Tuesday, 18 October 2016

সংক্ষিপ্ত রামায়ন- আদিকান্ড


অকপট ব্রতকথা
       
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _

শোন শোন গুনীজন শোন দিয়া  মন ।
সংক্ষিপ্ত "রামায়ন" আজ করিব বর্নন ।।

পুরাকালে অযোধ্যাতে অতীব সজ্জন ।
"দশরথ" নামে ছিল মহান রাজন ।।

সূর্য বংশীয় রাজা "দিলীপ" নন্দন ।
"রঘু" নাম ছিল তার জানে সর্বজন ।।

"অজ" নামে এক নৃপ দিলীপ দৌহিত্র ।
মহারাজ  "দশরথ"  অজ-এর পুত্র ।।

মহাজ্ঞানী মহারাজ সত্যবাদী অতি।
প্রজাগন সম্ভাষেণ  অযোধ্যার পতি ।।

অযোধ্যা নগরী ছিল সুন্দর অশেষ ।
সৌন্দর্য বর্ননা করে হয়না যে শেষ ।।

প্রজাদের পুত্র ন্যায় সযত্নে পালন ।
করিতেন "দশরথ" দিয়ে তাঁর মন ।।

গিয়েছে সড়ষূ নদী  পাশ দিয়ে  তার ।
থাকেনা প্রজারা সেথা করে অনাহার ।।

একদা গেলেন  রাজা মৃগয়ার তরে ।
নদীতে তখন কেহ ঘড়া জলে ভরে ।।

ভাবিল রাজন তাকে মৃগ এক খান ।
তৃষ্ণার্ত হইয়া বুঝি করে জল পান ।।

চালাল সে ভুলকরে শব্দভেদী বান ।
অন্ধমুনি পুত্র "সিন্ধু" হারাইল প্রান ।।

অভিশাপ পেল তিনি "অন্ধমুনি" হতে।
মরন হবে  যে তার  নিজ পুত্রশোকে।।

সুন্দরী মহিষী তার তিন জন রানী ।
কৌশল্যা,কৈকয়ী আর সুমিত্রা ঘরনী।।

সব থেকেও  রাজার ছিলনা যে সুখ ।
পায়না দেখা যে তিনি সন্তানের মুখ ।।

"ঋষ্যশৃঙ্গ" মুনি এক আদেশ করিল ।
পুত্রেষ্টি যজ্ঞের তাই তিনি আয়োজিল ।।

উদয়িল এক ব্যক্তি যজ্ঞ কুন্ড হতে ।
সুবর্ন পাত্রে পায়স দিল তার হাতে ।।

ব্রহ্মার বরেতে প্রাপ্ত পায়স এমন ।
পুত্র লাভ হয় তার যে করে ভক্ষন ।।

পায়সটা একসাথে তিন রানী খেল ।
এরফলে চার  পুত্র  তারা  প্রসবিল ।।

জ্যেষ্ঠ পুত্র "রামচন্দ্র" কৌশল্যা তনয়।
কৈকেয়ীর গর্ভজাত "ভরত" সে হয় ।।

"লক্ষ্মন" "শত্রুঘ্ন"  নামে দুই জন ভ্রাতা ।
সর্ব কনিষ্ঠ  তাদের  সুমিত্রা মাতা ।।

সর্ব শ্রেষ্ঠ পুত্র তার জ্যেষ্ঠ পুত্র রাম ।
চারিদিকে বীরত্বের ছিল তার নাম ।।

একটু  বড়  হতেই  রাজার  কুমার ।
"বশিষ্ঠ"কে ভার দিল তাদের শিক্ষার।।

পড়াশোনা,  ধনুর্বিদ্যা,  ধর্মের  আচার ।
ছিলনা শিখিতে বাকী কোনকিছু আর।।

একদিন  মুনিবর "বিশ্বামিত্র"  এসে ।
দশরথে  নিবেদন করিলেন শেষে ।।

রামকে যাবেন লয়ে  তার  উপবন ।
পন্ড নাহয় তাহার যজ্ঞ আয়োজন ।।

"তাড়কা" রাক্ষসী ছিল মহা বলশালী ।
নিরীহ মুনি ঋষিরে কষ্ট দিত খালি ।।

মারিচ, সুবাসু  দুই  তাড়কার ছেলে ।
যজ্ঞ নষ্ট করিবারে হাড়-মাশ ফেলে ।।

তাদের উচিৎ শিক্ষা তারা গেল দিতে ।
তাড়কা পড়িল মারা রামের বানেতে ।।

তাড়কার দুই ছেলে ভয়ে পালাইল ।
ধন্য ধন্য ঋষিবর রামেরে করিল ।।

যজ্ঞ শেষে বিশ্বামিত্র দু-ভায়েরে লয়ে ।
মিথিলা উদ্যেশে গেল "জনক" আলয়ে ।।

পথমধ্যে শাপ মুক্ত "অহল্লা"কে করে ।
পাথর হইয়া যিনি ছিলেন অঘোরে ।।

"গৌতম" নামেতে ঋষি অহল্লার পতি ।
ওই স্থানে  পুর্বকালে  করিত বসতি ।।

অহল্লা  দ্বারা  হয়তো হয়েছিল পাপ ।
সেই জন্য স্বামী তার দিয়েছিল শাপ।।

অতঃপর পৌঁছাইলো মিথিলা নগরে
ঘুরিয়া  দেখিল  তাঁরা  দুই  সহদরে ।

ধনুক  এক  যা  ছিল  জনকের  ঘরে ।
তাহাতে লাগাতে গুণ কেহ নাহি পারে ।।

যদি কেহ দিতে পারে  গুণ ধনুকেতে ।
তাহার কন্যার ভার দেবে তার হাতে।।

"হরধনু" ভাঙে রাম তুলি দুই হাতে ।
ধন্য ধন্য করে সব মিথিলা সভাতে।।

রামের  বিবাহ  হল  ধুমধাম  করে ।
পত্নিরূপে সীতাদেবী আনিলেন ঘরে ।।

জনক নন্দিনি তিনি গুনের আধার ।
মনুষ্য রূপেতে লক্ষী, সীতা অবতার ।।

"ব্রতকথা" শোন সবে ভরে যাবে মন ।
"আদিকান্ড" রামায়নে  হল সমাপন  ।।

                                  চলবে.....

© সুব্রত অধিকারী
  

No comments:

Post a Comment