Monday, 13 February 2017

।। গহ্বর ।।


                         (1)
          বিকেলটা মন্দ কাটে না অনুর, সামনের বাগানে বা ছাদে মিষ্টি হাওয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা আর সাথে এক কাপ চা.....বেশ লাগে।কিন্তু সন্ধ্যে নামলেই এক রাশ ভয় এসে জাপটে ধরে অনুকে। তার শ্বশুরবাড়ি যাকে বলে জমিদার বাড়ি। এত্তো বড়ো বাড়িতে লোক মাত্র ছ'জন, অনুকে নিয়ে, তাও ছ'জনও ঠিক-ঠাক নয়। অনুর স্বামীর তরফে অনু, অনুর স্বামী প্রতাপ আর এক বুড়ি পিসিমা। প্রতাপের কাকার তরফে থাকেন কাকা, কাকিমা আর ছেলে প্রদোষ। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে দূরে কোথাও। তাদের বাপের বাড়ি আসতে খুব একটা দেখেনি অনু। বরং কাকা কাকিমাকে মেয়েদের বাড়ি যেতে দেখেছেন বার দুয়েক। আর প্রদোষ কি করে, কখন বাড়ি থাকে বা থাকে না তার কোনও ধারণাই নেই অনুর। কারণ কাকার সাথে প্রতাপের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। আর কাকারা থাকেন বাড়ির দক্ষিণ দিকের সামনের অংশে, অনুরা উত্তরের শেষের দিকটায়। কেউ মারা গেলে যতক্ষণ না খবর দেওয়া হচ্ছে, দুই পরিবারের কেউ কিছু টেরও পাবে না। আরও কিছু শরিক আছে এই বাড়ির। কেউই এ বাড়িতে থাকে না, কলকাতা, চেন্নাই...... সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিয়ের সময় সেই সব শরিকদের কয়েকজনকে দেখেছিল অনু। টিকলু বলে লতায় পাতায় এক ননদের সাথে তো বেশ ভাবই হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের পরের এক সপ্তাহ এই টিকলুই ছিল তার সর্বক্ষণের সঙ্গী। সেই টিকলুই তাকে এ বাড়ি নিয়ে কিছু ভুতের গল্প বলেছিল। এই জাতীয় পুরনো জমিদার বাড়ি নিয়ে দু-দশটা ভৌতিক ঘটনা লেজের মতো জুড়ে থাকে, এটা অনু জানে। তাই গল্পগুলো শুনে খুব একচোট হেসেছিল। কিন্তু পাঁচ জনের মাঝে ভুতকে নিয়ে হাসাহাসি করা আর সারাদিন একটা পোড়া জমিদার বাড়িতে প্রায় একলা থাকা...দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। তাই সন্ধ্যে নামলেই ভয় লাগতে শুরু করে অনুর। কেমন যেন অস্বাভাবিক।

                      (2)
             প্রতাপও কী একটু অস্বাভাবিক নয়? প্রশ্নটা মাঝে মাঝেই চক্কর কাটে অনুর মাথায়। মা তেমন কিছু খোঁজ খবর না নিয়েই দুম করে জুড়ে দিল প্রতাপের সাথে। ' ওঠ ছুঁড়ি তোর বে'- র মতো ব্যাপার। ছেলে চেহারায় রাজপুত্র, ব্যবসায়ে ভাল আয়, বুড়ি পিসি ছাড়া সংসারে তেমন ঝামেলা নেই, তারওপর জমিদারের রক্ত গায়ে। যেটা অনুর মাকে সবচেয়ে বেশি বশ করলো তা হলো বিনা পণ, কোনও দাবি দাওয়া নেই ছেলের।  বাবা মারা গেছে সেই কবে, অনু তখন সবে মাত্র ক্লাস এইট। বাবার পেনশন আর জমা টাকার সামান্য সুদে সংসার চালানো যে কতো কষ্টের সেটা অনু বুঝতো। তাই এই সম্বন্ধ যখন এলো, পাত্র অনুর থেকে বেশ খানিকটা বড়ো জেনেও অনু আপত্তি করেনি। আর ' জমিদার বাড়ি ' ব্যাপারটাই কী রোমান্টিক না! কিন্তু রোমান্টিকতার এই রেশ মাত্র সাড়ে তিন মাসেই তলানিতে ঠেকেছে। বিধবা পিসিমাটি সারাদিন পুজো-আচ্ছা নিয়ে থাকেন, তারওপর ছোঁয়াছুয়ির বাতিক। কি কথা বলবে এর সাথে অনু! আর প্রতাপ সারাদিন ব্যস্ত। প্রতাপের কীসব ইমপোর্ট - এক্সপোর্টের ব্যবসা --- শুধু এইটুকু ছাড়া আর কিচ্ছু জানে না অনু। এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে প্রতাপ গাছাড়া উত্তর দেয়। কিন্তু এটাই বা কেমন ধারা ব্যবসা! কখনও রাত বারোটায় ফিরছে, কখনও রাত কাবার, কখনও এলোই না।