ব্যাঙ্গালোর থেকে কলকাতার
ফ্লাইট.. ইন্ডিগো...আজ ভোরের হিমেল হাওয়ার ওম ছড়িয়ে দিচ্ছে নতুন সূর্য..! সিঁড়ি
দিয়ে ফ্লাইটে উঠছে এক এক করে যাত্রীরা... হঠাৎ সামনে হট্টগোল... দেখি এক দাদুকে
ধরেছে কর্মীদল আর এয়ারহোস্টেজ...!! দাদু নাকি কোন এক জাঁদরেল ভগবানের ছবি প্লেনের
দরজায় সেঁটে দিয়েছেন..!!
দাদু যত বলছেন
বাবারা আমি তো শুধু আশীর্বাদের জন্যে... লোকজন শুনবে কেন!!! জাঁদরেল ভগবানের
ছবি... তাই জনৈকা বিমানসেবিকার কপালে আঙুল ঠেকানো... কর্মীদলের একজনের বারপাঁচেক
প্রণাম... তারপর প্রবল অনিচ্ছা.. এবং এই জাঁদরেলকে ঐখান থেকে খুলে নেওয়া..!!
দাদুর সীট আমার পাশে... জিজ্ঞাসা
করলাম কি গো.. কি হয়েছিল...!!! কিছু না বাবা... প্রথমবার বসলাম প্লেনে... ট্রেনে
গেলেই হত... আমার ছেলে... খালি টাকা ওড়ায় পয়সা ওড়ায়... এই দেখোনা আমাকেও উড়িয়ে
দিল..!! তা বাবা, প্রথমবার এত ওপরে এলাম.. ভাবলাম ঈশ্বরের কত কাছে... ওনাকে সাথে নিয়ে
রাখি... তা দিল কি এরা..!!!! দুটো কথাও শান্তিমত...!!!!
ফ্লাইটক্যাপ্টেনের ঘোষণায় ঘুম
ভাঙ্গল দাদুর... জলতেষ্টায় কাতর দাদুকে জল দিতেই বিমানসেবিকাকে প্রশ্ন... হাত
ধুয়েছো তো মা... শুধু জল দিচ্ছ... একটা বাতাসা দিয়ে দিতে হয়...!!!! সেবিকা তাড়াতাড়ি
ফিরলেন কুকিজের ছোট্টো প্যাকেট নিয়ে.. মনে হয় দাম চাওয়ার আর সাহস করলনা সে..!!
একটু তন্দ্রাভাব এসেছিল আমার...
শুনি দাদু বোঝাচ্ছে ঐ বিমানসেবিকাকে.. মা জল চাইলে শুধু বাতাসা দিতে পারো..
বিস্কুট দেবে চায়ের সাথে.. আমি দেখছিলাম... কি অসীম ধৈর্যশীলা মেয়েটি... একমুখ
প্রশ্রয়ের হাসি.. চোখ গোলগোল.. দাদুর সামনে ঝুঁকে সব শুনছে...!!
নামার
আগে দাদুকে জিজ্ঞেস করলাম... কেউ আসবে তো নিতে.. মেয়ে আসবে জানিয়ে দাদু বললেন...
বাবা.. মাটির মানুষ আমরা মাটিতেই ভাল... আকাশে পাখিদেরই ভাল লাগে.. আকাশেই যদি উড়ব
তবে বন্ধন কেন বাবা... মুক্ত নই কেন...!!
রোজ রাস্তায় অনেক গল্প শুরু হয়.. কিছু শেষ হয়.. কিছু হয়না.. কিছু মন
ছুঁয়ে থাকে.. কিছু হারায়... দাদু তুমি স্থায়ী হলে..!!
__________
@অর্ণব ভট্টাচার্য
No comments:
Post a Comment