Monday, 31 October 2016

।। সম্পর্ক।।

বিষাক্ত দুপুর পেকে ওঠে। উচ্ছিষ্ট শালপাতা প্লাটফর্মে পায়ে পায়ে ঘোরে। 
ভিখারি,বেশ্যা ফড়ে, ফিকিরবাজ এবং আরো কারা ব্যস্ততার  ঘোরে রয়ে যায়। 
দুপুর বিষাক্ত ফোড়ার মত ফাটে। পূজ রক্ততে গ্লানি আর শূণ্যতা দীর্ঘতর হয়।   
  বজ্রকীটেরা আমার মজ্জা  আর অবশিষ্ঠ দু চার ফোটা মেধাকে  কুড়েকুড়ে খায়। 

কাঁটাতারের বেড়া সরিয়ে ধীর করুণ পদশব্দে  অবশেষে সে আসে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষ অথবা শুরু।
 প্রতিভাদীপ্ত শ্রান্ত মুখ বড় বেমানান লাগে ঐ কদর্যতার প্রাচুর্যে । 
মিনিটের ব্যবধানে প্রাগৈতিহাসিক আধো অন্ধকার গুহা হিসহিস করে ওঠে,“
হে নিষাদ + ও জানে, তুই জানিস না
ভালোবাসা কবিতার থেকে কতগুন ভারী!”


_____________
©পৃথ্বী ব্যানার্জী

।। যান্ত্রিক স্বপ্নসুখ।।

প্রেম আছে বলেই হৃত্পিণ্ডের  ক্ষমতা বৃদ্ধির
পরিচয় পাওয়া
প্রেম আছে বলেই শত কষ্টের অতিথি কে বিদায় জানিয়ে
বেঁচে থাকার নতুন ঠিকানা খুঁজে পাওয়া ।

জানি না প্রেম বিনিময়ে সুখ মেলে কি না  -------
শুধু জানি যে ,
প্রেমের বর্ণমালা না থাকলে অসম্পূর্ণ  থেকে যায় জীবনপ্রবাহের আদর্শলিপি ।

কর্তব্যের ধারাপাত  , দায়িত্বের নামতা,  আর বাধ্যবাধকতার একেচন্দ্র শিখতে শিখতে
আজ বড়ই ক্লান্তি অনুভব করে
জীবন নামের এক চলন্ত রেলগাড়ি ।

 তাকে চালানোর জন্য পারিবারিক তকমা আঁটা সরকারি বিদ্যুতের কোন কার্পণ্য নেই,
তবুও যেন সময় মতো যাত্রীদের স্টেশনে পৌঁছে
দেবার দায়িত্ব বহন করা ,
তার যেন এক অনিচ্ছার তিক্ত ঔষধ সেবন করা ।

প্রেম আছে বলেই জীবন নামের রেলগাড়িটা
স্বপ্ন দেখে,
স্বপ্নের রেলপথ কে বাস্তবায়িত করার ।

যে রেলপথে হাঁটবে শুধু সে আর তার এক যাত্রীবিহীন দ্বিতীয় লোকাল টি ।
অনেক দূরে যাবে রেলপথে হেঁটে হেঁটে ।
হিল্লি , দিল্লি , মক্কা, মদিনা , গয়া,  কাশী ,বৃন্দাবন মথুরা, যমুনার তপোবনে
রাধিকার কৃষ্ণ কে প্রেম নিবেদন করার কৃষ্ণচূড়া ভবনের  পরিধি কে  প্রদক্ষিন করবে তালে তাল মিলিয়ে ।

বৃন্দাবনের ধুলোয় লুটোপুটি খেতে খেতে ওরাও শিখবে প্রেম করার কৌশল ।
ওরাও দীক্ষিত হবে প্রেমগুরুর শিক্ষায় ।
রেলগাড়ি থেকে প্রেমগাড়িতে রুপান্তরিত করবে নিজেদের ।

তারপর আবার ফিরবে ঐ রোজকারের প্যাসেঞ্জার বহনের দায়িত্ব পালন করতে ।
আবার সেই পুরনো টিকিট চেকারের আওয়াজ
টিকিট - টিকিট,  দেখি টিকিট চাই ,

কখনও দুধওযালা , সব্জিওযালা , ফুলওয়ালা , কাজের লোক নামক হকারগুলো ট্রেনটাকে
শান্তি ভাবে হাওয়া খেয়ে যাত্রীবাহী হয়ে থাকতে দেয় না ।
আসলে ওরা হিংসে করে রেলগাড়িটা কে
যে হয় তো সে বুঝি খুব আনন্দে আছে
বিদ্যুতের সাহায্যে চলছে
পরিশ্রম করতে লাগে না ।

ওরে প্রেমহীন হকারের দল
তোরা কি বুঝবি রেলগাড়ির কষ্ট  !
সারাদিন অন্যের জন্যই তো পরিশ্রম করে চলছে ।
তোরা তো তারই সাহায্যে রোজগার করিস
অকৃতজ্ঞ তোরা !
উপকার মনে রাখতে পারিস না ;-----------

এক এক সময় মনেই হয় খুব
যে এই জীবন নামের রেলগাড়ি টা
জীবন নামের প্রেমগাড়ী হলেই সবচেয়ে ভালো হতো ।
তাহলে এত ঘ্যানর ঘ্যান  এত শোরগোল এত ঝগড়া  এত হিংসার বোমা বিস্কোরণ
ভোরবেলার ঘর সংসারের মায়া ত্যাগ করা আহারের তাগিদে ছোটা ঠিকে - ঝিঁ দের অসভ্যতামি আর নারীধর্ষণের মতো অস্পৃশ্যজনক হিংস্র কাজ থেকে বিরত থাকতে পেরে নিরপরাধীর মতো সুখের বুকের পাজঁড় ফুলিয়ে প্রেমের রেলপথ অতিক্রম করতে পারতো।

আর তাতে থাকতো একদল দুখিনী অসভ্য ঠিকে- ঝিঁ এর বদলে
ভোরবেলার ফুলবাগান থেকে তুলে আনা মালিনীদের হাতে একরাশ তাজা ফোটা ফুলের ডালি ।
মিষ্টি হেসে ফুলের ডালি সামনে এগিয়ে দিয়ে বলতো এই নাও !
তোমাদের জন্য তুলে এনেছি ।
ভোরবেলার ফোটা ফুলের প্রথম সুবাসে
তোমরা মাতাও তোমাদের  " প্রেমজীবন "।

এই চল সখীরা ;----
পরের স্টেশন এসে গেল যে !
নামতে হবে না  ?

____________
©শম্পা বিশ্বাস

।। চাওয়া পাওয়া।।

একরাশ স্বপ্ন নিয়ে,বালিসের নরমে মুখ,
এলোমেলো চুলে,একটা আদুরে বুক।
গরম চায়ে ডুব দিয়ে,মনটা উষ্ণতা পায়,
খোলা চুলে,দোতালার বারান্দায়।

শীতের আমেজে,কাঁটা দিচ্ছে লোমেরা,
অবুঝ মনের কোনে,ডানা মেলে ইচ্ছেরা।
সম্পর্কের টানাপোড়েন,চুপকথাদের ভীড়,
মধুর বাঁধন,না কি ধরবে তাদের চিড়!!

একপৃথিবী ভাবতে ভাবতে,শিহরন মনে,
রেলিং এর শীতলতা,হাতের পরশ ই জানে।
মন মানেনা সুরে,বিষাদ নাকি সুখ...
সে উত্তর জানাবে,মুঠোফোনের মেসেজবুক।

চেনা হাত, টাইপিং এ শেষ সম্পর্ক,
শীতের পড়ন্তে,ভেঙে যায় যতো জমানো গল্প।
সাজানো বালিঘরে,চোখের জলের ঢেউ,
একাকী হৃদয় কেঁদে চলে,নেই পাশে কেউ।

রাতজাগা গল্প,পাগলামি ভরা সুখ,
রাগ-অভিমানী ভোরে,বালিশ ভেজা মুখ।
সম্পর্কেরা টানে ইতি,রেখে যায় স্মৃতি,
চোখের জল সঙ্গী হয়,বিদায় প্রেম-প্রীতি।

আঁধার ঘনায়,জমে শিশির,সব গোলমেলে.
মন খারাপের রিংটোনে,এ মন কেঁদে চলে।
দুরত্ব বাড়ে,চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে..
একা হৃদয়ে ঘনায় আঁধার,কোন সে নিথর সাঁঝে।


____________
©পবিত্র পাত্র

প্রতিপদ

মেজদা
=====

আজ মেজদার সাথে দেখা হ’ল বাজারে। মেজদার সাথে কথা বলে সত্যি ভালো লাগল। সে যে কি আনন্দ, কি বলব! 

এই মেজদার সাথে পরিচিত হতে হলে যেতে হবে চল্লিশ বছর পেছিয়ে। আসলে মেজদা একজনের নাম হয়ে গিয়েছিল।তখন আমি পাড়ার চ্যাংড়া। আড্ডা দিয়ে –কথায় কথায় হাতি মেরে, আর ভান্ডার লুটে দিন কাটাই। এই রকম সময়ে একজন কে দেখতাম রোজ রিকশায়, দিনে-দুপুরে লাট খেতে খেতে যাচ্ছে। সেদিনও দুপুর বেলায় খেয়ে-দেয়ে শিব মন্দিরের রোয়াকে বসে আছি। এমন সময় দেখি সেই লাট খাওয়া লোকটা, এলোমেলো চুল যেন সবে ঘুম থেকে উঠেছে, শরীরের থেকে কয়েকগুণ বড় গায়ে একটা কালি মাখা জামা, ইস্ত্রিবিহীন প্যান্ট কোনরকমে কোমরে জড়ান, রিকশায় আসছে। চোখ বন্ধ, ঢুলে-ঢুলে পড়ছে, কোনরকমে সাইকেল রিকশার সীটের সাইড- হ্যান্ডেলটা ধরে। 

যাচ্ছিল লোকটা বেশ, নিজের খেয়ালে, কিন্তু আমার শয়তানি বুদ্ধি আর কি, চেঁচিয়ে শুন্যে ছেড়ে দিলাম, “এইরকম ভাবে চল্‌লে আর বেশী দিন লাস্টিং করবে না, দেখছি”। রিকশার চাকাটা ৮/১০ পাক ঘুরেছে হয়ত। টাল খেতে খেতে লোকটা পেছনে ঘুরে, জড়ানো গলায় বললে, “এই শোন্‌, আমি কিংকং এর মেজদা, অত সহজে টপকাবো না, মনে রাখিস”।  

তারপর থেকেই সে হয়ে গেল মেজদা। যেতে–আসতে মেজদার সাথে দেখা হয়ে যেত। হাত তুলে, “কি মেজদা, সব ঠিক?” ওমনি মেজদা উত্তর দিতে, “হ্যা বস্‌ আছি”। 

একদিন মেজদার সাথে রাস্তাতেই দেখা হয়ে গেল। সে সেদিন বিকেলে ফেরবার সময় কানাইদার দোকানে পান কিনছিল, রিকশা দাঁড় করিয়ে। 

আমি – কি মেজদা, কি খবর? 

মেজদা – ভালো, কি? পান খাস নাকি?                 

