অকপট ব্রতকথা- ১৩
সংক্ষিপ্ত রামায়ন
**************
শোন শোন ভক্তজন শোন বীর গাথা।
রামায়ণে লঙ্কাকাণ্ডে পরের যা কথা ।।
মহা সৈন্য সজ্জা করে রাবণ সমরে ।
নল, নীল, অঙ্গদ ও টিকিতে
না পারে ।।
লক্ষ্মণও পারিল না রাবণের সাথে ।
ব্যতিব্যস্ত হইল সে বাণের আঘাতে ।।
শ্রীরাম ধণুক তার ধরিলেন এসে ।
দশাননে পর্যুদস্ত করিলেন শেষে ।।
সন্ধ্যা নামিলে শ্রীরাম বলে দশানন ।
"লঙ্কায় ফিরিয়া
যাও ভঙ্গ করি রণ" ।।
বলিল বিশ্রাম নিতে গিয়ে তার ঘরে।
আগামীতে দেখা হবে সম্মুখ সমরে।।
ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে ফেরে লঙ্কাপতি ।
তাছাড়া ছিলনা তার আর কোন গতি।।
বড় বড় যোদ্ধা যত রণে মারা গেল ।
তবুও রাবন রাজা ভীত নাহি ছিল ।।
যখন হারিল নিজে করে পলায়ণ ।
অতঃপর মনে ভীত হল দশানন ।।
রামকে দেবেন শিক্ষা এইকরে মনে।
স্থির করে কুম্ভকর্ণে পাঠাবেন রণে ।।
কুম্ভকর্ণ এক সাথে শত মন খায় ।
ছয়মাস জাগে আর ছ'মাস
ঘোমায় ।।
একদা ছিলেন রত ব্রহ্মার সে তপে ।
কায়মনে কুম্ভকর্ণ ব্রহ্মা নাম জপে ।।
পরিতৃপ্ত হয়ে ব্রহ্মা তপস্যায় তার ।
বলিল চাহিতে বর তখন সেবার ।।
চাহিতে সে ব্রহ্মাদেবে ইন্দ্রের আসন ।
ভুল করে চেয়ে বসে তিনি নিদ্রাশন ।।
ব্রহ্মাদেবে দেবরাজ করিল চালিত ।
সরস্বতী জিহ্বা তার করে আন্দোলিত।।
ঢাক ঢোল কাঁসর কী বাজানোর ধুম ।
ছাড়িল না সেই তার অসময়ে ঘুম।।।
একশত হস্তি গাত্রে উঠে করে শোর ।
তবুও না ছাড়ে তার সে ঘুমের ঘোর।।
অবশেষে ঘুম তার ভাঙিল তা বটে।
মাংস, সুরার
গন্ধে উঠে বসে খাটে ।।
ভোজন করিয়া শেষ কুম্ভকর্ণ বলে ।
জাগিয়াছে কেন তারে এখন অকালে ।।
উত্তরেতে দশানন বলিলেন তারে ।
যাইতে হবে ত্বরা তাহাকে সমরে ।।
যখন ঘুমেতে ছিল ছয় মাস কাল।
নর, বানরে
লঙ্কার করে মন্দ হাল ।।
নিদ্রা হতে জাগি বীর যুদ্ধ ভূমে যায় ।
বানরেরে ধরে সবে গিলে গিলে খায় ।।
রাক্ষস তো নয় শুধু, যেন
সে পাহাড় ।
বানরেরা উড়ে যায় নিশ্বাসে তাহার ।।
সুগ্রীব, অঙ্গদ
তারা আসিল সমরে ।
কুম্ভকর্ণের বিক্রমে তারা ভয়ে মরে ।।
আনিয়া পাথর গাছ ছুঁড়ে মারে তারে।
সকল হইল গুঁড়ো তাহার প্রহারে ।।
লক্ষ্মণ আসিয়া তারে করিল আঘাত।
কুম্ভকর্ণ রোষে হল সে ও কুপোকাত ।।
রামেদেখি কুম্ভকর্ণ হয়ে ক্রোধমতি ।
দেখিয়া গিলিতে তারে গেল শীঘ্র অতি।।
অতঃপর রাম তাঁর ধরিল ধণুক ।
সকলের দেখে করে দুরু দুরু বুক ।।
মহা যুদ্ধ শুরু রাম করিল এবার ।
বাণে বাণে চারিদিক হল অন্ধকার ।।
হাত-পা কাটিল তার রাম দুই বাণে ।
তবুও গিলিতে গেল তাহারে সেক্ষণে।।
বিলম্ব না করে তিনি মারিলেন তীর ।
ইন্দ্র- অস্ত্রে তিনি তার উড়াইল শির ।।
মারা গেল মহাবীর কুম্ভকর্ণ রণে ।
লঙ্কায় কান্নার রোল পড়িল সেক্ষণে।।
প্রতিশোধ নিতে রামে তাদের পিতার।
কুম্ভ ও নিকুম্ভ রণে আসিল এবার ।।
মহা যুদ্ধ করে তারা সেই মহারণে ।
অবশেষে মৃত্যু হল শ্রীরামের বাণে ।।
পুনরায় ইন্দ্রজীৎ আসিল সমরে ।
ব্যতিব্যস্ত করে তোলে দুই সহদরে ।।
