প্রথম থেকে পঞ্চম পর্ব একত্রে
------------------------------
মৌজা -- অকপট
খতিয়ান নং-১
দাগ নং -- ১
ভারত-পাকিস্তান-কুস্তিঃ
**********************
তাহলে শেষমেস যুদ্ধটা আর হচ্ছে না ।। যুদ্ধংদেহি পরিস্থিতি আপাতত স্তিমিত । দুপক্ষই শান্তির পায়রা ওড়াতে শুরু করেছে । ব্যাপারখানা পরিস্কার হল ২ রা অক্টোবর, যখন অহিংসবাদী জাতির জনক গান্ধীজির জন্মজয়ন্তীতে মোদিজি অহিংস নীতির বিজ্ঞাপন দিলেন, এবং তার পরে পরেই পাকিস্তানের তরফ থেকে নওয়াজ শরিফের পেয়ারের লোক সরতাজ আজিজের মুখে শান্তীকামী সুর শোনা গেল ।। তিনি জানালেন আমাদের ইন্টালেকচুয়াল গুরুদেব অজিত ডোভালের সঙ্গে নাসিম জনজুয়ার টেলিফোনে দুই দেশের শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে টেলিফোনে এক প্রস্ত কথা হয়েছে । অবশ্য কে কাকে প্রথম ফোন করে শান্তি বর্ষন করেছে সেটা জানা যায় নি ।।।
.
যুদ্ধটা যে হবে না সেটা মগজওয়ালারা ভাল করে জানেন ।। কারন যুদ্ধ মানে যে শুধু গোলা আর মিসাইল ছোড়া নয় সেটা তারা বিলক্ষন জানেন ।। যুদ্ধে কোনো দেশ জেতে না, বরং অংশগ্রহনকারী দেশ গুলোর রসাতলে যাবার পথ ।। চরম চরম অর্থনৈতিক সংকট ।। আন্তর্জাতিক বানিজ্য, কূটনীতির প্রশ্ন ও স্বার্থ জড়িয়ে থাকে।। আমরা তো জানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন মুখ থুবড়ে পড়েছিল ।। তাছাড়া বর্তমান" উত্তরাধুনীক" যুগে দুই পরমানু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ হওয়াটাই সম্ভব নয়, যদি হয় তাহলে সেটা চরম আকার নেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে । চরম আকার মানে পারমানবিক যুদ্ধের দরুন এই ধরাধাম পুরো ভোগে চলে যাওয়া ।।।।
.
এবার যুদ্ধ-যুদ্ধ হল্লা বন্ধ হবে বলেই মনে হচ্ছে ।। আরে বাওয়া, এসি ঘরে শোফায় বসে এবিপি আনন্দ বা জি নিউজে যুদ্ধের সেনশসন চেটে চেটে উপভোগ করা এক জিনিস, আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সীমান্তে দাড়িয়ে মৃত্যুকে হাতে নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করাটা আর এক জিনিস ।। উগ্র জাতীয়তাবাদ যুদ্ধের মতো নারকীয় জিনিসটাকে রোমান্টিসাইজ করতে শেখায়, কিন্তু আদৌ তা নয় ।। যুদ্ধ মানে বিভীষিকা, মৃত্যুর মিছিল; আর যুদ্ধ চলাকালীন বা যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আগুন ছোঁয়া দামের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পারা সাধারন খেটে খাওয়া মানুষদের দুমুঠো ভাতের জন্য হাহাকার ।। সেটা অবশ্য আপনার আমার মতো জিওগ্রাফিক্যালি ও ইকোনমিক্যালি সেফ জোনে থাকা মানুষের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব নয়, তাই আমরা যুদ্ধ জিনিসটাকে রোমান্টিসাইজ করতেই ব্যাস্ত ।।
