আকাশ হয়ে যাওয়া মানুষদের খাঁচায় বন্দী করতে নেই।খাঁচার ফাঁক গলে তারা হারিয়ে গেলে চোখের নীলে তাদের বয়ে বেড়ানোর ভার সহ্য করা যায় না।
আকাশ মানুষরা দূরে থেকেই প্রিয় মানুষটার খেয়াল রাখে।প্রিয় মানুষটা 'মন কেমন করা বিকেলে' বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালে একফালি রোদ হয়ে এলো চুলের ফাঁকে গালে ছুঁয়ে দিয়ে যায়। কখনও হুট করে বৃষ্টি নামিয়ে ছাদের পদ্মপুকুরে দুপুরের বৃষ্টি বিলাশের আমন্ত্রণ অথবা মধ্য রাতে চাঁদটাকে তার জানালার আরও একটু কাছে এনে রেখে দিয়ে যায় ।
তখন হয়তো জানালার কাছে এসে দু'টি তৃষ্ণার্ত চোখ বলে....
-কেমন আছো?
-আছি... যেমন থাকে মাথার উপর আকাশ...
-সেটা কি রকম?
-আমার সস্তার গিটারটার মত। একটা ক্ষেপাটে মন আর ছয়টি তার। কখনও ভীষণ শীত...কখনও অনেকখানি ওম...কখনও ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে। এই যে জিজ্ঞাসা করলে কেমন আছি? এখন শুভ্রসাদা মেঘ... মেঘের পরতে পরতে রুপালী ফুলের আগুন। তুমি হারিয়ে গেলেই ঝড়। কাল বৈশাখী।
-কেমন আছো?
-আছি... যেমন থাকে মাথার উপর আকাশ...
স্যাটেলাইট আর আকাশ সংষ্কৃতির যুগে পকেট যোগাযোগ ব্যাবস্থায় "আকাশ মানুষ" হওয়া সহজ না।
আমি হিমু নই।আমার পাঞ্জাবীর তিনটা পকেট। দু'টো স্বাভাবিক আর একটা অস্বাভাবিক। অস্বাভাবিক এই জন্য যে আমার পাঞ্জাবীর তিন নম্বর পকেটটা হলো বুক পকেট।
এই যুগে আর কেউ বুক পকেট-ওয়ালা পাঞ্জাবী পরে না। পাঞ্জাবীর কারিগর সোলেমান ভাই,এলিফেন্ট রোডের চারুলতা টেইলর্সের মালিক কাম কাটিং মাস্টার। চারুলতা মেয়ে সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়। আগে লেডিস জেন্টস উভয়ের জন্যই চারুলতা উন্মুক্ত ছিলো।এখন শতভাগ নারীবাদি।
পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষদের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চারুলতার এই আচরণ একটা দৃষ্টান্ত টাইপের কিছু হতেই পারে।
মাস ছয়েক আগে একবার সস্তায় স্যান্ডেল কিনতে এলিফেন্ট রোডে গিয়েছিলাম। দোকান ঘুরে ঘুরে স্যান্ডেল দেখার এক ফাঁকে স্ট্রাটিজিক টাইমে সিগারেট ধরিয়ে মেহজাবিনের 'গায়ে মাখা সাবান' বিক্রি করা জাতীয় একটা বিলবোর্ডের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। সাবানের ফ্যানা ট্যানা মাখা বেশ একটা সুখী সুখী হাসি নিয়ে বাথটাবে শুয়ে থাকা মেহজাবিনকে দেখে মনে হতে পারে, পৃথিবীর সমস্ত সুখ গায়ে সাবান মেখে বাথটাবে শুয়ে থাকায়।
"সুখ নাই রে পাগলা" লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া অসুখে আক্রান্তরা এই বিলবোর্ড দেখার পর আবেগী হাতে কিবোর্ড টিপে স্ট্যাটাস দিতে পারে "হ্যাপিনেজ ইজ,গায়ে ফ্যানা ফ্যানা করে সাবান মাখা"।
-রাশেদ
পিছন থেকে সোলেমান ভাইয়ের ডাকে চমকে গিয়ে তার দিকে ফিরে চাইলাম। হাতে সিগারেট থাকায় ক্ষণিক উশখুশ লাগছে।সিগারেট ফেলে দেবো কিনা সেটা ভাবছি।তিনি অবশ্য সে রকম সিনিয়র কোনো বড় ভাই না যাদের সামনে সিগারেট ফেলে দিতে হয়।আগেও কয়েকবার সিগারেট হাতে তার কাছে ধরা খাওয়া হয়ে গেছে বলে এখন আর তেমন সংকোচবোধ কাজ করে না।তারপরও যা হবার হয়ে গেছে সোলেমান ভাই হাতের সিগারেট দেখে ফেলেছে।এখন সিগারেট ফেলার নাটক করে নতুন কোনো সিন ক্রিয়েট করার মানে হয় না। তবে সমস্যা হলো সিগারেট হাতে তাকে সালাম দেওয়া যাবে কিনা সেটা নিয়ে।খাবার সময় সালাম দেবার ব্যাপারে নিষেধ আছে বলে শুনেছি।
-ভাই কেমন আছো?
