আজকাল ফেসবুকে বাঙলাভাষী
নানান applications খুব জনপ্রিয় হয়েছে। যেমন - আপনি এখনো single কেন,
কারা আপনার profile এ ঝাড়ি মারে, আপনি আসলে কোন জন্তু, কারা আপনার জন্য ফিদা, আপনার গায়ের গন্ধ কোন ফুলের মতো, পটি করতে করতে আপনি
কোন গানটি গান ইত্যাদি, ইত্যাদি। তা এইসব দেখতে দেখতে আমারও
ভারি কৌতুহল হচ্ছিল, দেখিই না ব্যাপারখান কী।
আজ রাত্রি তিন প্রহরে আমার timeline এ এক বন্ধুর update
এল - "আপনার চারটি বিশেষত্ব।" দেখলাম, খুব সুন্দর সুন্দর কথা লেখা আছে। নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না। কোনদিন তো
নিজের সম্বন্ধে ভাল কিছু কাউকে বলতে শুনিনি। বাবা-মা এখনো নিজেদের এই ঐতিহাসিক ভুল
নিয়ে আফসোস করে। বন্ধুরা বলে, বিষ। বউ তো সারাক্ষণ বলে চলেছে
এই বুড়ো ভামের পাল্লায় পড়ে, তার সুকুমার, সবুজ, সুরভিত জীবন ও যৌবন ভাজা ভাজা হয়ে গেছে। এমনকি
আমার প্রেমিকারাও কোনদিন মিষ্টি কিছু বলল না, খাওয়ানো তো
দূরের কথা।
তার ওপর, এই তো গতকাল এক প্রেমিকার সাথে পার্কে
বসে বাদামভাজা খাচ্ছি। ঠিক খাচ্ছি না, আমি খোলা ছাড়িয়ে
দিচ্ছি আর ও খাচ্ছে। এমন সময় পেছন থেকে কয়েকটি বদ ছোকরা আওয়াজ দিল - দাদু senior
citizens কোটায় কী জিনিস তুলেছে, দ্যাখ মাইরি
! আমি এসব আওয়াজ টাওয়াজ গায়ে মাখি না। বাঙালির ফ্রয়েডীয় চোঁয়া ঢেকুর ভেবে মাফ করে
দেই। কিন্তু আমার প্রেমিকা ভারী খচে গিয়ে বলল - বুড়োর সাথে পার্কে বসাই তার ভুল
হয়েছে। আমি খুব কায়দা মেরে, একচোখ টিপে বললুম - পরীক্ষা করেই
দেখ, বুড়ো না কচি। তা শুনে ও বলল - ছাগল দিয়ে যে লাঙল টানানো
যায় না, সেটা জানার জন্য পরীক্ষা করতে হয় না। যাইহোক,
থাক এসব দুঃখের কথা। যা বলছিলুম, সেটাই বলি।
নিজেকে আর সামলাতে না পেরে দিলুম আঙুল ছুঁইয়ে। আর তারপরেই চমক -
দেখলাম একটা লেখা এল - "নিজেরটা দেখুন"।
সদ্যসদ্য প্রেমিকার কাছে লাঙল করা নিয়ে কথা শুনতে হয়েছে, তারপরে
ফেসবুকেও এই ! হে জগৎ, তোমার কি মন নাই ! যাইহোক, বলেছে যখন, তখন করতে তো হবেই। কিন্তু ঘুটঘটে
অন্ধকারের মধ্যে দেখব কী করে ! টর্চ জ্বেলে দেখাই যায়, কিন্তু
পাশে বউ। ও যদি দেখে ফেলে, তাহলে মহা কেস খেতে হবে। এইসব সাতপাঁচ
ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত কৌতুহলেরই জয় হল। সেই আপেলের সময় থেকে কৌতুহলই জিতে
এসেছে। অগত্যা চাদরটায় মাথা পর্যন্ত ঢেকে, টর্চ জ্বাললুম।
দেখলাম, উনি গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছেন।
ঠান্ডাও পড়েছে। কেমন যেন একটু শুকনো শুকনো আর দুঃখী দুঃখীও লাগছে। যদিও শুধু
দেখতেই বলেছিল, তবুও একটু কথা বলার লোভ সামলাতে পারলাম না।
দীর্ঘদিন এমন একান্ত সাক্ষাৎ হয়নি। আহা, অবাক হবেন না। আমি
কবি মানুষ। আর কবিরা পাহাড়, সমুদ্র, মরুভূমি,
গাছ, পাখী, নদী, নালা, মশা, মাছি, ডেঙ্গি, আমাশা সক্কলের সাথে কথা বলার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু
কোন ভাষায় কথা বলব? ভেবে দেখলাম ইংরেজিতেই বলি। শত হলেও উনিও
তো বাঙালী। আস্তে আস্তে ঠেলা মেরে বললাম,
- good morning
No answer
এবার আরেকটু জোরে ঠেলা মেরে - good morning.
