সংক্ষিপ্ত_রামায়ণ
লঙ্কাকান্ড (তৃতীয় অংশ)
ব্রতকথা পর্ব - ১৪
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
শোন শোন ভক্তগণ শোন দিয়া মন।
অবশিষ্ট লঙ্কাকাণ্ড করিনু বর্ণন ।।
পুত্রহারা লঙ্কেশ্বর আসিল সমরে ।
স্বর্গহতে দেবতারা ত্রাহিত্রাহি করে।।
মহা রণে যুদ্ধ করে দশানন বীর ।
রামচন্দ্রে মারিল সে শতশত তীর।।
রণমধ্যে লঙ্কাপতি দেখিয়া লক্ষ্মণে ।
ময়দানবের কথা পড়ে তার মনে ।।
শক্তিশেল বাণ যিনি দিয়েছিল তারে ।
যারে মারে সেইবান নিশ্চিৎ সে মরে ।।
যার তরে ইন্দ্রজীৎ হারায়েছে প্রাণ ।
রাবণ তাহারে মারে শক্তিশেল বাণ।।
রাবণের সে বাণেতে হয়ে অচেতন ।
যুদ্ধ-ভূমে পড়ে থাকে আহত লক্ষ্মণ ।।
লক্ষ্মণে দেখিয়া রাম করে হায় হায় ।
সুষেণেরে জিজ্ঞাসিল কি হবে উপায় ।।
সুষেণ বলিল রামে শুন রঘুপতি।
গন্ধমাদন পর্বতে যাও শীঘ্র অতি।।
বিশল্য-করণী নামে আছে যে ঔষধি।
লক্ষ্মণ বাঁচিবে তবে আনা যায় যদি।।
হনুমান শুনিলেন সেকথা তাহার ।
এক লম্ফে হিমালয়ে গেল সে আবার।।
যাইল সে সেইস্থানে পর্বতের কাছে।
দেখিল ঔষধি-গুল্ম নানাতর আছে ।।
না চেনে ঔষধি-গুল্ম করে যদি ভুল।
এই ভেবে হনুমান পেলনা তো কুল ।।
অবশেষে মহাবলী করিলেন যেটা ।
আনিল চাগিয়ে হস্তে পর্বতটা গোটা।।
ঔষধি আনিয়া ত্বরা দিল তার নাকে ।
লক্ষ্মণ মেলিল চক্ষু রাম নামে ডাকে।।
লক্ষ্মন বাচিল ফিরে, শ্রীরাম এবার ।
রণমধ্যে রাবণেরে দিলেন হুঙ্কার ।।
আকাশে উঠিল সূর্য রক্তিম প্রভাতে।
মহাযুদ্ধ বাঁধে রাম-রাবণের সাথে ।।
রাবণ ছাড়িল বাণ কত যে হাজার।
শ্রীরাম সকল বাণ এড়াল তাহার।।
মহাক্রোধে মহারণে রাম ও রাবণ।
করে তারা দুইজনা বাণ বরষণ।।
রামের বাণে লঙ্কেশ হল অচেতন ।
তবুও না মরে তিনি পাইল জীবন।।
কিভাবে করিবে এই রাবণে নিধন ।
ব্রহ্মারে করিল রাম তখনি স্মরণ।।
প্রজাপতি ব্রহ্মাদেব আসিল তখন ।
করিতে বলিল রামে অকাল-বোধন।।
রাবণে করিবে বধ তাই রঘুপতি ।
করিল দুর্গার পূজা আয়োজনে অতি।।
অকাল-বোধন করে সাগর কিনারে।
প্রসন্ন হইয়া চন্ডী বর দিল তারে ।।
কী বিরাট ! যুদ্ধ হয় সৈন রাশি রাশি ।
বহ্মাদি দেবতা তাহা দেখিবারে আসি।।
রণাঙ্গণে ধণুর্বীর রাম ও লক্ষ্মণ ।
মহাকোপে বানবৃষ্টি করেন রাবণ।।
ধনুকে লাগায়ে বাণ রাম চালাইল ।
বহ্মাস্ত্র রাবণে আসি বুকেতে বিঁধিল ।।
বাণ বিদ্ধ দশানন ভূমে পড়ে যান ।
অবশেষে রণাঙ্গনে ত্যাজিলেন প্রাণ।।
বানরেরা জয়ধ্বণি করে রাম নামে ।
দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করিলেন রামে।।
ক্রন্দনের রোল ওঠে লঙ্কা অন্তঃপুরে ।
হায় হায় করে সব রাক্ষস - অসুরে ।।
ধর্ম রক্ষার্থে যদিও ছাড়ে তার সাথ ।
ভার্তৃ শোকে বিভিষণ করে অশ্রুপাত ।।
পালন করিল রাম পূর্ব অঙ্গীকার ।
বিভিষণে সমর্পিল আসন রাজার।।
রাবণ মরিল রণে এই শুভ কথা।
হনুমান মুখে তাহা শুনিলেন সীতা।।