মৌজা -- অকপট
খতিয়ান নং -- ১
দাগ নং -- ২
**********
ভারত- পাক কুস্তিঃ
****************
উৎসবের মরসুমে যুদ্ধ-যুদ্ধ পৈশাচিকতা বড্ড বেমানান । তবে এই মাস হিষ্টিরিয়ার জন্য বহুলাংশে দায়ী যে মিডিয়া সেকথা বলাই যায়। ব্যাবসায়িক স্বার্থেই যুদ্ধ বিষয়ক রোমহর্ষক খবর গিলিয়ে যাচ্ছে দেশের মানুষকে । কোন্ দেশের কত সামরিক শক্তি, কার কত পারমানবিক শক্তি, পারমানবিক যুদ্ধ বাধলে কার কত ক্ষতির সম্ভবনা এসব নিয়ে নিত্যদিন আলোচনার আসর জমছে ।। এই খবর এখন পাবলিক সবচেয়ে বেশি খাবে, তাই সেনশেসনাল চুলকানি দিয়ে টি আর পির পারদ উঁচু করে রাখছে মিডিয়াগুলো ।।
কিন্তু, দুটো দেশ যদি পরমানু শক্তিধর হয়ে তবে কার কত সামরিক শক্তি সেটা নিয়ে আলোচনাটা বালখিল্যতা, এ কথা আমি নয় সমর-বিশেষজ্ঞরাই বলেন । কেন বলেন, ছোট বেলায় শোনা একটা ছোট্ট গল্প বলি তাহলে সেই সুত্র ধরে আলোচনা সুবিধা হবে -
গ্যাসোলিনের আধারে দুজন চরম শত্রু কোমর অবধি ডুবে আছে ।। পরস্পরের মুখোমুখি এই দুই জন শত্রু নিজেকে বাচিয়ে একে অপরকে মার্কামারা ক্ষিপ্রতায় শেষ করে দিতে বদ্ধপরিকর ।। দুজনের হাতেই আছে দেশলাই বাক্স । একজনের বাক্সে তিনটে কাঠি, আর একজন একটু বেশি "শক্তিশালী" তার হাতে পাঁচটা কাঠি ।। এবার বলুন তো কে জিতবে ???? পাটীগনিতের বিচারে হয়ত পাঁচটা দেশলাই কাঠি যার কাছে আছে সে জিতবে, কারন সে বেশি শক্তিশালী ।। কিন্তু ফিলোজফি তো অন্য কথা বলে, দুজনের যেকোন একজনের কাছ থেকে একটা দেশলাই কাঠিই যথেষ্ট, তাতে দুজনেই ধ্বংস হয়ে যাবে ।।
তাই কে বেশি সামরিক শক্তিতে সজ্জিত এই অবান্তর প্রশ্নে না গিয়ে দেশের গনতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়ার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা দরকার ।। ব্যাবসায়িক স্বার্থে এরা উগ্র জাতীয়তাবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, দেশের সাধারন মানুষকে কান্ডজ্ঞানহীন আবেগে ভাসিয়ে দেওয়ার অনুঘটক রুপে কাজ করছে ।। আমরা তো সারাদিন ইন্ডিয়ান মিডিয়ার খবর শুনি, তাই আমি নিছক কৌতুহলবশেই পাক মিডিয়া কি ভার্সানে যুদ্ধ সম্পর্কীয় খবরাখবর কিভাবে কভার করে সেটা জানার জন্য ইউটিউবের দারস্থ হয়েছিলাম ।। যা দেখলাম, আমি তাজ্জব ।। ওরা বিভিন্ন ইন্ডিয়ান মিডিয়ার কভার করা যুদ্ধ সম্পর্কীয় খবর গুলোর ক্লিপিংস দেখিয়ে রীতিমত মজা করছে, নিউজ এংকারের ভার্সান এমন যেন গোটা ভারতবর্ষই একটা হিংস্র জন্তু এবং হাফিজ সাইদ "হিরো" যিনি নাকি কাশ্মীরিদের "উদ্ধারকর্তা"।। সাধারন পাক জনগনের মস্তিস্কে এভাবেই ভারত বিদ্বেষের সোমরস ইনজেক্ট করে যাচ্ছে পাক মিডিয়া, এবং ভারতীয় মিডিয়াও সেম " গুরুদায়িত্ব" পালনে এক পাও পিছিয়ে নেই.....