-তুই এখানে?
-একটা কাজে এসেছি
বেকারদের মুখে কাজের কথা শুনতে শ্রোতারা আরাম পায় না।ভ্রু-কুচকে চেয়ে থাকে। ব্যাপারটা এমন," এ'তো বেকার! এর আবার কীসের কাজ ! নিশ্চয়ই কোনো বদমতলব মাথায় নিয়ে ঘুরছে"।
-কাজ শেষ হয়েছে?
-এখনো শেষ হয়নি
-আয় আমার সাথে
এই মুহূর্তে আমি সোলেমান ভাইয়ের সাথে তার "চারুলতা'র" ক্যাশ কাউন্টারে বসে আছি।এক ফাঁকে কোনো এক পিচ্চি দু'কাপ চা আর বিস্কিট দিয়ে গেছে।সোলেমান ভাই চায়ে ভিজিয়ে সেই বিস্কিট বেশ আরাম করে খাচ্ছে।পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্যগুলোর একটি হলো তৃপ্তি করে খেতে বসা কোনো মানুষের খাওয়ার দৃশ্য।তৃপ্তি নিয়ে খেতে বসা মানুষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। চল্লিশার মতো একটা শোকাবহ অনুষ্ঠানের দাওয়াতেও যদি চোদ্দ পদের ডিশ সার্ভ করা হয়, তার পরেও খাওয়া দাওয়া শেষে বিরাট এক ঢেকুর তোলার পরে অতিথি বলবে "যুত হইলো না" ।
এতোটা কাছ থেকে সুন্দর যে কোনো কিছুর দিকে বেশী সময় তাকিয়ে থাকা যায় না।সুন্দর দেখতে হয় দূরে থেকে।কাছ থেকে দেখা সৌন্দর্য্য, ভেতরে কোথাও একটা ভয়ংকর ঘোর তৈরী করে। তখন আশপাশের অবিরাম ঘটতে থাকা নোংরামো নিতে পারার মতো রেজিস্টেন্স ক্ষমতা আর কাজ করেনা।
প্রতিনিয়ত গায়ে নোংরা মেখে এই বেঁচে থাকা, বেঁচে থাকাগুলো কঠিন হয়ে যায়। এই কারনেই প্রকৃতি সুন্দরের চেয়ে অসুন্দরের সৃষ্টিই, পরিমাণে বেশী করে রেখেছে।
আমি সোলেমান ভাইয়ের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে দোকানের দিকে চাইলাম। দোকানে কাস্টমারের ভীড় ভয়াবহ পর্যায়ের। মনে হচ্ছে সমস্ত ঢাকা শহরের মেয়েরা আজ চারুলতায় এসে ঢুকে পরেছে।কাস্টমারের গিজগিজা ভীড় সামলাতে সেলস কাউন্টারে থাকা আট জনের আক্ষরিক অর্থেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে।
- Holly Cow!!!
- মানে?
-পবিত্র গাভী!!!
-সেটা আবার কি রে?
-তোমার দোকানের অবস্থা তো ভয়াবহ!!!
-ঠিকই বলেছিস, আগের মতো আর বেচা কেনা নাই রে,বড় খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি
-বলো কি!! বেচা কিনা নেই মানে! এতো এতো কাস্টমার, এরা তবে কি?
-মেয়েদের ড্রেসিং সেন্স'র ব্যাপারে তোর কোনো আইডিয়া নেই বলেই এমন কথা বলছিস।ছোট্টো একটা এক্সাম্পল দিলেই এদের সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পাবি।তুই "হাল্কা পাকা পেঁপে" কালার চিনিস?
