Sunday, 4 December 2016

।। ফাগুনের ছিন্ন পলাশ ।।

ফাগুনের  ছিন্ন পলাশ

1) দিব্যাস্ত্র,কাবেরী।

 ভালোবাসবে না জানতাম কেননা শুধু তোমার  ভালোবাসা অর্জনের লোভে আমি এক সহস্র ব্যর্থ জন্ম পেরিয়ে এসেছি।
 তূণীরের প্রায় সমস্ত তীর এখন শেষ।
 একটিই মাত্র তুলে রেখেছি আগামী জনমের জন্য আমার দিব্যাস্ত্র , কাবেরী
পৃথ্বীকে ঘৃণা কোরো কাবেরী ,তাচ্ছিল্য কোরো না করুণাও না।
শেষ জন্মে তোমার ভালোবাসতে জিতে নিতে  তোমার পার্থর জন্য  দিব্যাস্ত্র ,কাবেরী!  

2) কবি ও খলনায়ক।
                                     
সাদা পূঞ্জীভূত মেঘ, নীলাকাশ, কূল ছাপানো নদী  এক নিবিড় কাশবন এ সমস্তই কাবেরীকে দিয়ে বললাম,“ তোমারই। ”
 কাবেরী মুখার্জী কবিতার খাতা থেকে  ধ্যান ভেঙে মুখ তোলেন।
দু ভুরুর মাঝখান থেকেঅলৌকিক আলো বেরোতে থাকে আমার ঈশ্বরীর।
বুঝি এটাই  দেবী মানবীর তৃতীয় নয়নের রোষবহ্নি।
 দেবী অসুরকে হত্যার আগে বিধিবদ্ধ  সতর্কতা জারি করেন,“  হে কবেরী নাট্যের খলনায়ক!
ও সাদা মেঘে ছল আছে, কাশফুলে বিষ আর নদীতে মৃত্যু।
তার থেকে বার কর তোমার বাঘনখ আর শ্বদন্ত। যুদ্ধশেষে  মৃত্যর জন্য প্রস্তুত হও।”

তন্মুহূর্তে প্রেমিক আমি ক্রোধে অপমানে পাগল হয়েযাই।
সাদা কাশফুল বিষে নীল হয়ে যায় ।
 শারদীয়া মেঘ  ক্রোধে সিঁদুরে হয়ে বাঘের মত গর্জন করতে থাকে।
 আকাশকে ফালাফালা করে বিদ্যুৎ  চমকের মত আমার শ্বদন্তরা  বেরিয়ে  আসে।
অশ্রান্ত বৃষ্টিতে নদীতে ষাড়বান ডাকে আর আমি পৌরাণিক যাত্রাপালার খলনাযকের কায়দায় অট্টহাসিতে ভেঙে পড়ি ,“হা! হা! হা ! আমার কাবেরী চাই। ”
 কবি ঈশ্বরীর নিক্ষিপ্ত ত্রিশূলে আমার হৃদপিণ্ড এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায়।

3)কাবেরীর  প্রেমিক অথবা একজন  মনোরোগী।
               
 ঘরের আলো নিভে গেছে। কড়া ঘুমের ওষুধে দুচোখ ভারী হয়ে আসে।
ক্লোরোজিপামও শেষ অবধি হার মানে। আমার ঘুম আসে না।
 মাথার মধ্যে অবিরল বৃষ্টিপাতের শব্দ হয়। বুক ব্যথায় ভারী হয়ে ওঠে।
 আমার শিরা উপশিরারা খুলে যেতে থাকে।
  ঝনঝন টেলিফোনের আওয়াজে  আমি রিসিভার তুলতেই
কাবেরীর ধীর করুণ কণ্ঠস্বর ভেসে আসে,“দরজা খুলে রাখো আমি আসছি।”

 মনোরোগবিশেষজ্ঞ বলেছিলেন,“ একটু জটিল শব্দ বিভ্রম। রোগী ওষুধে ভালো থাকবে। ”
                                                         
 পঁয়ত্রিশ বছরের রাস্তা পেরিয়ে সামুদ্রিক কুয়াশা মাখা মানুষের ভীড়ে কাবেরী আজকাল  আসে।
 শতাব্দীর একমেবাদ্বিতীয়ম মানবীর কবিতা মাখা দুই অপরূপ চোখ
 আমি বন্দরের অ্যাসিড ধোয়াতেও চিনতে ভূল করি না।
 আমার মাথার মধ্যে  জলপ্রপাত ভেঙে পড়ে।
 কাবেরী অথবা  আকাশের কাল্পনিক রামধনু আমার সমগ্রর দখল নেয।

মনোরোগবিশারদ গম্ভীর স্বরে বলেন,“শব্দ বিভ্রম দৃশ্য বিভ্রমে দাঁড়িয়েছে।
স্কিজোফ্রেণিয়ার প্রায় সীমান্তে এ রোগ সারে না।”    

   ,কাবেরী,সামুদ্রিক কূয়াশা,  নিজস্ব জলপ্রপাত আর এক অলৌকিক রামধনু নিয়ে আমি ফাগুনের ছিন্ন পলাশের মত বেঁচে আছি।

© পৃথ্বী ব্যানার্জী

No comments:

Post a Comment