আমি – না, তুমি খাও 

কানাইদা পান বানাতে ব্যস্ত, ততক্ষণে মেজদা বিড়ি ধরিয়ে, তর্জনি আর মধ্যমার ফাঁকে রেখে, বিড়িটাতে এক বুক টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বল্‌ল, “এটা তোকে দিতে পারব না, আমি তোর মেজদা,” বলে এক মুখ সরল হাসি। তারপর এদিক ওদিক সন্তর্পনে দেখে মুখটা আমার কানের কাছে প্রায় নিয়ে বল্‌লে, “কি করা হয়?”   ততক্ষণে চোলাই এর গন্ধে প্রাণ যায়-যায়। মদ খাওয়ায় তখনও অনভ্যস্ত। মাঝে মাঝে কোন পাব্বনে আমার ৯টাক৫০পয়সা, হারুর ৯টাকা৫০পয়সা দিয়ে দুজনে পুকুর পারে, দাঁত দিয়ে ছিপি খুলে, এক বোতল ঠান্ডা ব্ল্যাক লেবেলেই আনন্দ।      

আমি তখনো পড়ুয়া। টিউশানি, বাড়ির এর-ওর দাক্ষিণ্য আর রোজকার বাজার থেকে যা আয় তা দিয়ে বেশ কাটিয়ে দি। চাকরি করার কথা তখনো মাথাতেই আসেনি।কোনরকমে দম আটকে, একটু মজা করেই বল্‌লাম, “কি আবার, কি আর করব? বেকার বসে আছি।   

মেজদা – ফিসফিস করে, “চলে আয় আমার লাইনে”। 

ততক্ষণে কানাইদার পান বানানো হয়ে গিয়েছে, আমারও মদের উগ্র গন্ধ গা সওয়া গয়ে গিয়েছে। দাম মিটিয়ে, পানটা মুখে দিয়ে মেজদা আমাকে নিয়ে রাস্তার দিকে সরে এসেছে।   

আমিঃ কি লাইন?  

মেজদাঃ এই লোকের পকেট কেটে, হাত সাফাই।

আমিঃ আমার কি হাঁড়-গোড়গুলো ঠিকঠাক জায়গায় আছে, তা তুমি চাও না?   

মেজদাঃ নিজের দিকে পা থেক মাথা অবধি দেখিয়ে বল্‌লে, এই দ্যাখ, আমার কোন হাঁড়টা সরেছে বলত? । আরে তোকে কি আজ ভর্তি করে কালকেই নামিয়ে দেওয়া হবে? তোর চলবে টেনিং এক মাস- দুই মাস। তারপর তুই পাস করলেই তোকে লাইনে নাবানো হবে।  

আমিঃ ট্রেনিং? মানে?   

মেজদাঃ এই ধর পথমে তোকে চালু বাসে ওঠা-নামা করানো হবে, তারপর আসবে  ক্যালানি সহ্য করার টেনিং – কদিন তোকে রাম ক্যালান্‌ ক্যালানো হবে – ওষুধ-পত্তর পেয়ে যাবি সে নিয়ে চিন্তা করিস না। তারপর সে সব সহ্য করে উঠবার পর তোর হবে আসল টেনিং।কি ভাবে লোকের গায়ের উপর পড়ে গিয়ে পকেট থেকে পেন গায়েব করবি, কত তাড়াতাড়ি পকেট থেকে তুলতে পারবি মনি ব্যাগটা।জিভের নিচে কি করে বেলেড লুকিয়ে রাখবি......................................। এই সব হয়ে গেলে আসবে বেলেড মারার পালা। একটা লাউ এর উপর পাতলা ভিজে আদ্দির কাপড় রেখে বলা হবে বেলেড চালাতে। যেদিন তুই লাউএ টাচ না করে আদ্দির কাপড়টা কাটতে পারবি সেদিন তুই হবি অল রাউন্ডার পকেট মার।     

আমিঃ না বাবা এসব হবে না আমায় দিয়ে।   

মেজদাঃ তা হলে ছেড়ে দে কোন ব্যাপার নয়। আসি। এই বলে সময় নষ্ট না করে মেজদা রিকশায় উঠে গেল।

এরপরে মেজদার সাথে দেখা হয়ে যেত এদিকে সেদিকে। বাসে জিনিষ খুইয়ে মেজদার শরণাপন্ন হয়ে হারানো মাল উদ্ধারও করেছি অনেকবার। দুই-একবার ক্ষেপেও গিয়েছে পুলিশে এফ আই আর করানোর জন্যে। উত্তেজিত হয়ে তখন বলেছে যা না তোর মামু দিয়ে দেবে তোকে। অবাক হয়েছি, শা* পকেটমার খবর কি করে পায় আমি থানায় গিয়ে দরখাস্ত দিয়েছি। 

আজ প্রায় ৬ বছর পর সেই মেজদার সাথে দেখা। জানলাম মেয়ের বিয়ে দিয়েছে।  মেয়ে এসেছে বাপের বাড়ি ভাই ফোঁটা দিতে তার দাদাকে। তাই বাজার করছে মেয়ের জন্যে। আমায় দেখে – “কি রে চুলগুলো পাকিয়ে তো আমার থেকেও বুড়ো হয়ে গেলি?” 

আমিঃ কি আর করি, হয়ে গেল? তা তুমি কেমন আছ?   

মেজদাঃ আমি হেবি ভালো রে। ওসব লাইন ছেড়ে দিয়েছি। ছেলে ব্যাঙ্কে চাকরি করছে। ও-সব কাজ কি আর করা যায়? ছেলের পেস্টিজ বলে কথা। আর এখন যে বড়বাবু এসেছে থানায় সত্যি ভগবান। আমি যেই গিয়ে বল্‌লুম আর এ লাইনে কাজ করব না, ছেলে চাকরি পেয়েছে। শুধু আপনারা কথা দেন আমায় এ লাইনে ভজাবার আর ধান্দা করবেন না, কি বল্‌ল জানিস? – “কোন শুয়ার তোকে আর ঘাঁটাতে যাবে না, এই তোর নাম লিস্টি থেকে দিলাম কেটে” এই বলে কম্পুটার খুলে কি সব করল।   

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে দেখে সেই পুরোনো সরল হাসি হেসে বল্‌লে “তুই তো আর আমার ফ্যামিলি নিয়ে জানতিস না। ভাই-বোন দুটো তো মামা বাড়িতেই মানুষ হয়েছে। আমি শুধু মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি”।  

আমি তখনো ঠিক মেলাতে পারছিলাম না। মেজদা – ওর ছেলে, সে ব্যাঙ্কে চাকরি করছে, মেয়ের বিয়ে দিয়েছে – সব মিটিয়েছে এই লাইনে থেকে? কিন্তু মনে মনে সত্যি খুশি হচ্ছিলাম এরকম জীবন যুদ্ধে জেতা একটা মানুষের গল্প শুনে।
:

_________________
© দেবাশীষ দাসগুপ্ত     

ধর্মান্ধতা বনাম ধর্মবিশ্বাস

ধর্মবিশ্বাস কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রতি যুক্তিহীন অলীক বিশ্বাস। এই বিশ্বাস ছোট বেলা থেকেই গড়ে ওঠে পরিবারকে কেন্দ্র করে। শিশু যে পরিবারে বড় হয়ে ওঠে সেই পরিবারের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসই শিশুটির ধর্মবিশ্বাস হিসাবে পরিগণিত হয়। আর এই বিশ্বাস আস্তে আস্তে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। সে যতই বড় হতে থাকে বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার পরিবর্তে  বাঁধনের জড়াজড়িতে পথভ্রষ্ট হয়। আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করে এই বন্ধন। ভালোলাগা থেকে জন্মায় ভালবাসা। অন্ধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা এতটাই অন্ধ হতে শুরু করে যে, সে প্রশ্ন করতে ভুলে যায়, সত্য-মিথ্যার কষ্টি পাথরে কোন ঘটনার বিচার বিশ্লেষণ করতে ভুলে যায় সে। বিনা প্রশ্নে অনুসরন আর অনুকরণ করতে ভাল লাগে তার। নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস হিমালয়ের গগনচুম্বী শিখরের মত অটুট থাকে আর অন্য সব মত বিশ্বাস হয়ে যায় মিথ্যা। আর এখান থেকেই জন্ম নেয় ধর্মান্ধতা। 

ধর্মান্ধতা হল নিদিষ্ট কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রতি আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা। হ্যাঁ, সেই আনুগত্য অবশ্যই ব্লাইন্ড। যে নির্বোধ আনুগত্য মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে। বুদ্ধি ও বিবেকবোধ কে অন্ধ করে দেয়। সে এক নির্বোধ ভেড়ার মত রোবটে পরিনত হয়। ধর্মান্ধতা হল সেই অমানবিকতা জনিত জিঘাংসা বোধ যা নিজ ধর্মের স্বার্থরক্ষায় নারী ও শিশু ধর্ষনে, নারী-শিশু- মানব হত্যায় কলঙ্কলিপ্ত হতে দ্বিধা বোধ করে না। এমন কি এই কার্যসিদ্ধির জন্য হাসতে হাসতে নিজের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে পারে। 

"ধৃ " ধাতু থেকে সৃষ্ট "ধর্ম" শব্দ টির অর্থ ধারণ করা। সত্য, ন্যায়, নীতিধারণই হল প্রকৃত ধর্ম। কিন্তু বর্তমান যুগে ধর্ম হল আচার সর্বস্ব। সব প্রাতিষ্ঠানিক প্রচলিত ধর্মই কম বেশি ধর্মান্ধ মৌলবাদে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যের কথা, প্রত্যেক ধর্ম ও তার ধর্মগুরুরা শান্তি, মৈত্রী ও ঐক্যের বানী প্রচার করেন। পরধর্মসহিষ্নুতার কথা প্রচার করেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটে ঠিক তার বিপরীত।    অতীত থেকে সাম্প্রতিক দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ঘটনাবলী বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এর স্বাক্ষ বহন করে চলে। এর প্রতিটি ঘটনার জন্য দায়ী ধর্ম ও ধর্মপ্রচারের উন্মাদনা। উন্মাদে মত্ত মানুষ নিজের নীতি বিবেকবোধ থেকে অপসৃত হয়। 

যুদ্ধউন্মাদনা থেকে ধর্মান্মোদনা আরো মারাত্মক আরো ধ্বংশাত্মক যা মানব সভ্যতাকে চিরতরে ধ্বংশ করে দিতে পারে। সূদুর অতীত থেকে বর্তমান বিভিন্ন ঘটনাবলী কি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে না?? এত কিছুর পরও কি আমরা চুপ থাকব? সমগ্র বিশ্ব 🌏 আজ দিশেহারা। এই পরিস্থিতিতে শেষ কথা বলে মেনে নেওয়া হল মূড়তার লক্ষণ। এই নিদারুণ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে প্রতিকারের সন্ধান করা প্রয়োজন। একমাত্র সত্য দিয়ে  মিথ্যাকে পরাজিত করা যায়। 

তাই আমাদের সর্বাগ্রে বৈজ্ঞানিক সত্যকে অনুসন্ধান করতে হবে, তাকে লালন পালন করে পরিপুষ্ট করতে হবে মনের মনিকোঠয়। এবং আমরা যারা একটু অন্যরকম ভাবতে ভালোবাসি যাদের মনের মনিকোঠয় শোষণ বিহীন এক সুন্দর সাম্যের সমাজ গড়ার স্বপ্ন আছে, যে সমাজ লিঙ্গ পরিচয় কিম্বা ধর্ম পরিচয়ে নয়, শুধুমাত্র মানুষের জন্য মানুষ নিয়ে তৈরী, তাদেরকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। বৈজ্ঞানিক সত্য শুধু নিজে বুঝলেই হবে না তাকে ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। নিজের পরিবারের গন্ডী ছাড়িয়ে সর্বত্র। তাই আজ আমার আপনার সকলের প্রতিজ্ঞা হোক - 

"চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য ক'রে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে,
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস"।।

_____________
©তাপস গায়েন

।। উদাসী হাওয়ার ঝড়।।

আমার সীমান্ত তোমার ভালবাসার জন্য খোলা
তুমি উদাসী হাওয়া পাঠিয়ে দেবে বলেছিলে
আমি বলেছিলাম, ঝড়ই আমার পছন্দ
আকাশ কালো করে মেঘের ঘনঘটা
তখন আমি খোলাবুকে
দাঁড়িয়ে থাকব আকাশের নিচে..

