Tuesday, 1 November 2016

।। একটুকু ছোঁয়া না লাগে ।।

বছর দুয়েক আগে আমার আকৈশোর গভীর ভালোবাসার এক বন্ধুর মৃত্যুতে গভীর দুঃখে ভেঙে পড়েছিলাম। অনেকেরই ভালোবাসার পাত্র অজাতশত্রু এই বন্ধুটির স্মৃতির উদ্দেশ্য বৃষ্টির মত ঝরে পড়িসবলে একটি কবিতা(?) এই অকবি শারদীয়া আলাপপর্বে লিখেছিলেন। 

যত না রচনার গুণে তার থেকে আমার প্রয়াত বন্ধুর জনপ্রিয়তার গুণে কবিতাটি বহুল পঠিত হয়েছিল। আমাদের এলাকায়,সপরিবার বন্ধুরা এবং আমার দূর নিকট বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন যারা বন্ধুটিকে চিনতেন কবিতাটা পড়েছিলেন।
 
ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে গোপন কথা বলছি এই ভঙ্গিতে একটি পংক্তি কবিতাটিতে লেখা ছিলপ্রিয়তমা নারীকে আজও ছুঁয়ে দেখি নি
 

আর এই লাইনটিই আমাকে তখন তবটেই এখনও ভোগায়। কে বা কারা আমার ছত্রিশ বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করা স্ত্রীকে বোঝালেন কি উনি নিজেই বুঝলেন যে তাঁর সঙ্গে ঘর করেও আমি অন্য নারীকে মনেমনে আকাঙ্খা করি এবং অনেক ঘুরঘুর করেও সেই আমার প্রিয়তমা নারীকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ তৈরী করতে পারি নি।
 

আমার ইহকাল পরকাল আমার স্ত্রীর মানভঞ্জনের জন্য পরপর তিনদিন ভোরে নিজের হাতে বেড টি বানিয়ে খাওয়ানোর পর চতুর্থ দিন উনি বললেন,“হুঃ তোমার দৌড় এই ছত্তিরিশ বছরেও আমি জানি না ভাবো! মনেমনে হেমা মালিনী কিংবা রেখাকে কল্পনাই করে যাও। এই বুড়ো ভামকে কে ছুঁয়ে দেখবে ?”
 

এরপর আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট এক সুন্দরী শালিকাকে তাঁর স্বামী অর্থাৎ আমার ভায়রাভাই একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলেন,“আচ্ছা পৃথ্বীদার সঙ্গে তোমার ইয়ে মানে ছোঁয়াছুঁয়ি হয়েছে ত’?” শুনেছি আমার বাঘিনীর মত তেজিয়ান শালিকা উত্তর দিয়েছিল,“কি গাধার মত প্রশ্ন করছ?নিজের দাদার মত লোকটার সঙ্গে ত
কতবারই ছোঁয়া লেগেছে গুনে রেখেছি নাকি? তাতে তোমার এত গা জ্বালা কিসের?“ আমার ভায়রাভাই তো তো করে উত্তর দিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিল,“না না তা হলে তসব ঠিকই আছে। না ছুঁলেই বরং-

আমার বন্ধু বা পরিচিতদের স্ত্রীরা যারাই এই সময় তাদেরস্বামীদের কৌতুহলের উত্তরে আমার চরিত্রকে সার্টিফাই করেছেন,“ছি ছি উনি কি ওরকম মেয়েদের পিছনে ছোকছোক করার লোক?” তাঁরাই বরং কেউ কেউ আমকে বিপাকে ফেলেছেন। তাদের স্বামীরা ধরেই নিয়েছেন তাঁর স্ত্রীই আমার না ছোঁয়া প্রিয়তমা। তারা এখনও তাদের স্ত্রীকে আমার কাছ থেকে পারতপক্ষে আড়াল করে রাখেন। কে জানে তাঁর স্ত্রীটিই আমার অধরা মাধুরীকি না?

আসলে আমার মত বাংলার আনাচে কানাচে যে সব এলেবেলে কবি আছেন তাদের প্রত্যেকেরই একজন মানসী আছে যার কিছুটা বাস্তব যদি বা হয় বেশীটা পরাবাস্তবের মায়াতন্দ্রায় আচ্ছন্ন। অন্ততঃ আমার ক্ষেত্রে তাই। সামান্য যে টুকু ছায়া পড়ে এক রমণীর সে যে কোনো রক্ত মাংস ঘাম জনিত নীচতার অনেক উর্ধ্বে। দেখা হলে বলবে,“উঃ! এ যে অনেক ঘেমে গেছেন। আসুন এসির আরামে একটু বসে এক কাপ কোল্ড কফি খেয়ে যান।রাজী না হলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবে। 
কিন্তু এসবে তাঁর কিছু যায় আসে না। সে বড়বড় চোখ মেলে যখন তাকায় সম্ভ্রমে মাথা নিচু হয়ে আসে। মনে হয় বড় পবিত্র এই রমণীশ্রেষ্ঠাকে অনেক অনেক দূর থেকে ভালোবাসি, নিজেকে পবিত্র করি। ভয় হয় কাছে গেলে আমার নিঃশ্বাসের বিষে যদি সে নীল হয়ে যায়। বেশকিছুদিন ধরে একজন রূপসী উচুদরের কবিও দেখি প্রায়ই আমার স্বপ্নে এবং কবিতায় (?) এসে দাঁড়ান। কিন্তু ইনিও বড় রহস্যমযী ,পবিত্র এবং স্বপ্নসম্ভবা মাত্র।

মেঘে মেঘে বেলা হচ্ছে । আজ যেমন একদিকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাই পূর্ণ আছি বলেএকই সঙ্গে এও বুঝি জন্মরোমান্টিক আমি মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও প্রেয়সীকে বলে যাবো,“ ভালবেসে মাধুকরী দাও। এখন বাংলা সাহিত্যে কয়েকজন ভদ্রমহিলা খুবই শক্তিশালী কবি। এদের অনেকেই সাহসী স্পষ্ট উচ্চারণে ভয় পান না। নারী চরিত্র দূর্গম চির রহস্যময়- তার উপর নারী কবি! তাঁদের মনের খবর জানার চেষ্টা করা গুস্তাফি করার সামিল। একজন রূপসী শক্তিশালী কবিকে প্রশ্নটি করতে না করতেই আমায় ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে একদম ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন।

বাকীরাও যদি দেন তবে আর বেঁচে থেকে লাভ কি?
তবু প্রশ্নটা করেই ফেলি। তাঁরা কি প্রেমের কবিতা লেখার সময়ও স্বামীর সঙ্গে গার্হস্থ্য জীবনযাপনের সীমারেখায় আবদ্ধ থাকেন না কোন এক মানস প্রতিমের মোহন বীণা তাদের হৃদয়েও বেজে ওঠে?

উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা বোধহয় নেইই।
 

কি বলেন ?



_______________
@পৃথ্বী ব্যানার্জী 

No comments:

Post a Comment