মৌজা -- অকপট
খতিয়ান নং --১
দাগ নং -- ৩
***************
ভারত-পাক কুস্তি
****************
"মানুষ যখনই চাই বস্ত্র আর খাদ্য,
সীমান্তে বেজে ওঠে যুদ্ধের বাদ্য ।"
আমাদের ভারতবর্ষের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে বস্ত্র আর খাদ্য চাহিদা আজন্ম ।। এই হাহাকার যখন চরম আকার ন্যায়, ক্ষুদার্ত শিশুর ক্রন্ধন যখন থামানো যায় না, কৃষকরা যখন আত্মহত্যা করে, বেকারত্ব, দারিদ্র, মূল্যবৃদ্ধি যখন জলন্ত সমস্যা হয়ে দাড়ায় অপদার্থ সরকার যুদ্ধের বাজনা বাজিয়ে হাহাকার, আর্তনাদ, ক্ষোভ সব কিছুকে ধামাচাপা দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যায় ।। ভোটের মুখে দেশের জলন্ত সমস্যা গুলো থেকে সাধারন নাগরিকদের নজর ঘোরানোর জন্য জাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেমের বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করে ।। ঘৃন্য রাজনৈতিক স্বার্থের হাতে দেশপ্রেম তখন পন্য, জাতীয়তাবাদের বাজারে চড়া দামে প্যাকেজ স্যাল হতে শুরু করে "দেশপ্রেম"।।
অস্বীকার করার উপায় নেই কাশ্মীরে অন্ন, বস্ত্র চাহিদা সহ একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকমাস ধরেই, আগেও ছিল কিন্ত গত কয়েকমাসে সেটা চরম আকার নিয়েছে । বিচ্ছিন্নতাবাদী সং গঠন গুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ।। দশটি জেলার জনজীবন কার্যত স্তব্ধ ।। এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে পাক সরকার সন্ত্রাসবাদে মদত সহ জঙ্গিদের লেলিয়ে দিয়ে সামিগ্রিক ভারতবর্ষে এই অস্থিরতা চ্যানেলাইজ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।। এই অপচেষ্টার নিদর্শন হিসাবেই আমরা দেখলাম উরিতে পিশাচ জঙ্গীদের নারকীয় হামলা ।। এর আগেও ঘটেছে একাধিক বার জঙ্গি অনুপ্রেবেশের ব্যার্থ প্রয়াস ।। ১৭ জন সেনা জওয়ানের "শহীদ" হওয়া কোনো দেশবাসির পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি।।
প্রতিশোধের প্রতিধ্বনি দেশের সব প্রান্ত থেকেই আসছিল ।। একটা ডিভাষ্টেটিং কাউন্টার অ্যাটাকের পলিসি না নিলে সন্ত্রাসবাদী আস্ফালন উত্তোরত্ত বৃদ্ধি পাবে, এটা অনস্বীকার্য। তাই উরি ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরেই অজিত ডোভালের নেতৃত্বে গভীর রাতে আমাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী সফল সার্জিক্যাল ষ্ট্রাইক চালিয়ে আসে, যার দরুন বহু জঙ্গী নিকেশ করার পাশাপাশি বেশ কিছু জঙ্গী ঘাঁটি ও লঞ্চপ্যাড ধ্বংস করা গেছে ।। সেনাবাহিনীর এহেন অভিযান দলমত নির্বিশেষে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে ।। এই অবধি ঠিক ছিল, কিন্তু ঘৃন্য রাজনীতির ঘন্ধটা পাওয়া গেল এর পর ।।
ভারতীয় সেনা বাহিনী সত্যিই আমাদের গর্ব ।। এযাবত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ম রক্ষার্তে দেশের সেনাকর্তৃক সার্জিক্যাল ষ্ট্রাইক অনেকবার হয়েছে, এমনকি কংগ্রেস আমলেও হয়েছে ।। কিন্তু আমরা টের পেতাম কি ?? পেতাম না ।। দেশে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অস্থিরতার বাতাবরন যাতে তৈরি না হয় সেই জন্য অত্যন্ত সঙ্গোপনে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এমন অভিযান চালানো হত ।। কিন্তু আমরা কি দেখলাম এবারে ??? ঠিক উল্টোটা ।। সেনাবাহিনির DGMO রনবীর সিংকে দিয়ে ঘটা করে সাংবাদিক সম্মেলন করিয়ে, বিভিন্ন গনমাধ্যম প্রচার করতে শুরু করল মোদী ব্রিগেড, যেন কৃতিত্বটা আমাদের বীর সেনা জওয়ানদের নয়, পুরোটাই মোদির ।। ৫৬ ইঞ্চির ছাতি নিয়ে তিনিই যেন একাই লড়াইটা লড়ে এলেন । বিভিন্ন সোশাল নেটওয়ার্কে "দেশপ্রেমের" ফোড়ন সহ বিজেপি সরকারের সার্বিক সাফল্য হিসাবে প্রচারিত হতে লাগল ।।।
