Thursday, 17 November 2016

ধর্মান্ধ মৌলবাদ ও আমাদের কর্তব্য


হিংসা দিয়ে কখনও ধর্মপ্রচার হয় না, ধার্মিকও হওয়া যায় না। অথচ বর্তমানে আমরা কি দেখছি সর্বত্রই হিংসা দ্বেষ আর মারামারি। জীবনহানিও হচ্ছে বিস্তর। এ সবই ঘটছে ধর্মকে কেন্দ্র করে। সর্বত্রই ধর্মের ধ্বজাধারীরা হিংসা, মারামারি, মানুষ খুনের মধ্য দিয়েই ধর্মের বিজয়কেতন উড়িয়ে দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও রাখতে চান। সমস্ত ধর্মসম্প্রদায়ের অন্ধবিশ্বাসীদের একটাই মত, তার ধর্মমত হল শ্রেষ্ঠ। অন্য গুলো ফালতু বোগাস। কি অদ্ভুত হাস্যকর ধারনা ভাবুন যা সে সযত্নে মনের মধ্যে লালন পালন করে। কিন্তু এই অন্ধত্ব কখনো জীবনের পূর্ণতা নয়।

ধর্মান্ধ ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের জীবনদর্শনও তাই ভ্রান্ত। তারা নিজেদের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যে টুকু দেখেন তাকেই অভ্রান্ত বলে মনে করেন। তাদের এই সঙ্কীর্ণতা মনের উদারতা নষ্ট করে। তাদের ধর্মপুস্তকে বর্ণিত জ্ঞান তাকে কূয়ার জলে ব্যাঙের 🐸 মতই আবদ্ধ করে ফেলে। যা কিছু দেখে যা কিছু শেখে তা ঐ কূয়ার ব্যাঙের মতই। তার বাইরে সে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারে না। ধর্ম তাকে দুই পায়ে বেড়ী দিয়ে রাখে। ফলে সে বৃহত্তর জগতের সব কিছুই ধর্মের দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখে, ধর্মীয়দৃষ্টিকোন থেকে বিচার বিশ্লেষণ করে। ফলাফল যা হবার তাই হয়।

আমার জানি মানুষের জ্ঞান কখনও স্হবীর বা নিশ্চল হতে পারে না। ক্ষনে ক্ষনে সময়ের সাথে সাথে প্রতক্ষ বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তা পাল্টে যায়। আর তাতেই মানব সভ্যতা তরতর এগিয়ে চলে সামনের দিকে। মানুষের জ্ঞান যদি স্থবির হত তবে মানুষ আজও বনে জঙ্গলে পস্থরীভূত সমাজে পাশবিক জীবন যাপন করত। উন্নত সভ্যতার স্বাদ আর তার পাওয়া হত না। অন্যদিকে ঐশী ধর্মপুস্তকের জ্ঞান স্হবীর অপরিবর্তনীয় অলঙ্ঘ্য।  আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগেও যা ছিল আজও তাই। অথচ এতদিনে গঙ্গা দিয়ে কত জল বয়ে গেছে। মানবসভ্যতার কত উন্নয়ন হয়েছে। কত কিছু পাল্টে গেছে। মানুষের খাদ্য অভ্যাস থেকে জীবনধারণের পদ্ধতি সবই পরিবর্তীত হয়েছে যুগের হাত ধরে সময়ের দাবী মেনে। অথচ ঐশী কেতাব ও তাতে লিখিত মনুষ্য সমাজব্যবস্থা পরিচালনের নিয়ম কানুন রয়ে গেল অপরিবর্তনীয়।

এর থেকে হাস্যকর আর কি হতে পারে যে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বর্তমান সমাজব্যবস্থা কে পরিচালনা করা হবে হাজার বছরের পুরনো রংচটা রদ্দি মার্কা ঐশী গ্রন্থের নিয়মকানুন দিয়ে। ফলে অনেকেই তা মানতে চাইলেন না। অর্জিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও সত্যতা দিয়ে চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ করে প্রশ্ন তুলতে শুরু করলেন ঐশী গ্রন্থের। তা যে আজকের যুগে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত একটি দর্শন তা তুলে ধরলেন নিজেদের লেখনীর মধ্যে দিয়ে। জ্ঞানের দ্বীপ প্রজ্বলিত করে তুললেন।

একে একে জ্বলে উঠতে শুরু করল একের পর এক দ্বীপ। ধর্মবিশ্বাসী ধর্মান্ধ ব্যক্তিদের পায়ের তলার মাটি সরে গেল। এভাবে চলতে দিলে যে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়বে এতদিনের সযত্নে লালিত পালিত ধর্মবিশ্বাস। অথএব প্রজ্বলিত দ্বীপ কে নিভিয়ে দিতে নেমে এল ধর্মীয় বিশ্বাসে বশীভূত হওয়া ধর্মান্ধদের ধর্মীয়  চাপাতি । ঘ্যাচাং ফুঁ..... ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল সত্যের সেনানী কিছু মানুষ। 👲 মানব মুক্তির পথ দেখানো কিছু মানুষ। চিন্তায় চেতনায় কয়েকযোজন এগিয়ে থাকা কিছু মানুষ। ঐশী কেতাবের পবিত্রতা রক্ষায় প্রাণ গেল কিছু মানুষের। কিন্তু দ্বীপ সম্পূর্ণ রূপে নিভল না। কারন ততদিনে শত সহস্র দ্বীপ জ্বলে উঠেছে। দমকা এই ঝড়ো হাওয়ায় দ্বীপশিখা কম্পিত হল মাত্র কিন্তু নিভে গেল না। ধর্ম এই বৈজ্ঞানিক সত্য ও জ্ঞান কে নেভাতে পারল না। নির্ভীক কন্ঠে সে বলে উঠল

তুমি যদি বারংবার কোপ মারতে পারো মারো,
ছিন্ন কাঁধে ফের মাথা জন্মাবে আমারও!
 মৃত্যুরও বলার থাকে কিছু কিছু কথা -
সহজে মরে না কারও বাক-স্বাধীনতা।
                 
       হ্যাঁ, ছিন্ন কাঁধে মাথা নিয়ে গুটি গুটি দ্বীপ জ্বলছে বিশ্বের সর্বত্র। আমাদের চুপ করে বসে থাকলে চলবে না বন্ধু। সলতে পাকানোর এই তো সময়। একটি দ্বীপ নিভে যাওয়ার আগেই তার থেকে আলো নিয়ে জ্বলে উঠতে হবে আরো হাজারো দ্বীপ। সকলের প্রজ্বলিত আলোয় ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক সাম্প্রদায়িকতা,অস্পৃশ্যতা, অন্ধ কুসংস্কারে পরিপূর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে মৌলবাদী ধর্মান্ধতা। আর এর জন্য চাই আমার আপনার সকলের একে ওপরের হাত ধরা। একসাথে চলার মুষ্টিবদ্ধ হাত গর্জে উঠে বলুক

 "........... রক্তে গিয়েছে ভেসে
ভাঙো, ভাঙো আজি ভাঙো তারে নিঃশেষে -
ধর্মকারার প্রাচীরে বজ্র হানো,
এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলোক আনো।"


_____________
©Tapas Gayen

No comments:

Post a Comment