-আমি পেঁপে খাই না
-এখানে পেঁপে খাওয়া বা না-খাওয়ার ব্যাপার না,পেঁপে এমন কোনো ফল না যা মানুষের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকবে,ব্যাপারটা হলো কালারে।
-সবুজের উপর হাল্কাভাবে হলুদ সেড টাইপের কিছু একটা হতে পারে
-তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো?
-ঠিক বলে বুঝানো যাবে না
-বেশীর ভাগ মেয়েরা কিন্তু ওই সমস্ত উৎভট কালারই ডিমান্ড করে বসে
-হুম...বিরাট মুসিবতের মধ্যে আছো দেখছি
-ঠিকই,মাঝে মাঝে মনে হয় ব্যাবসাপাতি বাদ দিয়ে বনে বাদারে চলে যাই
-বনে বাদারে গিয়ে কি করবে?গাছ থেকে হালকাভাবে পেকে থাকা পেঁপে লগি দিয়ে পেড়ে পেড়ে খাবে?
-একটা ছোটো খাটো গার্মেন্টস খুলে বসলে কেমন হয়?
-সে তো অনেক টাকার ব্যাপার
-টাকাটা কোনো ব্যাপার না,আমি এই মুসিবতের গুদাম থেকে মুক্তি চাইছি
-ভালোই হয়,তবে সেখানেও যদি বায়ার হালকা পাকা পেঁপে কালারের জিন্স, টপস এগুলোর অর্ডার করে বসে?তখন?
-এ কি! তুমি এখানে?
দোকানে ভীড়ের মধ্যে সাহানাকে আগেই দেখতে পেয়েছিলাম।তাই এখন সাহানা আমাকে এখানে হঠাৎ দেখতে পেয়ে যতটা অবাক হয়েছে, আমি ঠিক ততটা অবাক হইনি। অবাক হওয়া প্রিয়মানুষেরা চায় তাকে অবাক করে দেয়া মানুষটাও তার মতোই অবাক হোক।আমি অবাক হবার ভান করে বললাম...
-OMK!! তুমি এখানে!!!
সোলেমান ভাই হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই মিলনাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে ফেসে গিয়ে তব্দা মেরে গেছেন। তার এখন কি বলা উচিৎ বা করা উচিৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। চায়ে বিস্কিট ডুবিয়ে রেখে একবার সাহানার দিকে একবার আমার দিকে চাইছেন।হাতে ধরা বিস্কিট গলে অর্ধেক ভেঙে চায়ের কাপে পরে গেছে।বাকি অর্ধেক বিস্কিট তিনি হাতে ধরে রেখেছেন।
-এখানে কি করছো?
-যাঃ বাবা! এখানে আমার কোনো কাজ থাকতে নেই বুঝি?
-মেয়েদের টেইলারিং শপে তোমার কোনো কাজ থাকার কোনো যুক্তিগত কারণ আছে বলে তো আমার মনে হয়না
-তা ঠিক,তবে সাহানা,তোমার বক্তব্যে কিঞ্চিৎ ভুল আছে
-মানে?
-মানে মেয়েদের টেইলারিং শপে ছেলেদেরও কিন্তু অনেক কাজ থাকতে পারে
-কি বলতে চাইছো?তুমি এখানে চাকরী নিয়েছো নাকি!
