Thursday, 17 November 2016

।। আমি কলঙ্কিনী ।।


আমি কলঙ্কিনী,
সবাই আমাকে দুস্চরিত্রা বলেই ডাকে ।
যখন বন্যার সেই বিভিসিকা আমার স্বামীর প্রান নাস করে
আমি তখন চার মাসের পোয়াতি,
খুদার জ্বালায় তিন বৎসরের কন্যা যখন কুকড়ে - কুকড়ে কেঁদে উঠেছিল
কতনা দ্বারে কড়া নেড়েছিলাম,
ভিক্ষে চেয়েছিলাম দু-মুঠো ভাত,
অসহ্য যন্ত্রণা চেপে নিয়ে ছিলাম বুকে,
কত লাঞ্ছনা বুকে নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল নতুন দ্বারে,
তবুও...দু-মুঠো অন্নর যোগার করতে পারিনি,
হারিয়ে ছিলাম তাকেও ।
তবুও ভেঙে পরিনি, আমি যে চার মাসের পোয়াতি,
নতুন একটি জীবন আমাকে ঘিরে ।
ঘর হারা...স্বামী হারা...এমনকি তিন বৎসরের কন্যা হারা আমি,
রূপ ও যৌবন ছিল ঘেরা,
নতুন জীবন বাঁচাতে যখন খুলেছিলাম আঁচল
তখন আমি কলঙ্কিনী,
যখন চোখের জলে ধুয়েছিলাম পা
সে পা মারিয়ে গেছিল আমার প্রার্থনার হাত,
যখন ক্রন্দনে-ক্রন্দনে ভরিয়ে ছিলাম কন্ঠ
সে কন্ঠ কে করেছিলে পরিহাস,
নিজের জীবনের সাথে নতুন জীবন বাঁচাতে
যখন রূপ নিয়েছিলাম বেশ্যার
সমাজ তখন বলেদিল আমি কলঙ্কিনী,
আমি কলঙ্কিনী...আজ আমি কলঙ্কিনী,
সতীত্ব যখন কেরে নিয়েছিল দুধের শিশু
সতীত্ব যখন দিয়েছিল কেবল লাঞ্ছনা
কোথায় ছিল তোমাদের সমাজ,
সতীত্ব যখন যোগার করতে পারেনি দু-মুঠো অন্ন
কোথায় ছিল তোমাদের সভ্যতা,
আজ কলঙ্ক ই আমার বাঁচিয়েছিল প্রান
চার মাসের পোয়াতি হতে আরো ছয়টি মাস
কলঙ্কর চাদর বিছিয়ে শূন্য বুকে এনেদিল নূতন আলো,

কলঙ্ক ই আজ মুখে ফোটাল হাঁসি ।।

_________________
© তপন বাড়ৈ

No comments:

Post a Comment