উদাসী হাওয়া মাখবো সারা শরীরে
এক ফোঁটা জল... আরেক ফোঁটা...
মাথা থেকে মুখ, মুখ থেকে বুক...
বুক থেকে পা... ভাসিয়ে নিয়ে যায়
আমাকে স্নীগ্ধ শীতলে...

চোখ বোজা মন,
নিভতে চাই তোমার শরীরে
শরীরের কোষে কোষে... রন্ধ্রে রন্ধ্রে..
নোনা স্বাদের বার্তা নিয়ে তোমার কবিতা
কবিতায় প্রাণ উঠল জেগে
দেহ হল ছারখার।

_____________
@মিতালী রয়প।

।। রাক্ষুসী তার।।


                                             । ১ ।

বিকেল সাড়ে পাঁচটা । অফিসের কাজ শেষ করতে করতে আজ বেশ দেরিই হয়ে গেলো । পার্কস্ট্রিটের Chatterjee International বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়াল শমীক । কাল থেকে টানা তিনদিন কালীপূজোর ছুটি । তাই দেরি হলেও মনে একটা খুশীর আমেজ লেগে আছে । তার উপর আনোয়ার আজ ‘নুঙ্গি’ র বাজিকারখানা থেকে অনেক বাজি নিয়ে এসে দিয়েছে তার ছেলের জন্য । শুভ সামনের ডিসেম্বরে পাঁচে পড়বে । এ বছর বাজি পোড়াবে বলে খুব আবদার করছিলো, তাই আনোয়ার কে দিয়ে স্পেশাল করে এই বাজি আনানো । এখন প্রথম কাজ হোল একটা বাস ধরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিয়ালদা স্টেশন পৌঁছান । তারপর সেখান থেকে বারাসাত লোকাল ধরে দত্তপুকুর । মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসবে । বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে বেশ । বৃষ্টিতে বাজিগুলো ভিজে গেলে এতগুলো টাকা সব বরবাদ...

                                              । ২ ।

ট্রেনটা দশ মিনিট লেটে ছাড়ল । বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে । তবে বাজিগুলো ভেজেনি । বেরনোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় বাসটা পেয়ে যাওয়াতে বেশ সুবিধাই হয়েছে । একটা সীটও পাওয়া গেছে । এই সময়ে লোকালে সীট পাওয়াটা বেশ ভাগ্যের ব্যাপার । আজ সব কিছুই ঠিকঠাক চলছে । যেন সব ছকে বাঁধা । নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবানই মনে হচ্ছে আজ । সামনে তিনদিনের সব প্ল্যান কষা হয়ে গেছে । বৌ, ছেলে আর মাকে নিয়ে খুব মজা করবে এই তিনদিন । ইচ্ছা আছে একদিন টাকি থেকে ঘুরে আসার... । বাবা গত হয়েছে আজ বারো বছর । শমীক তখন সবে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে । তখন থেকেই শমীকের জীবন সংগ্রাম শুরু । বাবার পেনশনের সামান্য কিছু টাকা দিয়ে সংসার চলতো না । বাধ্য হয়ে টিউশন শুরু করে শমীক । সকাল বিকেল নিয়মিত টিউশন করেছে আর রাত জেগে পড়াশুনা করেছে । গ্রাজুয়েশন পাশ করেছিল বেশ ভালো নম্বর নিয়েই । তারপর DOEACC থেকে কম্পিউটারের দুটো কোর্স করে এই চাকরিটা পায় ও । তাও আজ পাঁচ বছর হয়ে গেলো । মাইনে এখন মোটামুটি বারো হাজার টাকার মতো পায় । সেই সঙ্গে বাবার পেনশনের টাকাটা আছে বলেই সংসারটা চলছে । এখন তার জীবনের একটাই লক্ষ্য – ছেলেটাকে ভালোভাবে মানুষ করা । আগের বছরই স্থানীয় একটা ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে শুভকে ভর্তি করেছে নার্সারিতে । এখন শুভকে আবর্ত করেই তাদের সবার জীবন…

                                            । ৩ ।

রাত আটটা । দত্তপুকুর স্টেশনে নামলো শমীক । ট্রেনটা আজ খুব ভুগিয়েছে । প্রায় আধ ঘণ্টা লেট । কিন্তু স্টেশন অন্ধকার কেন ? মেন গেট দিয়ে বাইরে এলো শমীক । চারিদিকে অন্ধকার । ভালো বৃষ্টি হয়ে গেছে । ঝড়ও হয়েছে বোঝা যাচ্ছে ।কয়েকটা দোকান খোলা আছে । টিমটিম করে মোমবাতি আর হ্যারিকেনের আলো জ্বলছে । সামনেই একটা দোকান থেকে একটা ক্যাডবেরি কিনল শমীক । দোকানদার কানুদা তার পূর্বপরিচিত । কানুদাকে জিগ্যেস করলো শমীক, “কি ব্যাপার কানুদা? কখন লোডশেডিং হয়েছে?”
- “ আর বলিস না শমীক, প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে কারেন্ট নেই… । এই একটু আগেই তো ঝড় বৃষ্টি থামল…”
- “সে তো দেখতেই পাচ্ছি… । ভালই বৃষ্টি হয়ে গেছে”, শমীকের উত্তর ।
- “তোদের বাড়ির ওদিকে কোথায় তার ছিঁড়ে পড়ে আছে নাকি রাস্তায় । তাই তো লোডশেডিং… । সাবধানে যাস কিন্তু !”
- “হুম… রাস্তা তো পুরোই অন্ধকার দেখছি…”
- “আজ আর কারেন্ট আসবে বলে মনে হয় না । আমিও একটু পরে দোকান বন্ধ করে দেবো…”, কানুদা উত্তর দিল ।
- “যাচ্ছি গো…”, পা বাড়াল শমীক ।

স্টেশন থেকে তার বাড়ি প্রায় পনের মিনিটের হাঁটা রাস্তা । রিক্সাও নেই একটা আশেপাশে । ‘যাক গে, এটুকু তো রাস্তা…’ – বেশ জোরেই পা চালাল শমীক । বাড়িতে শুভ অপেক্ষা করে বসে আছে তার জন্য…

                                             । ৪ ।

-“মা, বাবার আস্তে আর কত দেরী হবে?”, অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত শুভ । আজ দুপুরে না ঘুমিয়ে পড়াও করে নিয়েছে সে । বাপি আসলে একসঙ্গে বাজি পোড়াবে…
-“তোর কি তর সইছে না… দেখছিস না লোডশেডিং হয়ে গেছে, সেজন্য আসতে দেরি হচ্ছে…”, “ বলল বটে মিঠু কিন্তু দুশ্চিন্তা তারও শুরু হয়েছে । রাত নয়টা বাজে । এত দেরি হবার তো কথা নয় । সাড়ে সাতটার সময় একবার ফোন করেছিল বটে শমীক… বলেছিল ট্রেন লেট আছে । কিন্তু তাই বলে এত লেট !

-“দাঁড়া তোর বাপিকে একটা ফোন করে দেখি…” 

মোবাইলটা কিন্তু বেজেই গেলো । ধরল না শমীক ।আবার ফোন করলো মিঠু । এবারেও রিং হয়ে হয়ে কেটে গেলো ।
কপালের ভাঁজ আরও ঘন হোল মিঠুর । পাশে রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল সে । তার শাশুড়ি আজ ছেলের জন্য লাউ-চিংড়ি রাঁধছে । সকালে কোনওমতে নাকে মুখে গুঁজে খেয়ে গেছে মানুষটা…

-“মা, আপনার ছেলের আসতে এতো দেরি হচ্ছে কেন? এতো দেরি তো হয় না…!”

-“ফোন করেছিলে?”

-“হ্যাঁ… রিং হয়ে যাচ্ছে। ফোন ধরছে না…”

-“ততক্ষণ শুভকে খাইয়ে দাও… ঝড়বৃষ্টির রাত । তায় আবার লোডশেডিং । এসে যাবেখন…”

                                             । ৫ ।

রাত সাড়ে এগারোটা । ক্লাবের ছেলেদের বেশিদূর যেতে হয়নি । শমীকের বাড়ী থেকে এক কিলোমিটার দূরে রাস্তার ধারে পাওয়া গেলো শমীকের লাশটা । ঝড়ে ছিঁড়ে যাওয়া তারটা পুরো পেঁচিয়ে নিয়েছিল তার দেহটা । সাদা হয়ে গেছিলো পুরো শরীর । তার দেহের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত শুষে নিয়েছে যেন রাক্ষুসী তারটা… 

শুভ কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে । বাপির উপর তার খুব রাগ হয়েছে ওর । বাপির সঙ্গে আর কথা বলবে না ঠিক করেছে ও…


_________________
©ফিরোজ আখতার

Sunday, 30 October 2016

।। ভাইফোঁটার প্রাক্কালে ।।

বোন, জানিস তো ভালো লাগে তোর হাঁসি,
কিন্তু তোর বাড়ন্ত শরীর বড়োই সর্বনাশী।

ছাড়তে পারিনা তোকে ,রাস্তায় দুবেলা একলা,
আছে কত শয়তান ওত পেতে, চাই তোকে নিয়ে করতে খেলা।

যখন তুই দাদা বলিস,মনে জাগে অহংকার,
এই সমাজে তোর সম্ভ্রম রাখতে পারব কী?
বড়ো ভয় হয় আমার।

সেইদিনও আমরা খেলতাম দুজনে, চোর -পুলিশ, পুতুল খেলা,
আমার চোখ হয়েছিল ছল-ছল,
বিয়ের পর বিদায় বেলা।

নতুন ঘর, নতুন সবাই ভেবেছিলাম, বরের আদর পাবি
কিন্তু লোভে ভরা শশুরবাড়িতে ছিল, নিত্য নতুন দাবি।

বাড়িতে এসে বলেছিলিস তুই, তোদের খুব মনে পড়ে,
সারা শরীরে তোর কালশিটে দাগ, রেখেছিলিস শাড়িতে আড়াল করে।

দাদার কাছে ছিল না কোনো ভরসা জাগানোর কথা,
বুক ভরা ছিল হাহাকার, আর শুধুই নীরব ব্যথা।

প্রাণটা দিয়ে দেখিয়ে দিলি, কেমন ছিল বরের বাড়ি,
এতো দিনের ভাই-বোনের সম্পর্কের ,করে দিলি আড়ি।

আজও তোদের দিতে পারি না ক্ষমতা,স্বাধীন ভাবে বাঁচার
আমার মতো অভাগা দাদাদের ,
আছে কী ভাইফোঁটা দেওয়ার অধিকার?



