Sunday, 5 February 2017

।। ডায়েরী ।।



সন্ধ্যে হয়ে গেছে অনেকক্ষণ I বাইরে ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে .... কখনো বাড়ছে, কখনো বা কমছে I হয়তো এতক্ষনে দাদাদের প্লেন ছেড়ে দিয়েছে, যদি না এই আবহাওয়ার জন্যে delay হয়ে থেকে থাকে I দাদা-বৌদি এসেছিলো সুদূর আমেরিকা থেকে বাবার শ্রাদ্ধ উপলক্ষে... ছেলেকে ওদেশে কোনো এক বন্ধুর বাড়িতে কদিনের জন্যে রেখে I আজ বিকেলে চলে গেলো I বাড়িটা এখন থমথমে, নিশ্চুপ... মা বাবার ঘরে ছবির সামনে ধুপ জ্বালিয়ে বসে আছে আপনমনে I মাকে বিশ্রাম নিতে বলেছিলো বাবলি নিজের ঘরে গিয়ে.... কদিন ধরে মায়ের ওপর প্রচন্ড ধকল গেছে.... বাবা যখন ICU  তে  ছিল.... তখন থেকেই....

বাবলি নিজের ঘরে বিছানার উপর একটা বালিশ নিয়ে আধাশোয়া অবস্থায় বাবার দীর্ঘদিনের পুরোনো একটা ডাইরি উল্টেপাল্টে দেখছিলো টেবিল ল্যাম্পের আলোতে .... কিছুই ভালো লাগছে না আজকে...বাবা হঠাৎ ই চলে গেলো.... কয়েকদিনের কষ্ট পেয়ে....মেডিকেল কলেজের বাবলির স্যারেরা চেষ্টা করেছিলেন প্রচুর....কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না I সবকিছু যে ডাক্তারের হাতে থাকে না, তা সাধারণ মানুষ না বুঝলেও বাবলি বোঝে.... তাকেও এখন অনেক জবাবদিহি করতে হয় রোগীর আত্বিয়স্বজনকে...

কালকেই আবার duty তে join করতে হবে I কদিনের মাত্র ছুটি নিয়েছিল বাবার শ্রাদ্ধের জন্যে... এরই মধ্যে দিনে অনেকবার করে ফোন এসেছে.... emergency  call I দাদা আলতো করে বাবলির গাল টিপে মাকে বলেছিলো "মা…. দেখেছো …. বাবলিকে দেখে  সত্যিই গর্ব হয় এখন....কত বড় ডাক্তার... আমি এখন খুব নিশ্চিন্তে ওদেশে থাকতে পারবো... বাবলি থাকতে তোমার কোনো চিন্তা নেই আর....I" কথাটা শুনে বাবলির মনের মধ্যে আনন্দের সাথে সাথে চোখের কোনা দুটো  ভারী হয়ে উঠেছিল I মা উত্তরে বলেছিলো "বাবলি বরাবরই দায়িত্বশীল মেয়ে... আমার মেয়ে, আমি চিনবো না....I"

বাবার ডাইরিটা উল্টেপাল্টে দেখছিলো বাবলি... এতদিন permission ছিল না দেখার... এতদিন বললে ভুল হবে .... ছোটবেলা থেকেই তারা দুটি ভাইবোনে দেখে এসেছে….বাবার diary লেখার শখ I মাঝেমধ্যেই তাদের বাবা ওই খাতাতে diary লিখতো, কিন্তু কখনো কাউকে দেখাতো না...এমনকি মাকেও না I  মা অবশ্য আগেকার দিনের মহিলা...ক্লাশ সিক্স অবধি স্কুলে গিয়ে...তারপর বিয়ে এবং সাথেসাথে যৌথ পরিবারের হাল ধরা...সারাদিন রান্নাঘর, ঠাকুরঘর...কাঠকয়লার আগুন... ইত্যাদি ...ইত্যাদি...ইত্যাদি I তাই মাও কোনোদিন উৎসাহ দেখায় নি...জানতে চায়নি কি লেখে বাবা ওতে I তবে তিনি তাঁর দুই ছেলেমেয়েকেই শিখিয়েছেন... কারুর চিঠি বা ডাইরি তাঁর অনুমতি ছাড়া পড়তে নেই....তাই বাবলিও জানে না কি আছে তাতে I আজ হঠাৎ করে যখন চোখে পড়লো ডাইরিটা.... তখন নিজেকে আর সংবরণ করতে পারলো না... মানুষটাই যখন আর নেই এই পৃথিবীতে....
 