-ব্যাপারটা ঠিক তাও না,আমি এখানে মাঝে মাঝে চা বিস্কিট খেতে আসি।বড় হয়ে যাবার পর চায়ে ডুবিয়ে বিস্কিট খাবার মতো ব্যাপারটা সব জায়গায় করা সম্ভব হয় না।লোকজন আড় চোখে চেয়ে থাকে।মনে মনে বিদ্রুপের হাসি হাসে।এই রকম একান্ত কিছু ব্যাক্তিগত ছেলেমানুষি ছেলেবেলার কাছের মানুষদের আশেপাশে থেকেই করতে হয়।তাই এখানে আসা।
-তোমার এসব উদ্ভট কথার কিছুই আমি বুঝতে পারছিনা
-উদ্ভট কথা আপাতত ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে দাও।উনার সাথে পরিচিত হও।ইনি সোলেমান ভাই,আমার কাজিন
-স্লামালেকুম ভাইয়া
সোলেমান ভাই বেশ ভালোই অবাক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।সালামের উত্তর দেবার বদলে তিনি কপ করে বিস্কিট মুখে পুরে চিবোতে লাগলেন। তারপরই ভুল বুঝতে পেরে মৃদু ফ্রিকুয়েন্সির হে হে জাতীয় একটা শব্দে হাসার চেষ্টা করলেন।এই ক্ষেত্রে অবশ্য সাহানারও কিঞ্চিৎ ভুল আছে সে বিস্কিট খেতে থাকা অবস্থার একজন মানুষকে সালাম দিয়ে ফেলেছে।
-তোরা গল্প কর আমি একটু বাইরে থেকে আসছি,সাহানা, তুমি এখানটায় এসে বোসো
সোলেমান ভাই তার চেয়ারে সাহানাকে বসিয়ে বাইরে চলে গেলেন। অবস্থাভেদে চেয়ারের নিশ্চই আলাদা কিছু ক্ষমতা আছে। শুধুমাত্র একটা চেয়েরে বসার কারণেই কোনো একটা মানুষের ব্যক্তিত্যে গাম্ভীর্য্য চলে আসতে পারে,আবার গম্ভীর কাউকে অতিমাত্রায় ফাউলও মনে হতে পারে ।
এই মুহূর্তে সোলেমান ভাইয়ের চেয়ারে বসা সাহানাকে দেখতে অন্যরকম লাগছে।দোকানের বসের চেয়ারে বসার কারণে সে বোধয় সাময়িক ভাবে নিজেকে বস বলে মনে করে থাকতে পারে। সোলেমান ভাইয়ের মত করেই সে একটু পর পর ঘাড় কাৎ করে সেলস কাউন্টারের দিকে চাইছে।যেন সোলেমান ভাই "বাবুর হাটে" যাবার সময় তাকে দোকান সামলানোর জন্য ক্যাশে বসিয়ে রেখে গেছেন।ব্যাপারটা দেখতে বেশ মজাই লাগছে।
পিচ্চি আবারো চা বিস্কিট নিয়ে ডেক্সের উপর সাজিয়ে দিয়ে গেছে। সাহানা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে গম্ভীরভাবে কিছু সময় চায়ের কাপের দিকে চেয়ে থেকে একটা চুমুক দিলো।
-চা খাচ্ছো না কেনো?
-একটু আগেই এক কাপ খেয়েছি
-আবার খাও,চা প্লেট ভরা ভাত তরকারি না যে এক বেলায় দু'বার খাওয়া যাবে না,খাও
-ইয়েস ম্যাম
-ফাজলামো করবে না
-যা বাবা! ফাজলামো কখন করলাম!আমি সিরিয়াসলি বললাম তো
-আশ্চর্য্য, আমি তোমার ম্যাম হতে যাব কোন দুঃক্ষে!
-সোলেমান ভাইয়ের চেয়ারে বসার পর থেকেই তোমাকে দেখতে দোকানের মালিক বলে মনে হচ্ছে।মানুষের সবচেয়ে বড় ডিসএডভান্টেজটা হলো সে আয়না ছাড়া নিজেকে দেখতে পায় না।আর আয়নার সামনে দাঁড়ালেও স্বাভাবিক এক্সপ্রেশনগুলো দূরে সরিয়ে রেখে নিজেকে দেখে।তারপরেও এখন যদি একটা আয়না তোমার সামনে এনে ধরতে পারতাম তাহলে হয়তো বুঝতে পারতে আমি সত্যি বলছি কিনা
-দোকান মালিক হবার কোনো রকম ইচ্ছে আমার নেই,দেখি ওঠোতো
-কেনো!কি হলো আবার?
-আমি আর এই চেয়ারে বসতে পারবো না।তুমি বলার পর থেকে নিজেকে আসলেই কেমন যেন দোকানদার বলে মনে হচ্ছে।এখানে এসে বসো, আমি তোমার চেয়ারে বসবো
-হা হা হা...