_________
@কাবু মন্ডল

।। সংক্ষিপ্ত রামায়ণ ~ কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড ।।


অকপট ব্রতকথা
************
পর্ব দশ


শোন শোন গুণীজন শোন দিয়া মন ।
কিষ্কিন্ধ্যাকান্ডের আজ করিব বর্ণন ।।

পুরাকালে ছিল এক বানরের দেশ ।
"কিষ্কিন্ধ্যা" হইল তার নগর বিশেষ ।।

বানর রাজ "রিক্ষি" সে মহা বলশালী ।
তার দুই পুত্র ছিল "সুগ্রীব" ও  "বালি" ।।

জীবন পেরিয়ে রাজা গেল মৃত্যু পার ।
বালি পেল রাজ্যভার জ্যেষ্ঠ পুত্র তার ।।

মহা বলশালী বালি দেবতার বলে।
রাবনকে একবার চুবিয়েছে জলে ।।

মায়াবী, দুন্ধুভি দুই দানবের তরে ।
কোন্দল বাঁধিল মহা , দুই সহদরে।।

সুগ্রীব ছাড়িল রাজ্য করে মৃত্যু ভয় ।
ঋষ্যমুখ পাহাড়েতে নিলেন আশ্রয় ।।

শাপগ্রস্থ ছিল ঋষি "মাতঙ্গে"র ক্রোধে ।
সর্ব স্থানে যায় বালি ঋষ্যমুখ বাদে ।।

সুগ্রীব আসিতে দেখে  দুই  জন  নর ।
ভাবিলেন বালি বুঝি পাঠিয়েছে চর ।।

বালির ভয়েতে তিনি থরথর কাঁপে।
হনুমানে পাঠালেন তাদের সমীপে ।।

রামের পরেতে  যার  করিব  বন্দনা ।
কেশরী তাহার পিতা, মাতা অঞ্জনা।।

রুদ্র অবতারে শিব, মহা শক্তিমান ।
পবন পুত্র যে তিনি  বীর "হনুমান" ।।

হনুমান  গিয়া  কহে  দুই  সহদরে ।
কিবা হেতু আগমন কহিতে তাদেরে।।

আত্ম-পরিচয় দিয়া,  বলে  রঘুবর।
রামচন্দ্র তিনি সেই অতি ক্ষুদ্র নর ।।

প্রণমিল হনুমান রামের চরনে ।
এতদিন যার স্তব করিতেন মনে ।।

সস্নেহে কহিল রাম বীর হনুমানে।
করিবেন দেখা তিনি সুগ্রীবের সনে।।

রামচন্দ্র পৌঁছায়িল সুগ্রীব নিকটে ।
কহিলেন সবকিছু যাহা গেছে ঘটে।।

রামের বর্ণনা সব  সুগ্রীব শুনিল।
কিছু স্বর্ন অলঙ্কার তারে দেখাইল ।।

বলিলেন এক দিন আকাশের পথে ।
এক রমণীরে লয়ে গেল কেহ রথে ।।

ক্রন্দন করিতে ছিল রথ মধ্যে তিনি ।
সেই অলঙ্কার পথে ফেলিয়াছে যিনি ।।

নিশ্চিত হইল  রাম  সেই  অলঙ্কারে।
সীতারে করিয়া মনে কাঁদেন অঝোরে ।।

অগ্নিকে সম্মুখে রাখি তারা দুই জনে।
সুগ্রীবে করিল বন্ধু  তখন সে ক্ষণে ।।

অভয় দিলেন রাম বালিলেন তারে ।
ফেরাবেন রাজ্য তার বধিয়া বালিরে ।।

আলিঙ্গন করি বলে সুগ্রীব আবার ।
সীতা অন্বেষনে সাথ দেবেন তাহার ।।

কিষ্কিন্ধ্যা গিয়া সুগ্রীব বালিকে হুঙ্কারে।
মহা মল্ল যুদ্ধ বাঁধে  দুই  সহদরে ।।

বালির সহিত যুদ্ধে  সুগ্রীব না পারে ।
পিছন হইতে রাম দিব্য তীর মারে ।।

রামকে কহিল বালি,  "বলুন  হে বীর ।
কিবা অপরাধে মোরে মারিলেন তীর"।।

রাম তারে কহিলেন, "মহারাজ বালি ।
শক্তি অহঙ্কার তুমি করিয়াছ খালি ।।

সুগ্রীবে তাড়িয়ে পাপ করিয়াছ অতি।
সেহেতু তোমার আজ এহেন দুর্গতি "।।

রামের স্পর্শে বালির পাপ ক্ষয় হল।
মরনের পরে তাই স্বর্গলোকে গেল ।।

বালির পুত্র  অঙ্গদে  যুবরাজ  করে ।
সুগ্রীব হইল রাজা কিষ্কিন্ধ্যা নগরে ।।

অতপর কিষ্কিন্ধ্যার পরিচিত যারা ।
তন্ন তন্ন সীতা খোঁজ করিলেন তারা।।

আশেপাশে যত ছিল বানরের দল ।
এক সাথে জড়োহল করে কোলাহল।।

তাহাদের চারি ভাগে বিভেদিত করে।
পাঠায়িল  চতুর্দিকে সীতা খুঁজিবারে ।।

পুর্ব, পশ্চিম,  উত্তরে যারা খোঁজে গেল ।
সীতারে না পেয়ে তারা রিক্তহস্তে এলো।।

দক্ষিনেতে গেল যারা করিতে সন্ধ্যান।
হনুমান,  নল,  নীল, আর জাম্বুবান।।

ভরসা  করিল  রাম  হনুমান  বীরে ।
একমাত্র  সে-ই সীতা খুঁজে দিতে পারে।।

একটি আঙটি  তাঁর হনুমানে  দিল ।
সিতাকে দেখাবে পেলে এমনি কহিল ।।

একমাস নানা স্থানে খোঁজ করে সারা ।
সীতারে না পেয়ে তারা হল দিশেহারা।।

সীতা বিনা হনুমান কাঁদিলেন শোকে ।
কেমনে যাবে সে ফিরে রামের সম্মুখে।।

এরপর গেল তারা বিন্ধ্য পাদদেশে ।
ক্লান্তহয়ে সেইস্থানে পরিলেন বসে ।।

"সম্পাতি" নামেতে পক্ষী জটায়ুর ভাই ।
সেখানে করিত বাস দেখিল সে তাই।।

উড়িয়া আসিল তিনি তাদের সম্মুখে।
বুঝিল কেনবা তারা খোঁজেন সীতাকে।।

হনুমানে বলিল সে ভাবিয়া আপন ।
সীতাকে করেছে চুরি লঙ্কার "রাবণ" ।

রাবন সীতারে লয়ে চড়ে পুস্প রথে।
সেইদিন দেখেছে সে গেছে এই পথে ।।

একশো যোজন দুরে  সমুদ্র  ওপারে।
লঙ্কায় গিয়াছে নিয়ে রাবন সীতারে।।

লঙ্কাদেশ সেই স্থানে রাবন বসতি ।
রাক্ষস কুলের রাজা নিষ্ঠুর সে অতি ।।

সীতার সন্ধান পেয়ে আনন্দিত ভারি
হনুমান বলিল সে লঙ্কা দেবে পাড়ি।।

লম্ফনে করিবে তিনি সমুদ্রকে পার।
মহেন্দ্র  পর্বতে  তাই  উঠেন এবার ।।

রামায়ণ সংক্ষিপ্তে শোন ভক্তগণ ।
কিষ্কিন্ধ্যাকান্ডের আজ হল সমাপন।।

ব্রতকথা "অকপটে" সোম শুক্র হয় ।
"রামায়ণ" পড়িবে যে হবে পাপক্ষয়।।


 চলবে........
_____________
 ©সুব্রত অধিকারী
                

।। উড়ন্ত চিল।।


                                       আমি এক উড়ন্ত চিল
                            খুলিয়া দেব যুব সমাজের বন্ধ খিল।
                                কুসংস্কার মুক্ত করিব একদিন
                                   ঘুড়িব ঘরে ঘরে রাত দিন।

                      প্রতিবাদের ঝড় তুলিব সমাজে প্রতিদিন
                       সে প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত হবে সারাদিন।
                       প্রতিধ্বনিকে করিব সাইক্লোনে পরিণত
                   সাইক্লোনের ঝড়ে উড়ে যাবে কুসংস্কার যত।

                  শান্তির বানী ধ্বনিত হবে সমাজের প্রতিকোনে
                         পরিণত করিব সমাজেরে শান্তির বনে।
                  সম্মান হানি হবে না যখন আর কুদৃষ্টির প্রভাবে
          আমি উড়ন্ত চিল তারপর আকাশে উড়িব স্বাধীনভাবে।


________________
© ডা: কমলেন্দু দাস

।। অবলুপ্ত বর্ণমালা।।

 কায়া থেকে পুষ্প-মধু অঝরে ঝরে
  মনের আয়নায় সচিত্র বাণীর ছায়া ,
  তখনও বুঝিনি চিত্রময়-বাণীর ছায়া নয়
  কায়া রূপে ছুটে আসে পরমা-কৌতুকী !

  বহুরূপী প্রকৃতির মত নব নব রূপে
  সাধের জানলা খোলে ,সহসা চোখে পড়ে
  কোথায় পুস্প-মধু সেখানে গড়ায় তরল গরল
  বিস্মরণের বাতাসে ভেসে যায় পূর্বকথা |

  কেউ যেনো  হঠাৎ উদাসী হয় ঝুলন্ত বারান্দায় !

  অন্ধকারে ঢাকা পড়ে সব অপরাধ ?
  বিবেকের বৃশ্চিক ,দংশায়নি কি তাকে ?

  হারানো বৃত্তে ঝোলে অবলুপ্ত-বর্ণমালা |

  _________
©প্রবীর ভদ্র

Saturday, 29 October 2016

।। বিস্মরণ ।।


বিস্ফোরক হয়ে গন্ধক খোজার আগে - দুরন্ত কিছু চুম্বন।
যুদ্ধক্ষেত্রে সাজিয়েছ আমায় আহত সূর্যের মতো।
পরাজিত হতেও আপত্তি নেই।
স্তনবৃন্ত থেকে বিষপানে উদ্ধত যৌবন।।

দিন ও রাতের সন্ধিক্ষনে রাখা নিষিদ্ধ স্তবকে - লিখে রাখা পরবর্তী হাতবদলের ইস্তেহার।।


কত চোটে লতানো হাতের আঙুল
কত চুমুতে কাঁটা হারানোর খেলা
উপহারে ফুল নয় - ক্যাকটাস।
স্ববিরোধীতায় উত্তেজিত হই দুজনেই।এরপর ক্যাম্পফায়ার।
নিভুনিভু আলো-আঁধারিতে পোড়া ত্বক।বেশ লাগে বাস্তুসাপের মড়া খোলস।।

যে ইতিহাসে ব্যতিক্রম বাকি রেখেছিল - তার দরজায় ঘোলাটে ক্রিয়াপদের অকপট স্বীকারোক্তি।।


প্রত্যেক কবিতায় তুমি রাত ভিজিয়েছ।
প্রত্যেক কবিতায় তুমি নির্বোধ পারদ মাখিয়েছ - গোপন মেঘলা পর্দায়।ফুলদানি ভেঙ্গেছ।ফুল ছিঁড়েছো।মসৃন সুতোয় বোতাম জড়িয়েছ।

যে শাড়িটা খুলে রেখে আমাকে স্পর্শ করেছ - কবিতায় তার রঙ নীল।

কোনো কথা বলিনি।স্রেফ চাঁদের আড়াল চেয়েছি।দৈব অবেলায় দানব রুপ অতই কি সহজ?

