=== প্রথম অংশ===
সংক্ষিপ্ত
রামায়ণ
ব্রতকথা পর্ব
- ১২
~~~~~~~~~~~~~~~~~
শোন শোন
বন্ধুজন শোন দিয়া মন।
রামায়ণে
লঙ্কাকাণ্ড করিনু বর্ণন ।।
হনুমান
কিষ্কিন্ধ্যায় ফিরিবার পর ।
রামেরে কহিল
এসে সীতার খবর।।
সুগ্রীব কহিল
রামে দিলেন অভয় ।
উপায় একটা বের
হইবে নিশ্চয় ।।
অতঃপর পৌঁছে
তারা সাগর কিনারে ।
সকলে মিলিয়া
বসে আলোচনা করে।।
সমস্ত বানর
জাতি যেথা যত ছিল।
সুগ্রীব তাদের
ত্বরা ডেকে পাঠাইল।।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে
ছিল যত চতুর্দিকে।
সেখানে হইল জড়ো
তারা একে একে।।
যদিও বালুকা
রাশি তবু গনা যায় ।
নাহি গণা যায়
তারা কত সংখ্যায় ।।
দলে দলে
বানরেরা আসিল যেমতি।
সবে মিলে
সেনাদল বানাইল অতি ।।
করিতে হইবে
গিয়ে সীতার উদ্ধার ।
কেমনে সাগর
ভাবে করিবেন পার ।।
যদি কোন সেতু
এক বাঁধা যায় কষে ।
সাগরকে পার
তারা করে অনায়াসে ।।
বানরের মধ্যে
নল বড় কারিকর ।
সেতুবন্ধ ভার
পড়ে তাহার উপর ।।
বড় বড় পাথরকে
চাগিয়া আনিল ।
রাম নাম করে
তাহা জলেতে ফেলিল।।
রাম নামেতে
পাথর ভাসিল যে জলে।
এভাবে বাঁধিল
পথ অনন্ত সলিলে ।।
দলে দলে
বানরেরা সেই পথে এসে ।
সাগরকে পার
তারা করে অনায়াসে ।।
এদিকে রাবণ
রাজা আশঙ্কায় মরে ।
হনুমান লঙ্কায়
যা পূর্বে হাল করে ।।
রাবণ শুনিল সব
তার দ্যুত মুখে।
সভামধ্যে
সকলেরে পরামর্শে ডাকে ।।
কুম্ভকর্ণ নামে
ছিল রাবনের ভাই।
বলিল সীতা হরণ
ঠিক হয় নাই।।
যেহেতু অগ্রজ
তার করে হেন কাজ।
যুদ্ধ, তাছাড়া উপায় নাই কিছু আজ।।
দশাননে বোঝালেন
বিভিষণ বটে ।
সীতাকে ফিরিয়ে
দিতে রামের নিকটে ।।
বলিল করিতে
সন্ধি রামচন্দ্র সাথে।
লঙ্কায় রাক্ষস
কূল রক্ষা পায় যাতে ।।
বিভিষণে
ইন্দ্রজীৎ ভৎসনা করে ।
কূলের গৌরবকথা
শোনালেন তারে ।।
বিভিষণ বাক্য
শুনি ক্রুদ্ধ দশানন।
তিরস্কার তাই
তারে করিল তখন ।।
সভামধ্যে
লঙ্কাপতি বলিলেন তারে ।
সেই ক্ষণে
বিভিষণ যেন লঙ্কা ছাড়ে।।
অতঃপর লঙ্কাদেশ
ছেড়ে বিভিষণ ।
রামের নিকটে
গিয়া নিলেন স্মরণ ।।
আশ্বস্ত করিল
রাম মিত্র বিভিষণে ।
করিবেন রাজা
তারে মেরে দশাননে ।।
রামের সৈন্যবল
পেতে অবশেষে ।
'সুক'-'সারনে' পাঠাল বানরের বেশে ।।
দুই জনা