কাজের মাসি পূর্ণিমাদি এ বাড়িতে অনেক দিনের, তার কাছেও শুনেছে ওর কাজের ধরনটাই এমন, এমনটাই পূর্ণিমাদি দেখে আসছে বছরের পর বছর। এই সাড়ে তিন মাসে মাত্র তিন/চারবার অনুর শরীর ছুঁয়েছে প্রতাপ, তাও সেই স্পর্শ,  সেই মিলন যেন প্রাণহীন, যেন একটা দায়। আদর জিনিসটা যে কি - প্রতাপ মনে হয় জানেই না। প্রতাপের জীবনে অন্য কেউ আছে কি.....এ সন্দেহও হয়েছে মনে। কিন্তু প্রতাপ এতটাই কাঠখোট্টা, এতটাই রসকষহীন যে অনুর একটু খটকা লাগে। প্রমাণ খুঁজতে গিয়ে  ঘরের জিনিসপত্রের কম তল্লাশি চালায়নি অনু। কিচ্ছু পায়নি। অনুর আনমনা ভাবটা টের পেয়েই হয়তো প্রতাপ কিছু দিনের জন্য বাপের বাড়ি ঘুরে আসার পরামর্শ দিয়েছিল। গিয়েও ছিল অনু। কিন্তু দু'কামরার ছোট বাড়িতে দুদিনেই হাঁফিয়ে উঠলো। শ্বশুরবাড়িতে আর যাই হোক বেশ হাত পা খেলিয়ে থাকা যায়। মাত্র ক'মাসেই অনুর এই নির্লজ্জ পরিবর্তন অনুকে বিব্রতই করেছিল। কোনও সামঞ্জস্য নেই, তবুও অনু তখনই ঠিক করে, শ্বশুরবাড়ির তাদের অংশটা এখনও পুরোটা ঘুরে দেখা হয়নি। বাপের বাড়ি থেকে ফিরেই অনু সেই কাজে লেগে গেল।

                              (3)
                   এমাথা থেকে ওমাথা লম্বা দালান, দালানের পাশে সারিবদ্ধ ঘর। বড়ো বড়ো ভারি দরজা, সবগুলোয় ইয়া মোটা মোটা তালা লাগানো। শাড়ির খসখস বা দরজা ঠেলার শব্দে ফড়ফড় করে শতখানেক পায়রা উড়ে অনুর বুক খালি করে দেয়। তালা লাগানো দরজাগুলো ঠেলে যে সামান্য ফাঁক হয় তাতে চোখ রাখলে একটা অন্ধকার ঘরের আবছা আকার টের পাওয়া যায়। জানলার খড়খড়ি দিয়ে যে সামান্য দিনের আলো ঘরে চুঁইয়ে পড়ে তাতে দু-একটা আসবাবের আদল আসে, বড় আরাম কেদারা বা পালঙ্ক বা গ্র্যান্ড ফাদার ক্লক।অনুর বেশ লাগে কিন্তু। নিজেই কতো কিছু কল্পনা করে, তারপর কতোটা উদ্ভট সেই কল্পনা ভেবে নিজেই হাসে। বারান্দার একদম শেষে, একটু অন্ধকার মতো, ঠিক করে খেয়াল না করলে চোখে পড়ে না, একটা ঘোরানো সিঁড়ি অনুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে নামতে হঠাৎ করে একটা বড়ো সড়ো দরজা দেখে থমকে যায় অনু। দরজাটা অন্যগুলোর মতোই তবে তালাটা একেবারে নতুন, আগের গুলোর মতো পুরনো নয়। দরজার ফাঁক থেকে দেখা যায় সিঁড়িটা ফের ঘুরে খানিকটা নেমে গেছে। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত। হঠাৎ করে এই দরজায় নতুন তালা কেন লাগানো হলো- এটা জানতে হবে অনুকে। প্রতাপের কাছেই জানতে চাইবে। কিন্তু এমনই কপাল প্রতাপ ফিরলোই অনেক রাত করে। কটায় অনু জানে না, প্রতাপের জন্য আর জেগে বসে থাকে না। তবে টের পেল প্রতাপের পাশে এসে শুয়ে পড়া। এরপর থেকেই ঘুমটা কেমন যেন ছাড়াছাড়া হল। পৌনে পাঁচটা নাগাদ বিরক্ত হয়ে উঠেই পড়ল। ছাদে বসে এই সময় এক কাপ চা খাওয়ার চিন্তাটাই অনুকে চনমনে করে তুললো। প্রতাপকে বলতে হবে ছাদে একটা ইজিচেয়ারের ব্যবস্থা করে দিতে। চিন্তাকে অনুসরণ করে অনু প্রতাপের দিকে তাকাতেই চমকে উঠল। প্রতাপের ডান পায়ে চার আঙুলের আঁচড়ের দাগ! কোনো একটা ক্রীম জাতীয় কিছু লাগানোর পরেও রক্ত শুকিয়ে আছে সেখানে। তাহলে কি .......... ধ্যাত্! প্রেমিকা পায়ে আঁচড়ে দেবে নাকি!? হলে পিঠে বা হাতে হতো। খালি গায়ে শুয়ে থাকা প্রতাপের শরীরে তেমন কোনও প্রমাণ নেই। পায়জামাটা শোবার দোষে খানিকটা উঠে গেছে, গোড়ালির একটু ওপর আঁচড়ের দাগগুলো পায়জামার ভেতরে মিলিয়ে গেছে। পায়জামাটা আলতো করে তুলতেই প্রতাপ ধড়ফড় করে উঠে বলে
- কি হয়েছে?