তাই অথই জলে চোরাবালি জীবন্ত হোক - মৃত উপগ্রহে ঘাতক হয়ে উঠুক বৈরাগী বিজারণ।।


চোখে এঁকেছি কয়লার গুঁড়ো
তাই পিছলে যাচ্ছে তোমার মেহেন্দি করা হাত।যদি তা হাত না হয়ে সাপ হতো - অমৃত উপোসি সুখে শাঁখা ও সিঁদুরবিহীন ছবি।

অতএব মাটির কলঙ্কেও মহাপ্রস্থানের প্রতীক।যে জন্মস্থানে ছিল অতিগোপনীয় জড়ুল - জড়তা নিভৃতে সামিল।শ্মশানের বাসি জামা আদপে অভিমানী।

নদীর বিনিময়ে পাহাড় - আকাশ ছাড়িয়ে নদী - উচ্চতায় ক্রমশঃ শুকিয়ে যাওয়া অভিযোজিত তাপ সংরক্ষিত হিমাংকের নীচে।।


আলপনা না দিয়ে তুমি খেয়ার সাগর এঁকেছ।খেয়ালে আবির মাখিয়েছি তোমায় সাদাকালো।সেখানে কি সত্যি কি তুমিই ছিলে?নাকি অন্য আবহ কিছু।
তোমার জটিল ছবি ক্লান্ত হলে - বারবার দিগন্ত সীমানায় সমকোণী ত্রিভুজ।।

যে শরীরের আঘাত প্রতিষ্ঠা করি সবটুকু তোমার - সেটাও প্রাচীন মিথ্যে। আসলে কবিতার শরীর বড্ড বহুগামি।।


কোনো এক নির্ঝর উপন্যাসে মৈথুন প্রশ্ন এলে - সমাজ বহির্ভূত।
অথচ এ সমাজেই আত্মমৈথুন বিকলাঙ্গ দামী।চাদর চড়িয়ে নাও।গোপনে নিজেই নিজের সাথে মিলিত হও।উত্তর অবকাশে বিলিয়ে দিয়েছ কিছু প্রজাপতি।

ভুল কোরো না - কোরাস নিয়মানুবর্তিতায়।প্রজাপতি কখনোই জোনাকির মতো স্বল্পায়ু নয়।তবে মোমবাতি নিভিয়ে দিতে পার অপরাধী ঋতুরসে।

ঈশ্বরও যদি জন্ম দিতে পারে অবৈধ গোপন মানুষ - সামাজিক ভয় কেন পরলোকে বিসদৃশ উপবিলাসিতায়।

আজন্ম সন্ধিক্ষন জুড়ে একমুখী রুদ্রাক্ষ প্রতিরোধ।শহরে প্রবলবেগে বাজছে সাইরেন।।


আমার ভালো ও খারাপ পুরোটাই তোমার।আমার নষ্ট ও পবিত্রতা পুরোটাই তোমার শব্দচয়নে।
ঈশ্বর হয়ে ওঠা - বা শয়তান
উপাসনা তুমি যেটার করতে চাও।

আমি কেবল হাজার বছরের গচ্ছিত চুম্বন স্বার্থে।

কেউ জানেনা কোন রাতে কখন কোন ঘড়িতে তোমার শেষ প্রশ্নের ঋন রেখেছিল কেউ।

আমার কবিতা নিজেকে মৃত অন্ধকারে নিঃশ্বেস করে তোমার আড়ালে।

আসলে তুমিও বড্ড স্বার্থপর কবিতা শোনাচ্ছ - দেশ কাল পাত্র নিয়ে।।


যে শব্দে মেপেছিলে নিঃশ্বাস
চাঁদকেও বেহিসাবি করতে রাজি।কালক্ষেপ ব্যয় না করে রাত্রি বেশে অহরহ সাজ - ভেবেছ এভাবেই কিছু নিষিদ্ধ প্রেমে আগুন ছড়াবে।।

ঘুমে ও জাগরনে কিছু সোনা পুনরায় মাটি - কার চোখে কত জল!শান্তি ওড়াবে।।

অস্থির কানামাছি।শেকড় হারিয়ে যায় কাগজ অসুখে।বেসামাল কবিতারা তরলে ও তরল জ্বালায়।শহর আচমনে পায় অগভীর আলোর শূন্য বিলাস।।


এসোনা কিছুটা প্রেম সমুদ্রে গচ্ছিত রাখি।চন্দন বাটি।মাখি ও মাখাই।দুজনেই তো আদপে মানুষ।

চলো একসাথে সঙ্গমস্থল রুপে বেছে নি শশ্মান ও চিতা।অথবা কবরে ঘুম অতলান্তিক।

তাজমহলে প্রেম নয়।মন্দিরে শরীর নয়।মসজিদে প্রহেলিকা নয়।ঈশ্বরে লিঙ্গ নয়।।

উল্কাপাত যদি ঝরাতেই না পারি
প্রেমপ্রেম প্রেমরসে কেন যে মাতামাতি?

উৎসবে আলোর ধূলো - প্রার্থনায় স্পর্শ হাহাকার।তবে কি মাটির পুতুল হলে ঘনিষ্ঠতা একটু বেশী?

১০
ছায়ার শরীরে লেগে থাকা কিছু ব্যস্তানুপাতিক অভিশাপ -
বিস্তারিত জানালে খানিকটা ভাগ করে নিতাম।হয়তো এখানেও প্রচুর গলদ।যে মাটিতে চাষ হয় তার বুকে বৃথার প্রলেপ।অনুলেপনে আগামী আবহাওয়ার উল্লাস সতর্কবার্তা।

তবু কিছুটা ভিন্নতর উপকূলে নতুন শহর - নতুন আবাস - নতুন ঘড়ি।চলো।ভিসুভিয়াসকেও বাতিল করে নতুন কিছু বানাই।

চোখে জ্বালাচ্ছ চুম্বন প্রতিশোধ - যা পেতে কেবলই বাড়ছে ব্যস্ততা।।

১১
সে ঈশ্বরকেই ক্ষমা করা যায় - রতিক্রীড়ায় এখনো মানুষকে ডাকেন গভীর সোহাগে।

বাকিটুকু তারাবাতি হয়ে পুড়ে যাক।সাইক্লোন আসে যায় - সাদা পাতায় পাখিজগতের বেগ ঘন্টায় একশো মাইলের কিছু বেশী।

সাতরাজার ধন - পাথর ও পাহাড়ের হীরে-মানিক।এসবক্ষেত্র  হাস্যকর মৃগশিরার সুখ।

ব্যতিব্যস্ত আলোকীয় পথে ঈশ্বর মানেই অপরাধী শ্বেতকণিকা।

তুমিও অভ্যাস করছো অশ্লীল বাতিঘরে থাকা।।

১২
নতুনত্ব অহংকারের স্বাদে দ্রাব্যতা বাড়িয়েছ নৌকা ও ছাতার।কিছু রাস্তাকেও শান্তি দিয়েছ শেষ নিংড়ানো ঝিনুক ভাষায়।চাইনি ঘনক - তবুও বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছ।

ঘনিষ্ঠ মগ্নতার কোনো শব্দই আর অবশিষ্ট নয় - অতঃপর দেহাতি বিশ্লেষণে হানা দেয় বিকৃত রক্তক্ষরন।মৃতকোষ হাতড়ে ছেঁড়ে অশত্থামা অভিক্ষেপ।

বিষাক্ত রজককণা কতোটা নীলে সম্পূর্ণ - কেউ জানি না।।

১৩
অ্যাসিডে গলিয়েছি পাথর - হ্যাংওভার কাটেনি।টলমল পা মানেই ভিত্তিহীন সোনার খনি।

যে জমিতে আপন শেকড় - প্রত্নতাত্ত্বিক বাদানুবাদে অভিসারী হিম।ভিজেয়েছে বহুকিছু আদানপ্রদান।কিছু অপলক দেখায় - অতিপ্রাকৃত বিধান।।

বিচার কোরো না ঘুম - চোখ লেগে গেলেও দীপাবলি শুভেচ্ছান্তে হ্যালির ধূমকেতু।যে মনে মজেছিলে তুমি - কেন যে আটকে রাখ অমূলক অন্ধকার।।

প্রেম ছাড়াও আরো যদি অমাবস্যা বাকি থাকে - প্রভূত আপত্তি সত্ত্বেও তারাবাতি নিভিও।আলো চাইলেই তোমাকে দেখার লোভ বাড়ে।।

১৪
যেটুকু সীমাবদ্ধতা ছিল তার পুরোটাই তরলমুখি।তাই পরিচয় বাড়ার চেয়ে অপরিচিতা থাকাই ভাল।যে শস্যে ছুঁয়েছি উত্তাপ - আধবোঁজা ক্ষমায়, নীল ভেদ করে ক্ষতবিক্ষত করে সীমানা।ঠোঁটে ঠোঁট সমকামী হলেই প্রয়োজনীয়তা বাড়ে, কি নাম - কোথায় থাক - বাসায় কে কে আছে?

এরচেয়ে ছাই উড়ানোর গ্রহনযোগ্যতা অনেক ভালো।ফিনকি দিয়ে রক্ত ফোঁটায় ঝর্ণাকলম ফিনিক্স পাখি আঁকে।।

১৫
আদরের থালায় সাজিয়ে রাখা শুকনো কাগজের সাম্পান।অঙ্গুরীয় নতুনত্বে তাই পথ হারানো আনবিক আবেশে।
পুরাণ অথবা যে কোনো প্রেমের কবিতা - ব্যভিচারী ঈশারায় অবস্থিত বেগুনী রাজপ্রাসাদ কবির সহজাত।তাই চিতায় পড়ে থাকা মাটির গুঁড়োর পরবর্তী পর্যায়ে সমুদ্র সেতুহীন।।

কোনো ভাবেই উত্তাপনগরী ভাসে না জলজ প্রার্থনায়।।

______________
© রাহুল গাঙ্গুলী

লাল না সবুজ?

দশমীর বিকেল বেলা চলছে সিঁদুর খেলা,
মায়ের বিদায় তাইতো সেথা লোক এসেছে মেলা।
ম বৌদি সকলে  একে অপরের দিচ্ছে রাঙিয়ে গাল,
পূজা মণ্ডপ এখন শুধু লালের রঙে লাল।
এমন সময় হাজির ‘সীতা’  আরে এতো ফটিকের বউ,
সবার নজর কেড়ে নিল যা করেনি অন্য কেউ।
কপালে তার সবুজ টিপ, মাথাতে সবুজ সিঁদুর,
ফর্সা গায়ের রং তাকে মানিয়েছে ভরপুর।
কিন্তু সবার থেকে আলাদা দেখে ,বলল এক বৌদি এসে,
“কি গো সীতা আজ হোলি নয় তবুও হোলির বেশে?”
সীতা বলে, “না বৌদি ভাবছ আবির ভুল।
 খেলতে এলাম সিঁদুর খেলা, দেখো আমার কানেও সবুজ দুল”।
বৌদি বলে, “তাইতো সীতা খেয়াল করিনি তো আগে,
তা এমন রঙের সিঁদুর কেন প্রশ্ন মনে জাগে? ”
সীতা বলে, “লাল সিঁদুর দেখলে বর কাছে নাহি আসে,
কত শখ আমারও বর বসুক আমার পাশে”।
বৌদি বলে, “হায়রে দুর্গা তোর ভাতারের স্বভাব নয়তো ভালো,
পরকীয়ায় মাতল শেষে ছেড়ে এমন বৌ, যার চাঁদের মত আলো”।
সীতা বলল, “না গো বৌদি ভাবছ তুমি মিছে,
সবুজ সিঁদুর দেখলে আবার সুড়সুড় করে বসে আমার কাছে।
আসলে ও তো চাকরি করে রেলে চালায় রেলগাড়ি,
তার পরেই আসে সেতো বৌয়ের কাছে বাড়ি।
অভ্যেস মত লাল রং দেখলে দূরে থমকে দাঁড়ায়,
আর সবুজ রং দেখলে বর নিজের পা দুটি চালায়।
তাই বরের গাড়ি চলুক জোরে দেখে সবুজ রং,
লাল কে এবার বাদ দিলাম বাদ দিলাম ঢং”।

_______________
©অভিজিৎ মন্ডল

Thursday, 27 October 2016

ভালবাসার শিশির

একটা কবিতা লেখ, শুধু আমার জন্য,
কেন?
আমি অমর হতে চাই.
আমি যখন থাকবো না তখন?
আমাদের ভালোবাসা থাকবে,
কোথায়?
আকাশে,
মেঘ এসে মুছে দেবে,
ছড়িয়ে দেব বাতাসে,
ঝড়ে উড়ে যাবে,
বেধে রাখবো আঁচলে,
তবে রয়ে যাব স্নেহের পরশে.
লিখবো তবে
লেখ
আমি একটা নারীর হৃদয় জিতেছি
যা স্বর্গের চেয়ে সুন্দর.
কাঁদছো কেন?
এ অশ্রু নয় ভালোবাসার শিশির।

____________________
©মহ: মতিউল ইসলাম

ফ্রেঞ্চ ফনেটিক্স

আমাদের অতিথি শিল্প ও নির্বহ শিক্ষায়তনের ফরাসির মাষ্টারমশাই মোঁসিয়ো রয় ছিলেন নিপাট ভদ্রলোক। সাক্ষাৎ সজ্জন ব্যক্তি। আমাদের তখন ফাইনাল ইয়ার। ফরাসি শেখার বইটা প্রায় শেষ। উনি তখন বিভিন্ন খাদ্য ও পানিও উদ্ভূত ফরাসি গল্প আমাদের পড়ে শোনাচ্ছেন আর আমরা কতটা তার উচ্চারণ ধরতে  পারছি তা নিরুপণ করছেন। 