হঠাৎই বাইরের ঝোড়ো হাওয়ায় diary র বেশ কয়েকটা পাতা উল্টে গেলো... বাবার মুক্তোর মতো হাতের লেখায় লেখা আছে... সোনুটা (বাবলির দাদা) IIT পেয়ে আমাকে নিশ্চিন্ত  করলো... I

বাবলির মনটা হঠাৎই পিছিয়ে গেলো ফেলেআসা বেশকিছু বছর পিছনে, যেদিন দাদা IIT পাওয়ার খবরটা নিয়ে দৌড়োতে দৌড়োতে বাড়ি ফিরেছিল I সেদিন সকাল থেকে সবাই বেশ tension এ ছিল সোনুর রেজাল্ট নিয়ে I  বাবলির দাদা বরাবরই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট.... কিন্তু তবু ও I সেদিন বাবা অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরেই মাকে জিজ্ঞাসা করলো সোনু কোথায় I মা বললো ছেলে কলেজ এ গেছে রেজাল্ট আনতে I মনে আছে... বাবা সেদিন tension  এ বাইরের বারান্দায় পায়চারি করতে করতে ঘন ঘন সিগেরেট খাচ্ছিলো I সু-খবরটা পেতেই বাবা ছুটলো মিষ্টি আনতে I সাথে সাথে পাড়ার কাকুরাও এসে জোড়ো হলো বৈঠকখানায় I পাড়ার ভালোকাকু মাকে বললেন "বৌদি, শুধু মিষ্টিতে কাজ হবে না ... পাত পেরে খাওয়া চাই I"
ভালোকাকু confident ছিলেন বাবলির দাদার উপর...এমনকি বাবাও I সেদিন চা-মিষ্টি দেওয়ার ফাঁকে মা একবার কথায় কথায় বলতে গেছিলো.... তার মেয়েটাও খুব শার্প আর মেহনতি... কিন্তু বাবা মাকে ধমকে বলেছিলো, "বুঝলে গিন্নি...আজকের দিনে ব্রিলিয়ান্টরাই শুধু করে খাবে... মেহনতির যুগ শেষ...I" বাবলি তখন ক্লাস নাইন এ পড়ে... সবে মাত্র শাড়ি পড়া শুরু হয়েছে I সে বুঝতোনা ব্রিলিয়ান্ট কি বস্তু...তবে এটা বুঝতো সে দাদার মতো নয় I বাড়ির টুকিটাকি কাজের ফাঁকে ফাঁকে স্কুল আর পড়াশুনা... আর তার সাথে মোটামুটি রেজাল্ট I দাদার জগৎ ছিল কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা… কলেজ  আর পড়াশুনা বাদ দিলে বন্ধুবান্ধব, খেলা আর মাঝে মধ্যে বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখা…ইত্যাদি...ইত্যাদি I বাড়ির কোনো কাজই দাদাকে বড় একটা করতে হয়নি কোনোদিনই I এমনকি খাবার জলটাও বাবলিকে এনে দিতে হতো... নয়তো মাথায় গাঁট্টা I বাড়িতে মা ই তাকে আগলে আগলে রাখতো সবসময়... বাবার ধারেকাছে খুব একটা ঘেঁষতো না সে... মনের মধ্যে একটা complex কাজ করতো সর্বদাই….বুঝতো দাদার মতো সে নয়... তাই...I বাবা সর্বদা দাদাকে নিয়েই আলোচনা করতো কাকুদের সাথে.... বাবলির প্রসঙ্গ কদাচিৎ এলেও তা ছিল বিষণ্ণময় ...বাবলিকে নিয়ে বাবা কি করবে, দেখতে শুনতে মন্দ নয়....তবুও clerk এর সামান্য চাকরিতে বাবলির ভালোঘরে বিয়ে দেওয়া ...ইত্যাদি...ইত্যাদি I এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা আর কাকুদের কাছ থেকে স্বান্তনা... এটাই ছিল net  রেজাল্ট...I দাদার জন্যে অঙ্কের টিচার (private tutor) রাখা হয়েছিল ক্লাস নাইন থেকে I কিন্তু বাবলি ক্লাস নাইন এ ওঠার পর যেই সেদিন মা বাবাকে বলতে গেছিলো বাবলির জন্যেও একজন অঙ্কের টিচার রাখার কথা, বাবলিও ক্লাস নাইন এ উঠেছে... বাবা একটু তাচ্ছিল্যের (হয়তো) স্বরে বলে উঠেছিল, “অঙ্কের জন্যে মাথা চাই...বুঝলে I” বাবলি এখনো মানে দাদার মতো অঙ্কে তার মাথা কোনোদিনও ছিল না এবং তার জন্যে তাকে অনেক কথাই শুনতে হয়েছে সেই সময় I তবুও মায়ের অনুরোধে সোনু বিরক্ত হয়ে বাবলিকে "স্নেহমিশ্রিত গাঁট্টা" র বিনিময়ে অঙ্ক দেখিয়ে দিতো মাঝে মাঝে I বাবলির এখনো মনে আছে…সেদিন পাড়ার কাকুরা অনেক রাত অবধি আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরেছিলেন I বাবলিও সেদিন আনন্দের জোয়ারে ভেসেছিল দাদার এই সাফল্যে... মায়ের সাথে সাথে চা জলখাবার দেবার ফাঁকে ফাঁকে কান খাড়া করে শুনছিলো তার সম্বন্ধে সেই বিষাদময় আলোচনা ঘুরে ফিরে আসে কিনা... কিন্তু না ...সেদিন আলোচনা শুধু সোনু, IIT, GRE-TOEFL ,   bright future, আমেরিকা ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল I  

