বিসর্জনের ঢাক

লাল জামা

একটা ও জামা হয়নি,তাই রাগে ঠাকুর দেখতেও যায়নি শ্যামলী, মা পুরানো জামাটা কেচে পরিস্কার করে দিয়েছিল,বলেছিল এটা পড় মা , দেখবি বাবা তোর জন্য লাল জামা নিয়ে আসবে। ছুয়েই দেখি নি ও, কেন পড়বে পুরানো জামা? সবাই কেমন নতুন জামা পড়েছে, কতো সুন্দর সেজেছে, ও কিছুতেই পড়বে না পুরানো জামা.

পুজোর দুই দিন বার বার বলে ও কিছুতেই জামাটা
পড়াতে পারেনি পার্বতী, শেষে বিরক্ত হয়ে আর বলে নি, শুধু লুকিয়ে চোখের জল মুছেছে। দশটা নয় পাঁচটা নয় এই একটাই মেয়ে রুইদাস আর পার্বতীর। দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী, কিছুতেই অভাব মেটে না। রুইদাস পুজোর সময় ঢাক বাজায়, শহরে যাবার আগে মেয়ের আবদার লাল জামার জন্য অনেকের কাছে ধার চেয়েছে, শেষে ব্যার্থ হয়ে রাতের আঁধারে মেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে কাঁদতে কাঁদতে ঘাড়ে তুলে নিয়েছে ঢাক। পার্বতীকে বলে গেছে আসার সময় নিয়ে আসবে লাল জামা।

ষষ্ঠীর সকাল থেকেই জামা আর বাবা কে না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে জ্বর বাঁধিয়েছে শ্যামলী। অষ্টমী থেকেই প্রবল আকার ধারন করেছে জ্বর,
বারবার অচৈতন্য অবস্থায় ভুল বকছে " বাবা কি সুন্দর গো লাল জামাটা, চলো চলো ঠাকুর দেখে আসি"। পার্বতী শিয়রে বসে আঁকুল হয়ে কাঁদে.
কাল ঠাকুর বিসর্জন হয়ে গেছে রুইদাসের জন্য পথ চেয়ে বসে আছে পার্বতী। শ্যামলীর শরীর ভীষণ খারাপ,অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে গা।  দুপুরে ছুটতে ছুটতে আসে রুইদাস, মা মা দেখ তোর জন্য লাল জামা এনেছি রে।

দেখমা, বাবার গলা শুনে চোখ মেলে তাকাই শ্যামলী, লাল চোখ ঘোলাটে দৃষ্টি। জামার জন্য হাত বাড়াই রুইদাস মেয়ের হাতে জামা তুলে দিলে মেয়ে সেই জামা বুকে চেপে ধরে। মেয়ের অবস্থা দেখে চমকে উঠে রুই।

-      মা তোর কি হয়েছে?

বাবা একটু ঢাক বাজাবে? রুই কাঁধে ঢাক তুলে নেয়, বোল তুলে কেন জানে না বারবার বিসর্জনের বোল উঠে। চিৎকার করে কেঁদে উঠে পার্বতী, রুইদাস আজো শুধু বিসর্জনের বোলই বাজিয়ে যাচ্ছে।

মতিউল ইসলাম

খাঁড়েরা
মুর্শিদাবাদ