।

___________
@তাপস ঘোষ 

No comments:

Post a Comment