এতদিন আমি বিয়ে থাওয়া করি নি। মানে করা হয়ে ওঠে নি। না সোজাসাপ্টা বলাই ভালো। মালতী আমায় এতদিন বিয়ে করতে দেয় নি। মালতী আমার রক্ষিতা। মানে কাচা ভাষায় বাঁধা মেয়েমানুষ। মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটের ৩৪৮ নং বাড়িতে চিলে কোঠায় ওর ঘর। আমি যেদিন যেদিন যাই আগের থেকে খবর দিয়ে যাই। ঐটুকু ঘরই সাজিয় গুছিয়ে টিপটপ করে রাখে। ভারী যত্ন করে। বৌ বৌ ভাব করে। রান্না করেও খাওয়ায়। সিথিতে সিঁদুর পরে। বলে,“ মা কালীর সিঁদুর ।ঐ যে একদিন তুমি কি মনে হোলো পরিয়ে দিলে একন রোজ তোমার নাম করে পরি। “ বেশ একটা সতীলক্ষ্মী সতীলক্ষ্মী ভাব। মাঝে মাঝে গাঁয়ের কাজলা বৌ কাজলা বৌ ভাবও করে। গেলে এক গলা ঘোমটা টেনে বলে,“ হ্যাঁ গা একটু মুড়ি দুটো পাপর ভেজে দেবো?খালি পেটে চা না খেয়ে ঐ একগাল মুখে ফেলে চা খেয়ো এখন। “ একদিন তো হাত ধরেই ঝোলাঝুলি,“আর কিচু মালতী চায় না গো ! ম’লে মুয়ে (মরলে মুখে) একটু প্যাকাটির আগুন জ্বেলে দিও।দেকা হওয়া তক তোমাকেই ত’ জেনেচি। ”
মেঘে মেঘে বেলা কম হলো না। ৪৭ বছর বয়স হলো। এসব ছেনালি অনুকূল চাটুজ্যে খুব বোঝে। সেই কথা আছে না ‘তুলসী তলায় দিয়ে বাতি খানকি হলো লক্ষ্মী সতী। ’ আসলে আমার বাগবাজারের বাড়ি আর ব্যাঙ্কের ৬০ লাখ টাকা হাতানোর ধান্দা।বাজারের মেয়েছেলের বাজারী বুদ্ধি । অনুকূল চাটুজ্যের খারাপ পাড়ায় যাতায়াত আছে এতে লুকোছাপার তো কিছু নেই। পুরুষমানুষের গায়ে খারাপ গন্ধ লেগে থাকে নাকি?
ভালো করে ডেটল দিয়ে সাবান দিয়ে স্নান করে নিয়ে সুন্দর করে গাঁয়ের এক হতদরিদ্রের কচি মেয়ে বিয়ে করলাম। কাল ফুলশয্যা ছিল। নরমগরম বৌটা দেখলাম সবই জানে। হাত জড়িয়ে ধরে বলল,“ কথা দিন আর ওমুখো হবেন না।”আমি ন্যাকাপনা একদম বরদাস্ত করতে পারি না। তবু বললাম,” কতা দিতে পারচি না। তবে দেকচি।”
রাত দশটা বাজে। মালতীর ফোন এল,”আর ককনো জ্বালাতন ক’রবো না কো। ডাকবোও না। আধঘন্টার জন্য একবারটি এসো। সুধু( শুধু) একবার। ” এ ডাক কেন ষে উপেক্ষা করতে পারলাম না। ৩৪৮নং বাড়িটা একটা কানাগলির শেষমুখে। ওই একটাই গলি। অন্য কোন পথ নেই ঢোকার। দেখি গলির মুখেই মালতী দাঁড়ানো। খুব সেজেছে। একদম বৌ বৌ। যেন আজ ফুলশয্যা। খোপায় গোরের মালা। গলায় গোলাপ লাগানো রজনীগন্ধার মালা। আমাকে দেখে হেসে এগিয়ে এলো,“দেকো তো কেমন লাগচে আমায়। আর তো তুমি আসবে না। যাও চিলেকোঠার দরজা ভেজানো আচে। বাইরে চেয়ারে বস। আর এই চিটিটা পড়ে এই প্যাকেটটা খোলো। তারমধ্যে আমি---—। ” আমি কথা শেষ করতে দিলাম না। বললাম,“কাজ আচে। দেরী করিও না।“
চিলেকোঠার ঘরের সামনে চেয়ারে বসে চিঠিটা পড়লাম,“একসময় সোহাগ করে সোনার একজোড়া বালা দিয়চিলে। আমার আর এর দরকার নেই। তোমার বৌকে দিও। বালার গায়ে তো আর বেশ্যা লেকা থাকে নাকো। বৌ তোমার বুজতেও(বুঝতে ) পারবে না কো। আমার মুখে দুটো প্যাকাটি জ্বেলে দিও। শেষ সাধটা রেকো”
ওঃ এই ফাজলামি কাঁহাতক বরদাস্ত করা যায়। আসুক। নষ্টামি বার করছি।প্যাকেট থেকে বালা দুটো খুলে পকেটে ভরলাম। ভেজানো দরজা কখন যেন দমকা হাওয়ায় হাট হয়ে খুলে গেছে। চোখ আটকে গেল সামনের বিকট দৃশ্যে। সিলিং পাখা থেকে গলায় দড়ি দিয়ে মালতী ঝুলছে। খোপায় গোরের মালা। গলায় রজনীগন্ধার।গলির মুখে তবে কাকে দেখলাম?একমুখী একটাই তো সরু গলি! আমি জ্ঞান হারালাম।
_____________
©পৃথ্বী ব্যানার্জী
No comments:
Post a Comment