বর এসেছে , বর এসেছে --বলে চিল চিৎকার করতে করতে অন্দর মহলের দিকে ছুট দেয় চৌধুরী বড়ির দুটি মেয়ে।জলের ঘড়া ,মিষ্টান্ন,শাঁখ নিয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হাজির হবু শাশুড়ি মায়েরা। শ্যালিকারা নতুন জাম্বুকে ঠকানোর শলা পরামর্শে ব্যস্ত।হৈ হুল্লোর ,ক্যামেরার ফ্ল্যাস লাইট,এল- ই-ডির তীক্ষতায়, সানাই এর মায়াবি আবেশে জমে উঠেছে বিয়ে বাড়ি।বর দেখা মাত্রই রমা কাকিমা হেড়ে গলায় বলেন --"বর খাসা হয়েছে বাপু --যেমন হাঁড়ি তেমন তার সড়া । "পিসিমার বক্তব্য অন্য।তিনি বলেন -"আমাদের বড় জামাই এর চেয়ে ঢের ভালো।"
এতক্ষণ সবার সঙ্গে তিতলিও বর দেখছিল ।কিন্তু মাসিমা ,পিসিমাদের আদিখ্যেতা দেখে অন্ধকারের দিকে সরে দাঁড়ায় সে।
সাত বছর আগে আজকের দিনেই বিয়ে হয়েছিল তিতলির।তার সুপুরুষ বরকে দেখে আজকের মতোই মাসিমা পিসিমারা বলেছিল---"তিতলি,তুই সত্যিই ভাগ্যবতী,সাত জন্ম তপস্যা করে তবে এমন বর পেয়েছিস।"সেদিন তিতলি বিশ্বাস করেছিল মাসিমা পিসিমাদের কথাই সত্য হয়।কিন্তু আজ আলোর রশনাই এর দিকে পিঠ ফিরিয়ে দেখে শুধু অন্ধকারে ঢাকা রাস্তা।
তিতলির বিয়ের দুবছর পর থেকেই তার সুপুরুষ বর নিরুদ্দেশ।তাদের মধ্যে যে বনিবনার অভাব ছিল তা নয়।অভাব ছিল না তিতলির রূপ-সৌন্দর্যের।তবুও তিতলিকে ছেড়ে তার বর কেন যে পালাল তা কেউ জানে না।তিতলিও জানে না।
আজ পাঁচ বছর ধরে তিতলি তার মায়ের ঘরে স্বামীর দেওয়া শাঁখা সিঁদুর পড়ে এয়োতি সেজে বসে আছে।তার বর কবে ফিরবে? আদেও ফিরবে কিনা? সে জানে না।তবুও সে হিন্দুঘরের আর পাঁচটা মেয়ের মতোই স্বামীর মঙ্গল কামনায় সকাল সন্ধ্যায় সীমন্তিনী সাজে।আর প্রতি মুহূর্ত নতুন করে মনের মাঝে তার বেদন বাজে।
তিতলি অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে।আর কত রাত এমনি করে সে জেগে থাকবে জানি না।
চৌধুরী বড়ির সানাই আস্তে আস্তে নীরব হয়ে আসে।আলোগুলো ধীরে ধীরে নিভে আসে।আস্তাকুড় থেকে থেমে থেমে ভেসে আসে ইতর প্রাণির অধিকার প্রতিষ্ঠার সদম্ভ চিৎকার । বিয়ে বাড়ির ভদ্রলোকের কলরব থেমে আসে। হয়তো তিতলির অন্তরের কোলাহল তখনো থামে না।
___________
© তাপস ঘোষ
No comments:
Post a Comment