- তোমার পায়ে আঁচড়ের দাগ কেন?
- আঁচড় কোথায়! কাল বাইক থেকে পড়ে গেছি
- ওমা! আর কোথাও লাগেনি তো?
- না, পা-টা একটু ছড়ে গেছে
- হাড়-টাড় ভাঙেনি তো!?
- হাড় ভাঙলে লোকে ঘুমিয়ে পড়তে পারে!?
বিরক্ত প্রতাপ বাথরুমে চলে গেল। নাকি অনুকে এড়াতে? বাইক থেকে পড়ে গিয়ে সারা শরীরে কিছু হল না, শুধু ডান পা ছড়ে গেল? আর ওটা কিছুতেই ছড়ে যাওয়ার ক্ষত নয়। কথা বাড়ায় না অনু, লাভ নেই তাই, সত্যিটা প্রতাপ বলবে না। কিংবা প্রতাপ হয়তো সত্যিই বলছে।

                     (4)
        দুপুরগুলো কিছু দিন আগে পর্যন্ত কাটতেই চাইতো না অনুর। এখন একটা নতুন খোরাক পেয়েছে, একটা টর্চ নিয়ে বন্ধ ঘরগুলোয় উঁকি মারা। চাবি দিতে পিসিমা আপত্তি করেননি তবে সাবধান করে দিয়েছেন, ওদিকে নাকি বিশেষ লোক যাতায়াত নিই, সাপ-খোপের আড্ডা। ওসব ভেবে লাভ নেই। সারাদিন করবেটা কি অনু? রান্নাঘরে ঢোকার হুকুম নেই , এ বাড়ির বৌরা নাকি রান্না করে না। পুরো ব্যাপারটা পূর্ণিমাদির হাতে। আজব নিয়ম! রোজ রোজ এতোখানি লম্বা সময় নিয়ে কি করবে? কাঁহাতক আর টিভি দেখা যায়? বইয়ের নেশা অনুর নেই। তারচেয়ে গোটা বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরতে ভাল লাগে। দুপুর হতেই তাই বেরিয়ে পড়েছে। কিন্তু একটু হতাশই হতে হলো অনুকে। দরজার তালাগুলো মরচে পড়ে একেবারে শক্ত হয়ে আছে। কার সাধ্য খোলে! অগত্যা এধার ওধার করতে করতে ফের সেই আধো অন্ধকারময় ঘোরানো সিঁড়ি, ফের সেই ভারি দরজা। অনু বোঝে না কেন এই দরজা তাকে তীব্র আকর্ষণ করছে। কাল রাতে, ছবিটা ঠিক পরিষ্কার নয়, তবে মনে হয় এই দরজাটাকেই স্বপ্পে দেখেছিল। প্রত্যেকটা চাবি তালায় লাগিয়ে চেষ্টা করলো। নিষ্ফল প্রচেষ্টা। অনু একটু অবাক হলো এই ভেবে যে তালাটা নতুন, বাকিগুলোর মতো মরচে ধরে শক্ত হয়ে যায়নি যে চাবি থাকলেও খুলবে না। তার মানে চাবির গোছায় এই তালার চাবি নেই। তারপর কোনো কিছু না ভেবেই অনু দরজাটায় জোরে জোরে ধাক্কা দিতে শুরু করলো। তালা ভেঙে পড়বে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই, অনুও ভাবেনি। তবে সব কাজের কী সব সময় ব্যাখ্যা হয়। ধাক্কাধাক্কির পর পায়ের কাছে রাখা টর্চটা তুলতে যাবে, অনুকে সম্পূর্ণ হতভম্ব করে দিয়ে শেকলের ঝনঝন শব্দ পেলো। দরজার ওপাশে সিঁড়ি নেমে গেছে নীচে, কতো নীচে এখন থেকে বোঝা যাচ্ছে না, সেই নীচের থেকেই শব্দটা আসছে। খুব ক্ষীণ যদিও, কিন্তু চারপাশটা এতো শান্ত আর নিস্তব্ধ যে সামান্য হলেও শব্দটা কানে আসে। টিকলুর কাছে শোনা গুম ঘরের গল্পগুলো মনে পড়ছে। ভয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল অনু, নড়াচড়ার যেন ক্ষমতা নেই। পা দুটো মাটিতে গেঁথে গেছে। একপ্রকার অজান্তেই অনুর মুখ থেকে বেরিয়ে গেল 'কে'? নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারছে না অনু। ফের সেই শেকলের শব্দ! অনু আর দাঁড়িয়ে থাকার সাহস পেলো না।

                              (5)
