অকপট ব্রতকথা
************
পর্ব দশ
শোন শোন গুণীজন শোন দিয়া মন ।
কিষ্কিন্ধ্যাকান্ডের আজ করিব বর্ণন ।।
পুরাকালে ছিল এক বানরের দেশ ।
"কিষ্কিন্ধ্যা" হইল তার নগর বিশেষ ।।
বানর রাজ "রিক্ষি" সে মহা বলশালী ।
তার দুই পুত্র ছিল "সুগ্রীব" ও "বালি" ।।
জীবন পেরিয়ে রাজা গেল মৃত্যু পার ।
বালি পেল রাজ্যভার জ্যেষ্ঠ পুত্র তার ।।
মহা বলশালী বালি দেবতার বলে।
রাবনকে একবার চুবিয়েছে জলে ।।
মায়াবী, দুন্ধুভি দুই দানবের তরে ।
কোন্দল বাঁধিল মহা , দুই সহদরে।।
সুগ্রীব ছাড়িল রাজ্য করে মৃত্যু ভয় ।
ঋষ্যমুখ পাহাড়েতে নিলেন আশ্রয় ।।
শাপগ্রস্থ ছিল ঋষি "মাতঙ্গে"র ক্রোধে ।
সর্ব স্থানে যায় বালি ঋষ্যমুখ বাদে ।।
সুগ্রীব আসিতে দেখে দুই জন নর ।
ভাবিলেন বালি বুঝি পাঠিয়েছে চর ।।
বালির ভয়েতে তিনি থরথর কাঁপে।
হনুমানে পাঠালেন তাদের সমীপে ।।
রামের পরেতে যার করিব বন্দনা ।
কেশরী তাহার পিতা, মাতা অঞ্জনা।।
রুদ্র অবতারে শিব, মহা শক্তিমান ।
পবন পুত্র যে তিনি বীর "হনুমান" ।।
হনুমান গিয়া কহে দুই সহদরে ।
কিবা হেতু আগমন কহিতে তাদেরে।।
আত্ম-পরিচয় দিয়া, বলে রঘুবর।
রামচন্দ্র তিনি সেই অতি ক্ষুদ্র নর ।।
প্রণমিল হনুমান রামের চরনে ।
এতদিন যার স্তব করিতেন মনে ।।
সস্নেহে কহিল রাম বীর হনুমানে।
করিবেন দেখা তিনি সুগ্রীবের সনে।।
রামচন্দ্র পৌঁছায়িল সুগ্রীব নিকটে ।
কহিলেন সবকিছু যাহা গেছে ঘটে।।
রামের বর্ণনা সব সুগ্রীব শুনিল।
কিছু স্বর্ন অলঙ্কার তারে দেখাইল ।।
বলিলেন এক দিন আকাশের পথে ।
এক রমণীরে লয়ে গেল কেহ রথে ।।
ক্রন্দন করিতে ছিল রথ মধ্যে তিনি ।
সেই অলঙ্কার পথে ফেলিয়াছে যিনি ।।
নিশ্চিত হইল রাম সেই অলঙ্কারে।
সীতারে করিয়া মনে কাঁদেন অঝোরে ।।
অগ্নিকে সম্মুখে রাখি তারা দুই জনে।
সুগ্রীবে করিল বন্ধু তখন সে ক্ষণে ।।
অভয় দিলেন রাম বালিলেন তারে ।
ফেরাবেন রাজ্য তার বধিয়া বালিরে ।।
আলিঙ্গন করি বলে সুগ্রীব আবার ।
সীতা অন্বেষনে সাথ দেবেন তাহার ।।
কিষ্কিন্ধ্যা গিয়া সুগ্রীব বালিকে হুঙ্কারে।
মহা মল্ল যুদ্ধ বাঁধে দুই সহদরে ।।
বালির সহিত যুদ্ধে সুগ্রীব না পারে ।
পিছন হইতে রাম দিব্য তীর মারে ।।
রামকে কহিল বালি, "বলুন হে বীর ।
কিবা অপরাধে মোরে মারিলেন তীর"।।
রাম তারে কহিলেন, "মহারাজ বালি ।
শক্তি অহঙ্কার তুমি করিয়াছ খালি ।।
সুগ্রীবে তাড়িয়ে পাপ করিয়াছ অতি।
সেহেতু তোমার আজ এহেন দুর্গতি "।।
রামের স্পর্শে বালির পাপ ক্ষয় হল।
মরনের পরে তাই স্বর্গলোকে গেল ।।
বালির পুত্র অঙ্গদে যুবরাজ করে ।
সুগ্রীব হইল রাজা কিষ্কিন্ধ্যা নগরে ।।
অতপর কিষ্কিন্ধ্যার পরিচিত যারা ।
তন্ন তন্ন সীতা খোঁজ করিলেন তারা।।
আশেপাশে যত ছিল বানরের দল ।
এক সাথে জড়োহল করে কোলাহল।।
তাহাদের চারি ভাগে বিভেদিত করে।
পাঠায়িল চতুর্দিকে সীতা খুঁজিবারে ।।
পুর্ব, পশ্চিম, উত্তরে যারা খোঁজে গেল ।
সীতারে না পেয়ে তারা রিক্তহস্তে এলো।।
দক্ষিনেতে গেল যারা করিতে সন্ধ্যান।
হনুমান, নল, নীল, আর জাম্বুবান।।
ভরসা করিল রাম হনুমান বীরে ।
একমাত্র সে-ই সীতা খুঁজে দিতে পারে।।
একটি আঙটি তাঁর হনুমানে দিল ।
সিতাকে দেখাবে পেলে এমনি কহিল ।।
একমাস নানা স্থানে খোঁজ করে সারা ।
সীতারে না পেয়ে তারা হল দিশেহারা।।
সীতা বিনা হনুমান কাঁদিলেন শোকে ।
কেমনে যাবে সে ফিরে রামের সম্মুখে।।
এরপর গেল তারা বিন্ধ্য পাদদেশে ।
ক্লান্তহয়ে সেইস্থানে পরিলেন বসে ।।
"সম্পাতি" নামেতে পক্ষী জটায়ুর ভাই ।
সেখানে করিত বাস দেখিল সে তাই।।
উড়িয়া আসিল তিনি তাদের সম্মুখে।
বুঝিল কেনবা তারা খোঁজেন সীতাকে।।
হনুমানে বলিল সে ভাবিয়া আপন ।
সীতাকে করেছে চুরি লঙ্কার "রাবণ" ।
রাবন সীতারে লয়ে চড়ে পুস্প রথে।
সেইদিন দেখেছে সে গেছে এই পথে ।।
একশো যোজন দুরে সমুদ্র ওপারে।
লঙ্কায় গিয়াছে নিয়ে রাবন সীতারে।।
লঙ্কাদেশ সেই স্থানে রাবন বসতি ।
রাক্ষস কুলের রাজা নিষ্ঠুর সে অতি ।।
সীতার সন্ধান পেয়ে আনন্দিত ভারি
হনুমান বলিল সে লঙ্কা দেবে পাড়ি।।
লম্ফনে করিবে তিনি সমুদ্রকে পার।
মহেন্দ্র পর্বতে তাই উঠেন এবার ।।
রামায়ণ সংক্ষিপ্তে শোন ভক্তগণ ।
কিষ্কিন্ধ্যাকান্ডের আজ হল সমাপন।।
ব্রতকথা "অকপটে" সোম শুক্র হয় ।
"রামায়ণ" পড়িবে যে হবে পাপক্ষয়।।
চলবে........
_____________
©সুব্রত অধিকারী