অর্চনাদির সঙ্গে কথা হল কিছুক্ষন আগে। অনেকদিন পর গোপালনগর থানায় ফেলে
আসা সুন্দর মুহূর্তগুলো মনে পড়ছিল আবার। অর্চনাদির মুখেই শুনলাম পরেশদার
ষ্ট্রোকের খবরটা... সাত আটদিন আগে হঠাৎই... মানুষটা আর নেই... কত হাসিঠাট্টার মুহূর্ত
, গুরুগম্ভীর আলোচনা , নাইট পেট্রোলিং-এর সঙ্গী ছিল প্রথম জীবনে শিক্ষকতা করে আসা সিনিয়র
কনষ্টেবল পরেশদা... গোপালনগর থানার কেসকাছারি কাগজপত্রের ভার অনেকটাই একা সামলে নিত
মুডি মানুষটা... আমার ভালমানুষিতে কোন খাদ নেই - পরেশদা নাকি প্রথম দিন আমায় দেখেই
বুঝে গেছিল... আমার জীবনে পাওয়া অন্যতম সেরা কমপ্লিমেন্টটাকে আজও রেখে দিয়েছি স্মৃতির
ভিতর সযত্নে।
পুলিশের চাকরি ছেড়ে আসার বছর দেড়েক পর এই মাস পাঁচ ছয়
আগে কোন এক সন্ধেবেলা ফোন করেছিল পরেশদা... মনে আছে অফিসের কোন একটা কাজে তখনও তুমুল
ব্যস্ত সেদিন... ফোনটা কেটে দিয়েছিলাম... পরেশদা আর ফোন করেনি... আমিও যথারীতি করছি
করব করে হাজার ব্যস্ততায় বারেবারেই ভুলেছি পরেশদাকে রিংব্যাক করার কথা... সেই কেটে
দেওয়া কলটাই পুরো কেটে গেলো আজকের পর... পরেশদাকে ফোনে আর কোনদিন পাবো না আমি... আর
কোনদিন পরেশদাও খোঁজ নেবে না আমার...!
বয়সের ভারে ছেলেমানুষ হয়ে যাওয়া দাদুর ইচ্ছা ছিল ট্যাক্সি
চেপে বাগুইআটি থেকে একদিন তার নাতির বাড়ি যাবে আমতলায়... শিশুসুলভ সুর করে সে কথা বলত
বারবার... সদাব্যস্ত সরকারি চাকুরে নাতি তার দাদুর সেই শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারেনি...
হঠাৎই একদিন আমাদের সবাইকে ছেড়ে দাদু চলে গেল... একবুক অভিমান সঙ্গে নিয়ে...
!
!
পাশের গ্রামের রবিন বৌদির ইচ্ছে ছিল রবিনদার ঘর দালানের মাটির মেঝেগুলো সিমেন্ট করার... বিয়ের কুড়ি বছর পর সেদিন মেঝে সিমেন্ট হবে... সকাল সকাল রাজমিস্ত্রিরা হাজির... চাষের কাজে ব্যস্ত দাদাকে মাঠ থেকে ডাকতে গেছিল বৌদি... মেঠো রাস্তাতেই একটা বিষাক্ত কালকেউটের ছোবল... এক লহমায় চূর্ন করে দিয়েছিল অনেক স্বপ্ন...
!
কতশত মানুষের কত কথা , কত স্বপ্ন , কত ইচ্ছা এভাবেই অসম্পূর্ন থেকে যায় এই নশ্বর পৃথিবীতে... পরেশদার সেই ফোন কেটে দেওয়ার ঘটনাটা অনেকদিন পর কলম ধরালো একশো দিনের কাজ , পেনশন , সরকারি মেলা খেলা কার্যক্রম , টার্গেট পূরনের চাপে জর্জরিত প্রায় যন্ত্রমানব হয়ে ওঠা এক সরকারি চাকুরেকে...
মনে পড়ল কতদিন বাবা মা আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে ভালো করে
কথাই বলা হয়ে ওঠেনি... সঙ্গে মনে পড়ল অনেকদিন আগে ফেসবুকে দেখা একটা কথা
"... pass your time with your friends and dear ones...
because nobody will remember your power point presentation after your
death..."
সত্যিই... পড়ে পাওয়া চোদ্দ
আনায় নতুন করে বাঁচাটা শিখতেই হবে আবার......
মুহূর্তের জন্য বাঁচুন.....
মুহূর্তকে নিয়ে বাঁচুন..... সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না................!!!
______________
~@ রঞ্জন মন্ডল
No comments:
Post a Comment