              সেদিনের পর থেকে প্রতাপ শোবার ঘর আলাদা করে নিয়েছে। কারণ হিসেবে জানালো ওর নাকি আসা যাওয়ার ঠিক নেই, অনুর ঘুমের অসুবিধা হতে পারে। অনুর আপত্তি শোনার দরকারও মনে করেনি। অবশ্য অনুর কোনটাকেই বা প্রতাপ গুরুত্ব দেয়। অনুর কোনো কিছুতেই প্রতাপের কোনও আগ্রহ নেই। রাগ, অভিমান, মনকেমন, মনখারাপ - কোনও কিছু নয়।যেন  বিয়ে করতে হয় বলে করা। ওদের আলাদা শোবার ব্যাপারটা পিসিমাকে আলাদা করে বলতে হয়নি, নিজেই টের পেয়েছেন। সন্ধ্যা আরতির পর সেদিন অনেক ফল সন্দেশ প্রসাদ হিসেবে দিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে বেশ খানিকটা আদর করেই পিসিমা অনেক কিছু বললেন। মেজাজি, জমিদারি রক্ত, মেয়েদের কতো মানিয়ে চললে সংসার সুখের হয়, হেন, তেন। কিন্তু অনু বোঝাতে পারে না বিয়ের মাত্র সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই কোনও স্বামী-স্ত্রীর শোবার ঘর আলাদা হয়ে যায় কি? এটা কি স্বাভাবিক? স্বাভাবিক আরও অনেক কিছু হতে পারতো কিন্তু হচ্ছে না। প্রতাপ পিসিমার সাথে গল্প করতেই পারে। বস্তুত পিসিমার হাতেই প্রতাপ মানুষ। প্রতাপ তার বাবাকে বলতে গেলে দেখেইনি। অল্প বয়সে ওর মাও মারা যান। এক্ষেত্রে পিসিমাই প্রতাপের জীবনে বাবা-মা, দুজনের ভূমিকা পালন করেছেন। কাজ যতোই থাকুক, সারাদিনে একবার অন্তত প্রতাপ পিসিমার কাছে বসে কথাবার্তা বলে। কিন্তু ওদের কথার মাঝে অনু গিয়ে পড়লে কেন ওরা চুপ করে যায়? বা বোঝাই যায় প্রসঙ্গ পাল্টাচ্ছে। একথা কাউকে জিজ্ঞাসা করার নয়। এতো অনুর সন্দেহ মাত্র। আরও আছে। ছোঁয়াছুয়ির জন্য পিসিমা নিজের কাপড় নিজেই যেভাবে পারেন কেচে নেন, কাউকে হাত দিতে দেন না। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক ছিল প্রতাপ আর অনুর জামাকাপড় একসঙ্গে কাচা। না, সেটা হয় না। বরং অনু খেয়াল করেছে প্রতাপের জামাকাপড় অনুকে আড়াল করে রেখে কাচা হয়। এখানেও কিছু বলার নেই কারণ এটাও অনুর সন্দেহ মাত্র। কিন্তু অনুর ষষ্ঠেন্দ্রিয় বলে কিছু একটা আছে, কিছু একটা হয়। ওই দরজার ওপাশেও কিছু আছে। অনুকে জানতেই হবে সেটা কি। অনু খুঁজবে, খুঁজেই ছাড়বে।

                         (6)
             কিছুক্ষেত্রে সুযোগ মনে হয় সময়ের অপেক্ষা করে আর সময় সবার আসে, কারুর আগে, কারুর পরে। তাই অনুও একদিন সময় সুযোগ - দুটোই হাতে পেলো। কিছু বৈষয়িক আইনি জটিলতার কারণে প্রতাপকে দুদিনের জন্য কলকাতায় চলে যেতে হলো। কলকাতায় প্রতাপদের একটা বাড়ি আছে। অবশ্য নামেই, শরিকি ঝামেলা তো আছেই, তার ওপর একগাদা ভাড়াটে। বাড়ি দখল নেওয়া দূরে থাক, শরিকি ঝামেলাই মিটতে চায় না। কোর্টে হিয়ারিং-এর দিন পড়ে, প্রতাপকে যেতে দেখেনি, শুধু পিসিমার মুখে শুনেছে। কিন্তু এটা নাকি ভীষণ জরুরি। তাই খুব তাড়াহুড়ো করে সকাল সকাল প্রতাপ বেরিয়ে গেল। আটটা নাগাদ পিসিমা ঠাকুর ঘরে ঢোকেন, সাড়ে দশটার আগে বেরোনোর তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। পূর্ণিমাদি বাজারে। এর চেয়ে ভাল  সুযোগ অনু আর পাবে না। কিন্তু করতে