মগজওয়ালার ভালভাবেই বুঝতে পারছেন, দেশপ্রেম তো ছুতো, আদতে ভিতরে রয়েছে ঘৃন্য রাজনীতির চোরাগোপ্তা । সামনেই উত্তরপ্রদেশ সহ বেশ কিছু রাজ্যে নির্বাচন, এমতাবস্থায় একটা টাটকা সাফল্যের খতিয়ান দেশের মানুষকে দিতে না পারলে যে নির্বাচন বৈতরনী পার হওয়া যাবে না ।। তবে এমন রাজনৈতিক কৌশলে মোদিজী যে অনেকাংশে সফল সেটা বলাই যায় ।। কিন্তু দেশের প্রতিরক্ষা বিভাগ তথা সেনাবাহিনী এবং তাদের সাফল্যকে নোংরা রাজনীতির আঙ্গিনায় নামিয়ে আনা ও রাজনৈতিক পন্য হিসাবে ব্যাবহার করার পিছনে যে বিপদ আছে সেটা মোদিজি ভেবে দেখেছেন কি ??
আপনি তো "রাজা" তাই "উলুখাগড়ার" প্রান গেলে আপনার তো কিছু যায় আসে না ।। সৈনিকরা বেশির ভাগই নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা, তারা "যুদ্ধ" বা "অভিযান" জাতীয় কিছুতে প্রান দিলে আমরা তার কফিন বন্দী ছবি ফেসবুকে পোষ্টিয়ে "জয় হিন্দ" স্ট্যাটাস দিয়ে আমাদ্রর "জাতীয় দায়" সেরে দি, সরকার একটা নির্দিষ্ট অনুদান দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে দেয় ।। কিন্তু তারপর ?? শহীদ সৈনিকের পরিবারের খোঁজ রাখি কি ?? "শহীদ" হওয়াটা একটা জাতীয় আইরনির পর্যায় নেমে ঘৃন্য রাজনীতির গেরোয় ।। প্রান সৈনিকরা দেয়, দূর্ভোগ মৃত সৈনিকের পরিবারকে পোহাতে হয় আর মাঝখান থেকে নেপোয় দই মেরে দিয়ে চলে যায় রাজনীতির কারবারিরা .....
মৌজা --অকপট
খতিয়ান নং-- ১
দাগ নং --৪
**************
ভারত-পাক কুস্তি
********************
ক্রমাগত জঙ্গিহানার কাউন্টার পলিসি হিসাবে কূটনৈতিক পথে পাকিস্তানকে ভাতে মারার কৌশল গৃহিত হয়েছে ।। বিভিন্ন চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবি মহল থেকে সেই দাবিই উঠতে শুরু করেছিল যে গলার শিরা ফুলিয়ে জনগনের উদ্বায়ী আবেগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তো কোনো আন্তর্জাতিক নীতি গৃহিত হতে পারে না, সামরিক অভিযান তো নয়ই ।। কারন আমরা দেখেছি আমেরিকা-সোভিয়েত রাশিয়ার ঠান্ডা লড়াইয়েই সময় রোনাল্ড রেগানের বুদ্ধিদীপ্ত কূটনৈতিক চালে কেমন ধরাসায়ী হয়ে গিয়েছিল সোভিয়েত রাশিয়া । নব্বই এর দশকে আমেরিকার সঙ্গে বিনা যুদ্ধেই তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়েছিল সোভিয়েত রাশিয়া ।। যদিও কমিউনিষ্ট তাত্ত্বিকরা সেটাকে সমাজতন্ত্রের ভাঙ্গন হিসাবে ধরতে রাজি নয়, বরং রাশিয়ায় কোনোদিনই পুরোপুরিভাবে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় নি, যেটা ছিল সেটা সমাজতন্ত্রের উৎক্রান্তির পর্যায় ।।
যাই হোক, তবুও এটা যে আমেরিকার কূটনৈতিক সাফল্য সেটা অনস্বীকার্য ।। একইরকমভাবে শুধুমাত্র প্রক্সি ওয়ার আর কূটনৈতিক চাপে পাকিস্তানকে শুইয়ে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবি মহল থেকে যে দাবি গুলো উঠতে শুরু করেছে সেগুলোকে সরলীকরন করলে দাঁড়ায়
১) সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি বাতিলের দাবি
২) পাকিস্তানকে দেওয়া Most Favoured Nation (MFN) এর মর্যাদা তুলে নেওয়া
৩) সার্কভুক্ত দেশ গুলোকে নিজেদের দিকে টেনে নেওয়া
৪) বিশ্ব নিরাপত্তা পরিষদে জৈশ-ই-মুহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর কর্তা আজহার মাসুদকে নিষিদ্ধ করার দাবি আরও জোরালো করে বাকি দেশ গুলোর সহমত আদায় করা ।
তবে, পরিকল্পনা নিলেই তো হবে না, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে কোনঠাসা করার এই পরিকল্পনা গুলোর বাস্তবায়ন কতখানি সম্ভব সেটাও ভেবে দেখার দরকার আছে বৈকি ...
প্রথমেই আসি "সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি" প্রসঙ্গে । ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্ততায় ভারত পাকিস্তানের মধ্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । চুক্তি অনুযায়ী শতদ্রু, ইরাবতী, বিতস্তার জল ভারত ব্যাবহার করবে; অন্যদিকে সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও ঝিলমের ২০ শতাংশ জল ভারত ও বাকি ৮০ শতাংশ জল পাকিস্তান ব্যাবহার করবে । কিন্তু এই তিন নদীরই উৎসস্থল ভারত ।। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বেশ কয়েকবার ভারত ও পাকিস্তান সম্মুখ সমরে নেমেছে কিন্তু ভারতের তরফ থেকে কোনো দিনই এই চুক্তি বাতিলের দাবি ওঠে নি । কিন্তু উরিতে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাক সম্পর্ক এতটাই তলানিতে এসে ঠেকেছে যে ভারতের রাজনৈতিক মহলের তরফ থেকে এই চুক্তি বাদিলের দাবি উঠেছে, যদিও এক তরফাভাবে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল করা যায় না ।। এই তিন নদী থেকে প্রাপ্ত জলের উপর পাকিস্তানের অর্থনীতি তথা সাধারন মানুষ জীবনধারা অনেকাংশে নির্ভরশীল ।। সুতরাং এই চুক্তি বাতিলের মোক্ষম কূটনৈতিক অস্ত্র প্রয়োগ করলেই পাকিস্তানের কোমর ভেঙ্গে দেওয়া যাবে ।।
তবুও এতে দুটো কিন্তু আছে । তার প্রথমটা হল পরিকল্পনা রূপায়নের ক্ষেত্রে ।। এই চুক্তি যদি এক তরফা ভাবে ভারত বাতিলও করে তবে এই হিউজ পরিমান বাড়তি জল ভারত রাখবে কোথায়, জলাধার কই ??? এমতাবস্থায় জলে পাকিস্তানের দিকে বেরিয়ার দিতে গেলে যে উত্তর ও পশ্চিম ভারত প্লাবিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা ।। এই বানভাসী অসহায় মানুষ গুলোরই বা কি হবে ? যদিও উদ্ভুত জল মজুত রাখার আধার ও পরিকাঠামো নির্মান করা যায়, কিন্তু সেটা তো রাতারাতি হয়ে যাবে বা, ইট্স আ টাইমটেকিং প্রসেস ।। বিশেষজ্ঞদের মতে মিনিমাম আট থেকে দশ বছর লাগবে পরিকাঠামো নির্মানে ।। তাহলে এটা চটজলদি সমাধান নয়, সেটা নিশ্চিত ।। অন্যদিকে দ্বিতীয় "কিন্তু" টি হল মানবিকতার ।। পাকিস্তানের একটা বড় অংশের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের জীবন এই তিন নদীর উপর নির্ভরশীল । জল না পেয়ে এই মানুষ গুলো হয়ত দূর্ভিক্ষ আর অনাহারে শেষ হয়ে যাবে । ভারত তো পাকিস্তানের মতো জঙ্গী মনোভাপন্ন দেশ নয়, ভারতের সামরিক অভিযান তো পাক সরকার ও তাদের মদতপুষ্ট জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের সাধারন মানুষের বিরুদ্ধে
নয় নিশ্চয়, তাহলে ???
