Sunday, 6 November 2016

।। গ্যাংটক ভ্রমন ।।


গ্যাংটক সিকিমের রাজধানী, ভারতের অন্যতম শৈলশহর যা পর্যটকদের অন্যতম ফেভারিট গন্তব্য l এখানকার প্রাকৃতিক শোভা অনির্বচনীয় l অনেকের মনের মধ্যে ধন্দ থাকে যে, গ্যাংটক (GANGTOK ) কখন যাওয়া উচিত l আমি বলবো বর্ষা কাল বাদ দিয়ে, বছরের যেকোনো সময় যেতে পারেন l

আপনি যেখানেই ট্রেনে চরুন আপনার প্রথম গন্তব্য হবে নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন ( NJP) এবং চেস্টা করবেন যেন সকাল দশটার মধ্যে আপনি সেখানে পৌছাতে পারেন l এবার আপনার গন্তব্য গ্যাংটক l নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দুরত্ব ১৩০ কিলোমিটার 


NJP স্টেশন থেকে বাইরে বেরোলে, সামনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে দেখবেন সুমো, অল্টো, স্করপিও গুলো সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে l শেয়ারিং সুমোতে একজনের ভাড়া মোটামুটি কমবেশি ২০০/- টাকা (2015) লাগবে l সুমোগুলো দশ জনের মত ধারণক্ষমতা যুক্ত। আপনি একাই রিজার্ভ করতে চাইলে মোটামুটি ১৫০০/- টাকা লাগবে l তবে ভ্রমণের পিক সিজনে ভাড়া কিছুটা কমবেশি হয়। যদি হোটেল না বুকিং করা থাকে তো NJP থেকেও আপনি বুকিং করতে পারেন l ওখানে অনেক ট্রাভেল এজেন্সি আছে এবং সেগুলো আপনার নজরে পরবেই l

 
এরপর আপনি গড়িতে বসে পড়ুন l সেবক রোড ধরে ৩১ নং জাতীয় সড়কে গাড়ি ছুটবে l পাহাড়ি চড়াই উতরাই পথে কমবেশি চার ঘন্টার মনোরম সফর l এবার আপনার চারপাশ ক্রমশই দ্রুতগতিতে বদলাতে থাকবে, যেটাকে চুটিয়ে উপভোগ করুন l আপনার যাত্রাপথের অনেকটা অংশ জুড়ে সুন্দরী তিস্তা নদীকে পাবেন l


Enjoy her majestic beauty and colour.

দু ঘন্টা পর রংপোতে এসে গাড়ি থামবে l শিলিগুড়ি এবং গ্যাংটক  এর মাঝামাঝি যায়গা হল রংপো l পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমে রাজ্যের বর্ডার l এখানে আধা ঘন্টা থামবে l হাতে গোনা কিছু দোকান আছে l হালকা জলযগ করতে চাইলে আপনি মোমো থেকে ভাত সব পাবেন এখানে l

পরবর্তী দুঘন্টায় গাড়ি আপনাকে গ্যাংটক শহরের সন্নিকটে Deorali নামক স্থানে আপনাকে নামিয়ে দেবে l কারন বাংলার নাম্বারপ্লেট যুক্ত গাড়িগুলোর গ্যাংটক শহরে ঢোকার অনুমতি থাকেনা  l 

ওখানে আপনি অনেক ছোট-বড় মাঝারি মাপের গাড়ি পাবেন l ওদের একটি বুক করে, হোটেলের নাম ঠিকানা বললেই গ্যাংটক  শহরে আপনার হোটেলের ঠিকানাতে আপনাকে পৌছে দেবে l গাড়িভাড়া জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যেইl পরিচ্ছন্ন ও ভালো লোকেসনের হোটেল গুলোর ভাড়া ১০০০/- টাকা থেকে শুরু। এর কম ভাড়ার হোটেলও অবশ্য আছে, তাদের সার্ভিস কিন্তু তেমন গুনমানের হবেনা।


হোটেলে পৌছে নিবন্ধিকরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে (Check in) ফ্রেশ হতে হতে রাত হয়ে যাবে l দীর্ঘ জার্নিতে ক্লান্ত শরীরে এদিন আর কোথাও না যাওয়াই ভাল। একান্তই চাইলে মার্কেটের দিকটা একবার হেঁটে ঘুরে আসতেই পারেন। হোটেলের ট্রাভেল ডেস্কে অবশ্যই বলে রাখুন আপনি বা আপনারা নাথুলা যেতে আগ্রহী lওরা আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবি আর এবং স্বীকৃত পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি নিয়ে নাথুলা যাবার সরকারি অনুমতিপত্র জোগার করে দেবে l

এই শৈলশহরে জলের থেকে মদ্য পানীয়ের দাম কম l যদি রুচি হয় প্রথম রাত্রে ক্লান্ত শরীরে Sikkim Monk বা Honey Brandy র স্বাদ নিতে পারেন lপরের দিন আপনি গ্যাংটকের আশেপাশের দর্শনীয় স্থান গুলো ঘুরতে পারেন l রুমটেক মনাস্ট্রি অবশ্যই যাবেন l