হবে খুব নিঃশব্দে! পিসিমার বয়স হতে পারে কিন্তু চোখ কান যথেষ্ট সজাগ। কি খুঁজছে জানতে চাইলে অনুর কিছুই বলার মতো নেই। আর তাছাড়াও এই বুড়ি মানুষটাকে এসবের মধ্যে অনু টানতে চায় না। এবাড়িতে যে অল্প বিস্তর স্নেহ ভালোবাসা যা পেয়েছে তা এই পিসিমাই দিয়েছেন। নাহলে নিয়ম করে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতি দিন সন্ধ্যারতির পর অনুকে ফল মিষ্টি খাওয়াত না। অনু গরিব ঘরের বলেই পিসিমা খাওয়া-দাওয়ার খুব খেয়াল রাখেন। কতখানি স্নেহ থাকলে এমন হয়! না,  যা হবে সেটা ওর আর প্রতাপের মধ্যে হবে। প্রতাপ, হ্যাঁ, প্রতাপের ঘরটাই আগে খুঁজবে অনু। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে অনু শুরু হয়ে গেল। ঘরের প্রায় সব সম্ভব অসম্ভব জায়গা খুঁজে ফেলল অনু। ধুরর!! কোত্থাও কিচ্ছু নেই। আচ্ছা, এমন নয়তো যে অনু অহেতুক সন্দেহ করে প্রতাপকে? এমন তো হতেই পারে যে চাবিটা হারিয়ে গেছে? অনু তো চাবির ব্যাপারে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাও করেনি। জিজ্ঞাসা করলে হয়তো বলে দিত। এমন নয়তো যে প্রতাপ তাকে পছন্দ করে না বলে অনুর অপছন্দটা অহেতুক সন্দেহের রূপ নিয়ে নিচ্ছে? অনুর মনে হলো এই একা থেকে থেকেই তার মাথায় মাথামুণ্ডুহীন চিন্তা ঘুরছে। খুব সহজ জিনিসকেও তাই জটিল করে তুলছে। এই নিয়ে আর ভাববে না অনু। নিজেকে অন্য কোনো উপায় ব্যস্ত রাখতে হবে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে অনু পিসিমার ঘরে ঢুকে বিছানা ঠিক করতে গিয়েই চোখে পড়লো একটা চাবি। সেই তালাটা যে কোম্পানির, চাবিটাও তাই। কিন্তু পিসিমার বিছানায় কেন? এর উত্তর অনুর কাছে খুব সহজ। তাড়াহুড়ো করে বেরোতে গিয়ে চাবিটা প্রতাপ পিসিমার কাছে নিশ্চয়ই দিয়ে গেছে, পিসিমা খুব স্বাভাবিক ভাবেই চাবিটা বিছানায় রেখে ঠাকুর ঘরে চলে গেছেন। যাবে নাকি একবার, দেখে আসবে নাকি চাবিটা ওই তালারই কিনা? চাবি নিয়ে অনু দে ছুট। দরজার কাছে পৌঁছে চাবির গর্তে চাবিটা ঢুকিয়ে একটা মোচড় দিতেই ক্লিক শব্দে তালাটা খুলে গেল।

                              (7)
      একটা টর্চ থাকলে ভাল হতো, কিন্তু এখন টর্চ আনতে গেলে ফের ছুটে ঘরে যেতে হবে, ফের ফিরে আসতে হবে, তাতে সময় নষ্ট।পূর্ণিমাদির ফিরে আসার সময় হয়ে এসেছে। থাক, টর্চ ছাড়াই অনু নামতে শুরু করে। ঘোরানো সিঁড়ি আরও খানিকটা ঘুরে নীচে নেমে গেছে। দেওয়াল ফাটিয়ে অশ্বত্থ, লতানে গাছের আবডাল। কেমন যেন একটা গন্ধ পুরো জায়গা জুড়ে। অনুর কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই এই ব্যাপারে। ক্রমশ মাটির তলায় নেমে যেতে থাকা সিঁড়ি, বদ্ধ বাতাস, চামচিকি আড্ডা - সব মিলিয়ে হয়তো এমন গন্ধই হয়। তবে পিসিমা একটা কথা ভুল বলেছেন। এখানে মানুষের যাতায়াত আছে, আবছা অন্ধকারেও সেটা টের পাওয়া যায়। সব ভুলে অনুর মনে এখন প্রচণ্ড কৌতূহল। সিঁড়িটা খানিকটা নেমে একটা ছোট্ট দালানে এসে থেমেছে, যার দুপাশে মাত্র দুটো ঘর। অনু প্রথমেই ঠিক করলো