শুনিয়া সেকথা তার হল প্রীত মন ।
আশীর্বাদ তাকে সীতা করিল তখন।।
হনুমান বলিল মা আর দুঃখ নয়।
কল্পনা করিল সীতা দিন সুখময় ।।
বিধাতার সেই সুখ সহিলনা আর ।
জানকী মনেতে পেল যাতনা আবার।।
শ্রীরাম বলিল এসে তার জানকীরে ।
উদ্ধার করেছে তারে কর্তব্য খাতিরে ।।
হরণ করেছিল তারে পর -পুরুষেতে ।
নাহিজানে কিভাবে সে রেখেছে ঘরেতে।।
রামের সেকথা শুনি জনক নন্দিনী ।
বড় কষ্ট পেল মনে চির সে দুখিনী ।।
ভাবে সীতা রাম তারে এমন বলিল।
মরন ইহার চেয়ে ছিল বড় ভালো ।।
সতীত্বের প্রশ্নতোলে তারে রঘুমণি।
অগ্নিমধ্যে ঝাঁপ দিতে চাহিল তখনি ।।
লক্ষ্মণ রচিল এক অগ্নিকুণ্ড বেশ।
সীতা সেই অগ্নি মধ্যে করিল প্রবেশ।।
অগ্নিদেব আসিলেন সে ক্ষণে তখন।
না পুড়িল গাত্র তার না পুড়ে বসন ।।
রাম জায়া সীতা ছিল সতীসাধ্যী অতি ।
অগ্নি তাই গাত্রে তাঁর করিলনা ক্ষতি ।।
অতঃপর শ্রীরামের বিগলিত মন ।
নিজভুল বুঝে করে সীতারে গ্রহণ।।
কাটিয়ে অরণ্যে রাম চোদ্দ সাল পরে ।
ফিরিল সীতারে লয়ে অযোধ্যা নগরে।।
'রাম' ধ্বনি রাজ্যজুড়ে মুখরিত হল ।
মহা ধুম্ ধামে সবে আনন্দে মাতিল ।।
নারদ ,বশিষ্ঠ্য, যত ছিল মুণিগণে ।
রামের রাজ্যাভিষেক করিল সেক্ষণে।।
রাজকার্য করে রাম আনন্দে পালন।
রামায়ণে লঙ্কা-কাণ্ড হল সমাপণ ।।
'ব্রতকথা' ভক্তিভরে করিলে শ্রবণ ।
দুঃখ-কষ্ট ভুলে তার আনন্দিত মন ।।
________________
লঙ্কাকান্ড (তৃতীয় অংশ)
ব্রতকথা পর্ব - ১৪
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
শোন শোন ভক্তগণ শোন দিয়া মন।
অবশিষ্ট লঙ্কাকাণ্ড করিনু বর্ণন ।।
পুত্রহারা লঙ্কেশ্বর আসিল সমরে ।
স্বর্গহতে দেবতারা ত্রাহিত্রাহি করে।।
মহা রণে যুদ্ধ করে দশানন বীর ।
রামচন্দ্রে মারিল সে শতশত তীর।।
রণমধ্যে লঙ্কাপতি দেখিয়া লক্ষ্মণে ।
ময়দানবের কথা পড়ে তার মনে ।।
শক্তিশেল বাণ যিনি দিয়েছিল তারে ।
যারে মারে সেইবান নিশ্চিৎ সে মরে ।।
যার তরে ইন্দ্রজীৎ হারায়েছে প্রাণ ।
রাবণ তাহারে মারে শক্তিশেল বাণ।।
রাবণের সে বাণেতে হয়ে অচেতন ।
যুদ্ধ-ভূমে পড়ে থাকে আহত লক্ষ্মণ ।।
লক্ষ্মণে দেখিয়া রাম করে হায় হায় ।
সুষেণেরে জিজ্ঞাসিল কি হবে উপায় ।।
সুষেণ বলিল রামে শুন রঘুপতি।
গন্ধমাদন পর্বতে যাও শীঘ্র অতি।।
বিশল্য-করণী নামে আছে যে ঔষধি।
লক্ষ্মণ বাঁচিবে তবে আনা যায় যদি।।
হনুমান শুনিলেন সেকথা তাহার ।
এক লম্ফে হিমালয়ে গেল সে আবার।।
যাইল সে সেইস্থানে পর্বতের কাছে।
দেখিল ঔষধি-গুল্ম নানাতর আছে ।।
না চেনে ঔষধি-গুল্ম করে যদি ভুল।
এই ভেবে হনুমান পেলনা তো কুল ।।
অবশেষে মহাবলী করিলেন যেটা ।
আনিল চাগিয়ে হস্তে পর্বতটা গোটা।।
ঔষধি আনিয়া ত্বরা দিল তার নাকে ।
লক্ষ্মণ মেলিল চক্ষু রাম নামে ডাকে।।
লক্ষ্মন বাচিল ফিরে, শ্রীরাম এবার ।
রণমধ্যে রাবণেরে দিলেন হুঙ্কার ।।