শনিবারগুলোয় এমনিতেই থাকত হাফ ডে। কোন ইয়ারই রান্না করত না অতএব ফ্রী লাঞ্চও পাওয়া যেত না। পড়ার ইচ্ছেও থাকত কম। কতক্ষণে এসপ্ল্যানেডে পৌঁছে, মেট্রো গলির কমলাবিলাসের দোসা আর সাম্বার বড়া সাঁটিয়ে শুক্কুরবারের নতুন রিলিজ এলিট, মেট্রো, লাইটহাউস বা নিউ এম্পায়ারে দেখব, তার জন্যে মুখিয়ে থাকতাম। 

এরকম এক দিনে স্যার ফ্রেঞ্চ ফনেটিক্স নিয়ে বলছেন তার গুঢ় তত্ত্ব। 
- যদি ভাওয়েলের পর এন ‘N’ থাকে তা সেই ভাওয়েলের সিলেবল অনুযায়ী শব্দের সাথে নাসিকার ধ্বনিতে পরিপুষ্ট হয়ে চন্দ্রবিন্দুর সহযোগে গোঙ্গানোর আওয়াজ ধারণ করবে। যেমন 
an - এ্যাঁ
en-আঁ 
in-ইঁ 
on-অঁ 
un-আঁ এই রকম। 

তা ছাড়া ch উচ্চারিত হবে শ আর d সমসময় দ। 

এটাই ছিল সেদিনকার পাঠ। স্যার নিয়ম করে এক বেঞ্চি থেকে আর এক বেঞ্চিতে অধিষ্ঠিত ফরাসি ভাষার অনুরাগীদের বাজিয়ে দেখছিলেন। 

এমন সময় এক বেয়াড়া এঁড়ে গরু হঠাৎ দাঁড়িয়ে শুদ্ধ বঙ্গজ ইংরাজি তে বলে উঠল – “সাআআর ইইন চন্দননগর দেয়াআর আআর লঅট অপ ফ্রেঞ্চ”। 

স্যার ওমনি সংশোধন করে বল্‌লেন “নট চন্দননগর, ইট'স শ্যাঁদ্যাঁনেগোর”। ইউ সি CH  ইস  প্রোনাউন্সড এ্যাস ‘শ’ এ্যান্ড an এ্যাস 'এ্যাঁ’ ওয়াইল D চেঞ্জেস ট্যু ‘দ’।  ইট'স ভেরি ইজি ওয়ান্স ইউ গেট ইউজড ট্যু ইট।”  

আমরা বেশ মনে মনে ভাজছি ch:শ, an: 'এ্যাঁ’, d:'দ' এমন সময় কোন এক বেল্লিক পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠল “ওয়াট এ্যাবাউট পন্ডিচারি সাআর?” 

ততক্ষণে এই পাঠ আমাদের বেশ আয়ত্তে এসে গেছে। পন্ডিচারির সম্ভবত উচ্চারণ কি হতে পারে বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু সরল মনষ্ক স্যার তখনও ফরাসি শব্দের উচ্চারণ বিজ্ঞানে নিমজ্জিত। 

দেখলাম উনি শুধু ঠোঁট দুটো নাড়লেন। বোধহয় মনেমনে ‘প’ অবধি উচ্চারণ করতে পেরেছিলেনে। পরবর্তি শব্দজোনিত আওয়াজটি কি হতে চলেছে তা তিনি ভালভাবেই হৃদয়াঙ্গম করেছিলেন হয়তো। তা না হলে কি আর উনি বলতেন মোটা বাটারফ্লাই গোঁফের ফাঁক দিয়ে, মুচকি হেসে  “দ্যা ক্লাস ইজ ডিস্‌মিস্‌ড ফর দ্যা ডে”?
:

_________________
©দেবাশীষ দাশগুপ্ত
:

ছড়ার জীবন-জীবনের ছড়া

যুবকরা প্রেম করে 
প্রৌঢ়েরা ঘর,
ঘরে ঘরে হানা দেয়
বাজারের দর।
থলি হাতে যায় লোকে
অলিতে গলিতে, 
জীবন বাঁধা 
শুধু পাকস্থলীতে।
নাচিয়েরা নেচে নেয়,
বাঁচিয়েরা বাঁচে,
বাঁচবে কী করে লোকে
নিভে যাওয়া আঁচে!
তবলিয়া ঠেকা দেয়
আঁকিয়েরা রঙ ,
তালে তাল দিয়ে যায় 
হ্যাঁ হ্যাঁ - বলা সঙ! 
মানুষ ভরসা খোঁজে 
দিনে আর রাতে,
আমার সন্তান যেন 
থাকে দুধে-ভাতে।

_______________
©সজল চক্রবর্তী 

দিন যাপন

আমার অসহায় অস্তিত্বে।

তীব্র তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণের আয়োজনে ,
মস্তিষ্কের ভাঁজে ভাঁজে থাকা তোর নাম,
নিরুপায় ছোটাছুটি নিউরন হতে নিউরনে।
আমি শ্রান্ত, অবিশ্রান্ত গুণগুণে।

আমার শরীর জুড়ে ভয়ংকর রকম কাঁপুনি
প্রবল শৈত্যকে আমি গ্রাস করে নিচ্ছি ,
আমি বেঘোর জ্বর ঘোরে ফুঁপিয়ে কাঁদছি  ।

আশ্রয় মিলছে না আড়ালে,
উষ্ণতা মিলছে না ফুটিফাটা দরিদ্র ঠোঁটে
আমি ক্রমশ ফিরে আসছি অভ্যাসের আবর্তে।

আমি আঁকড়ে ধরছি আমার কান্না ভেজা বালিশ
কাটাছেঁড়া স্বপনে,
আমি ক্লান্ত হয়েছি ক্ষরণে ;
আমি আবেগের সাথে মথিত হয়েছি
চিরবিচ্ছেদ মিলনে।

_______________
©শঙ্খসাথি পাল


৩৪৮ নং বাড়ি

 এতদিন আমি বিয়ে থাওয়া করি নি। মানে করা হয়ে ওঠে নি। না সোজাসাপ্টা বলাই ভালো। মালতী আমায় এতদিন বিয়ে করতে দেয় নি। মালতী আমার রক্ষিতা। মানে কাচা ভাষায় বাঁধা মেয়েমানুষ। মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটের ৩৪৮ নং বাড়িতে চিলে কোঠায় ওর ঘর। আমি যেদিন যেদিন যাই আগের থেকে খবর দিয়ে যাই। ঐটুকু ঘরই সাজিয় গুছিয়ে টিপটপ করে রাখে। ভারী যত্ন করে। বৌ বৌ ভাব করে। রান্না করেও খাওয়ায়। সিথিতে সিঁদুর পরে। বলে,“ মা কালীর সিঁদুর ।ঐ যে একদিন তুমি কি মনে হোলো পরিয়ে দিলে একন রোজ তোমার নাম করে পরি। “ বেশ একটা সতীলক্ষ্মী সতীলক্ষ্মী ভাব। মাঝে মাঝে গাঁয়ের কাজলা বৌ কাজলা বৌ ভাবও করে। গেলে এক গলা ঘোমটা  টেনে  বলে,“ হ্যাঁ গা একটু মুড়ি দুটো পাপর ভেজে দেবো?খালি পেটে চা না খেয়ে ঐ একগাল মুখে ফেলে চা খেয়ো এখন। “ একদিন তো হাত ধরেই ঝোলাঝুলি,“আর কিচু মালতী চায় না গো ! ম’লে মুয়ে (মরলে মুখে) একটু প্যাকাটির আগুন জ্বেলে দিও।দেকা হওয়া তক তোমাকেই ত’ জেনেচি। ”  

                                     মেঘে মেঘে বেলা কম হলো না। ৪৭ বছর বয়স হলো। এসব ছেনালি অনুকূল চাটুজ্যে খুব বোঝে। সেই কথা আছে না ‘তুলসী তলায় দিয়ে বাতি খানকি হলো লক্ষ্মী সতী। ’ আসলে আমার বাগবাজারের বাড়ি আর ব্যাঙ্কের ৬০ লাখ টাকা হাতানোর ধান্দা।বাজারের মেয়েছেলের বাজারী বুদ্ধি ।  অনুকূল চাটুজ্যের খারাপ পাড়ায় যাতায়াত আছে এতে লুকোছাপার তো কিছু নেই। পুরুষমানুষের গায়ে  খারাপ গন্ধ লেগে থাকে নাকি? 

ভালো করে ডেটল দিয়ে সাবান দিয়ে স্নান করে নিয়ে  সুন্দর করে গাঁয়ের এক হতদরিদ্রের কচি মেয়ে বিয়ে করলাম। কাল ফুলশয্যা ছিল। নরমগরম বৌটা দেখলাম সবই জানে। হাত জড়িয়ে ধরে বলল,“ কথা দিন আর ওমুখো হবেন না।”আমি ন্যাকাপনা একদম বরদাস্ত করতে পারি না। তবু বললাম,” কতা দিতে পারচি না। তবে দেকচি।”  

      রাত দশটা বাজে। মালতীর ফোন এল,”আর ককনো জ্বালাতন ক’রবো না কো। ডাকবোও না। আধঘন্টার জন্য একবারটি এসো। সুধু( শুধু) একবার। ” এ ডাক কেন ষে উপেক্ষা করতে পারলাম না। ৩৪৮নং বাড়িটা একটা কানাগলির শেষমুখে। ওই একটাই গলি। অন্য কোন পথ নেই ঢোকার। দেখি গলির মুখেই মালতী দাঁড়ানো। খুব সেজেছে। একদম বৌ বৌ। যেন আজ ফুলশয্যা। খোপায় গোরের মালা। গলায় গোলাপ লাগানো রজনীগন্ধার মালা।  আমাকে দেখে হেসে এগিয়ে এলো,“দেকো তো কেমন লাগচে আমায়।  আর তো তুমি আসবে না। যাও চিলেকোঠার দরজা ভেজানো আচে। বাইরে চেয়ারে বস। আর  এই চিটিটা পড়ে এই প্যাকেটটা খোলো। তারমধ্যে আমি---—। ” আমি কথা শেষ করতে দিলাম না। বললাম,“কাজ আচে। দেরী করিও না।“            

  চিলেকোঠার ঘরের সামনে চেয়ারে বসে চিঠিটা পড়লাম,“একসময় সোহাগ করে সোনার একজোড়া বালা দিয়চিলে। আমার আর এর দরকার নেই। তোমার বৌকে দিও। বালার গায়ে   তো আর বেশ্যা লেকা থাকে নাকো। বৌ তোমার বুজতেও(বুঝতে ) পারবে না কো। আমার মুখে দুটো প্যাকাটি জ্বেলে দিও। শেষ সাধটা রেকো” 

ওঃ এই ফাজলামি কাঁহাতক বরদাস্ত করা যায়। আসুক। নষ্টামি বার করছি।প্যাকেট থেকে বালা দুটো খুলে পকেটে ভরলাম। ভেজানো দরজা  কখন যেন দমকা হাওয়ায় হাট হয়ে খুলে গেছে। চোখ আটকে গেল সামনের বিকট দৃশ্যে। সিলিং পাখা থেকে গলায় দড়ি দিয়ে মালতী ঝুলছে। খোপায় গোরের মালা। গলায় রজনীগন্ধার।গলির মুখে তবে কাকে দেখলাম?একমুখী একটাই তো সরু গলি! আমি জ্ঞান হারালাম।

_____________
©পৃথ্বী ব্যানার্জী

ছায়ার সাথে

ছায়ার সাথে
-----------------

চাঁদের কলঙ্কের সাথে তার তুলনা কখনোই চলে না।কারন - সমানুপাতিক অবস্থানে দুজনেই ঈর্ষামুখী।সমান্তরাল যৌগিক রেখায় আমারও ছিন্নভিন্ন হওয়ার এটাই সময়।।


ছায়ার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি
তাই অল্প ভীড়েও ব্যর্থ সফলতা।
অজানা আলেয়ায় মুখ চুরি -
বিগত আলিঙ্গনে অযুত বালিয়াড়ি।।


গ্রহান্তরের প্রশ্নে এখনও কেন মুখ লুকাও আঁচলে।নীরব অহল্যা নারী হতে চায় বিচ্ছিন্ন উত্তরে।
প্রাচীন অনৈতিকতা - অপ্রাপ্ত শব্দসম্ভার প্রতিনিয়ত বোবা কৌশলে।।


পতঙ্গ প্রমাণে এখনও কিছু বাগবিতণ্ডা তোমার সঙ্গে।
রাত বাড়ছে দেখো - বুঝতে চাও না অস্তিত্বের সংঘাত।।
আমি আমি তুমি তুমি চিরায়ত তাগিদে জন্মান্তরবাদের পক্ষে।
তবে কি নষ্টামোর দোরগোড়ায় কেবল ম্যাজেন্টা রঙের ছাদ?