এখানে নিজের উপস্থিতিটা একদম গোপন আর নিস্তব্ধ রাখতে হবে। ঘরের মধ্যে যদি কেউ থেকেও থাকে সে যেন টের না পায় অনুর উপস্থিতি। যাতে প্রয়োজনে অনু ছুটে পালিয়ে যেতে পারে। হাতে একটা কিছু থাকলে ভাল হতো। সিঁড়ি পেরিয়ে দালানে আসতেই অনুর কানে এলো সেই শেকলের শব্দ, সাথে খুব ধীর ভাবে একটা গোঙানি। কান পাতার দরকার নেই, শব্দটা আসছে বাঁ দিকের ঘরটা থেকে। অনু ঠিক করতে পারে না কি করা উচিত। ফিরে যাবে? কিন্তু এই সুযোগ যদি ভবিষ্যতে আর না পায়? অন্তত এটা তো প্রমাণ হয়ে গেছে যে অনুর সন্দেহ অমূলক নয়। এবার শুধু জানতে হবে সেটা কি। আর সেটা না জেনে অনু এখান থেকে যেতে পারবে না। তাতে যা হয় হোক! আশ্চর্য এটাই যে দুটো দরজাতেই কোনো তালা নেই, ছেকল আটকানো। খানিকটা জড়তার সাথে ছেকল খুলে অনু যা দেখলো তাতে তার পায়ের তলার মাটি কেঁপে গেল। এতোটা নিজের দুঃস্বপ্নেও আশা করেনি অনু। একটা বাচ্ছা মেয়ে,  দশ কী বারো বছর বয়স, হাত-পা মোটা ভারি শেকল দিয়ে আটকানো, সম্পূর্ণ নগ্ন, মুখে কাপড় ঠুসে তার ওপর টেপ লাগিয়ে মুখ বন্ধ, সর্বাঙ্গে অসীম অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে অনুর দিকেই ফিরে শুয়ে আছে। চোখ দুটো সম্পূর্ণ মৃত, মাঝে মাঝে হাত পা নাড়ানো বা মৃদু গোঙানির শব্দে বোঝা যাচ্ছে বেঁচে আছে। মেয়েটির পাশেই পড়ে আছে প্রতাপের একটা গেঞ্জি আর পায়জামা।              অনু আর সামলাতে পারছে না নিজেকে। সারা গা গুলিয়ে উঠেছে। অনুর চোখে অন্ধকার নেমে আসছে, অনু তার মায়ের কাছে ফিরে যেতে চায়, পরম নিশ্চিন্তে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়তে চায়। বাতাসে কিছু একটা ধরার নিষ্ফল চেষ্টা করে অনু সেখানেই নিজেকে এলিয়ে দিলো।

                                (8)
                  জ্ঞান ফিরতে অনু বুঝে উঠতে পারে না কোথায় সে। চেতনা এখনও পুরোপুরি ফিরে আসেনি। চোখেও কেমন ঝাপসা দেখছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। আর কিছু না হোক, একটু জল পেলেও অনু খানিকটা চাঙ্গা বোধ করতো। হাতে পায়ে অসহ্য ব্যথা। পাশ ফেরার চেষ্টা করলো অনু, পারছে না। সামান্য পাশটুকুও কেন ফিরতে পারছে না! জীবনের সব সমস্যা ভুলে এটাই এখন অনুর কাছে বড়ো প্রশ্ন। ভাল করে চারপাশে তাকাতেই পূর্ণিমাদিকে দেখতে পেলো। অনু চোখ মেলতেই পূর্ণিমাদি চলে গিয়ে, খানিকক্ষণ বাদে ফিরে এলো পিসিমাকে নিয়ে। তখনই খেয়াল হলো অনুর হাত পা পিছমোড়া করে বাঁধা, তাই হাতে পায়ে এতো ব্যথা। অনু মাথা তোলার চেষ্টা করতেই পিসিমা বললেন "কেমন লাগছে এখন"? কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না, ছবিগুলো অস্পষ্ট। একটা ছোট্ট মেয়ে, শেকল.......