bananigupta@gmail.com
To :
biplabganguli1971@gmail.com
Sub : মৃত্যুতরণ, শঙ্কাহরণ, দাও সে
মন্ত্র তব
শ্রদ্ধেয়
বিপ্লব স্যার,
খুব আর্জেন্ট
মেসেজ। কিন্তু ফোন করলাম না। ফেবু মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপেও লিখলাম না।
হিসেবমত তুমি
এখন টরন্টোয় বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলনের পারফরমেন্সের ঠিক আগের পর্যায়ে ব্যস্ত রয়েছ।
সব সেরে যখন মেল বক্স চেক করবে তখন এই চিঠি পোড়ো।
গতকাল অফিসে গিয়ে কাজ করতে করতে
হঠাৎ জ্ঞান হারালাম। বেসরকারি হাসপাতাল জানাল হার্টে ফুটো। বড় অপারেশন করে নিলে
ঠিক হলেও হতে পারে। জন্মগত ত্রুটি নিয়ে এত বছর কেমন করে কাটল কে জানে।
ফ্ল্যাটে ফিরে একা একা বড় কষ্টের
মধ্যে তোমার মুখটা মনে পড়ল।
ফেসবুকে তোমায় প্রথম পেয়েছিলাম। ' নির্ঝরের
স্বপ্ন' গ্রুপে। তিন বছর আগে গ্রুপের গেট্টুতে প্রথম দেখা। মুগ্ধ আবেশে
পাদস্পর্শ করতে যেতেই তুমি দু গালে চুমু খেয়ে বুকে টেনে নিয়েছিলে। তোমার বুকে মুখ
গুঁজে আদরের মধ্যে ডুবে যেতে আমার মনে পড়ে গিয়েছিল, এর আগে
কেউ আমায় কখনও আমার জ্ঞানতঃ আদর করে নি।
আমার
সেলিব্রিটি বাবা মার ইগো ক্ল্যাশ থেকে ডিভোর্স। দু জন দু দিকে। আমি হস্টেলে
মানুষ। জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল ফার্স্ট হওয়া। আজ পর্যন্ত জীবনের সবেতে আমি
ফার্স্ট হয়েছি। পড়াশোনায়, কেরিয়ারে, জীবনসংগ্রামে।
এমনকি গ্রুপের গল্প লেখার ইভেন্টেও কতবার তোমাকে পেছনে ফেলে উইনার হয়েছি।
বিপ্লব স্যার, তুমি
আমাকে পড়াও নি। তবু তোমার স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র, যারা
গ্রুপের মেম্বার, তাদের মত তোমাকে স্যার বলে ডাকতে আমার ভীষণ
ভালোলাগে। তোমার লেখা থেকে আমি অনেক কিছু শিখেওছি।
তুমি আমার চেয়ে আঠারো বছরের বড়, বিশ্বাসই
হয় না। তুমি খুব হ্যান্ডু। গেট্টুর প্রথম দেখাতেই আমি তোমার প্রেমে ফিদা হয়ে
গিয়েছিলাম। টল, ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম। শুধু একটা গাল ভরাট, আর
একটা তোবড়ানো। মনে হয়েছিল, এটুকু খুঁত চাঁদের কলঙ্কের মত আরও শোভা
বাড়িয়েছে। ম্যান্ডোলিন বাজিয়ে একের পর এক পল্লীগীতি গেয়ে আসর একাই মাতিয়ে রেখেছিলে
সে দিন। কোনও কোনও কথা কি একটু জড়িয়ে যাচ্ছিল?
তারপর ফোন নম্বর আদানপ্রদান। পরিচয় বেড়ে
যাওয়ার সূত্রে তোমার বাড়ি যাওয়া।
ছিমছাম সাজানো ছোট্ট বাড়িটায়
তুমি একেবারে একা। একেবারে আমার সাজানো ফ্ল্যাটে একলাটি আমার মত।
তারপর দু জনে অনেক দিন, অনেক
রাত একসঙ্গে কাটিয়েছি। কথায়, গানে, আসঙ্গসুধা
পান করে। তোমাতেই উৎসর্গ করেছি আমার পবিত্র কৌমার্যের ফুল।
এই সম্পর্কটাকে দুর্বলের মত বরমাল্যের
অপমানে ম্লান করতে চাই নি দুজনের কেউই। তাই বিবাহের বন্ধনে ধরা দিই নি। দু জনে
দুজনের মত স্বতন্ত্র থেকেছি।
বিপ্লবস্যার, আজ
হাসপাতাল থেকে ফিরে মনে হল আমার জীবনের সব শেষ হয়ে গেছে। ষোল তলার ছাদে উঠেছিলাম
ঝাঁপ দিয়ে সব শেষ করে দেবো বলে। তারপর, পাশের বিল্ডিং
থেকে ভেসে এল আইপ্যাডে তোমার গলা,
হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে,
যাহা কিছু সব, আছে আছে আছে।
নাই নাই ভয় সে শুধু আমারই
নিশিদিন কাঁদি তাই।
মনে পড়ল অনলাইন শপ থেকে কেনা অদ্রীশ
মুখোপাধ্যায়ের লেখা তোমার জীবনী, 'হে মৃত্যুঞ্জয়' এর
কথা। কোন তরুণ বয়সে দেশভ্রমণে বেরিয়ে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় একসঙ্গে
হারিয়েছ বাবা, মা, স্ত্রী এবং শিশুকন্যাকে। ওরাল ক্যান্সারের থাবা খুবলে নিয়েছে আধখানা
জিভ ও বাঁ দিকের ভেস্টিবিউল। বাঁ গাল, মাড়ি, জিভ
শরীরের অন্য অংশের মাংস কেটে নিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি। তাই নিয়েই তুমি পড়াও, গান
গাও। তোমার এত কাছে থেকেও এ সব আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাই নি। ছিঁড়েখুঁড়ে যাওয়া
জীবনটা কেমন সুন্দর রিস্টোর করে নিয়েছ তুমি। আমিও তোমার মত সব নতুন করে তৈরি করে
নেবো।
তোমার তো আজই শেষ শো। ক দিন পরই ফিরবে।
জলদি হাসপাতালে অ্যাডমিট হয়ে অপারেশনটা করিয়ে নেবো। অফিসের ক্যাশলেস ফেসিলিটি আছে।
তারপর, কটা দিন তোমার কাছে থেকে সুস্থ হয়ে আসব।
ইয়ে, মানে, কটা
দিন, ওটা তুমি চাইলে চিরদিন ও হতে পারে।
তোমার
বন্যা
© শর্মিষ্ঠা নাহা
No comments:
Post a Comment