Friday, 21 October 2016

||সংক্ষিপ্ত রামায়ণ || অযোধ্যা_কান্ড ।।

অকপট ব্রতকথা
***************


সীতারে লইয়া রাম অযোধ্যায় ফেরে ।
আনন্দে মজিল সবে খুশি রাজ্য জুড়ে ।।

চর্তুদিকে ধুমধাম ঢাক বাদ্যি বাজে।
অযোধ্যায় এলো সীতা নববধূ সাজে।।

ক্রমশ   হইল  বৃদ্ধ ,  রাজা  দশরথ ।
জীবন সায়ান্নে শেষে মরনের পথ ।।

পারিল না চালাতে রাজ্যটা-কে আর ।
ভাবিল দেবেন সপে, রামে রাজ্যভার।।

 সভামধ্যে রাজা তার ইচ্ছা প্রকাশিল।
 পাত্র মিত্র একবাক্যে তাতে সায় দিল ।।

একদা কঠীন রোগে পড়িল রাজন ।
কৈকেয়ী করিল সেবা তার সর্বক্ষন ।।

সুস্থ হইলেন রাজা পত্নী সেবা পেয়ে ।
বলিলেন কৈকেয়ীরে, ''লহ বর চেয়ে'' ।।

ভরত জননী তাই দশরথে বলে ।
দুই বর নেবে চেয়ে সময় আসিলে ।।

অতঃপর  শুভক্ষন  দেখিয়া  রাজন ।
রামের অভিষেকের করে আয়োজন ।।

রাজ্যবাসী খুব খুশি, হল অযোধ্যায় ।
আনন্দে মাতিয়া তারা খুব নাচে-গায় ।।

সেই সময় "মন্থরা" কৈকেয়ীর দাসী ।
কৈকেয়ীর কানে দিল কুমন্ত্রনা আসি।।

"রাজ্যভার যদি পায় কৌশল্যা কুমার ।
রাজমাতা তারে কেহ বলিবেনা আর।।

ভরতকে রাখিবে রাম করে তার দাস ।
হয়তো রাখিবে বন্দী, দেবে কারাবাস ।।

রাজাকে চাহ গো বর মোর কথা শুনে ।
ভরতকে রাজ্য ভার রাম যাবে বনে " ।।

মন্থরার বাক্য শুনি ভরত জননী ।
দশরথে চাহে বর সেই দুই খানি ।।

চোদ্দ সাল যেন রাম যায় বনবাস ।
ভরত হইবে রাজা এই তাঁর আশ ।।

এই বাক্য শুনে রাজা মূচ্ছিত হলেন ।
অন্য বর চাহিবারে তাঁরে কহিলেন ।।

শুনিলেন রাম ,মাতা কৈকেয়ীর কথা ।
পিতার কথিত বাক্য হবেনা অন্যথা ।।

পিতৃসত্য কায়মনে করিতে পালন ।
অযোধ্যা ছাড়িয়া রাম করিল গমন ।।

রাজ বস্ত্র ত্যাজি তারা বেশে সাধারন ।
সঙ্গে গেল সীতা আর অনুজ লক্ষ্মন ।।

সুমন্ত্র সাজিয়ে রথে তাতে বসাইলো ।
সকলে চোখের জলে রামে বিদায়িল ।।

রাজ্যসীমা ছেড়ে রথ চলিল ছুটিয়া ।
নর নারী দুঃখে পথে, পড়িল লুটিয়া ।।

সন্ধ্যায় ভিড়ল রথ তীরে তমসার ।
সেখানে বিশ্রাম নিল করিয়া আহার ।।

প্রভাতে করিয়া যাত্রা দিবসের শেষে ।
পৌঁছাইল গঙ্গা তীরে গুহকের দেশে ।।

রামের সে বন্ধু ছিল গুহক চন্ডাল ।
থাকিতে বলিল রামে সেথা চিরকাল ।।

গুহকে কহিল  রাম  আলিঙ্গন  করি ।
চোদ্দসাল পর ঠিক আসিবেন ফিরি।।

রথখানি ত্যাগ করে জটা নিয়ে কেশে।
বনমধ্যে প্রবেশিল  সন্ন্যাসীর  বেশে ।।

পরনে বাল্কল আর তীর ধনু হাতে ।।
তিনজনে বন মধ্যে ফেরে এক সাথে ।।

চিত্রকূট পাহাড়ের আশ্রম আবাস ।
ভরদ্বাজ মুণি সেথা, করিতেন বাস ।।

মুণির আশ্রম মাঝে পাহিয়া আশ্রয় ।
মাথা গুজিবার এক ব্যবস্থা যে হয় ।।

ঐ দিকে দশরথের দিশেহারা মন ।
রাম রাম বলে তিনি কাঁদে সর্বক্ষণ।।

রামের বিহনে রাজা অন্ধকার দেখে ।
ত্যজিলেন প্রানবায়ু তার পুত্রশোকে ।।

ভরত জানিল  সব বাড়ি  এসে  ফিরি ।
সে সময় ছিলনা সে, ছিল মামাবাড়ি ।।

কৈয়েকীরে যাই তাই বলিল ভরত ।
ফিরিয়া আনিতে রামে ছুটাইল রথ ।।

সারাদিন অন্বেষণে নানা স্থান ঘুরে ।
রামের সাক্ষাত পেল চিত্রকূট পরে।।

ভরত ও ভালোবাসে  রামচন্দ্রে অতি।
বাড়ি ফিরিবারে তাকে করিল মিনতি।।

ভরতের মুখে শুনে পিতৃ মৃত্যু কথা ।
তখনি হইল রাম বাকহীন শ্রোতা ।।

পিতার শোকেতে রাম বড় কষ্ট পেল ।
কাঁদিয়া কাঁদিয়া তারা বুক ভাসাইল ।।

ভরতে  ধরিয়া  রাম  আলিঙ্গন  করে ।
সম্বোধনে বলে, "ভ্রাতা যাও তুমি ফিরে"।।

ভেবেছিল ফিরিবেন রামে লয়ে সাথে ।
রামের পাদুকা নিয়ে ফিরিলেন হাতে ।।

কাঠের পাদুকা দুটি রাজাসনে রেখে ।
রাজ্য চালাল ভরত অতঃপর থেকে ।।

শোন শোন ভক্তজন শোন দিয়া মন ।
অযোধ্যা কান্ডের আজ করি সমাপন।।

ফেসবুকে "অকপটে" সোম শুক্রবার ।
সংক্ষিপ্ত রামায়ণে ফিরিব  আবার।।

"ব্রতকথা" কায়মনে শোনে যেই জন।
ধনলাভ হয় তার ভালো থাকে মন ।।

©সুব্রত অধিকারী
  

No comments:

Post a Comment