এগুলো কি আদৌ সত্যি না স্বপ্ন? ঘোর কাটলো পিসিমার পরের প্রশ্নে "ওখানে কি করতে গিয়েছিলি? চাবি কোথায় পেলি? আমার বিছানা থেকে"? অনু মরিয়া হয়ে বলল "পিসিমা, বাচ্ছা মেয়েটা এখনও বেঁচে আছে, ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা খুব জরুরি, তুমি একটু দেখো না"! "চোপ" - হুঙ্কার দিয়ে ওঠে পিসিমা। একটা আশি বছরের বৃদ্ধার গলা থেকে এমন বাজখাঁই আওয়াজ ভীষণ রকম ভাবে অপ্রত্যাশিত। কী তেজ! কী অহঙ্কার! কী আত্মবিশ্বাস! প্রায় স্বগতোক্তির মতোই পিসিমা বলে " রক্ত বুঝিস? রক্ত? জমিদারি রক্ত? আমরা জমিদার, আমাদের বংশের ইতিহাসেই আছে এমন। প্রতাপের পূর্বপুরুষরাও এই রকমই ছিলেন,  দু একজন ছাড়া। সেই জমিদারি আইন কানুনে হয়তো আর নেই, কিন্তু রক্তে, আজও আছে"।
               অনু হতবাক! শুধুমাত্র রক্তের দোহাই দিয়ে একটা লোক দিনের পর দিন শিশুদের ওপর নির্মম অত্যাচার করবে আর তার মাতৃসম পিসি তাকে শুধু সাহায্যই করছে না, উল্টে তার সপক্ষে যুক্তি খাড়া করছে! প্রতাপের চেয়ে গুরুতর ভাবে বিকৃত এবং মানসিক অসুস্থ পিসিমা। শৈশবে বাবা-মাকে হারিয়ে এই পিসিমার কাছেই প্রতাপ মানুষ হয়েছে। পিসিমা নিজেও নিঃসন্তান। পিসিমাই একমাত্র পারতেন এই বিকৃত রুচির হাত থেকে প্রতাপকে টেনে বের করতে। করেননি, উল্টে প্রতাপকে আরও ঠেলে দিয়েছেন অন্ধকারের দিকে। পিসিমা চাইলেই প্রতাপের চিকিৎসা করাতে পারতেন, করেননি কারণ পিসিমা নিজেই প্রতাপের চেয়ে অনেক বেশি অন্ধকার মনের মানুষ। অনুর মনে হতে লাগলো যে জমিদারি রক্তের কথা পিসিমা বার বার  বলছেন তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ, এই পিসিমা নিজেই। রাগে সারা শরীর জ্বলছে অনুর। মনে হচ্ছে ছিঁড়েকুটে টুকরো  টুকরো  করে ফেলে পিসিমার সবটুকুকে। দুয়ে-দুয়ে চার করতেও অনুর আর অসুবিধা হয় না। অনুকে এবাড়িতে পিসিমা এনেছেন শুধু মাত্র সমাজের চোখে ধুলো দিতে। যাতে অনুকে সামনে রেখে প্রতাপ তার নারকীয়তা অবাধে চালিয়ে যেতে পারে। অথচ প্রতাপের চেয়ে পিসিমা অনেক বেশি জানতেন প্রতাপ পিডোফাইল। আজ অনু বোঝে কেন তাকে ছুঁতে প্রতাপের এতো অনীহা। কোনো পূর্ণবয়স্ক মহিলা প্রতাপের আগ্রহের বিষয় হতেই পারে না। কতো জন প্রতাপের এই অত্যাচারের শিকার অনু জানে না, জানতেও চায় না, শুধু ওই ছোট্ট মেয়েটাকে মনে পড়ছে। হয়তো ছাড়া পাওয়ার অনুনয়-বিনয় করতে গিয়ে প্রতাপের পায়ে নোখের আঁচড় বসিয়ে দিয়েছিল। বা হয়তো  পালিয়ে যাওয়ার একটা দুর্বল চেষ্টা। অজান্তেই অনুর দু-গাল ভেসে যাচ্ছে, অনু টেরও পাচ্ছে না

                               (9)
               কতক্ষণ অনু ওই ঘরে, ওই ভাবে পড়ে আছে তার হিসেব নেই। ঘরে কোনও ঘড়ি বা ক্যালেন্ডার নেই। জানলাবিহীন, নিরেট দেওয়াল, দিন-রাত বোঝার উপায় নেই। ম্যাড়মেড়ে বাল্বের আলোয় ঘরটাকে আরও কুৎসিত লাগছে। বাঁধনের জায়গাগুলোয় রক্ত জমে হাত পা অসাড়। শক্ত করে মুখ বাঁধা। কি করবে এবার অনু? কোনও দিন কি পারবে এই বাঁধন থেকে মুক্ত হতে? এতো কিছু জেনে যাওয়ার পরে অনুকে ছেড়ে দেওয়ার বিলাসিতা ওরা করবে না। তাহলে? অল্প শব্দেই সজাগ অনু, এখন। পূর্ণিমাদিকে ঘরে ঢুকতে দেখেই অনু চোখ বন্ধ করে ফেললো। কী শুরু হতে চলেছে কে জানে! আর কি কি কপালে লেখা আছে ? মুখের বাঁধনটা খুলে দিয়ে পূর্ণিমাদি জিজ্ঞাসা করে "উঠে বসতে পারবে"?