হঠাৎ বাইরে থেকে এক ঝলক জোলো হাওয়া খোলা জালনা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে সব কিছু ওলোটপালোট করে দিলো, আর তার সাথে ঠান্ডা মিষ্টি জলকণা...I উঠে যে জালনাটা বন্ধ করবে সে ইচ্ছাটা আজ আর নেই বাবলির মধ্যে... আজ যে সে অতীতচারণ করতে ব্যস্ত... I তারপর… তারপর বেশকিছু বছর বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে গেছিলো...দাদার খড়্গপুর IIT তে এডমিশন, বাবলির ফার্স্ট ডিভিশনে মাধ্যমিক পাশ, সবার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও Biology নিয়ে সাইন্স branch এ ভর্তি, বাড়ির কাজের সাথে সাথে H .S আর জয়েন্ট এন্ট্রান্সের preparation ইত্যাদি…ইত্যাদি I দাদা যখন Engineering ফোর্থ year এ, বাবলি তখন প্রথমবারেই জয়েন্ট এন্ট্রান্স এ মেডিকেল এ উপর সারিতেই নাম রেখেছিলো I সেদিনের কথা আজও মনে আছে স্পষ্ট.... বাবা বাড়ি ফিরতেই মা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে গদগদ হয়ে বাবাকে জানালো তার মেয়ের  রেজাল্টের কথা I বাবা মনে মনে খুশি হলেও মুখে একটা গাম্ভীর্য রেখে খাবার টেবিলে বসে বলেছিলো… পরেরদিন ভালো কাকুর বাড়িতে গিয়ে প্রণাম করে আসতে I কিন্তু হায়রে পোড়া কপাল… এলোনা মিষ্টি বা পাড়ার কাকুদের দল
... হোলো না সেই চুটিয়ে গল্প…. কেউ বললো না "বৌদি... শুধু মিষ্টি তে কাজ  হবে না...I" বরং বাবলি অনুভব করেছিল দাদার IIT আর GRE-TOEFL র খরচের সাথে সাথে এবারে বাবলির  মেডিকেল পড়ার খরচও যোগ হবে... হয়তো বাবা সেজন্যেই অন্যমনস্ক I কিন্তু সে যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ... মেডিকেল সে পড়বেই... তাকে যে একজন বড় ডাক্তার হতেই হবে...I দাদার জন্যে বাবা অনেকদিন আগে থাকতেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিল... কিন্তু মেডিকেলের খরচ... বাবা তার স্বল্পআয়ে কোনোদিনই ভাবতে পারেনি I

