Thursday, 17 November 2016

সমবায় ব্যাঙ্ক - বর্তমান পরিস্থিতি


সকালে বাজারে বাবার ছোটবেলার বন্ধু গড়াই কাকার সাথে দেখা। উনিও বাজার করতেই এসেছেন। পেশাগত ভাবে উনি কোন এক গ্রামীন সমবায় ব্যাঙ্কের ছোট বা মাঝারি মাপের কর্তা। হালচাল শুধাতে সামান্য কথোপকথনে যেটা বুঝলাম, বেচারা বেশ মনমরা। সেটা কথোপকথনটাই তুলে ধরলাম-

- আর বাবারে, রিটায়ার্ডের আগেই বোধহয় চাকরিটা খোয়াবো।
-
কেনগো, সমস্যাটা কি! তোমাদের কি আর খুচরোর সমস্যা! তোমাদের হাতেই তো সব... 
-
আমাদের ব্যাঙ্কগুলোর অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য এমনিতেই লজঝড়ে বাপু। লাগাতার ঋণখেলাপির জেরে পুঁজিতে টান। সরকার ঋণ মকুব করার কিছু মানুষ দায়মুক্ত হয়েছে ঠিকিই, তাতে আমাদের পুঁজির ঘাটতি কিন্তু মেটেনি। ব্যাঙ্কিং এর পাশাপাশি সার, পাট, বীজ, কীটনাশক বেচেও টিমিটিম করে চলছিল। মাসান্তে মাইনের মুখ দেখছিলাম।
-
হ্যাঁ, তো আজ আবার কি হল!! এখন তো পয়সাই পয়সা চারিদিকে।
-
সমস্যাটাও তো ওখানেই। 
-
বুঝলামনা...

-
আরে আমাদের তো সবই প্রায় সেভিংস একাউন্ট, আর সেগুলো গরীর প্রান্তিক মানুষ, মজুর, চাষী, স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী বা খুচরো ব্যাবসায়ীদের। সংখ্যার বিচারে এদের ৭৫%ই ইনেকটিভ, বছরে একআধবার লেনদেন হয়। বড়লোক বা একটু সম্পন্ন ব্যাবসায়িদের কাছে আমরা ব্রাত্য, তাদের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক তো আছেই। তার উপরে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলো আজকাল ঘরের দুয়ারে গিয়ে হরেককিসিমের পরিসেবা দেয়। তাছারা ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং, RTGS/NEFT , সহ নানান আধুনিক সুবিধা আমাদের এখানে নেই।

আমাদের এখন সারাদিন পুরানো টাকা জমা আর নতুন নোট দিতেই কেটে যাচ্ছে। শেষ সাতদিন ধরে নতুন লোনের যাবতীয় কাজ বন্ধ। যাদের কাছে অবৈধ(কালাধন) টাকা রয়েছে, তারা বিনা ইন্টারেষ্টে একদম কাছের মানুষদের বা তাদের গ্যারেন্টার রেখে, জমির কাগজ বন্ধক রেখে সেই টাকা ঋণ দিয়ে দিচ্ছে। পরের ফসল উঠলে তিন বা ছ মাসে শুধু আসলটুকু ফিরৎ দিলেই কেল্লাফতে। তাহলে যারা আমাদের সমবায় থেকে লোন নেয়, তারাও এমন বিনা ইন্টারেষ্টের টাকা খুঁজছে। ঋন দাতা ও গ্রহিতা উভয়ের মুনাফা। বন্ধন ব্যাঙ্কের মত প্রতিষ্ঠানও, লোন পরিসেবা বিজ্ঞাপন দিয়ে বন্ধ রেখেছে যেখানে, সেখানে আমরা তো চুনোপুঁটি, তাই আমদানির ঘরে মাছি তারাচ্ছি।

রোজ যে এই বিপুল পরিমানে টাকা জমা পড়ছে, তাতেই ভয় লাগছে। এখন আর ইনেকটিভ একাউন্ট শব্দটি নেই বললেই চলে। সেভিংস একাউন্টে টাকা জমা পরার সময় থেকেই তো ৫-৭% বার্ষিক হারে সুদ গুনতে হবে। একেকজন জমা করছেন চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা, দিচ্ছি একআধ হাজার টাকা। বৈধ কারেন্সির যোগান নেই। আগে বড় বড় ব্যাঙ্ক, তার পর ঝড়তি-পরতি বাঁচলে আমাদের ভাগে।

আমরা সেই টাকা আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের একাউন্টে চালান করছি, কিন্তু সেটা তো কারেন্ট একাউন্ট। আমাদের জমা টাকার কোন সুদ নেই। আমাদের ব্যাঙ্কের সব ব্রাঞ্চের চিত্রই সমান। রোজ কাড়ি কাড়ি টাকা জমা পরছে। এতো সুদ কোত্থেকে দেওয়া যাবে? লোন দেবার কোন খবর নেই, ৫০ দিন পরেও পরিস্থিতি নতুন লোন শ্যাংসান করার মত স্বাভাবিক হবে কিনা কেও জানেনা।

ঋণখেলাপি জনিত কারনে সকল বড় বড় ব্যাঙ্কগুলির হাঁড়ির হাল তলানিতে ঠেকেছে। নোট বাতিলের হিড়িকে বড় বড় ব্যাঙ্কগুলো অক্সিজেন পেয়ে গেল। তাদের সেই অতিরিক্ত টাকা খাটাবার নানা পন্থা, আমাদের মত সীমত নয়। আমরা সুদ দিতে অসমর্থ হলে পাবলিক ঝামেলা হবে, ব্যাঙ্ক দেওলিয়া হোক বা না হোক গেটে তালা ঝুলবে। আমাদের চাকরি বাঁচবে তাহলে? আমাদের কাষ্টমারদের টাকা সুরক্ষিত, সেগুলো রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কেই আছে ভায়া আমাদের সমবায়। আমরা না থাকলেও সরকার যাদের টাকা তাদের ঠিকিই দিয়ে দেবে। আমাদের কি হবে!
উনি সবটা বলে গেলেন একনিঃশ্বাসে। সবটা ঠিক বুঝলামনা। কারন আমি ব্যাঙ্কিং অর্থনীতির তেমন কিছুই বুঝিনা।

কেও কি এই বিষয়ে কোন আলোকপাত করতে সক্ষম? বিষয়টা কি বাস্তবিকিই সমস্যার? না কি উনি অমুলক ভয় পাচ্ছেন এই হুজুগে?
______________

@Tanmay Haque

No comments:

Post a Comment