প্রবেশিল মধ্য বানরের ।
বিভিষণ
চিনেগিয়ে ধরিল তাদের ।।
রামের কাছে
তাদের আনিল ধরিয়া ।
নাকিছু বলিল
রাম দিলেন ছাড়িয়া ।।
ছাড়িবার কালে
রাম কহিল তাদেরে।
রাবণে বলিতে
রাম প্রস্তুত সমরে ।।
'সুক-সারন' রাবণে সেকথা জানাল ।
রামচন্দ্রে
সন্ধি তাঁরে করিতে বলিল ।।
করিতে সীতাকে
বশ এই করে মন ।
বিদ্যুজ্জিহ্ব
রাক্ষসেরে ডাকিল রাবণ ।।
যাদুকর
বিদ্যুজ্জিহ্ব দিয়ে যাদু বল ।
বানাইল এক
মুন্ড রাম অবিকল ।।
দশানন সেই
মুন্ড সীতাকে দেখাল।
রাম আর বেঁচে
নেই এমনি কহিল ।।
একথা শুনিয়া
সীতা হাহাকার করে ।
রাম নেই এইকথা
সহিতে না পারে ।।
সেখানে সরমা
ছিল বিভিষণ জায়া।
সীতার রোদন
দেখে হল তার মায়া ।।
সরমা আশ্বাসে
বলে করিতে না ভয় ।
রাবণের চাল ইহা
হবে তা নিশ্চয় ।।
রাবণের গতিবিধি
দেখিবারে রাম ।
সুবেল পর্বত
শীর্ষে করে আরোহণ ।।
রামের সহিত যায়
লক্ষ্মণ শ্রীমান ।
সুগ্রীব অঙ্গদ
ছিল আর হনুমান ।।
যদি কেহ উঠে
সেই পর্বত উপর ।
সুস্পষ্ট দর্শন
মেলে লঙ্কার ভিতর ।।
অশোক কানন হতে
সেই মাত্র ফিরি।
রাবণ ঢুকেছে
এসে সবে লঙ্কাপুরি ।।
সুগ্রীব দেখিল
তারে বড় ক্রোধ হল।
রাবণের উপরে সে
আসিয়া চড়িল ।।
দুজনাতে
মল্লযুদ্ধ বাঁধে এক অতি ।
অবশেষে দশানন
মানে তার নতি।।
সুগ্রীবের সে
বীরত্ব রহিল অটুট ।
কাড়িয়া আনিল
তার সুবর্ন মুকুট ।।
রাবণকে পুনরায়
ফেলিতে বিপদে।
রামচন্দ্র
পাঠালেন লঙ্কায় অঙ্গদে ।।
বালীর পুত্র
অঙ্গদ শ্রেষ্ঠ তার বলে ।
রাবণে একদা
বালী চুবিয়েছে জলে ।।
রাবণে হুঙ্কার
ছাড়ি বলিল অঙ্গদ ।
শ্রীরাম আসিয়া
তারে করিবেন বধ ।।
অঙ্গদের কথা
শুনি দশানন ক্রোধে ।
আদেশ করিল সবে
তারে যেন বাঁধে ।।
রাক্ষসেরা
অঙ্গদকে যায় বাঁধিবারে ।
বগলে চাপিয়া
চারে আছাড়েতে মারে ।।
অঙ্গদ চলিয়া
গেল এই বলে তারে ।
বিনাশ হইবে তার
আগত সমরে ।।
রাবণের হাল
শুনি খুশি তার মন ।
সুগ্রীব, অঙ্গদে রাম করে আলিঙ্গন ।।
এর ফলে দশানন
বড় ক্ষুদ্ধ হন।
সবারে করিতে
বলে যুদ্ধ আয়োজন ।।
চারিদিকে
চিৎকার যুদ্ধ যুদ্ধ রব ।
রাক্ষসেরা
অট্টহাস্য করে যেন সব ।।
অস্ত্রের
ঝঙ্কার শব্দ বাজে রণডঙ্কা ।
রাক্ষস, বানর শব্দে কেঁপে ওঠে লঙ্কা ।।
প্রভাতে হইল
শুরু সেই মহারণ ।
