Friday, 10 February 2017

।। HAPPY TEDDY DAY ।।



"সোনা, এই টেডিটা কি সুন্দর দেখতে। তাই তো নিলাম।
"তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না। কত বার বললাম ঐ বড় টেডিটা নাও। কিন্তু সেই তুমি ঐ বাচ্চা টেডিটাই নিলে? তুমি খুব কিপটে"
"আচ্ছা সোনা পরের বার ঐটাই কিনবো। রাগ করে না লক্ষীটি"
"ছাড়ো, পরের বার তুমি কি দেবে আমি ভালোই বুঝতে পারছি। কেন যে তোমার মত কিপটের প্রেমে পড়লাম"
" I am sorry জানু। Next বার sure"

হরেন একমনে রিক্সা চালাচ্ছে। কিন্তু না চাইতেও কপোত কপোতী প্যাসেঞ্জারের কথা কানে গেল। আজ নাকি টেডি না ফেডি কি একটা ডে । জীবনে প্রথম জানলো হরেন। এই সপ্তাহের সব বিভিন্ন দিনের নাম আস্তে আস্তে জানছে হরেন। জানার কথাও নয় তার। বাংলাদেশ বর্ডারের কাছে অজ পাড়াগাঁয়ে তার বাড়ি। নেহাত চাষের জমিটা মহাজন বেহাত করে নিল, তাই বউ নিয়ে শহরে এসেছে একমাস হল। তার ন্যাংটো বেলার বন্ধু পাঁচু অনেকদিন আগেই শহরে এসে রিক্সা চালায়। ওর দৌলতেই ভাড়ার রিক্সা চালাতে পারছে। খাল পাড়ে বস্তির ঘরটাও ওরই দয়া।

হঠাৎ করে সব চুপ। কপোত কপোতীর ঝগড়া আর কানে আসছে না। ওদের গন্তব্য রেলস্টেশন এসে গেছে। ভাড়া চুকিয়ে নেমে পড়ে তারা।

মেয়েটি হঠাৎ বলে ওঠে-
"শোনো একটা কথা বলি, পকেটের জোর না থাকলে প্রেম কোরো না। ঐসব middle class mentality আমার অসহ্য। আর এই টেডিটা তোমার মত মধ্যবিত্ত কাউকে জুটিয়ে তাকে দিও। আমার একটা prestige আছে। আমার friendদের এইটা দেখালে পুরো down হয়ে যাব।"

মেয়েটি টেডিটা রিক্সা তে রেখেই হনহনিয়ে প্ল্যাটফর্মের দিকে চলে যায়। ছেলেটিও বোঝানোর জন্য সেদিকে যায়। কিন্তু টেডি রয়ে যায় রিক্সাতেই। হরেন অনেক বার তাদের পেছু ডাকে , কিন্তু কেউ শোনে না। রাত্রি হয়ে গেছে, তাও হরেন দাঁড়িয়ে থাকে আধঘন্টা । দুটো প্যাসেঞ্জার ও ছেড়ে দেয়।

কিন্তু না কেউ ফিরে আসে না। হরেন এবার বাড়ীর পথ ধরে। বাড়ি ফিরে দরজায় আওয়াজ দেয় সে, পুতুলটাকে পেছনে লুকিয়ে। কিন্তু দরজা খুলতেই মালতির তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আবিষ্কার করে যে হরেনের  হাতে একটা পুতুল। সে বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করে-
" ওমা! পুতুল কিনেছো কেন? ভীমরতি হল নাকি? বাড়িতে কে আছে যে পুতুল খেলবে? কিন্তু বড় সুন্দর দেখতে তো। আর কি নরম। বল না শুধু শুধু পয়সা নষ্ট করলে কেন?"
" জানিস মালতী আজ না কি একটা দিন রে। নাম ভুলে গেলাম। আজ মনের মানুষ কে এই পুতুল দিতে হয়। তাই তোর জন্য এনেছি রে।"

মালতী হরেনের বুকের মধ্যে এসে মুখ লুকায়। এক আঙ্গুলে বরের ঘামে ভেজা গেঞ্জিটা জড়াতে থাকে। বলে ওঠে-
"মরণ! সোহাগ উথলে পড়ছে। ঐ টাকাটা হাতে থাকলে কত কাজ হত।"
কিন্তু মালতীর চোখে উপচে পড়া খুশী হরেনের চোখ এড়ায় না। মালতীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সে।

রাতে একপেট পান্তা খেয়ে বিড়ি ধরায় হরেন। পুতুল টাকে একটা চুমু খায় সে। আর ভাবে একটা ভাল্লুকের মত দেখতে পুতুল কত কি না করতে পারে।

#happy_teddy_day
_______________________________

©সুব্রত

No comments:

Post a Comment