সকালের গোলাপি আলোয় কাঁচের প্রতিফলনে - একটা নীল সূক্ষ নেশা।তাই পিচরাস্তার পারদত্বকে বিস্তর গোলমাল। একটা গোলকীয় বিনির্মাণ - একটা পরাজিত উপমার প্রক্রিয়াগত দিক পরিবর্তন।।


শুভ দ্বিপ্রহরের কাঠ ফাটা রোদে প্রমাদ গোনার ব্যস্ততা থাকলে - নিরম্বু সন্ত্রাস।যে কিশোরী নারীদেশ অপেক্ষায় - যে কিশোর দুদিন পরে পুরুষত্বের অহংকারে,চক্রব্যূহ আপোষহীন গল্পবোধে সকলেই বাস্তু শ্রমিক।

শরীর থেকে প্রেম ব্যয় হয়
জল থেকে জলজাত গাছ।
সামরিক পোষাকে বেলেমাটিতেও পুরনো ওয়ারেন্ট - সত্যান্বেষী।।


ছোটছোট হেমন্তের পা ফেলে এক শৈলশহরের নামকরণ অনুষ্ঠান।
সঙ্গত কারনেই সেখানে একফোটা সেঁকোবিষের প্রয়োজনীয়তা নেই।যদিও বিগ্রহ স্থাপত্যকলায় নীল মানুষ রাতবাউলের গান শোনায় - একলা কথোপকথনে সকালে নাভিতে জলছত্র পূর্ণ।।


মাটিতে ঝুলে থাকা ওভারহেড তারে যতটুকু বিদ্যুৎ ক্ষয় - শরীর ছুঁলে তার পরিমাণ অনেক বেশী।তাই বিবর্ণ গামছায় শুল্ক মাসুল।
খালপাড়ের নষ্টা মেয়েটি যখন বেলফুল খেয়ে আধপেটা - তার স্তনেও লেগে থাকে মাতৃত্বের স্বাদ।বোঝে না অনেকেই।যারা বোঝে - খুঁজে বার করে অভিধানে রতিসুখ বলে কিছু নেই।হলুদ প্রোটিনে ভেজা স্ফটিক কবিতায় - প্রেমের আত্মাহুতি।।


রোদ পড়ে গেলে - অশীতিপর বৃদ্ধার হেঁটে যাওয়া কোনো বিকল্প বাসস্থানে।অতএব গভীর মনযোগে আত্মবিলোপের সন্ধান।
যে যুবতী সদ্য চুল ভিজিয়েছে ভরা পূর্ণিমায় ঢলঢল সাজে - তার জন্যও কিছু মনস্তাপ নির্বাসিত তাপে ও শীতে।
অবশিষ্ট কিছু শৈল্পিক স্তর - যারা কবিতাকে করেছিল অপরাধী - পরাজিত নাটমন্দিরে বেকসুর খালাস।প্রাপ্য উচ্চতায় কবিতার শববাহি সোঁদা গন্ধ।
কিছু বিবর্ণ পাতা চুনজলে মিলেমিশে সময় হয়ে যায় - ব্যারিকেড ইঙ্গিত।।

১০
গোপন ত্রিভুজে লেখা নাভিকূপ সন্ধ্যা যদি স্পর্শ বাড়ায় - মাটির সাড়ে তিন হাত গভীরে অনবরত ঝর্ণায় স্নান।অভিমুখী কার্যকারিতায় সব বিরোধীতাই তুমুল সফল।অতএব ঝড় থেকে পিছলে গিয়ে রাস্তায় আশ্রয়।চাঁদকলায় অস্তিত্ব নিদারুণ সংশয়ের হলে - আত্মঅভিমানে অস্ত্রত্যাগ নিতান্তই ব্যক্তিগত।

যে নারী আমায় দিয়েছে জোয়ারভাটা - দেবে বলে লিখেছিল আংশিক খন্ড প্রতিঘাত,কোন সে অকাল সামাজিকতায় শুদ্ধ নিরপেক্ষ।

বেশ কিছু রাতজোরী দেওয়াল গুঁড়িয়ে দেওয়ার এই তো উপযুক্ত পল - বিগত ঘুঙুর শব্দে জাতিস্মর  জলসাঘর।।

১১
কিছু মখমলি সামিয়ানায় উপত্যকার অভিযান - বকলমায় দিয়েছি তাকে বিস্বাদ সাক্ষরতা।
তাই কোনো বিশেষ শিলাখন্ডের অনুমতি সাপেক্ষে লিখে রাখা সাক্ষ্য ও প্রমাণাদি।বর্গীয় শামুকখোলে কতই না জানি অনভ্যাস রয়ে যায়।কেরোসিন তেলে সয়ে যায় পাপবোধ ও সোনার শিকল।
কেউ বিশ্বাস করবে না ভেবেও জানি - উলঙ্গ ছায়ারোগ তীব্র প্রসব যন্ত্রণায় মুক্তি দেয় ভিখারিনী শরীর।সংবাদ বাসি হলে ফুলশয্যার ফ্যাসফ্যাসে হাসি।চূড়ান্ত কলমে আজ মানুষই ফ্যাসিস্ত।।

১২
আর কোনো অপরাধ নয় ছায়াঋতু আবহে।
এবারে কঠিন-তরল-বাস্প অভ্যুত্থানে বিজাতীয় অনুপ্রবেশ।
জীবানু শুভেচ্ছা বড় ইচ্ছে আশায় বাঁচে।অতএব নিষিক্ত শ্বেতচন্দন।
বিবরণ নীল রাতে সুনীল প্রতিচ্ছবি। কখনো সাদা - কখনো সাদা।করবী আঘাত - তাই ঘরেও আধাআধি পূর্ণতা। সমকামী প্রাচুর্যে বেলুনিয়ানার আসক্তি।।

১৩
আবার একটা অতর্কিত হামলা চালাল উর্বশী-রম্ভা-মেনকার দল।শরীরের স্বার্থে বেকুব হয়ে দেখলাম কতো দ্রুত শেষ পাতে নিয়মরক্ষা করছে দই ও ছানার রসোগোল্লা।নেপথ্যে সেই কুকুরছানা শক্তি।শর্করা মানসিকে কতশত চাদর চড়ায় কামুক ইতরের দল।

প্রভূত বলপ্রয়োগ - জন্মজড়ুলের লাল-নীল-হলদে-গেরুয়া জলছোপে আবরিত বিশেষ স্থান-কাল-পাত্র কতোটা শরিকি?মায়ামৃগ গল্পটা একঘেয়ে মন্দিরে বারবার ঘটে।ইতিমধ্যে সীতা গা থেকে মিথ্যে খুলে বহুজনে বারাঙ্গনা।।

১৪
অনেকটা পরিমানে সকাল হলেই মেঘলা থাকতে চাওয়া অস্বাভাবিক।তাই মাটির সোঁদা নিম্নাংশে বর্ষা ক্রিয়াপদ।যে ঘুমের বিসর্জনে বিগত রাতগুলো জেগেছিল - দুপুরের ফুল ফুটলে স্তাবক কিছু প্রতীকী বিশ্বাস।আর কতো মাঠ-ঘাট-জলাজমি চাষ করে পুরনো স্মৃতিপথের জিগির তোলা।না কি অযাচিত যৌগ লহরায় নুপুরের ঝিনঝিনি সম্পৃক্ত।কেউ যে রাখে নি স্থির চশমার উত্তাপ।কাঠের আয়নায় প্রতিফলিত ছায়ামুখ উকিলি জেরায় বিব্রত করে।বিলম্বিত উপেক্ষা - কিছু ভবিতব্য পশ্চিম কোনে সরলরেখা আকে।।

১৫
বিগত কয়েকটুকরো সূর্য মাটিতে গচ্ছিত রইলো অনুমতিপত্র ছাড়াই।স্ত্রী দেহ চিতাকাঠে আসীন।কোন ভরসায় কোন কুকুরের জন্ম মৃগনাভিতে - নিঃশ্বাস শুষে নেয় পোড়া গন্ধকের বাতাস - সন্ন্যাসী শুদ্ধ হয় নিয়মিত গৃহীতাপে।বিলীয়মান রঙ - আগুনের ছটায় পূর্ণগ্রাস গ্রহণ।

তামার চোখে যেন প্রথাগত দৃশ্য সাফল্য।পোড়াকাঠে লেগে থাকা ম্যাটমেটে স্বপ্নের ছোপ - পৃথিবীর নিষিদ্ধ রুপ লজ্জায় গোলাপি।।


______________________
©রাহুল গাঙ্গুলী

রক্তের ভাগ দে

রক্তের ভাগ দে বণি আদম
==================


অতঃপর;
বৃত্তের বাইরে কান পাতলেই নাকে আসে নরকের ঘ্রাণ
বাতাসে গিজগিজ করছে জোঁকের দোসর
রক্ত চোষক পরজীবী জীবগুলো অচিরেই করতে চায় পেশার পরিবর্তন।

প্রত্যেক-
শোষকেরা মৃত্যুর আগেই লিখে যায় দোজখের চিঠি
সব দূর্নীতিবাজ লুটেরারা নিজস্ব জাহান্নাম কিনে রাখে ইহকালে,
চেহলামের ভার নেয় যোগ্য উত্তরসূরী।

প্রত্যেক মানচিত্রেই আছে হাবিয়া দোজখের পাহারাদার...

তারপর;
জোঁক গুরু লোভের পালকিতে বসে করে তাত্ত্বিক ধ্যান

চাটুকার বোবা হলে তেড়ে আসে রাগ...

