অকপট ব্রতকথা
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _
শোন শোন গুনীজন শোন দিয়া মন ।
সংক্ষিপ্ত "রামায়ন" আজ করিব বর্নন ।।
পুরাকালে অযোধ্যাতে অতীব সজ্জন ।
"দশরথ" নামে ছিল মহান রাজন ।।
সূর্য বংশীয় রাজা "দিলীপ" নন্দন ।
"রঘু" নাম ছিল তার জানে সর্বজন ।।
"অজ" নামে এক নৃপ দিলীপ দৌহিত্র ।
মহারাজ "দশরথ" অজ-এর পুত্র ।।
মহাজ্ঞানী মহারাজ সত্যবাদী অতি।
প্রজাগন সম্ভাষেণ অযোধ্যার পতি ।।
অযোধ্যা নগরী ছিল সুন্দর অশেষ ।
সৌন্দর্য বর্ননা করে হয়না যে শেষ ।।
প্রজাদের পুত্র ন্যায় সযত্নে পালন ।
করিতেন "দশরথ" দিয়ে তাঁর মন ।।
গিয়েছে সড়ষূ নদী পাশ দিয়ে তার ।
থাকেনা প্রজারা সেথা করে অনাহার ।।
একদা গেলেন রাজা মৃগয়ার তরে ।
নদীতে তখন কেহ ঘড়া জলে ভরে ।।
ভাবিল রাজন তাকে মৃগ এক খান ।
তৃষ্ণার্ত হইয়া বুঝি করে জল পান ।।
চালাল সে ভুলকরে শব্দভেদী বান ।
অন্ধমুনি পুত্র "সিন্ধু" হারাইল প্রান ।।
অভিশাপ পেল তিনি "অন্ধমুনি" হতে।
মরন হবে যে তার নিজ পুত্রশোকে।।
সুন্দরী মহিষী তার তিন জন রানী ।
কৌশল্যা,কৈকয়ী আর সুমিত্রা ঘরনী।।
সব থেকেও রাজার ছিলনা যে সুখ ।
পায়না দেখা যে তিনি সন্তানের মুখ ।।
"ঋষ্যশৃঙ্গ" মুনি এক আদেশ করিল ।
পুত্রেষ্টি যজ্ঞের তাই তিনি আয়োজিল ।।
উদয়িল এক ব্যক্তি যজ্ঞ কুন্ড হতে ।
সুবর্ন পাত্রে পায়স দিল তার হাতে ।।
ব্রহ্মার বরেতে প্রাপ্ত পায়স এমন ।
পুত্র লাভ হয় তার যে করে ভক্ষন ।।
পায়সটা একসাথে তিন রানী খেল ।
এরফলে চার পুত্র তারা প্রসবিল ।।
জ্যেষ্ঠ পুত্র "রামচন্দ্র" কৌশল্যা তনয়।
কৈকেয়ীর গর্ভজাত "ভরত" সে হয় ।।
"লক্ষ্মন" "শত্রুঘ্ন" নামে দুই জন ভ্রাতা ।
সর্ব কনিষ্ঠ তাদের সুমিত্রা মাতা ।।
সর্ব শ্রেষ্ঠ পুত্র তার জ্যেষ্ঠ পুত্র রাম ।
চারিদিকে বীরত্বের ছিল তার নাম ।।
একটু বড় হতেই রাজার কুমার ।
"বশিষ্ঠ"কে ভার দিল তাদের শিক্ষার।।
পড়াশোনা, ধনুর্বিদ্যা, ধর্মের আচার ।
ছিলনা শিখিতে বাকী কোনকিছু আর।।
একদিন মুনিবর "বিশ্বামিত্র" এসে ।
দশরথে নিবেদন করিলেন শেষে ।।
রামকে যাবেন লয়ে তার উপবন ।
পন্ড নাহয় তাহার যজ্ঞ আয়োজন ।।
"তাড়কা" রাক্ষসী ছিল মহা বলশালী ।
নিরীহ মুনি ঋষিরে কষ্ট দিত খালি ।।
মারিচ, সুবাসু দুই তাড়কার ছেলে ।
যজ্ঞ নষ্ট করিবারে হাড়-মাশ ফেলে ।।
তাদের উচিৎ শিক্ষা তারা গেল দিতে ।
তাড়কা পড়িল মারা রামের বানেতে ।।
তাড়কার দুই ছেলে ভয়ে পালাইল ।
ধন্য ধন্য ঋষিবর রামেরে করিল ।।
যজ্ঞ শেষে বিশ্বামিত্র দু-ভায়েরে লয়ে ।
মিথিলা উদ্যেশে গেল "জনক" আলয়ে ।।
পথমধ্যে শাপ মুক্ত "অহল্লা"কে করে ।
পাথর হইয়া যিনি ছিলেন অঘোরে ।।
"গৌতম" নামেতে ঋষি অহল্লার পতি ।
ওই স্থানে পুর্বকালে করিত বসতি ।।
অহল্লা দ্বারা হয়তো হয়েছিল পাপ ।
সেই জন্য স্বামী তার দিয়েছিল শাপ।।
অতঃপর পৌঁছাইলো মিথিলা নগরে
ঘুরিয়া দেখিল তাঁরা দুই সহদরে ।
ধনুক এক যা ছিল জনকের ঘরে ।
তাহাতে লাগাতে গুণ কেহ নাহি পারে ।।
যদি কেহ দিতে পারে গুণ ধনুকেতে ।
তাহার কন্যার ভার দেবে তার হাতে।।
"হরধনু" ভাঙে রাম তুলি দুই হাতে ।
ধন্য ধন্য করে সব মিথিলা সভাতে।।
রামের বিবাহ হল ধুমধাম করে ।
পত্নিরূপে সীতাদেবী আনিলেন ঘরে ।।
জনক নন্দিনি তিনি গুনের আধার ।
মনুষ্য রূপেতে লক্ষী, সীতা অবতার ।।
"ব্রতকথা" শোন সবে ভরে যাবে মন ।
"আদিকান্ড" রামায়নে হল সমাপন ।।
চলবে.....
© সুব্রত অধিকারী
No comments:
Post a Comment