গ্যাংটক শহরটুকু ঘুরুতে একদিনই যথেষ্ট l রোপওয়ে,মহাত্মা গান্ধী মার্গ ছারাও অনেক নামী বেনামি গার্ডেন, চোখ - মন - প্রান জুড়িয়ে দেবেই। পকেট সায় দিলে হেলিকপ্টারে চড়েও পুরো শহর ঘুরতে পারেন আকাশপথে l সাথে হিমালয়ের অপরূপ শোভা। খরচ জনপ্রতি ৩০০০/- টাকা মতন। এছারা এডভেঞ্চার স্পর্টসের অন্তর্গত প্যারাগ্লাইডিং করতে পারেন, সেক্ষেত্রে ওরাই আপনার ওই সম্পূর্ন প্যারাগ্লাইডিং যাত্রার ভিডিও ফুটেজ করে দেবে, যা আপনার স্তত্মতিকে চিরকাল জীবন্ত রাখবে l

এর পরে দিন নাথুলা যান l ই স্থানটা ভ্রমণ করতে গোটা একদিন লাগবে l সকাল সকাল সরকারি অনুমতিপত্র নিয়ে, শেয়ারিং বা নিজশ্ব রিজার্ভ করা গাড়িতে উঠে বসে পড়ুন l ৭০ কিলোমিটারের এই যাত্রাপথের ভাড়া জনপ্রতি ১৭০ থেকে ২০০ টাকার মাঝে উঠানামা করেl বিরল জনবসতি সম্পন্ন সমগ্র রাস্তাটার দুপাসের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা। মাঝে মধ্যে সীমান্তরক্ষা বাহিনীর ক্যাম্প l আপনি কখনই চোখ ফেরাতে পারবেন না ছবির মত এই দৃশ্যপট থেকে l কখনো মেঘ আপনার গা ঘেঁষে ভেসে যাবে, কখনো আপনাকেই হঠাৎ চারদিক ঢেকে দেবে মেঘের দল l পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে দুরের হিমালয়ের সাদা বরফ আপনাকে স্বাগত জানানে থাকবে অবিরামl
 
আপনি নাথুলাতে এসে গেছেন l হ্যাঁ এটাই সেই ঐতিহাসিক Old Silk Route এখানে মোবাইল নেটওয়ার্কের জ্যমার বসানো আছেl চতুর্দিকে ভ্রমণপিপাসু ব্যাক্তিগনের থেকে সেনার অধিক্য অবশ্যই আপনার চোখে পরবে। l মোবাইল ফোন এবং ফটোগ্রাফি এখানে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ l এখানকার তাপমাত্রা সারা বছর শুন্য ডিগ্রির নিচেই থাকে, কারন এখানকার অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪৫০০ ফুট উঁচুতে l অনেকের শ্বাসকষ্ট হতে পারে, সেক্ষেত্রে য়ের কিছু নেই, গাড়িতে উঠে আরামসে বসে থাকুন l তবে হ্যাঁ মোদীজির দল যতই চীনাদ্রব্য নিয়ে চোখ রাঙাক, আপনি চায়না সোলজারের সাথে হ্যান্ডশেকটা করতে ভুলবেননাl কারন ওরা আপনার দিকে হাত বাড়াবেই l


ফেরার পথে সাধারনত তিন যায়গায় গাড়ি দাঁড়াবে l পাহাড়ের গায়ে বরফময় অপূর্ব মহাদেব দর্শন l বাবা হরভজন সিং ( সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন) এর মন্দির দেখতে ভুলবেননা l এক রহস্যময় কাহিনী লোকগাথা ছরিয়ে ছিটিয়ে তাঁর সম্বন্ধে। দরকারে উইকিপিড়িয়া খুলে একবার দেখেই নিন না কেন।

এবার গন্তব্য সেই Tsomogo Lake যার স্থানীয় নাম ছাঙ্গু l বেশিরভাগ সময় এই প্রাকৃতিক লেকটির জল জমে জমাট হয়ে থাকে বা বরফ ভাসতে থাকে l এখানে সুসজ্জিত ইয়াকের পিঠে চড়ার মজা নিতে পারেন l তবে না চাপাই ভাল, নাহলে ঘরে ফিরে দেশোদ্রোহির তকমা জুটলেও জুটতে পারেন l ফটো শুট করুন প্রানখুলে, এখানে কোন বাঁধা নিষেধ নেই l নী(PERFECT BLUE) আকাশের প্রতিচ্ছবি দেখুন লেকের জলে l

বিচ্ছিন্নভাবে গজিয়ে ওঠা চায়ের দোকানগুলোতে কফি, মোমো, চাউমিন, বিয়ার, হুইস্কি সবই পাবেন l ইয়াকের দুধের তৈরি একরকম শক্ত কেক পাবেন l চুষতে পারেন l

মনে রাখবেন গ্যাংটক  বা নাথুলা তে ধুমপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ l ধরা পড়লে জরিমানা l চেইন স্মোকারদের লুকিয়ে চুরিয়ে খেতে হবে l তবে মদ্যপানে কোন বাধানিষেধ নেই।  সর্বত্র কিনতেও পাবেন এবং খোলাখুলি খেতেও কোন মানা নেই।


এরপর যেভাবে গেছিলেন সেভাবে ফিরে আসুন l হ্যাঁ আপনার ঘর এবং কর্মস্থলেl 

Old fellow, you are welcome in your workplace.


_________________ 
লেখা: রন্জিত চ্যাটার্জী


No comments:

Post a Comment