ছেলেবেলার প্রেমের এপিটাফ ও তার রেজারাকশন
************************************
লেখক: দেবাশীষ দাশগুপ্ত
---------------------------
************************************
লেখক: দেবাশীষ দাশগুপ্ত
---------------------------
দুর্গাপূজার পরপরই দেখা যেত প্রেমের বিকাশ।সেই মহালয়া থেকে জগৎধাত্রী এক এর পর এক পরিস্থিতিতে, যে কোন সুস্থ মনের ক্লাস নাইন-টেনের সবে গোঁফ-দাড়ি ওঠা, মানে মুখ ভর্তি লোমওলা মানুষ, প্রেমে পড়তে তখন বাধ্য। আবহাওয়াগত প্রেক্ষাপটও হয়ে যেত প্রেমের জন্যে অনুকূল। সবে শীত পড়তে আরম্ভ করছে। দিন হয়ে যাচ্ছে ছোট। বিকেল পাঁচটাতেই বেশ ছায়া ছায়া অন্ধকার। মশা আর ঠান্ডার ভয়ে গৃহস্থ বাড়ির জানলা হচ্ছে বন্ধ। গলি-ঘুঁজি তে ল্যাম্পপস্টের বরাবরের ঘাটতি।দুই–একটা কৌতহলী বয়ষ্ক নাগরিকের সাইকেল ছাড়া রাস্তায় লোকজনের চলাফেরা যাচ্ছে কমে। ন’দা, ছোড়দা ইত্যাদি এরা থাকলেও এহারে জনসংখ্যার বিস্ফোরণও তখনো ঘটেনি। তাই গাছ-পালা ঝোপঝাড়ের আধিক্যও কম নয়।
এ হেন সন্ধিক্ষণে আমার হারকিউলিস সাইকেল, আমি ও সদ্য কোনো প্যান্ডেলে আঁখ-মিচোলি খেলে আলাপ করা তন্বীর মহা-মিলন হত এই গলিতে।
“উহফ! তাড়াতাড়ি বল কি বলবে। স্যার পড়াতে আসবে এক্ষুনি। আমি খাতা কেনার নাম করে বেড়িয়েছি”
“তোমার বড়দা কি পুলিশ? আমার দিকে অমন করে তাকায় কেন?”
“কে বল্ল তাকায়? কোথায় দেখলে?”
“কেন আজ বাজারে। মাছ কিনছিল আমার সাথে”।
“তোমার চোরের মন। তাই এসব ভাব। বাড়িতে কেউ জানে না। একমাত্র ছোড়দি জানে”।
“বেশ, আমি চোর? যখন তোমায় চুরি করে...”
“এই ছেড়ে দাও। আমি যাব”।
“ঠিক আছে যাও। কাল পাঁচটায়”।
এ্যাপো শেষ।
এই ভাবেই চলত এরকম কথায় কথায়।
দেখতে দেখতে এ্যানুয়াল পরীক্ষা এসে যেত। তখন আর প্রেম? সে উঠত মাথায়। কচিৎকদাচিৎ দেখা হয়ে যেত। পূর্ণিমার চাঁদের মত ফিক করে হাসি আবার অমাবস্যা। পরীক্ষা শেষে ব্যাডমিনটনের কোর্ট কেটে খেলা, ক্রিকেট, টেস্ট সিরিজ, পিকনিক – প্রেম করার তখন সময় কোথায়?
ভালো জিনিষের আয়ু বড় কম হয়। শীতের ছূটিও শেষ হয়ে যেত এক সময়। আবার স্কুল, আবার ক্লাস। রাজা দুষ্মন্তের শকুন্তলার মত আবার মনে পরে যেত প্যান্ডেল প্রেমিকার কথা। সাইকেল নিয়ে যেকোন অজুহাতে ঘুরপাক খেতাম তার বাড়ির সামনে দিয়ে। মনে মনে ভাবতাম কি মেয়েরে বাবা, বারন্দায়ও এসে দাঁড়ায় না এক বার। এসে পড়ত ততদিনে সরস্বতী পুজো। ভাবতাম এই বোধহয় দেখা হবে।কিন্তু কখন যে স্কুল থেকে ঘুরে বাড়ি চলে যেত ধরতেই পারতাম না।
সন্ধ্যেবেলায় পাড়ার প্যান্ডেলে বসে অপেক্ষা করতে করতে হঠাৎ দেখতাম তার দাদার বন্ধুর এনফিল্ড আসচে। পেছনে বসে,কোন রকমে শাড়ী পেঁচিয়ে, চালকের পেটে হাত দিয়ে। ঠোট ভর্তি লিপস্টিক ধেবড়ে আছে, থুত্নি ছুঁইছুঁই। তখন বুঝতাম না অত। ঠোঁটের রঙ বাঁচাতে গিয়ে ঠোঁট ফোলানো মুখ দেখতে ভালই লাগত। আমি হাঁ করে অবাক হয়ে বাইক আরোহীদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সাইলেন্সারের এক দলা ধোঁয়া মুখে ছুঁড়ে দিয়ে বেড়িয়ে যেত বাইকটা। আমায় একবারের জন্যে তাকিয়ে দেখত কিনা কে জানে?
বাইক? ইচ্ছে করত সাইকেলটাকে দি ঠেলে ড্রেনে, ভোগে যা শা...। হারকিউলিস! বান..., আমায় একলা চড়িয়েই ক্লান্ত হয়ে যায়। কিন্তু আবার টিউশনিতে যাওয়ার পয়সা খরচ? মাস গেলে বাঁচবে কি? বেঙ্গলের মটন স্ট্যু? অশোকা হোটেলের ফিস কোবরেজি? মাছ - সবজি বাজার থেকে ক'পয়সা আর হাতে আসে? বাড়ির সবার তো আলু, পটল, রুই, কাতলার দাম ঠোঁটের ডগায়।
ভেজা চোখ লুকিয়ে আবার সেই সন্ধ্যে থেকেই শুরু হত আবার । হয়ত বা পেয়েই যেতাম আর একজনকে সেই সন্ধ্যেতেই ।
তার খিল্লিতে আমি আবার বিমোহিত।
No comments:
Post a Comment