অগুনিত সৈন রণে
পাঠাল রাবণ।।
প্রথমে রাবণ
যুদ্ধে যাদের পাঠাল ।
শ্রীরাম লক্ষণে
অস্ত্র ধরিতে না হল ।।
এরপর ইন্দ্রজীৎ
আসিলেন রণে ।
বানরেরা হতবাক
হল তার বানে।।
এসব দেখিয়া রাম
অস্ত্র হাতে ধরে ।
বানে বানে
অন্ধকার হইল সমরে ।।
মেঘের আড়াল
থেকে নানা বান ছুঁড়ে।
হতবাক করিল
সে লক্ষ্মণ রামেরে ।।
রণ মধ্যে
ইন্দ্রজীৎ অট্টহাস্য হাসে ।
দুইভায়ে বানে
তিনি বাঁধে নাগপাশে ।।
ইন্দ্রের বরেতে
বান ছিল 'নাগপাশ' ।
সারাগায়ে লক্ষ
সর্প জড়ায়ে যে ফাঁস ।।
নাগপাশে
বাঁধাছিল শ্রীরাম লক্ষ্মণ ।
বানরেরা অশ্রু
ফেলে করিয়া রোদন।।
রাবণকে সে খবর
দিতে ইন্দ্রজীৎ ।
প্রস্থান করিল
লঙ্কা আনন্দে তড়িৎ ।।
শুনিয়া তা
পুত্র মুখে রাজা দশানন ।
খুশিতে আনন্দ
মত্ত হইল তখন ।।
সাবাসি দিলেন
তারে করে আলিঙ্গণ ।
পুত্রের
বীরত্বে বড় আনন্দিত মন ।।
এদিকেতে
রামচন্দ্র "গড়ুড়" কে স্মরে ।
যাকে দেখে
সর্পকূল বড় ভয়ে মরে ।।
আসিল গড়ুড় পক্ষী
শ্রীরামের পাশ ।
ভয়েতে পালাল
সর্প ছাড়ি নাগপাশ ।।
বাঁধন হইল
মুক্ত শ্রীরাম লক্ষ্মণ ।
রাম জয় শব্দ
করে যত কপিগণ ।।
রাবণ তো হতবাক
শুনিয়া সে রোল।
মরেনি কি রাম
তবে তাই সরগোল ।।
জীবিত শুনিয়া
রাম,
রাবণ অধীর ।
নাগপাশে বেঁচে
ফেরে এ কেমন বীর ।।
দশানন দেখিল সে
পড়েছে বিপাকে ।
ধ্রুম্রাক্ষেরে
যুদ্ধযেতে বলিলেন ডেকে।।
রাবণ কহিল তারে
রক্ষো সেনাপতি ।
রামেরে মারিয়া
রণে ঘোচাও দুর্গতি ।।
যুদ্ধক্ষেত্রে
তারভয়ে বানরেরা ভাগে ।
দন্ডাইল হনুমান
ধ্রুম্রাক্ষের আগে ।।
হনুমান ভাঙে রথ
তার পদাঘাতে ।
মস্তক করিল
চূর্ন গদার আঘাতে ।।
ধ্রুম্রাক্ষের
মৃত্যু শুনে রাগে দশানন ।
অকম্পনে
রণাঙ্গনে পাঠাল তখন ।।
মহা রণে অকম্পন
মহা যুদ্ধ করে।
হনুমান পাঠাইল
তারে মৃত্যু- পুরে ।।
বজ্রদংস্ট্র আসিল পরেতে প্রহস্ত
।
হাজার হাতির বল
হাতে শূল অস্ত্র ।।
রামের সেনার কাছে
টিকিল না তারা ।
সম্মুখ সমরে
যুদ্ধে পড়িল যে মারা ।।
এসব দেখিয়া
ক্রোধে হয়ে জেরবার।
আসিল স্বয়ং
যুদ্ধে রাবণ এবার ।।
"ব্রতকথা"
শুনিবে যে পুণ্য লাভ হবে ।
রামায়ণে 'লঙ্কাকাণ্ড' চলিতে থাকিবে..।।
চলবে......
© সুব্রত অধিকারী
Nov.26, 2016
No comments:
Post a Comment