একটু নড়েচড়ে উঠে উনি ভারী বিরক্তি সহকারে বললেন, what is
good about this morning?
খাইসে! এমন high philosophical উত্তরের জন্য
প্রস্তুত ছিলাম না। ঘাবড়ে গিয়ে পাতি বাংলায় মিনমিন করে বললাম - না মানে, সবাই তো এমনটাই বলে। তাই -
- এই হল বাঙালির দোষ। মাথা না ঘামিয়ে শুধু টুকলিবাজি আর চুকলিবাজি।
- হেহেহে। তা যা বলেছেন।
- তা কী ব্যাপার? এতো ডাকিডাকি কিসের? বউ তো ঘুমাচ্ছে দেখছি। একটা কথা প্রথমেই বলে দেই। কলম দিয়ে কান খোঁচানো
যায় ঠিকই, কিন্তু ওর আসল ব্যবহার কাগজের ওপর। বোঝা গেল কথাটা?
- আজ্ঞে, ঠিকমতো বুঝলাম না।
- স্বাভাবিক। ঘিলু শুকিয়ে ঘুঁটে হয়ে গেলে যা হয়। বলছিলাম, হাত দিয়ে ঠেলা মেরেছিস, ঠিক আছে। হাত দিয়ে আর বেশী
কিছু করবি না।
- না না। কী যে বলেন না। শুধু দুটো কথা কইব।
- কী কথা?
- এই কেমন আছেন, এইসব আরকি।
- হঠাৎ?
- না মানে, কেমন যেন শুকনো দেখাচ্ছে
- তোর ঘরে কি এখন বৃষ্টি হচ্ছে?
- না।
- তুই কি চান করছিস?
- না না।
- তাহা হইলে হে মোর পত্নীর ভ্রাতা, আমি কি aqua
guard যে টিপলেই জল বেরুবে?
- এটাও ঠিক বুঝলাম না। যদি একটু বুঝিয়ে দেন
- থাক। বেশী বুঝে কাজ নেই। এই কথোপকথনও তো ফেসবুকে দিবি। বুঝিয়ে
বললে, তোর profile del হয়ে যাবে।
- বাব্বা ! আপনি ফেসবুক, কম্পিউটার এসবও জানেন?
- ভুলে যাস না। তোদের জন্ম আমি দেই। বাপ, বাপ
হোতা হ্যায় আউর বেটা, বেটা হোতা হ্যায়।
- একদম যথার্থ বলেছেন। আজন্ম একসাথে আছি, কিন্তু
আপনার যে এতো জ্ঞান, জানতেই পারিনি।
- এর জন্য চর্চা করতে হয়। কাগজ কলম পাশাপাশি রেখে দিলেই কী আর
রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় রে !
- আপনার মুখেও রবীন্দ্রনাথ !
- বাঙালি তো। সবেতেই রবীন্দ্রনাথ না টানলে যে তোদের জাত যায়।
- কিন্তু sir, একটু নজরুলও ছুঁইয়ে রাখুন। নইলে
চাপ আছে।
- আরে উনিই তো আমাদের মনের কথাটা কয়ে গেছেন। মানে ঈষৎ পরবর্তিত করে
- শোন বীর, করো চির উন্নত মম শির।
- হ্যাঁ, এবারে আর কেউ কিছু বলতে পারবে না।
তবে, আরো একটা ব্যাপার যদি করেন, তাহলে
এক্কেবারে নিশ্চিন্তি।
- থাম তুই। আমি bi-color হতে পারব না, এ আগে থেকেই বলে দিলাম।
- আচ্ছা, আচ্ছা। আপনার যেমন ইচ্ছা। তা আপনাকে
যেন একটু দুঃখী দুঃখীও লাগছিল?
- হুঁ।
- কেন?
- তোর মতো ছাগলের সাথে থাকলে এমন হবেই।
- ও হো। ওর ওই ছাগল দিয়ে লাঙলের কথাটা খুব মনে লেগেছে বুঝি?
- মনে নয়, মানে।
- very sorry. কী করলে আপনাকে সুখী করতে পারব, যদি বলেন।
- এটাও বলে দিতে হবে! এক কাজ কর, quantum mechanics আর বেদান্তের একটা তুলনামূলক আলোচনা কর। তাহলেই খুশি, সুখী সব হব। ভাগ এখান থেকে। আহাম্মক কোথাকার।
এমন ধাতানি খেয়ে আর কথা
বাড়ানোর সাহস হল না। টর্চ বন্ধ করে ফেসবুকে মন দেয়াই ভাল। নিজেরটা দেখলাম, কথাও বললাম - এতক্ষণে নিশ্চয় ফেসবুক
আমার গুণগুলো গুনগুনাচ্ছে। যাই, দেখে আসি বরং -
______________
@শোভন বাগ
No comments:
Post a Comment