মেঘের আড়াল থেকে মন্ত্রপূত বাণে ।
অজ্ঞান করিল তিনি রাম ও লক্ষ্মণে ।।
তাদেরকে জ্ঞানশূণ্য দেখে বানরেরা ।
ক্রন্দন করিতে থাকে যেন পির্তৃ হারা।।
বাণরের মধ্যে ছিল জাম্ববান বীর ।
সকলকে শান্ত করে হতে বলে ধীর ।।
হনুমানে ডাকি তারে বলিলেল যেতে।
ঔষধ আনিতে বলে কৈলাশ পর্বতে ।।
কৈলাশ ,ঋষভ
দুই পর্বতের মাঝে ।
মৃতসঞ্জীবনী মেলে ঔষধি এক যে ।।
তাহার নির্যাস যদি কেহ এনে দিত ।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ তবে হইত জীবিত।।
শুনিয়া সে কথা বীর পবন নন্দন ।
এক লাফে হিমালয়ে গেলেন তখন।।
ঔষধি লহিয়া বীর ফিরিল লঙ্কায়।
তার গন্ধে দুই ভাই চক্ষু মেলে চায়।।
ঔষধের গুণে তারা উঠিয়া বসিল ।
জয় জয় রাম ধ্বনি সকলে করিল।।
অতঃপর 'মহোদর' আর 'অতিকায়'।
'ত্রিশিরা' 'মকরাক্ষ' ও 'বীরবাহু' যায়।।
'দেবান্তক' 'নরান্তক' যত যোদ্ধা ছিল ।
একে একে রণে সবে মারা যে পরিল।।
লঙ্কার অনেক বীর রণে গেল মারা।
রাবণ 'তরনীসেনে' করিলেন খাড়া ।।
বড় ধার্মীক 'তরনী' রামে ভক্তি করে ।
রাবণ অন্নে পালিত তাই সে সমরে ।।
তার পুত্র না বলিল রামে বিভিষণ।
রাম ভাবে শত্রু কোন হবে একজন।।
মারিল তাহারে বাণ যত রঘুমনি ।
বাণেতে কাটিল বাণ সকল তরনী।।
বড় বেগ দিল রামে তরনী সে বটে ।
ইচ্ছা তার মরে যেন শ্রীরাম নিকটে।।
ধনুকেতে গুন দিয়া চালাইল তীর ।
ব্রহ্ম অস্ত্রে কাটে রাম তরনীর শির ।।
বানরেরা জয়ধ্বনী করিল তখন ।
পুত্রশোকে হাহাকার করে বিভিষণ।।
তরনীকে নিল তুলে বিভিষণ কোলে।
সর্বাঙ্গ ভাসায় তার নয়নের জলে ।।
জিজ্ঞাসিল তারে রাম কান্নার কারন।
বলিল , তরনী
ছিল তাহার নন্দন ।।
করেছে কি ভুল ভেবে কাঁদে রঘুপতি।
বিভিষণ শোকে হল তিনি সমব্যাথি।।
তরনীর মৃত্যু কথা শুনে লঙ্কেশ্বর ।
রাজাসন থেকে পরে ভূমির উপর ।।
শোকাতুর দশানন ডাকে ইন্দ্রজীতে ।
বলিল যাইতে পুত্রে রামে শিক্ষা দিতে।।
রামের করিতে বধ, নিকুম্ভিলা
ঘরে।
মহা এক যজ্ঞ শুরু ইন্দ্রজীৎ করে ।।
জিজ্ঞাসিল রামচন্দ্র কহো বিভিষণ ।
কিভাবেতে ইন্দ্রজীৎ হইবে নিধন ।।
মহাবীর ইন্দ্রজীৎ ব্রহ্মার সে বরে ।
তাহাকে নিধন করা কঠিন সমরে।।
যজ্ঞ তার ভঙ্গ যদি করে কোন জন।
তার হস্তে ইন্দ্রজীৎ হইবে নিধন ।।
যজ্ঞভঙ্গ করিবারে লক্ষ্মণে বলিল ।
বিভিষণ সঙ্গে সে নিকুম্ভিলা গেল ।।
দ্বার রুদ্ধ করে থাকে কাকা বিভিষন।
অস্ত্রহীন ইন্দ্রজীতে মারিল লক্ষণ ।।
নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে করি মনে পণ ।
ব্রহ্মাস্ত্রে করিল তার মস্তক ছেদন ।।
দ্যুত মুখে শুনি তার মৃত্যু সমাচার।
পুত্র হারা দশানন কাঁদে বারবার।।
জননী চিত্রাঙ্গদার শূন্য হল কোল।
রক্ষোপুরে উঠিল যে ক্রন্দনের রোল ।।
বীর শূন্য লঙ্কাপুরী করে হাহাকার।
দশানন রনসজ্জা করিল আবার ।।
রামায়ণে সংক্ষিপ্তে করিনু বর্ণন ।
হইলনা 'লঙ্কাকাণ্ড' কথা সমাপণ ।।
'ব্রতকথা' কায়মনে যে করে শ্রবণ ।
পূণ্যলাভ হয় আর আনন্দিত মন।।
লঙ্কাকাণ্ড চলবে.....
___________
@সুব্রত অধিকারী
No comments:
Post a Comment