Friday, 2 December 2016

।। বাইক কথা ।।



কিছু বাইক এর শব্দ কানে ঢুকলেই সব কটা ইন্দ্রিয় খাড়া হয়ে ওঠে।

আজ একটা RX135 এর শব্দ কানে ঢুকতেই রাস্তার দিকে ফিরে তাকালাম। এই bike টার শব্দে একটা মাদকতা আছে। না তাকিয়ে থাকা যায় না।

কিন্তু কাছে আসতেই দেখলাম বেশ পুরানো একটা RX135 । bike টার পেট্রোল ট্যাঙ্কে অপটু হাতে লেখা Royal Enfield ।

বেশ হতাশ হলাম। একসাথে অনেক কটা চিন্তা মাথায় পাক খেয়ে উঠলো।

RX135 ভারতীয় bike ইতিহাসে নিজেই একটা লিজেন্ড । তার ট্যাঙ্কে Royal Enfield লিখে যেন RX135 এর নিজের গৌরবময় ইতিহাস কে উপহাস করা হয়েছে।মালিকের হয়ত RX135 এর ইতিহাস সম্পর্কে কোনো সম্যক জ্ঞান নাই । ময়ূর যদি তার পেখম ফেলে বাজপাখির ডানা বেঁধে উড়তে চেষ্টা করে , তাহলে যেমন হয় এই ব্যাপার তাও অনেকটা সেই রকম। আবার মালিকের Rx135 সম্পর্কে জ্ঞান নাই তাই বা বলি কি করে। জ্ঞান না থাকলে কেউ এতো যত্নে Rx135 টা এখনো রক্ষনাবেক্ষন করতো না।

মালিকের হয়তো Royal Enfield এর শখ ছিল যা পূরণ হয় নি। তাই নিজের Rx135 এ বসে RoyalEnfield এর শখ মেটাতে চেষ্টা করে।

আমাদের যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে আমরা কখনোই চাই না। অনেকে বলেন যে সন্তুষ্টি মানেই মৃত্যু। নতুন কিছু পেতে গেলে , নতুন কিছু করতে গেলে নাকি সর্বদা অসন্তুষ্ট থাকতে হয়।
কিন্তু ব্যক্তি জীবনে অসন্তুষ্টি শুধু অশান্তিই ডেকে আনে। কোথাও একটা পড়েছিলাম, আমরা কখনোই সুখী হতে চাই না, তাই অসুখ খুঁজে বেড়াই। একটা চাহিদা মিটতে না মিটতে অন্য চাহিদার পিছনে দৌড়াই। আসলে শুধু অসুখী হবার কারণ খুঁজে বেড়াই।

মাঝে মাঝেই সীমিত পরিসরে খুশি ও সুখী থাকতে পারা টা জীবনের চালিকা শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। যারা তা পারে না তারা নাগরদোলার মতো ঘুরতেই থাকে কিন্তু এক পাও এগুতে পারে না।

নিজের RX135 কে Royal Enfield নাম দেবার প্রবণতা আমাদের সবার মধ্যেই কম বেশি আছে। নিজের সন্তানের নাম সুভাষ, বিবেকানন্দ বা, সচিন রাখার মধ্যে দিয়েও আমাদের একই মানসিকতা প্রতিফলিত হয়। মদন মিত্রের বাবা ও হয়তো ভেবেছিলেন তার ছেলে মদন মোহন মালব্যের মতো প্রাতঃস্মরণীয় হবে। ধনঞ্জয় অর্জুন স্বর্গে অপ্সরাকে একান্তে পেয়েও তাকে মাতৃ সম্মধন করেছিলেন, আর বাংলাতে স্কুল ছাত্রী হেতাল পারেখকে আরেক ধনঞ্জয়ের হাতে নিগৃহীতা হতে হয়েছিল।

তবুও যে ছেলে মেঘের ডাকে ভয় পায় তার নাম কালই হয়ত মেঘনাদ রাখা হবে।।।
______________
© সৈকত সেন রানা

No comments:

Post a Comment