অকপট ব্রতকথা
~~~~~~~~~
------------------------------------------
© সুব্রত অধিকারী
~~~~~~~~~
শোন শোন বন্ধুজন শোন দিয়া মন।
অরণ্য-কান্ডের কথা করিনু বর্ণন ।।
ভরতে বিদায়ে রাম হইল হতাশ ।
কিছুদিন চিত্রকূটে করিলেন বাস ।।
একদিন ভরদ্বাজে বিদায় লহিল ।
চিত্রকূট ছেড়ে আরো দক্ষিণে চলিল।।
হায়রে কপাল রাম একি পরিহাস ।
স্ত্রী সহদরে লহিয়া বনে করে বাস ।।
কথাছিল বসিবার যার রাজাসনে।
তাহার দিবস-রাত্রী কাটে বনে বনে ।।
তিন জনে বন মধ্যে অনেক ঘুরিয়া ।
"দন্ডক" অরণ্যে শেষে আসিল পড়িয়া।।
"অগস্ত্য" নামেতে মুনি মহা সিদ্ধ্যজন।
দন্ডক অরণ্যে বাস করিত তখন ।।
বনমধ্যে মুনিবরে তারা দেখা পেল ।
ভক্তিভরে চরনেতে তারে প্রণমিল।
রামের ভক্তিতে তৃপ্ত হইয়া অগস্ত্য ।
প্রদান করিল তাকে নানা অস্ত্রসস্ত্র ।।
মুনিবর রামচন্দ্রে প্রীত হয়ে বেশ ।
পঞ্চবটীতে থাকার দেন উপদেশ।।
"জনস্থান" বন এক ছিল বড় অতি ।
তার একটি অংশ হল "পঞ্চবটী"।।
সুস্বাদু অনেক খাদ্য অপ্রতুল আছে ।
অনেক সুমিষ্ট ফল হয়ে থাকে গাছে ।।
সেখানে হবেনা আর খাদ্যের অভাব।
শান্তিতে করিবে বাস হবে সুখ লাভ ।।
মুনির বর্ননা শুনি রাঘব নন্দন ।
শীঘ্র করিল গমন পঞ্চবটী বন ।।
"জটায়ু" নামেতে পক্ষী এক অতিকায়।
সেখানে করিত বাস বৃদ্ধ একাকায় ।।
বন্ধু ছিল দশরথ জটায়ুর ভালো ।
তার দেখা রামচন্দ্র সেই বনে পেল ।।
দুই ভায়ে এক সাথে জটায়ুর দ্বারা ।
বাঁধিল কুটির এক সেই বনে তারা ।।
সেখানে করিল তারা থাকার উপায়।
রাম সীতা লক্ষ্মণের সুখে দিন যায়।।
"জনস্থান" অরণ্যের অন্য এক পাশ ।
সেইস্থানে রাক্ষসেরা করিত যে বাস।।
"সূর্পণখা" নামে এক রাক্ষস রমণী ।।
সেই বনে থাকিত সে "রাবন" ভগিনী ।।
রামকে দেখিয়া তাঁর রূপেতে মজিল ।
রাক্ষসী যে স্বামী রূপে রামেরে চাহিল ।।
ক্রদ্ধ হইয়া লক্ষ্মণ চালাইল বান ।
তখনি কাটিয়া দিল তার নাক-কান।।
রাগে দুখে যাতনায় চিৎকার করে ।
পলাইল সূর্পণখা সেই স্থান ছেড়ে।।
"খর" ও "দূষণ" তার মাসতুতো ভাই ।
তাদের বলিল এর প্রতিশোধ চাই ।।
ভগিনীর অপমানে শোধ নিতে তারা।
চোদ্দ হাজার রাক্ষসে করিল যে খাড়া।।
রামের সহিত তাদের বড় যুদ্ধ হল ।
দুই ভায়ে একে একে সবে বিনাশিল।।
"অকম্পন" কোনোমতে প্রাণেতে বাঁচিয়া।
রাবনে সূচনা এর দিল লঙ্কা গিয়া ।।
রাক্ষস রাজ "রাবন" ছিল লঙ্কেশ্বর ।
অজেয় ছিলেন তিনি পেয়ে ব্রহ্মা বর।।
সূর্পণখা গিয়ে বলে তার অপমান ।
শুনিয়া রাবন হল রেগে খান খান ।।
ক্রুদ্ধ হইয়া লঙ্কেশ দশানন বীর ।
করিবে সীতা হরণ হল মনস্থির ।।
মারীচে ডাকিয়া তিনি নির্দেশিল তারে।
শরীরে মায়াবী রূপ ধরিতে যে পারে ।।
"মারীচ" রাক্ষস তার মৃগ -রূপ ধরে ।
কুটিরের চারিপাশে সর্বক্ষণ ঘোরে।।