তাই Calcutta Medical college এ ভর্তি হবার সাথেসাথেই মা একদিন কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করেছিল কলেজে কোনো স্কলারশিপ পাবার সুযোগ আছে কিনা I বাবলি বুঝতে পেরেছিলো…এটা বাবার ই মনের কথা I পরের দিনই খোঁজ নিয়ে জানা গেলো... আছে... তবে only for meritorious  student দের জন্যে... limited scope…যারা প্রতি বছর top করবে...I scholarship র কথাটা জানার পরেই বাবলি পরবর্তী ক্লাসগুলোতে মনোযোগ দিতে পারছিলো না সেদিন... সে বুঝতে পেরেছিলো এটাই তার সুযোগ... তাকে top করতেই হবে... যে করেই হোক... বাবার উপর থেকে চাপ সে কমাবেই... সত্যিই তো... দাদার বিদেশ যাবার খরচ... না না... ঠাকুর যখন তাকে রাস্তা দেখিয়েছে তখন সে কিছুতেই পিছুপা হবে না...I বাসে জানলার পাশে বসে সেদিন সে ভয় আর দ্বিধা মিশ্রিত মনে বারে বারে একথাই ভেবে চলেছিল I রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের আলো গুলো বারে বারে ঝাপসা হয়ে আসছিলো, বারে বারে সে সন্তর্পনে চশমার ফাঁক দিয়ে রুমালের কোনা ঢুকিয়ে চোখ মুছছিলো... আর বারে বারে নিজের মনে পাগলের মতো আওড়ে যাচ্ছিলো .... পারতেই হবে... আমাকে পারতেই হবে... বাবাকে একটু হলেও মানসিক শান্তি দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা সে করে যাবে... শুধু একটা বছর নয়,  প্রতি বছর তাকে top করতেই হবে…I
 
তারপরের ইতিহাস খুবই সংক্ষিপ্ত... প্রতিবছর সে topper হয়ে scholarship নিয়ে স্ব-সমম্মানে মেডিকেল কোর্স complete করেছিল I  কিন্তু যেদিন সে প্রথম scholarship পায়... সেদিনের সেই আনন্দঘন মুহূর্তের মাঝে একরাশ অভিমান জমা পরে ছিল I সে দৌড়োতে দৌড়োতে বাড়ি এসে মাকে জড়িয়ে ধরে আবেগবশে তার সুখবরটা দিয়েছিলো....ছিল সে বাবার ফেরার অপেক্ষায়...I সন্ধ্যেবেলাতে বাবা ফিরে এলে মা ই প্রথম বাবাকে বলে...বাবলি তখন পড়ার টেবিলে বসে বাবা কি বলে তারই অপেক্ষাতে ছিল...মনের মধ্যে তোলপাড় করছিলো একটা কথা ভেবে ... বাবা কি তাকে বুকে টেনে নেবে... নাকি...I বাবা এসেছিলো বেশ কিছুক্ষন বাদে ...বাবলির মাথার উপর আলতো ভাবে স্নেহের হাত বুলিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছিলো পর্দা ঠেলে...বাবা জানতেও পারলো না... সেই মুহূর্তে বাবলির একরাশ অভিমান অশ্রুবিন্দু হয়ে টপটপ করে বইয়ের উপর ঝরে পড়েছিল... শুধু সাক্ষী থেকে গিয়েছিলো দোদুল্যমান ঘরের পর্দাটা....