মৌজা-- অকপট
খতিয়ান নং -- ১
দাগ নং -- ৫
**************
#ভারত-পাক কুস্তি
পর্ব -- ৫
******************
পাকিস্তানকে ঘায়েল করার জন্য সিন্ধু চুক্তির পাশাপাশি আর একটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহনের যে দাবিটি উঠেছিল সেটা হল 1996 সালে পাকিস্তানকে দেওয়া "Most Favoured Nation" (MFN) এর মর্যাদা তুলে নেওয়া .. WTO এর GATT চুক্তি অনুযায়ী ভারত সরকার পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক বানিজ্য ক্ষেত্রে এই মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ন্যায় । উন্নয়নশীল দেশ গুলোর মধ্যে এমন বানিজ্যিক পলিসি বেশ ফলপ্রসু ।। তবে MFN অর্থে কোনো বিশেষ দেশকে আলাদা করে আমদানী রপ্তানীর ক্ষেত্রে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া নয়, বরং কোনো উন্নয়নশীল দেশ অন্যান্য দেশকে বানিজ্যিক সুবিধা দিলে সংশ্লিষ্ট দেশ কর্তৃক MFN মর্যাদা প্রাপ্ত দেশেকও সেই সুবিধা দেওতা হবে, বৈষম্য করা যাবে না ।। ভারত সরকার পাকিস্তানকে MFN এর মর্যাদা দিলেও পাকিস্তান সরকার ভারতকে সেই মর্যাদা দেয় নি, যদিও দেওয়াটাই দস্তুর ।। না দেওয়ার পিছনে পাকিস্তান সরকার কুযুক্তি খাড়া করলেও এটা পাকিস্তানের অভব্যতা ছাড়া কিছুই নয় ।।
কার্গিল যুদ্ধের সময়ও ভারতের পক্ষ থেকে এমন মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার দাবি ওঠে নি, উরির ঘটনার পর দু দেশের সম্পর্ক এমন তলানিতে এসে ঠেকেছে যে স্বাভাবিকভাবেই এমন "অপ্রীতিকর" দাবি উঠছে ।। তবে পাকিস্তানের কাছ থেকে MFN তুলে নেওয়া কতখানি কাজের কাজ হবে সেটাই প্রশ্ন । কারন ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যের পরিমান এতটাই কম যে তাতে নিশেধাজ্ঞা আনাটা কার্যত অর্থহীন । সার্ভে অনুযায়ী 2015-16 বর্ষে পাকিস্তানে ভারতের মোট আমদানির পরিমান 2.17 বিলিয়ন
মার্কিন ডলার । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের মোট বানিজ্যের মাত্র ১ শতাংশের ভাগীদার ইসলামাবাদ, এমনকি উরির ঘটনার পর বানিজ্যিক স্বাস্থ্যের আরও অবনতি হয়েছে ।।
পাকিস্তানের জন্ম লগ্ন থেকেই ভারত-পাক সীমান্ত বরাবরই উত্তপ্ত, আমেরিকার দালালিতে "সম্পর্কের উন্নতি" জাতীয় একাধিক লোকদেখানো বৈঠক হলেও সুসস্পর্কের চিড়ে কোনোদিনই ভেজে নি ।। পারস্পরিক সৌহার্দের বার্তা দেওয়ার নিমিত্তে ভারত পাকিস্তান "বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের মর্যাদা" দিলেও বানিজ্যিক সম্পর্কের খুব একটা উন্নতি হয় নি ।। পাকিস্তান অবশ্য এর জন্য সীমান্তে দুই দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিশ্বস্থতার অভাবকেই দায়ী করেছে ।। তাই এমন পরিস্থাতিতে MFN এর মর্যাদা তুলে নিলে পাকিস্তান খুব একটি বিচলিত হবে বলে মনে হয় না ।।
.........চলবে
No comments:
Post a Comment