ভগবান! ছোট থেকে জেনে আসলাম, মেনে
আসলাম- কিন্তু আজ এক প্রশ্ন এসে মাথায় ঘরাফেরা করছে। আজ পর্যন্ত তাঁর অস্তিত্ব
বুঝতে পারলাম না। আপনারা বলবেন আপনি কি মহাপুরুষ নাকি যে তাঁর অস্তিত্ব বুঝতে
পারবেন। জানি এই রকম বিতর্কিত লেখার সমর্থনে যদি ৫ জন পাই তাহলে এর বিপক্ষে ৫০০০০
জন বলার মত লোকের অভাব নেই। তবুও লিখছি মতামত জানানো আপনাদের হাতে ছাড়লা্ম।
২১- শে মে ২০১৬ তারিখে আমি এক মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্মুখীন
হই।এখন বেঁচে আছি। সাক্ষাৎ মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এলাম। আপনারা বলবেন এই তো আপনি
নিজে উত্তর দিয়ে দিলেন। ভগবান না থাকলে আপনি বাঁচতেন না। ঠিক তো ভগবান না থাকলে
আমি বাঁচতাম না। কিন্তু আমার ভগবান সেই মূর্তির ভগবান নয়, যাকে ঘিরে আমরা উৎসবে মেতে উঠি। আমার কাছে অনেক ভগবান। কিরকম?......।
অ্যাকসিডেন্টের পর হাত পা ভেঙ্গে মাথা পাথরে ঠুকে রক্তাক্ত
অবস্থায় পড়ে ছিলাম। কিছু পাবলিক আমার পকেট থেকে ফোন টা বের করে আমার বাবাকে খবরটি
দেয়। তাহলে ওই পাবলিকটি আমার কাছে ভগবান। জানিনা সে ভদ্রলোকটি হিন্দু না মুসলিম
নাকি অন্য জাতের। আবার সেই ভ্যানয়ালা যিনি আমাকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন।
তিনি আমার কাছে ভগবান। কারন ওই যানটি না থাকলে হয়তো ওইরকম যানে থানার সামনে আমার
বডি পড়ে থাকত।
বা সেই ডাক্তার যিনি আমার প্রাথমিক চিকিৎসা করে বলে দিয়েছিলেন এই
কেস আমার দ্বারা সম্ভব নয়। বা সেই নার্স যিনি পরম যত্নে আমার নাক, মুখের
রক্ত মুছে আমাকে ইনজেকশন করে দিয়েছিলেন। অথবা সেই অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার যিনি
রাস্তার ভিড় কে কাটিয়ে বাই পাস রাস্তা দিয়ে মালদা পৌঁছে দিয়েছিলেন। নাকি আমার
পকেটের টাকা যে বাবু না থাকলে আমি এই লেখা টাইপ করতে পারতাম না। কিন্তু আবার এ
টাকা কি আমার? সে তো আমি চাকরি করে বলে। চাকরি টা দিল কে?
সরকার। তাহলে কোন সন্দেহ নেই সরকার আমার ভগবান। কিন্তু সরকার কে?
সে কি রক্ত-মাংস দিয়ে গড়া নাকি কুমোরটুলির মাটি দিয়ে? তার তো আর নিজের টাকা থাকতে পারে না। ওগুলো সব জনগণের টাকা। আচ্ছা
দেশের জনগণ বলতে তো আমি নিজেও। তাহলে তো আমি, আপনি আপনারা
সকলে নিজের নিজের ভগবান।
এখন প্রশ্ন তুলবেন আমরা কোথা থেকে এলাম। আমাদের বাবা-মা আমাদের
জন্মদাতা তাই তারা আমাদের ভগবান। কিন্তু বলুন তো সকল বাবা মাকে বলছি যখন মেলামেশা
করেছিলেন তখন দৈহিক আনন্দ না একটি প্রানের জন্ম কোনটা আপনার মাথায় ছিল? দৈহিক আনন্দ টাই ছিল সকলের মুখ্য। তাহলে আপনি যা কিছু করেছেন আপনি
নিজেই তার ফলের অধিকারী। অনেকে বলছেন এ নাকি আমার কপালে ছিল। আচ্ছা কপাল কি?
সেখানে নাকি আমার ভাল মন্দ ভগবান লিখে রেখেছেন। তাহলে ধরে নিতে
হবে ভগবান মন্দ কাজও করিয়ে দিতে পারে।
তাহলে উনি ভগবান কিসের? আবার কেউ বলছেন ওইদিন ছিল শনিবার।
তাই সেদিনে যাত্রা নাকি খুব খারাপ। তাহলে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যাকে ৭ দিয়ে ভাগ করলে
যতজন বের হবে আপনারা কেউ শনিবার বাড়ি ছাড়া হবেন না। ব্যাস পৃথিবীর কোন কাজ খারাপ
হবে না। আমি মনে করি মানুষের দুঃখ দুর্দশার কারণগুলি গ্রহ বা আকাশে থাকে না,
আমাদের চারপাশেই বিচরণ করে। আর আমরা যখন বিপদে পড়ি দৈব অনুগ্রহ
নয় আমাদের কাছের মানুষের ভালবাসা, আত্মবিশ্বাস, জ্ঞান, পারস্পরিক সহযোগিতা আমাদের উদ্ধার করে।
তাই আমার যাবতীয় ভুল-ভ্রান্তি , বিপদ বা সফলতা সবকটি
আমাদের নিজস্ব অবদান ।
সেখানে
ভগবানের কোন ভুমিকা নেই। আমি উৎসবে বিশ্বাসী । হোক না সে মাটির মূর্তি। এই উৎসব
ঘিরেই তো আমরা সমাজবদ্ধ । কেউ খুব ঈশ্বর বিশ্বাসী হলে তাঁকে নাস্তিক হতে বলব না।
বা কেউ নিজেকে নাস্তিক বললে তাঁকে সমর্থন করে হাততালি দেব না। আমার যুক্তি আমার যা
কিছু ভাল মন্দ সব আমার নিজের জন্য। তার জন্য কাউকে যেমন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব না
তেমনই কাউকে দোষও দেব না।
তাই আমার মতে ভগবান আমাদের মধ্যেই আছেন। চাইলেই তাঁকে পাওয়া যায়, খুঁজতে
হয়না।
__________________
@অভিজিৎ মন্ডল
No comments:
Post a Comment