এতো মানসিক চাপ আর নিতে পারছে না অনু, ছেলেমানুষের মতো জিজ্ঞাসা করে "আমাকে কী তোমরা মেরে ফেলবে পূর্ণিমাদি"?
খানিকক্ষণ চুপ করে অনুর মুখের দিকে চেয়ে থেকে পূর্ণিমাদি বলে "হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলে একা-একা পালাতে পারবে এখান থেকে"? নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না অনু! পূর্ণিমাদি বলছে এই কথা! এখান থেকে যদি পালাতে পারে তাহলে জীবনে আর কোনও দিন কিচ্ছু চাইবে না অনু। কিছু টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে পূর্ণিমাদি বলে "খিড়কির দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেবো, তারপর ভগবানের নাম কোরো। বাস অটো, যা পাবে উঠে পালাও। সবে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা বাজে, ন'টার আগে মনিরুল আসবে না"।
এতো কিছুর পরেও অনু না জিজ্ঞাসা করে পারে না "মনিরুল কে"?
- দাদাবাবুকে ও-ই ছোটো, ছোটো মেয়ে এনে দেয়। ওটাই ওর বিজনেস। আর কিছু জানতে চেওনা।
উফফফ! কী নরপিশাচদের পাল্লায় পড়েছে! এদের হাত থেকে মুক্তি দাও!
চাপা, রাগত স্বরে পূর্ণিমাদি বলে ওঠে "কান্নাকাটি পরে, আগে এই নরক থেকে পালাও। আমি বেশিক্ষণ এখানে থাকতে পারবো না, পিসিমার জপ শেষ হয়ে এলো বলে"!
             গায়ে তেমন জোর পাচ্ছে না অনু, সারা গা-হাত-পা অবশ মতন, কিন্তু ওকে পালাতেই হবে এখান থেকে। নাহলে এই চূড়ান্ত প্রতারণা, এই প্রচণ্ড মানসিক আঘাত, এই বদ্ধ ঘর আর চোখ বুজলেই একটা ছোটো মেয়ে - তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

                        (10)
                 আজ প্রায় ছ'মাস হলো, পুলিশ কারুর কোনো খোঁজ পায়নি, সব যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। যদিও ওই বাড়ির তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ এমন অনেক কিছু পেয়েছে যার সুস্থ মস্তিষ্কে কোনো ব্যাখ্যা নেই। আজকাল অনুর এই ব্যাপারে আর কোনও আগ্রহ নেই, আসলে আজকাল অনুর কোনো ব্যাপারেই আর কোনো আগ্রহ নেই। খুব নিস্পৃহ লাগে আজকাল। একবার, মাত্র একবার অনু জানতে চেয়েছিল ওই বাড়িতে খুব আহত কোনও ছোট্ট মেয়েকে কেউ দেখতে পেয়েছে কিনা। তেমন আশাব্যঞ্জক কোনও উত্তর পায়নি। ব্যস, অনুর আগ্রহ এখানেই শেষ।
                আজ প্রায় ছ'মাস হলো, এখনও অনু পুরোপুরি সেই ঘটনার থেকে নিজেকে বের করে আনতে পারেননি। আজও অনুর কাউন্সিলিং চলছে, আর আজও মাঝে মাঝেই অনুর  স্বপ্নে খালি পায়ে, ফ্রক পরা দুদিকে দুটো ঝুঁটি দুলিয়ে একটা ছোট্ট মেয়ে এসে হানা দেয়।

(সমাপ্ত)
____________________________________________
© তৃণা মুখোপাধ্যায়


No comments:

Post a Comment