আকাশে উঠিল সূর্য রক্তিম প্রভাতে।
মহাযুদ্ধ বাঁধে রাম-রাবণের সাথে ।।
রাবণ ছাড়িল বাণ কত যে হাজার।
শ্রীরাম সকল বাণ এড়াল তাহার।।
মহাক্রোধে মহারণে রাম ও রাবণ।
করে তারা দুইজনা বাণ বরষণ।।
রামের বাণে লঙ্কেশ হল অচেতন ।
তবুও না মরে তিনি পাইল জীবন।।
কিভাবে করিবে এই রাবণে নিধন ।
ব্রহ্মারে করিল রাম তখনি স্মরণ।।
প্রজাপতি ব্রহ্মাদেব আসিল তখন ।
করিতে বলিল রামে অকাল-বোধন।।
রাবণে করিবে বধ তাই রঘুপতি ।
করিল দুর্গার পূজা আয়োজনে অতি।।
অকাল-বোধন করে সাগর কিনারে।
প্রসন্ন হইয়া চন্ডী বর দিল তারে ।।
কী বিরাট ! যুদ্ধ হয় সৈন রাশি রাশি ।
বহ্মাদি দেবতা তাহা দেখিবারে আসি।।
রণাঙ্গণে ধণুর্বীর রাম ও লক্ষ্মণ ।
মহাকোপে বানবৃষ্টি করেন রাবণ।।
ধনুকে লাগায়ে বাণ রাম চালাইল ।
বহ্মাস্ত্র রাবণে আসি বুকেতে বিঁধিল ।।
বাণ বিদ্ধ দশানন ভূমে পড়ে যান ।
অবশেষে রণাঙ্গনে ত্যাজিলেন প্রাণ।।
বানরেরা জয়ধ্বণি করে রাম নামে ।
দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করিলেন রামে।।
ক্রন্দনের রোল ওঠে লঙ্কা অন্তঃপুরে ।
হায় হায় করে সব রাক্ষস - অসুরে ।।
ধর্ম রক্ষার্থে যদিও ছাড়ে তার সাথ ।
ভার্তৃ শোকে বিভিষণ করে অশ্রুপাত ।।
পালন করিল রাম পূর্ব অঙ্গীকার ।
বিভিষণে সমর্পিল আসন রাজার।।
রাবণ মরিল রণে এই শুভ কথা।
হনুমান মুখে তাহা শুনিলেন সীতা।।
শুনিয়া সেকথা তার হল প্রীত মন ।
আশীর্বাদ তাকে সীতা করিল তখন।।
হনুমান বলিল মা আর দুঃখ নয়।
কল্পনা করিল সীতা দিন সুখময় ।।
বিধাতার সেই সুখ সহিলনা আর ।
জানকী মনেতে পেল যাতনা আবার।।
শ্রীরাম বলিল এসে তার জানকীরে ।
উদ্ধার করেছে তারে কর্তব্য খাতিরে ।।
হরণ করেছিল তারে পর -পুরুষেতে ।
নাহিজানে কিভাবে সে রেখেছে ঘরেতে।।
রামের সেকথা শুনি জনক নন্দিনী ।
বড় কষ্ট পেল মনে চির সে দুখিনী ।।
ভাবে সীতা রাম তারে এমন বলিল।
মরন ইহার চেয়ে ছিল বড় ভালো ।।
সতীত্বের প্রশ্নতোলে তারে রঘুমণি।
অগ্নিমধ্যে ঝাঁপ দিতে চাহিল তখনি ।।
লক্ষ্মণ রচিল এক অগ্নিকুণ্ড বেশ।
সীতা সেই অগ্নি মধ্যে করিল প্রবেশ।।
অগ্নিদেব আসিলেন সে ক্ষণে তখন।
না পুড়িল গাত্র তার না পুড়ে বসন ।।
রাম জায়া সীতা ছিল সতীসাধ্যী অতি ।
অগ্নি তাই গাত্রে তাঁর করিলনা ক্ষতি ।।
অতঃপর শ্রীরামের বিগলিত মন ।
নিজভুল বুঝে করে সীতারে গ্রহণ।।
কাটিয়ে অরণ্যে রাম চোদ্দ সাল পরে ।
ফিরিল সীতারে লয়ে অযোধ্যা নগরে।।
'রাম' ধ্বনি রাজ্যজুড়ে মুখরিত হল ।
মহা ধুম্ ধামে সবে আনন্দে মাতিল ।।
নারদ ,বশিষ্ঠ্য, যত ছিল মুণিগণে ।
রামের রাজ্যাভিষেক করিল সেক্ষণে।।
রাজকার্য করে রাম আনন্দে পালন।
রামায়ণে লঙ্কা-কাণ্ড হল সমাপণ ।।
'ব্রতকথা' ভক্তিভরে করিলে শ্রবণ ।
দুঃখ-কষ্ট ভুলে তার আনন্দিত মন ।।
________________
সুব্রত অধিকারী প্রণীত
No comments:
Post a Comment