সিনেমার নায়কেরা সাধারণতঃ গোঁফ রাখেনা। পুরুষ মানুষ নাকি গোঁফ ছাড়া বেশ রোমান্টিক দেখতে লাগে। অন্ততঃ বন্ধুরা তেমনি বলতো। কাজেই একদিন আমারও শখ চাপলো নিজের সিরিঙ্গি চেহারায় একটু রোমান্টিক লুক দেবার। যেমন ভাবা তেমন কাজ। দাড়ি কাটার সময়ে দিলাম গোঁফটাকে উড়িয়ে। ভাবতেও পারিনি যে গোঁফ কেটে ফেললে মুখের চেহারা এমন পালটে যায়। আয়নায় চেয়ে দেখি , কোথায় রোমান্টিক , উলটে মুখে পুরো সখি সখি রূপ। লজ্জায় মুখ ঢাকতে পারলে বাঁচি। বাড়ি শুদ্ধ সবাই বলতে লাগলো - তুই কোন দুঃখে সখি সেজেছিস। সেদিন আর বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায় গেলামনা লজ্জায়। দুপুরে ঘুম থেকে উঠে দেখি নিজের মুখের নতুন চেহারা নিজের চোখে সয়ে গেছে।
সন্ধ্যাবেলা ভাবলাম নতুন চেহারা নিয়ে নীলুর সঙ্গে দেখা করে আসি। ওর হয়তো আমার নতুন ফেসকাটিং ভালো লাগতে পারে। নীলুদের বাড়ির দরজার কড়া নাড়তেই দরজা খুললো নীলু স্বয়ং। আমাকে দেখেই আঁতকে উঠে বলে ,' তোমাকে আমি চিনিনা। গোঁফ ছাড়া এবাড়িতে তোমার ঢোকা বন্ধ। যেদিন গোঁফ গজিয়ে আগের রূপে ফিরবে সেদিন তোমাকে আমি অভ্যর্থনা করবো। এই বলে নীলু আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো। বুঝতে পারলাম নীলু আমার এই সখি সখি রূপ ওদের বাড়ির কাউকে দেখতে চায়না।
আমি তারপর সপ্তাহ খানেক নীলুদের বাড়ি যাইনি। দাড়ি গোঁফ বাড়তে দিয়েছি। ভেবেছিলাম দাড়ি গোঁফ বাড়িয়ে একটু বিরহ বিরহ ভাব এনে নীলুদের বাড়ি যাবো। সপ্তাহ খানেক পরে একমুখ খোঁচা খোঁচা দাড়ি গোঁফ নিয়ে নীলুদের বাড়িতে হাজির হই। সেদিন দরজা খুললো নীলু নিজে। আমাকে কিছু না বলে আঙ্গুল দেখিয়ে সোফাতে বসতে বললো। আমি বসতেই নীলু বলে , ' নিজের রূপ পালটে তুমি আমাকে কি মেসেজ দিতে চাইছো ?' আমি বলি ,' মাঝে মাঝে তো রূপ পাল্টাতে ইচ্ছে করে।' নীলু কেমন আনমনা হয়ে বলে ,' তুমি কি চাও আরো এক সপ্তাহ তোমাকে নির্বাসন দিয়ে রাখি ?' আমি কি মনে করে বলে ফেললাম , ' আমাকে নির্বাসনে পাঠালে তো তোর শান্তি। আমার সঙ্গে বকবক করে সময় কাটাতে হয়না। '
নীলু হটাৎ চেঁচিয়ে বলে ,' তুমি কি টের পাওনা সাতদিন যে তুমি আসোনি কে বেশি কষ্ট পেয়েছে ? তোমরা ছেলেরা এতো কম সেনসিটিভ কেন ? একটু সেনসিটিভ হলে বুঝতে পারতে আমি কি চাই। ' আমি উঠে দাঁড়িয়ে বলি , ' ঠিক আছে , আমি তাহলে দাড়িটা কমিয়ে আসি। ' নীলু উঠে এসে খপ আমার হাত ধরে টেনে টেনে নিয়ে যায় ওদের বাথরুমে আর বলে ,' দাদার দাড়ি কাটার সব সারঞ্জাম আছে। চুপচাপ দাড়ি কামাও। ' দেখি কখন যেন নীলুর মিনু বৌদি পাশে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। সেই আমার প্রথম দুই মহিলার তত্ববধানে দাড়ি কাটা। দাড়ি কাটা শেষ হতেই দেখি নীলু একটা ছোট সেন্টের শিশি আমার হাতে দিয়ে বলে , 'এটা তোমার দাড়ি কাটার পুরস্কার। '
বলতে দ্বিধা সেটাই আমার নীলুর কাছ থেকে পাওয়া প্রথম পাওয়া গিফ্ট , আজকের দিনে যাকে বলে ভ্যালেন্টাইন গিফ্ট।
______________________________
© সনৎ মিশ্র
No comments:
Post a Comment