বাইরে বৃষ্টির প্রকোপটা আবার বেড়েছে, তার সাথে দমকা হওয়া I রাস্তার পাশে বর্ষাস্নাত দেবদারু  গাছগুলো  প্রচন্ড ভাবে আন্দোলিত হচ্ছে, আর তার ছায়া  বিছানার পরে শায়িত বাবলির পিঠের উপর খেলা করে যাচ্ছে... নিঃশব্দে  I কিছুক্ষন আগেই সোনুর ফোন এসেছিলো...প্লেন এ বসে গেছে তারা... হয়তো এতক্ষনে takeoff ও করে  গেছে I মা একটু আগেই রাতের খাবারের কথা জিজ্ঞাসা করতে এ ঘরে এসেছিলো... খিদে নেই বলে দিয়েছে...I বাবলি আজ ভীষণভাবে অন্যমনস্ক... স্মৃতিচারণ যে সর্বদাই বিষাদময়....I হঠাৎ দমকা হাওয়ায় খোলা diary টার বেশকিছু পাতা উল্টে গেলো আবার... কিছু লেখা আছে  খোলা পাতাটাতে... কি আছে দেখার জন্যে বাবলি বাস্তবে ফিরে এলো...

মুক্তাক্ষরে লেখা আছে...."জানতাম মেয়েটা schlorship টা পাবেই...বিশ্বাস ছিল আমার ওর উপরে...অসম্ভব জেদি মেয়ে...আজ তার পরিশ্রমের ফল পেলো... গর্বে বুক ফেটে যাচ্ছে আমার...আজ আমার আনন্দের সীমা নেই...আমার মতো সাধারণ কেরানির  মেয়েও দেখিয়ে দিলো...I” মুহূর্তে diary র লেখাগুলো ঝাপসা হয়ে এলো... একরাশ অভিমান ছুটে এসে বাবলির গলার কাছে দোলা পাকাতে লাগলো...I দুটো লাইন ছেড়ে আবার লেখা আছে….”গর্ব হচ্ছে একথা ভেবে...আমি মেয়েটার বাবা হতে পেরেছি  বলে... যে মেয়ে দুর্বার, অপ্রতিহত, কর্মনিষ্ঠ... ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি... ঘরে ঘরে যেন বাবলির মতো মেয়ে জন্মায়... যে বাপ্ -মায়ের চরম পুণ্যের ফল..........I”  
 
শেষ কটা লাইন পড়ার ক্ষমতা ছিলোনা আর বাবলির... গলার কাছে একটা প্রচন্ড অভিমান আর কান্না মেশানো যন্ত্রনা দলা পাকিয়ে আসছে... সে অস্ফুট স্বরে শুধু বলতে চাইলো, “বাবা একথাটা তুমি একবার... শুধু মাত্র একবার বলে যেতে পারলে না আমাকে...!” কিন্তু আর বলা হলো না I ঘরের মধ্যে স্ব-শব্দে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো বাইরে থেকে আগত দমকা হাওয়ায়...I বাবলি বালিশে শক্ত  করে মুখটা চেপে ধরে নিজের অপ্রতিরুদ্ধ কান্নাকে দমন করার চেষ্টা  করতে  থাকলো..., শরীর পিঠ বারে বারে কেঁপে কেঁপে উঠছে, আর মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে ... “বাবা শুধু একবার .... শুধু একবার....I” বন্ধ ঘরে সেই মুহূর্তে পাশে কেউ নেই...শুধু আন্দোলিত দেবদারুর  ছায়া পাগলের  মতো তার মাথা আর পিঠের উপর  আলতো  হাত  বুলিয়ে  স্বান্তনা দিয়ে যেতে থাকলো...I
______________________________
© সুদীপ্ত ভৌমিক

No comments:

Post a Comment