সুবর্ণ হরিণ সীতা দেখিলেন ক্ষেতে ।
রামকে বলিল তিনি তাঁরে এনে দিতে।।
কুটিরে সীতার ভার শপে লক্ষ্মণেতে।
সুবর্ণ হরিণ খোঁজে গেল সে বনেতে।।
সময় বহিয়া গেল রাম না ফিরিল ।
নানান চিন্তা সীতা করিতে লাগিল ।
আদেশ করেন সীতা লক্ষণে ডাকিয়া।
রামকে ত্বরায় যেন আনে সে খুঁজিয়া।।
কুটিরের চারিপাশে এক গন্ডি টেনে ।
লক্ষ্মণ বের হইল রাম অন্বেষণে ।।
যাবার আগে লক্ষ্মণ দেখাইল ভয়।
গন্ডি-বাহিরে না যেন, সীতা বের হয়।।
যেই না লক্ষ্মণ বের হইল বাহিরে ।
ভিক্ষুক বেশে রাবণ হরিল সীতারে।।
ভিক্ষান্ন দিতে যখন গন্ডি পার করে।
স্বমুর্তি ধরিয়া ভিক্ষু সীতা মাকে ধরে ।।
উড়ন্ত রথে রাবণ সীতারে লহিল ।
আকাশ পথেতে দ্রুত লঙ্কা পলাইল ।।
সীতারে দেখিয়া একা রাবণের রথে ।
জটায়ু আসিয়া বাঁধা দিল তার পথে।।
প্রতিরোধ করিল সে ক্ষুরধার ঠোঁটে ।
রাগিয়া রাবণ তার দিল ডানা কেটে।।
কুটিরে ফিরিয়া রাম সীতারে না দেখে।
খুঁজে খুঁজে ফিরিলেন তারা চতুর্দিকে।।
হন্যে হইয়া তাহারা সীতারে খুঁজিল ।
অবশেষে রিক্ত হাস্তে দুভায়ে ফিরিল।।
ভাবিল হয়তো চুরি করেছে বা কারা।
সীতারে না পাহিয়া রাম দিশেহারা ।।
সীতা সীতা বলে রাম হাহাকার করে।
কাতর হইয়া শোকে বনে বনে ঘোরে ।।
খুঁজে খুঁজে পরিশ্রান্ত হয়ে অবশেষে।
মৃতপ্রায় জটায়ুর দেখা পেল এসে ।।
তার মুখে শুনিলেন সেই বিবরণ ।
কিভাবে করে রাবণ সীতার হরণ।।
জটায়ু বলিয়া গেল কিযে গেছে ঘটে ।
প্রানত্যাগ করিলেন রাম সন্নিকটে ।।
গোদাবরী নদীছেড়ে আরো ঘন বনে।
যাইলেন দুইভ্রাতা সীতার সন্ধানে ।।
সেই স্থানে দেখা পেল "কবন্ধ" রাক্ষসে ।
রাম লক্ষণে দেখিয়া সেযে তেড়ে আসে।।
এই দেখে রামচন্দ্র ছুড়িলেন বাণ ।
তার আঘাতে কবন্ধ হল খান খান।।
"কবন্ধ" আসলে সে যে রাক্ষস তো নয় ।
মুনির শাপেতে তার এই হাল হয় ।।
শাপমুক্তি হল তার রামের পরশে ।
দিব্যরূপ পাহিল সে ধন্য অবশেষে ।।
যাইবার সময়ে সে বলে গেল রামে ।
যাইতে সেই পর্বতে "ঋষ্যমুক" নামে।।
সেখানে বানর রাজা সুগ্রীবের কাছে ।
সন্ধান পাইবে তবে কোথা সীতা আছে ।।
কিষ্কিন্ধ্যা ছাড়িয়া ভাই বালীর ভয়েতে ।
লুকিয়ে আছেন তিনি সেই পাহাড়েতে।।
কবন্ধের কথা শুনি আশা নিয়ে মনে।
রওনা দিলেন তারা সীতার সন্ধানে ।।
"পম্পা"নদী পার করে কিছুটা অদূরে ।
"ঋষ্যমুক" পৌছালেন সুগ্রীবের দ্বারে ।।
সংক্ষিপ্ত রামায়ণে করি রাম গান ।
শ্রবণে বিপদ হইতে পাবে পরিত্রাণ।।
অরণ্য কান্ডের আজ করি সমাপন ।
ভক্তিতে করিলে পাঠ ভাল থাকে মন।।
"অকপটে" "ব্রতকথা" সোম শুক্র বার ।
"কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড"লহিয়া ফিরিব আবার।।
© সুব্রত অধিকারী
No comments:
Post a Comment