-হাসছো কেনো!আমি কি হাসার মতো কিছু বলেছি
-সাহানা,সোলেমান ভাই ভালোবেসে কিছু সময়ের জন্য তোমাকে তার উত্তরাধিকার মনোনীত করে গেছেন,ফিরে এসে যদি দেখে তুমি তার সেই ভালোবাসা অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছো তাহলে সে দুঃখ পেতে পারে,এন্ড ফর ইয়োর কাইন্ড ইনফরমেশন তুমিই প্রথম মানুষ যাকে সোলেমান ভাই এই চেয়ারে বসতে দিয়েছে।
সেদিন সাহানা আমার জন্য কাপড় কিনে এই তিন পকেটের পাঞ্জাবী বানিয়ে দিয়েছিলো। সোলেমান ভাই তার নীতি থেকে সরে এসে নিজেই আমার বুক পেট কোমরেপ মাপ নিয়ে ফস ফস করে কাপড় কাটতে কাটতে বলেছিলো "যাহঃ বিকালে এসে পাঞ্জাবী নিয়ে যাস "। বিকেলে সোলেমান ভাই দোকানে ছিলো না।আমি তাড়াহুড়ো করে পাঞ্জাবী নিয়ে চলে গিয়েছিলাম। রাতে বাসায় ফেরার পর পাঞ্জাবীতে এই ৩য় পকেটের অস্বিত্ব আবিষ্কার করি।
বাইরে বেড়োবার জন্য কিছু একটা খঁুজছিলাম। সবকটা শার্ট, গেঞ্জির করুণ অবস্থা।লণ্ড্রীতে না পাঠালেই নয়।এখন এই তিন পকেটের পাঞ্জাবীটাই শেষ ভরসা হিসাবে পরতে হয়েছে।
-রাশেদ ভাই
-বল
-কোথাও যাচ্ছেন?
-হ্যাঁ
-সাহানা আপু সকাল থেকে আপনাকে ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছে
-ও
-রাশেদ ভাই
-আবার কি?
-একটু যদি ফোনটা রিসিভ করতেন
-পরে
-তাহলে আমি এখন কি করবো?
-তুই কি করবি তার আমি কি জানি...
-আপু আবারোটও ফোন করলে আমি তাকে কি বলবো?
-কিচ্ছু বলতে হবে না
-এটা আবার কেমন সমাধান!
-এককাজ কর,তুই তোর ফোন বন্ধ করে রাখ
-পারবো না,আমি ফোন রেখে যাচ্ছি, আপনার যেটা ভালো মনে হয় আপনি করেন।
রাফসান ওর ফোন আমার খাটের উপর ফেলে রেখে চলে গেছে। আমার অবস্থা "এই যন্ত্র লইয়া আমি এখন কি করিবো" টাইপের। চাইলেই সাহানাকে ফোন করা যায়। বলাই যায় "কেমন আছো সাহানা"? এই প্রশ্নটা পৃথিবীর সব থেকে অর্থহীন প্রশ্ন। অথচ একটা জীবন কম পড়ে যায় এটার অর্থ জানতে গিয়ে..."কেমন আছি"।
আজ কেন জানি সাহানাকে কিছুই বলতে ইচ্ছা করছে না।এই সমস্ত অনিচ্ছার কোনো কারণ থাকে না। প্রিয় মানুষগুলো হলো এক একটা প্রজাপতি। প্রজাপতি হাতের মুঠোয় বন্দি রাখতে নেই। তাদের উড়িয়ে দিতে হয়। আমি মাঝে মাঝেই প্রিয় মানুষগুলোকে উড়িয়ে দিই। গভীর আগ্রহে তাদের উড়াউড়ি করা দেখি। কিছু কিছু প্রিয় প্রজাপতি উড়ে অনেক দূরে চলে যায়। তারা আর ফেরেনা। আমি আর্দ্র চোখে প্রিয় প্রজাপতিদের চলে যাওয়া দেখি।
অনেকগুলো রঙিন বিকেল কাটানো গল্প ডানায় জমিয়ে কিছু প্রজাপতি হুট হাট করে ফিরে আসে। তখন এক ধরনের আনন্দ হয়।
আমি সেই আনন্দ আমার পাঞ্জাবীর বুক পকেটে খুব যতনে এক গোপন চিঠির মতো রেখে দিই। যার প্রতিটা লাইন জুড়ে আছে ভীষণ রকম শিহরনের এক একটি অজানা গল্প। আমি আলতো করে এক একটা লাইন ছুঁয়ে যাই... আর ভাঁজ খুলে যাই এক একটা অক্ষরের।।
__________________
© মোহাম্মাদ সামি