এবার;
তীর্থযাত্রার আগেই ঈশ্বর চেয়েছে সাতশো কোটি বণি আদমের হালাল রক্তের ভাগ।

_________________
©মোশরাফি মুকুল

মোতিহারি- ১

বিরহ আর কষ্ট এক কথা নয় ৷
বিরহ হয় তখন যখন আপনার প্রিয় মানুষটি আপনার থেকে দুরে থাকেন ৷ কিন্তুু আপনি জানেন যে, তিনি আবার ফিরে আসবেন ৷
আর কষ্ট হয় তখন যখন আপনার প্রিয় মানুষটি আপনাকে ছেরে চলে যায় ৷ এবং আপনি অনুভব করেন যে, সে আর ফিরে আসবে না ৷
☞ বিরহে কষ্ট থাকে ৷ কষ্টে বিরহ থাকে না ৷

পুনর্জন্ম

শেষ ট্রেনটা পেরিয়ে গেল I পরানবাবু একইভাবে স্টেশনের সিমেন্টের চেয়ারটায় বসে থাকলেন I I স্কূল ছুটি হয়েছে অনেক আগেই I আজ যেন বাড়ি ফেরার কোনো তাড়াই নেয় I I কি জন্যেই বা ফিরবে ? কেউ কি তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে ? একে একে সমস্ত কলিগরা বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন I দু চারটে কুকুর ছাড়া স্টেশন চত্বরে আর কেও নেয় I কেউ কেউ অতিউৎসাহী হয়ে ওভাবে বসে থাকার কারণ জিগেস ও করলেন I তিনি কিছু বলতে পারলেন না I

শুধু বললেন অন্য দিকে একটু যাবার আছে I বলবেনই বা কিভাবে যে গিন্নির সাথে তাঁর ভয়ংকর ঝগড়া হয়েছে I তাঁর স্ত্রী তাঁকে গ্রাহ্য করেন না I কথায় কথায় অভিযোগ I যেন সদ্য খোলা এক কমপ্লেন বক্স I অযথা বাপ ঠাকুরদাদের নিয়ে টানাটানি I কিছু বললেই শিক্ষকতা নিয়ে উপহাস করা I গিন্নির ইচ্ছে শুধু বিগ বাজারে শপিং করতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, হোটেলে গিয়ে ডিনার এই সব , সাজ গোজের কথাটা না হয় বাদই দিলাম I গত পরশুদিন আবার বায়না ধরেছেন , হীরের নেকলেস কিনবে পূজোতে I

পরানবাবু বড় হয়ে উঠেছেন গ্রামে I চাকরির সুবাদে এই শহরে আসা I তাঁর চিন্তা ভাবনা সোনাদানাতেই আবদ্ধ I হীরের জিনিস কল্পনার অতীত I কল্পনা করলেও, পাবেন কোথায় এতটাকা I নতুন ফ্লাটের কিস্তি মিটিয়ে আর কত টুকুই বা বাঁচে I কিভাবে সংসার চালাবেন , ছেলেটার ভবিষ্যতের পড়াশুনা জন্য দু চার পয়সা রাখবেন , এই চিন্তাগুলোই সারাদিন ঘুরপাক খেতে থাকে মাথায় I কত বারই না রমাকে বুঝিয়ে বলেছেন


"দেখো রমা, তোমার কথায় এই হাই প্রোফাইল জায়গায় ফ্ল্যাট কিনেছি I মিশছো মিশো, মিসেস আগ্রয়াল, মিসেস শর্মাদের সঙ্গে , কিন্তু ওদের অনুসরণ করতে যেও না, ওরা সব বড় বড় বিজনেস ম্যান, আর আমি ছাপোষা স্কূল মাস্টার I" কিন্তু চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী I জিনিস পত্রের দাম হু হু করে বাড়ে আর সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে গিন্নির আবদার I আর ভালো লাগে না I নিজেকে কলুর বলদের মত মনে হয়, ঘানি টানছেন তো টানছেনই I নিজের অস্থিচর্ম সার অবস্থা I আর সেই তেল মেখে অন্যরা চামড়ার উজ্জ্বলতা বাড়াতে ব্যস্ত I 


গত পরশুদিন রমার হীরের নেকলেসের আবদারটা শুনে মাথা আর ঠিক রাখতে পারেননি পরানবাবু I সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে রাগে গর্জে উঠেছিলন I ভেবেছিলেন হয়তো, গর্জনে কাজ হবে I কিন্তু হায়, তা হল যজ্ঞ এর আগুনে ঘি ঢালা I শোনা মাত্রই রমার সে কি রুদ্রমূর্তি, এই মারে তো এই রাখে....


"মুরোদ নেই তো বিয়ে কি জন্য করেছিলে ? তোমার ভাতের হাঁড়ি ধরার জন্য I সকাল সকাল গরম গরম ভাত খেয়ে ইশকুলে যাবে বলে I চললুম আমি বাপের বাড়ি I যেদিন মুরাদে কুলোবে, সেদিন আনতে যাবে I আর যদি এমনি এমনি পা বাড়িয়েছো, তবে তোমার পা কেটে হাতে ধরিয়ে দেবো I"


পরানবাবু চুপসে যান I তা যদি রমা তাঁর পা কেটেও দেয় , তিনি কিছুই করতে পারবেন না I তার বাবা, দাদা দুজনেই বড় উকিল I হয়তো তাঁকে এক পা নিয়েই জেল খাটতে হবে নারী নির্যাতনের কেস খেয়ে I পরানবাবুর শেষ আশা ছিল লাটুন, তার ক্লাস এইটে পড়া একমাত্র ছেলে I কিন্ত না, ছেলেটি ও হয়েছে মায়ের মত I খাচ্ছে দাচ্ছে আর মায়ের পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে সারাদিন I বাপের প্রতি একটুও টান নেয় I বলতে না বলতেই সোজা মায়ের পিছনে হাজির I 


পরানবাবু যত বেশি ভাবতে লাগলেন, অপমান, লাঞ্ছনা,বঞ্চনাগুলি নতুন শক্তি নিয়ে তাঁকে যেন আরো বেশি গ্রাস করতে লাগল I বিবাহিত জীবনে একটা দিনও শান্তি নেই I চাকরি পাওয়ার একবছরে মধ্যে বিয়ে I তারপর থেকে যন্ত্রণা শুরু, যেন সত্যি নরক নেমে এসেছে তাঁর জীবনে I বিয়ে করার পরই শহরে ছুটে আসা মরীচিকা নামক সুখের সন্ধানে I বাবা মা শখ করে নাম রেখেছিলেন পরান I তিনি ভেবেই পান না, সেই প্রাণের ধন পরান কে ছাড়া তাঁদের দিন কাটে কিভাবে ?
তাঁর পাঠানো মাসিক তিন হাজার টাকায় বাবা মা বেঁচে আছেন কিভাবে ? 


না, এরকম দুর্ভাগ্য নিয়ে যার জন্ম, তাঁর বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না I সেই জীবনের দামই বা কি যা কারো কোনো কাজে লাগে না, যে জীবনের কারো কাছে মূল্য নেয় I মনে স্থির সিধান্ত নিয়ে পরানবাবু এগিয়ে চললেন রেল লাইনের দিকে I 
রাত্রি ঘনিয়ে এসেছে I স্টেশনের আলো গুলো সব জ্বলে উঠেছে I পরানবাবু রেল লাইন ধরে হেঁটে এগিয়ে যেতে থাকলেন সামনের দিকে I কিছুটা এগিয়ে গিয়ে একটু ক্লান্তি অনুভব করলেন I শুয়ে পড়লেন রেল লাইনের উপর I আজ বিকেলে বৃষ্টি হয়েছে I ভিজে ভাবটা এখনো আছে I মনে অনেক কিছু চিন্তাই আসতে লাগল I কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে যেন স্পর্শ করছে না I মৃত্যু চিন্তা বোধহয় এরকমই হয় I ইতিমধ্যে স্টেশনে ঘোষণা হল, পুরুলিয়া এক্সপ্রেস কিছুক্ষণের মধ্যই স্টেশনে আসছে I


তিনি শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শেষ I তাঁর শরীরটা ছটফট করতে করতে একসময় নিস্তেজ হয়ে যাবে I পরানবাবু শুয়ে আছেন মৃত্যুর অপেক্ষায় I হঠাত্ কে যেন পিছন থেকে সজোরে লাথি মারল I ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়িয়ে দেখলেন স্টেশনের পাগলটা I চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে -শালা,কাপুরুষ কোথাকার, মরতে এসেছিস এখানে I প্রেম ধোঁকা খেয়েছিস, বৌ পালিয়েছে I মরবি তো অন্য কোথাও গিয়ে মর I এখানে কেন ? এই লাইন আমার সব খেয়েছে I আমি এখানে কাউকে মরতে দেবো না I যাবি এখান থেকে, নইলে এই পাথর দিয়ে তোর মাথা ফাটিয়ে দেবো I "


অগত্যা ভয়ে ওখান থেকে পরান বাবু পালিয়ে এলেন I ট্রেনে চাপা পড়ার থেকে পাথরের ঘা খাওয়া হয়তো বেশি কষ্টের I মরার চিন্তা কোথায় যেন উবে গেল I সারারাত মশার কামড় খেয়ে ভোরের ট্রেনে বাড়ি ফিরলেন I দরজায় গিয়ে দেখলেন ভিতরে আলো জ্বলছে I তিনি তো আলো নিভিয়ে স্কূলে গেছলেন I কে জ্বালালো আলো ? কপাট ও ভিতর দিক থেকে লাগানো I সাহস করে বেল বাজালেন I কপাট খুলতেই দেখলেন, সজল নয়নে রুমা দাঁড়িয়ে, "কোথায় ছিলে তুমি সারারাত ? কাল সন্ধ্যায় বাপের বাড়ি থেকে ফেরার পর কতবার ফোন করলাম তোমাকে । ফোন সুইচ অফ কেন ? জানো, সারারাত এক বিন্দু ঘুমোতে পারিনি তোমার চিন্তায় । একটা খবরও কি দিতে নেয় ?"



পরানবাবু কাঁচুমাচু করে উত্তর দিলেন "স্কূলের কাজে আটকে পড়েছিলাম, তাই শেষ ট্রেনটা মিস করলাম । হঠাত্ লক্ষ্য করলেন রুমার গলায় হীরের নেকলেসটা জ্বলজ্বল করছে । আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়লেন ।

_________________
@দূর্জয় সাউ 

আমাদের নকশিকাঁথা

ইচ্ছে হয় 
সোজা কথা সোজা ভাবে বলি
 
হাতে হাত মেশাই বুকে ধরি
 
মাতান পাগলভাব ছোট ছোট অনুরাগ
 
আমাদের ইচ্ছেমত
 
এমন সাধের চেয়ে আর কি বড় হতে পারে
 
চুম্বনে ললাট ভরাই - জলকেলি
 
ফোটে কদম্ব, নাচে বাতাস - কৃষ্ণকলি
শুধু এইটুকু শান্তি দেবে কি তোকে? 
এইটুকু দিতে গেলে বাড়বে না চূড়ামণি
 
সব প্যাঁচে প্যাঁচে বশ্যতা তুই আমি করবো কি সোজা কথা
যুদ্ধ যুদ্ধ খেল ধর্ম ধর্ম খেল তবে না পাটোয়ারি 
ভাগে ভাগে পাটে পাটে যত্নে রাখে
 
যতো বাড়ে
 
ততো বাড়ে নিশাচরী
প্রয়োজনে ডালপালা ছাঁটে 
শিকড় উপড়ানো হবে না কখনো
 
শিকড় শিকড় চেনে কে কার জন্মদাতা
 
শর্বরী একই দাসখতে
তোকে ভালবাসি তোকে ভালবাসি সোজা কথা 
লাঠি ফেলে দিলে
 
উন্মাদ কুকুরটা অনায়াসে ছিঁড়ে খাবে
 
আমাদের নকশিকাঁথা


________________ 
@রতন সেনগুপ্ত 

সবটুকু অবশেষ এখানেই


সনেটগুচ্ছ
সবটুকু অবশেষ এখানেই
************************
চলার শুরু এখান থেকেই
পায়ে পায়ে পথ এখানেই শেষ 
এখানেই ভালবাসা মেখে পৃথিবী 
নিয়ে নেয় বিশাল শপথ অশেষ ৷
এখানেই একেলা সুবর্ণ হরিন 
বার বার ফেরে জোছনার ডাকে 
এখানেই ফেলে রাখা আকাশ জল 
অনন্ত স্মৃতি তর্পন হয়ে থাকে ৷
এখানেই নিঃস্ব হারিয়ে গেলে 
দিনান্তে ফিরে এসে একান্তে বসি
এখানেই কবর- মাটিচিতা-ভস্ম ছুঁয়ে
হতে হয় আবার পুর্ন সাহসী ৷
এখানেই সবকিছু শেষ, বলা-কওয়া পুর্নজন্ম কিছু নেই
কত কিছু মরে গেলে এখানে, সবটুকু অবশেষ এখানেই ৷


@অনুপ দত্ত