ধর্মবিশ্বাস কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রতি যুক্তিহীন অলীক বিশ্বাস। এই বিশ্বাস ছোট বেলা থেকেই গড়ে ওঠে পরিবারকে কেন্দ্র করে। শিশু যে পরিবারে বড় হয়ে ওঠে সেই পরিবারের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসই শিশুটির ধর্মবিশ্বাস হিসাবে পরিগণিত হয়। আর এই বিশ্বাস আস্তে আস্তে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। সে যতই বড় হতে থাকে বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার পরিবর্তে বাঁধনের জড়াজড়িতে পথভ্রষ্ট হয়। আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করে এই বন্ধন। ভালোলাগা থেকে জন্মায় ভালবাসা। অন্ধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা এতটাই অন্ধ হতে শুরু করে যে, সে প্রশ্ন করতে ভুলে যায়, সত্য-মিথ্যার কষ্টি পাথরে কোন ঘটনার বিচার বিশ্লেষণ করতে ভুলে যায় সে। বিনা প্রশ্নে অনুসরন আর অনুকরণ করতে ভাল লাগে তার। নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস হিমালয়ের গগনচুম্বী শিখরের মত অটুট থাকে আর অন্য সব মত বিশ্বাস হয়ে যায় মিথ্যা। আর এখান থেকেই জন্ম নেয় ধর্মান্ধতা।
ধর্মান্ধতা হল নিদিষ্ট কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রতি আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা। হ্যাঁ, সেই আনুগত্য অবশ্যই ব্লাইন্ড। যে নির্বোধ আনুগত্য মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে। বুদ্ধি ও বিবেকবোধ কে অন্ধ করে দেয়। সে এক নির্বোধ ভেড়ার মত রোবটে পরিনত হয়। ধর্মান্ধতা হল সেই অমানবিকতা জনিত জিঘাংসা বোধ যা নিজ ধর্মের স্বার্থরক্ষায় নারী ও শিশু ধর্ষনে, নারী-শিশু- মানব হত্যায় কলঙ্কলিপ্ত হতে দ্বিধা বোধ করে না। এমন কি এই কার্যসিদ্ধির জন্য হাসতে হাসতে নিজের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে পারে।
"ধৃ " ধাতু থেকে সৃষ্ট "ধর্ম" শব্দ টির অর্থ ধারণ করা। সত্য, ন্যায়, নীতিধারণই হল প্রকৃত ধর্ম। কিন্তু বর্তমান যুগে ধর্ম হল আচার সর্বস্ব। সব প্রাতিষ্ঠানিক প্রচলিত ধর্মই কম বেশি ধর্মান্ধ মৌলবাদে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যের কথা, প্রত্যেক ধর্ম ও তার ধর্মগুরুরা শান্তি, মৈত্রী ও ঐক্যের বানী প্রচার করেন। পরধর্মসহিষ্নুতার কথা প্রচার করেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটে ঠিক তার বিপরীত। অতীত থেকে সাম্প্রতিক দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ঘটনাবলী বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এর স্বাক্ষ বহন করে চলে। এর প্রতিটি ঘটনার জন্য দায়ী ধর্ম ও ধর্মপ্রচারের উন্মাদনা। উন্মাদে মত্ত মানুষ নিজের নীতি বিবেকবোধ থেকে অপসৃত হয়।
যুদ্ধউন্মাদনা থেকে ধর্মান্মোদনা আরো মারাত্মক আরো ধ্বংশাত্মক যা মানব সভ্যতাকে চিরতরে ধ্বংশ করে দিতে পারে। সূদুর অতীত থেকে বর্তমান বিভিন্ন ঘটনাবলী কি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে না?? এত কিছুর পরও কি আমরা চুপ থাকব? সমগ্র বিশ্ব 🌏 আজ দিশেহারা। এই পরিস্থিতিতে শেষ কথা বলে মেনে নেওয়া হল মূড়তার লক্ষণ। এই নিদারুণ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে প্রতিকারের সন্ধান করা প্রয়োজন। একমাত্র সত্য দিয়ে মিথ্যাকে পরাজিত করা যায়।
তাই আমাদের সর্বাগ্রে বৈজ্ঞানিক সত্যকে অনুসন্ধান করতে হবে, তাকে লালন পালন করে পরিপুষ্ট করতে হবে মনের মনিকোঠয়। এবং আমরা যারা একটু অন্যরকম ভাবতে ভালোবাসি যাদের মনের মনিকোঠয় শোষণ বিহীন এক সুন্দর সাম্যের সমাজ গড়ার স্বপ্ন আছে, যে সমাজ লিঙ্গ পরিচয় কিম্বা ধর্ম পরিচয়ে নয়, শুধুমাত্র মানুষের জন্য মানুষ নিয়ে তৈরী, তাদেরকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। বৈজ্ঞানিক সত্য শুধু নিজে বুঝলেই হবে না তাকে ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। নিজের পরিবারের গন্ডী ছাড়িয়ে সর্বত্র। তাই আজ আমার আপনার সকলের প্রতিজ্ঞা হোক -
"চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য ক'রে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে,
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস"।।
_____________
©তাপস গায়েন
No comments:
Post a Comment